খাটের একপাশে মাধব দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আমার পাঠ শুনছেন। খাটের অন্যদিকে আমি বসে পাঠ করছি। দীর্ঘ গল্পপাঠ শেষ হতে– সেই আটের দশকের বর্ষার সন্ধ্যায় উপস্থিত আমরা তিনজনেই যেন আবিষ্ট হয়ে চুপ করে বসে রইলাম কিছু সময়। তারপর মাধব চোখ খুললেন। তাঁর চোখ জলে ভেজা। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে আবেগে জড়িয়ে ধরলেন। ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘এ গল্প আমি নাটক করব। এ গল্প নিয়ে নাটক করার অনুমতি আর কাউকে দিও না তুমি।’
গত শতকের ছয়ের দশকের শেষ থেকে সাতের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টা, পশ্চিমবাংলার যুব সম্প্রদায়ের জীবন নানা জটিলতায় আচ্ছন্ন ছিল। সেই ‘সাতের দশকের’ জটিলতার কোনও এক ব্যক্তিগত সমস্যায় আমাকে ১৯৬৯ সালে পশ্চিম দিনাজপুর যেতে হয়েছিল একবার। তখনও পর্যন্ত সেই জায়গার ভূগোল-ইতিহাস-সমাজবিন্যাস– কিছুই আমি জানতাম না। মানচিত্রের যে-অংশটাকে রাজনৈতিক কারণে ইদানীং খুব গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেই ‘চিকেনস নেক’ অংশের নীচের দিকটায় পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট শহর। সেই শহরে তখন আমার সদ্য-বিবাহিত স্ত্রী থাকত। তখন একাই থাকত। তার এক দিদির বাড়িতে থাকাকালীন ভগ্নিপতি বালুরঘাটে বদলি হতে তাকেও সেখানে আসতে হয়। ঘটনাচক্রে জেলা পরিষদ অফিসে কয়েকজন নতুন কর্মী নিয়োগ হলে ভাগ্যক্রমে সে-ও তাদের একজন হয়। ভগ্নিপতি ফের বদলি হয়ে গেলে সে তখন এক কামরার একখানা ঘরে কোনওরকমে ভাড়া নিয়ে থাকত, একাই। সংক্ষেপে এই হল আমার বালুরঘাট যাওয়ার ভূমিকা।
হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সেখানেই আমার প্রথম আলাপ। বালুরঘাটে যাওয়ার দু’দিন বাদে আমার স্ত্রী দীপিকা আমাকে জানাল যে, হরিমাধববাবু আজ আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। এর আগে, চিঠিতে জেনেছিলাম যে, দীপিকা বালুরঘাটে একটি নাটকের দলে যোগ দিয়েছে। এমনকী, দুটো নাটকে সে অভিনয়ও করে ফেলেছে। একটির নাম ‘বিশে জুন’, অন্যটি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। ‘বিশে জুন’ নাটকটি সম্পর্কে জানতাম। কাজেই সন্ধের সময় যখন হরিমাধব দীপিকার বাসায় এলেন, আমাদের আলাপ এবং অন্তরঙ্গতা হতে সময় বেশি লাগল না।
সেই কথাবার্তার সূত্রেই জানলাম, তাঁদের নতুন নাটকের সংস্থার নাম ‘ত্রিতীর্থ’। বালুরঘাটের দু’টি সমমনস্ক সংস্থা যুক্ত হয়ে তখন সদ্যই এই সংস্থা গড়ে উঠেছে। বালুরঘাট শহরের ভেতরেই একটি যেনতেন প্রকারের প্রেক্ষাগৃহ তাঁরা তৈরি করেছেন। সেখানে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন বসে ও দাঁড়িয়ে নাটক দেখতে পারে; এবং দ্যাখেও। কাঠের স্টেজ, সামান্য কয়েকটি কাঠের চেয়ার, তার পিছনে সারি দিয়ে বেঞ্চি পাতা, মাটির মেঝে, বাঁশের ফ্রেম করা তেকোনা চালার উপরে ত্রিপল খাটানো। এই হল প্রেক্ষাগৃহ। একজন সদস্য শহরের মাঝখানে একখানা জমি দান করেছেন সংস্থার নামে। তাঁর পিতৃপুরুষদের কারও নামে নাম রাখা হয়েছে ‘গোবিন্দ অঙ্গন’।
হরিমাধব মুখোপাধ্যায় বালুরঘাট কলেজের বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক। আমি যে-সময়ের কথা বলছি, সে-সময়টা খুব সম্ভবত– ১৯৬৯ সাল। দীপিকা তাঁকে সম্বোধন করছিল ‘মাধবমামা’ বলে। পরে জেনেছিলাম, তাঁর অফিস-সম্পর্কের এক বান্ধবীর মাধ্যমে হরিমাধব তাঁর সঙ্গে আলাপ করেছিলেন। সেই বান্ধবীর অনুরূপ দীপিকাও তাঁকে প্রথম থেকেই ‘মামা’ ডাকতে শুরু করেছিল।
বালুরঘাট জেলা শহর হলেও সেই প্রথম দিকের দর্শনে আমার জায়গাটাকে বেশ বড় একটা গ্রামের মতোই মনে হয়েছিল। বালুরঘাট শহরের প্রায় সঙ্গেই পূর্ব-পাকিস্তানের একটা সীমান্ত যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। বস্তুত বালুরঘাট মহকুমার প্রায় চারদিক ঘিরেই পূর্ব-পাকিস্তানের সীমান্ত। কেবল শহরটায় ঢোকার একমাত্র পাকা রাস্তার দিকটাই ভারতের অংশ।
দীপিকার ঘরে বসে মুড়িভাজার সঙ্গে চা খেতে খেতে আলাপচারিতায় একটু একটু করে জানতে পারছিলাম, ‘নাট্যমন্দির’ নামে এই ছোট শহরটিতে থিয়েটার ও অন্যান্য অনুষ্ঠান করার একখানা পুরনো পাকা ‘হল’ আছে। সেই হলে নিয়মিত নাটক না-হলেও নাটকের অভিনয় হয়। কলকাতার নাটকের দলকে এনেও, বিশেষ করে শীতকালে, অভিনয় করানো হয়। নাট্যমন্দিরের ব্যবস্থাপনায় কখনও কখনও বড় বা নামী ওস্তাদ বা নৃত্যশিল্পীকে আমন্ত্রণ করে সারারাত ধরে অনুষ্ঠান হয়। এই ছোট শহরটির ঐতিহ্যে জগৎ-বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্কর এবং বিখ্যাত নাট্যকার মন্মথ রায়ের সম্পর্কের কথা নিয়েও আলোচনা করলেন হরিমাধব।
আমার ভারী ভালো লেগেছিল। আমার থেকে সম্ভবত বয়সে সামান্য বড়, সুদেহী দীর্ঘকায় এই তরুণ অধ্যাপক। অভ্যাসের মধ্যে, যেটা তখন আমার মনে হয়েছিল, একটু উচ্চস্বরে বোধহয় কথা বলেন– রসবোধের পরিচয় দিতে; সুযোগ হলেই খুব উচ্চস্বরেই হেসে ওঠেন। খুব অল্প সময়ে অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠার লক্ষণ এই মানুষের– এমন মনে হয়েছিল আমার। হয়তো এই অভ্যাসগুলো থিয়েটারের লোকদের মধ্যে একটু বেশি দেখা যায়।
কিন্তু এই অসম্ভব রকমের সজীব, সেই সন্ধ্যায় প্রায় তিনঘণ্টার আড্ডায় খুবই আন্তরিক, খুবই প্রাণবন্ত এই মানুষটিকে আমার ভীষণ ভালো লেগে গেল। অবশেষে রাত প্রায় দশটা নাগাদ ওঠার আগে হরিমাধব আমাকে বললেন, ‘আপনাকে আসল কথাটাই এখনও বলা হয়নি। যে কারণে আসা, তা হল, দীপিকা যে আমাদের সঙ্গে নাটক করছে– তা তো আপনি ওর কাছ থেকে আগেই শুনেছেন। কিন্তু তখন তো ও বিবাহিত ছিল না। এখন তো জানতে পেরেছি যে, এবার কলকাতায় গিয়ে ও নাকি বিয়ে করে এসেছে। আর আজ আপনার সাক্ষাৎ পেলাম। কিন্তু আপনাদের নাটক যে আমাদের মঞ্চের সাজানো নাটককেও হার মানিয়েছে, সে ব্যাপারটা একটু খোলসা করে বলুন তো। না হলে আমরা আবার কবে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ি!’
হরিমাধব নিজের রসিকতায় নিজেই অট্টহাস্য করে উঠলেন।
আমি মৃদু হেসে বললাম, ‘ঝামেলা একটা আছে, সেটা এরপরে যদি আপনার সঙ্গে আবার দেখা হয় তখন বলব। আজ তো রাত অনেকটাই হয়ে গেছে। আর কাল আমি চলেও যাচ্ছি।’
হরিমাধব অবাক হয়ে বললেন, ‘‘নতুন বউকে ফেলে দু’দিনের মধ্যে চলে যেতে হবে আপনাকে?’’ তারপরে বললেন, ‘আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারের মধ্যে ঢুকছি না। কিন্তু দীপিকা এইভাবে, একা, একটা এরকম ঘরে থাকে, তার উপরে কপালে সিঁদুর পর্যন্ত পরান নাই। সরি, আমি বোধহয় আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে পড়লাম।’
আমি বললাম, ‘আপনার উদ্বেগটা স্বাভাবিক আর সেই কারণেই ওর সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম। একটা কিছু ব্যবস্থা–’
সেবার হরিমাধবের সঙ্গে এইটুকুই কথা হয়েছিল। অনেক কথার মধ্যে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘দীপিকা আমাদের সঙ্গে ত্রিতীর্থে অভিনয় করছে, এতে আপনার আপত্তি নাই তো। এর আগে ওর দিদি-জামাইবাবুর কাছ থেকে একবার অনুমতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো আপনিই, মানে–’
আমি হেসে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিলাম, ‘কোনও আপত্তির কথা ওঠার কারণই নেই। দীপিকার বয়স বাইশ বছর হয়েছে। তাছাড়া সে সর্বার্থেই স্বাধীন জেনানা, কারণ নিজের রোজগারেই–’
হরিমাধব তখন বলেছিলেন, ‘তবুও সামাজিক বিধি মেনে আপনার অনুমতি চেয়ে রাখলাম।’
এরপরে হরিমাধবের সঙ্গে ফের দেখা হল দুই বছর পরে। তখন আমি কলকাতার চাকরি, কলকাতা, মা-বাবা-ভাইবোনের পরিবার ছেড়ে বালুরঘাটে চলে এসেছি। কোনও ধারণাই ছিল না কতদিনের জন্য এখানে আমাকে থাকতে হবে বা থাকব। লেখার প্রথমেই গত শতকের ছয়-সাতের দশকের যুব সম্প্রদায়ের জীবনে যে নানা জটিলতায় জড়িয়ে পড়ার কথা বলেছি, তাতে আমিও কিছুটা জড়িত ছিলাম। ফলে কলকাতা ছাড়তে হল আর এই ছাড়া শেষ হল ২০০৪ সাল পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ২৭ বছর বাস করেছি পশ্চিম দিনাজপুরে অর্থাৎ পরবর্তীকালের দক্ষিণ দিনাজপুরে। পরবর্তী চার বছর কাটিয়েছি মালদা জেলায়। তার পরবর্তী চার বছর মুর্শিদাবাদ জেলায় কাটিয়ে ২০০৪ সালের মে মাসে আমি পুরোপুরি আবার কলকাতাবাসী হলাম।
এই পুরো সময়টার প্রথম ২৭ বছর হরিমাধব মুখোপাধ্যায় এবং আমি শুধু যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে বসবাস করেছি এমন নয়– আমাদের উভয়ের সৃজনশীলতা, যদি এমন কিছু থাকেও, পারস্পরিক সাহচর্যে এবং পারস্পরিক পৃষ্ঠপোষকতায় সাধ্যমতো উৎকর্ষে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাও আমরা করেছি। লাভবান হয়েছি দু’জনেই। এই সময়ে অল্পদিনের মধ্যে হরিমাধব আমার কাছে ‘মাধব-আপনি’ হয়েছিলেন, আর আমি হয়েছিলাম ‘জামাই-তুমি’।
উদাহরণস্বরূপ, কোনও উল্লেখযোগ্য গল্প লিখলে সেই লেখার প্রথম দু’জন পাঠকের মধ্যে মাধব একজন। মাধবের ‘দেবাংশী’ নাটকখানি ত্রিতীর্থের প্রদর্শিত নাটকগুলোর মধ্যে সম্ভবত সেরা। এই নাটক দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে একশত প্রদর্শনীর বেশি অভিনয় হয়েছিল। সব ধরনের দর্শককে মুগ্ধ করে রাখার ক্ষমতা খুব কম ফিল্ম বা নাটকেরই থাকে। কিন্তু ‘দেবাংশী’র এই খ্যাতি জুটেছিল।
‘দেবাংশী’ গল্পটা আমি লিখেছিলাম ১৯৮১ সালে মহাশ্বেতা দেবীর সম্পাদিত পত্রিকা ‘বর্তিকা’র জন্য। যেদিন সন্ধ্যার সময় মাধব সেই গল্প শুনতে এলেন সে দিনটার কথা আমার চোখের সামনে এখনও ভাসে। খাটের একপাশে মাধব দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আমার পাঠ শুনছেন। খাটের অন্যদিকে আমি বসে পাঠ করছি। দীর্ঘ গল্পপাঠ শেষ হতে– সেই আটের দশকের বর্ষার সন্ধ্যায় উপস্থিত আমরা তিনজনেই যেন আবিষ্ট হয়ে চুপ করে বসে রইলাম কিছু সময়। তারপর মাধব চোখ খুললেন। তাঁর চোখ জলে ভেজা। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে আবেগে জড়িয়ে ধরলেন। ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘এ গল্প আমি নাটক করব। এ গল্প নিয়ে নাটক করার অনুমতি আর কাউকে দিও না তুমি।’
কিছুদিনের মধ্যে মাধব আমার ‘দেবাংশী’ গল্প নিয়ে ব্যস্ত রইলেন। তারপর যেদিন ত্রিতীর্থের মঞ্চে বসে সেই নাটক সবাইকে শোনালেন, সেদিন আমিও চোখের জল অবরুদ্ধ রাখতে পারিনি।
নাটক লেখার পর মাধব একটা ঘোরের মধ্যে যেন ঢুকে গেলেন। কী ঐকান্তিক নিষ্ঠা এবং পরিশ্রম করে মহলা পরিচালনা করতে লাগলেন তিনি! সঙ্গে চলছে আবহের উপযুক্ত সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের অনুসন্ধান। গ্রামীণ মনসামঙ্গলের গানের শিল্পীদের খুঁজে পেতে নিয়ে আসা হল। কষ্টকর রেকর্ডিং এবং উপযুক্ত নাট্যমুহূর্তে তার সংস্থাপন। মঞ্চ ও আলোর পরিকল্পনা, পঞ্চাশ-ষাট জন অভিনেতা নিয়ে একটা দুরূহ পরিকল্পনা।
তারপর এল সেই দিনটি। ‘দেবাংশী’ নাটকের প্রথম অভিনয় সন্ধ্যা। মাধব এবং ত্রিতীর্থের অন্যদের সঙ্গে দুরুদুরু বুকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া বুঝতে দর্শকাসনে বসে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। প্রথম দৃশ্যটি শেষ হয়ে দ্বিতীয় দৃশ্যটি শুরু হতে আমি বুঝতে পারলাম এই নাটকের বিজয়যাত্রা শুরু হল। বিরতির সময় গ্রিনরুমে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম মাধবকে। আমাদের দু’জনের চোখেই তখন অশ্রুবান ডেকেছে। একটি বড় মাপের সৃষ্টি স্রষ্টাকে শুধু বড় আকারের প্রতিভাবান হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় না, মহত্তর মানুষেও উত্তরণ ঘটায়।
‘ত্রিতীর্থ’ তার এক প্রজন্মের সময়কালে ৫০টিরও অধিক নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তার মধ্যে মাধবের সেরা কাজ ‘জল’ এবং ‘বিছন’ (মহাশ্বেতা দেবী), ‘তিন বিজ্ঞানী’ (জার্মান নাটক), ‘ভাঙা পট’ (জার্মান নাটক)। আর তাঁর সবচেয়ে সেরা কাজ অবশ্যই ‘দেবাংশী’। তার মধ্যে ৪০-৪২টিই মাধবের লেখা এবং মঞ্চনির্দেশনাও তাঁর। কলকাতার মতো বড় শহরের সংস্থায় এত অধিক সংখ্যায় নাটক মঞ্চস্থ করা হয় কি না, আমার সন্দেহ আছে। কিন্তু ছোট শহরে অল্প সংখ্যক দর্শকের জন্য প্রয়োজন ঘনঘন পরিবর্তন। ফলে এত অধিক সংখ্যায় যদি উৎপাদন বাড়াতে হয়, তা হলে যা হওয়ার ত্রিতীর্থের ক্ষেত্রেই তাই হয়েছিল।
আমি উত্তরবঙ্গ ছেড়েছিলাম ২০০১ সালে। ততদিন পর্যন্ত হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ কদাচিৎ হলেও হত। ২০০১ সালে আমি মুর্শিদাবাদে বদলি হতে আমার স্ত্রী-কন্যাদেরও কলকাতায় স্থানান্তরিত করতে হল। প্রিয় অগ্রজ বন্ধুর সঙ্গে ২০১৬ সালে মাত্র একবারই বালুরঘাটে বইমেলা উপলক্ষে একত্রে ৪-৫ দিন ছিলাম। তারপরে কলকাতায় বার দুয়েক মাত্র দেখা হয়েছে। শেষবয়সে নিরবচ্ছিন্ন বিচ্ছেদ ক্রমশ কদাচিৎ টেলিফোনের বাক্যালাপে সীমাবদ্ধ হয়। মাধবের সঙ্গে আমার শেষবার কথা হয়েছে ২০২২ সালে দীপিকার আকস্মিক মৃত্যুর প্রায় ছ’মাস পরে। আমি জানতাম যে তিনি বার্ধক্যের রোগে আক্রান্ত। আধঘণ্টার বেশি সময় ধরে মাধব চিৎকার করে কেঁদে, নানাপ্রকার আক্ষেপে অনেক কথা বলে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না।
…………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………