Robbar

শিল্পকলার ওপর এত রাগ কেন, তা ভাবার বিষয়

Published by: Robbar Digital
  • Posted:August 11, 2024 6:52 pm
  • Updated:August 11, 2024 6:52 pm  

ধর্মের কথা বললে বলব, মুসলিম বিশ্বের দেশ তুরস্কের রাজধানী-সহ বিভিন্ন শহরে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের বিশাল ভাস্কর্য রয়েছে। সে ভাস্কর্য কেউ ভাঙার কথা ভাবে না। বাগদাদে সাদ্দাম হোসেনে বিশাল ভাস্কর্য ছিল। ইরাকের আলেম সমাজ সে ভাস্কর্য নিয়ে দ্বিমত করেননি। তাহলে আমাদেও দেশে ভাস্কর্য ভাঙা এত জরুরি হয়ে পড়ল কেন? শেখ হাসিনার ওপর বিদ্বেষ থেকে নাকি ধর্মীয় কারণে? এটা বুঝতে সময় লাগবে। 

দীপংকর গৌতম

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশের শিল্পকলার যে বিকাশ ঘটে, ভাস্কর্য শিল্প তার মধ্যে অন্যতম। এই সময়টাতে ভাস্কর্য শিল্প উত্তর উত্তর সমৃদ্ধ হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই, গাজীপুর চৌরাস্তার মোড়ের জাগ্রত চৌরঙ্গী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অপরাজেয় বাংলা’ স্বাধীনতার সংগ্রাম, টিএসসির সড়ক দ্বীপে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, রাজু ভাস্কর্য, চারুকলার ইনস্টিটিউটের ভিতরে রয়েছে একাধিক ভাস্কর্য, বেইলি রোডে আছে শিল্পী নভেরার ভাস্কর্য, শিশু পার্কেও সামনে আছে ‘মিশুক’ নামের একটি ভাস্কর্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শাবাস বাংলাদেশ’-সহ একাধিক ভাস্কর্য।

অপরাজেয় বাংলা' স্বাধীন দেশের এক টুকরো ইতিহাস | ক্যাম্পাস
অপরাজেয় বাংলা

বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শিল্পকলার অসামান্য নিদর্শন সব ভাস্কর্য। সংস্কৃতি চর্চার এই চেতনার বিকাশের মধ্যেই ২০০০ সালের একটু পরেই ভাস্কর্য ও মূর্তির বিতর্ক দেখা দেয়। অনেকে এর মধ্যেও বলেছেন মূর্তি আর ভাস্কর্যেও মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু আরেক পক্ষ বলেছেন, ইসলামে জীবন্ত চলনক্ষম জীবের ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি তৈরি হল মূর্তি বা প্রতিমা তৈরির সমতুল্য, যা পরবর্তীকালে ওই ভাস্কর্যের উপাসনার দিকে ধাবিত করে, এ কারণে ইসলামে এর প্রতি কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ভাস্কর্য, মূর্তি– সবই এক। এগুলো হিন্দুদেরও মূর্তিপূজার নামান্তর। এমন বিভিন্ন সব শাস্ত্রীয় বক্তব্য দিয়ে বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য ভাঙা এবং অপসারণ করা হয়। এর নেপথ্যে মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীলদের ভূমিকা ছিল, এটা স্পষ্ট। বিভিন্ন সময়ে তাদের বক্তব্যে ভাস্কর্য ভাঙার কথা বলার কারণে এ ধারণা স্পষ্ট হয়। ভাস্কর্য অপসারণের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০০৮ সালে। বিদেশিদের কাছে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশ মুখে তৈরি করা হচ্ছিল লালন ভাস্কর্য। সেখানে একতারা, দোতারা হাতে পাঁচজন বাউলের প্রতিকৃতি রাখার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্র, খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের আমির মুফতি নূর হোসেন নূরানী ও মূর্তি প্রতিরোধ কমিটি নামের সংগঠনের হুমকি ও চাপের মুখে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় এটি ভেঙে ফেলে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণ চেয়ে রিট | আইন ও অপরাধ
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রাঙ্গন থেকে অপসারিত হয় এই ভাস্কর্য

একই বছর নভেম্বরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় বিমান অফিসের সামনে স্থাপিত ‘বলাকা’ ভাস্কর্য রাতে ভাঙচুর করে ‘আল বাইয়িন্যাত’ নামে ধর্মভিত্তিক একটি সংগঠনের কর্মীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভাস্কর্যটিতে হামলা করে ভাস্কর্যের নিচের অংশ ভেঙে দেয়া হয়। পুলিশের বাধায় হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে যায়। এরপরে ২০১৬ সালের শেষ দিকে গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে গড়া ন্যায়বিচারের প্রতীক একটি ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বসানো হয়েছিল। ভাস্কর্যটি অপসারণের জন্য হেফাজতে ইসলাম প্রতিবাদ করে আসছিল। এই ভাস্কর্যটির অপসারণ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা রাস্তায় নেমে নিজ নিজ অবস্থানের পক্ষে বিক্ষোভ করেন। কিন্তু তারপরেই হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা ঢাকায় বিক্ষোভ করে এবং রমজান মাস শুরুর আগে এটি সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেয় সরকারকে।

……………………………………………………….

বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শিল্পকলার অসামান্য নিদর্শন সব ভাস্কর্য। সংস্কৃতি চর্চার এই চেতনার বিকাশের মধ্যেই ২০০০ সালের একটু পরেই ভাস্কর্য ও মূর্তির বিতর্ক দেখা দেয়। অনেকে এর মধ্যেও বলেছেন মূর্তি আর ভাস্কর্যেও মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু আরেক পক্ষ বলেছেন, ইসলামে জীবন্ত চলনক্ষম জীবের ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি তৈরি হল মূর্তি বা প্রতিমা তৈরির সমতুল্য, যা পরবর্তীকালে ওই ভাস্কর্যের উপাসনার দিকে ধাবিত করে, এ কারণে ইসলামে এর প্রতি কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

……………………………………………………….

সংগঠনটির আমির আহমদ শফি এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে’। ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের কয়েকজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে নির্মিত হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিবাদী ভাস্কর্য। কিন্তু ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দেখা যায় ভাস্কর্যটি নেই। পরে একই দিন দুপুরের দিকে ওই জায়গায় লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ!’ পরে ভাস্কর্যটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরেও পাওয়া যায়। তার মুখ ছিল স্কচটেপ দিয়ে আটকানো, হাতের বইটা ছিল পেরেকবিদ্ধ। তবে এটি কারা গুম করেছিল– তাদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী এসব শিল্পকলার বিরোধিতা করে আসছিল বেশ আগে থেকেই । তবে এর বিরুদ্ধে সংস্কৃতিকর্মী ও বামপন্থী মহলের প্রতিবাদও ছিল। কিন্তু ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার সর্বশেষ ঘটনাগুলি ঘটেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটাবিরোধী আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেওয়ার পরে।

Statue of Rabindranath Tagore at Dhaka University stirs controversy | Sangbad Pratidin
বিশ্বকবির প্রতিবাদী ভাস্কর্য

এখানে একটি কথা বলে রাখি, শেখ হাসিনার সময়কালে পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও দুর্নীতি ভয়ানক আকার নেয়। ব্যাঙ্ক লোপাট, টাকা পাচার, হঠাৎ হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া দুর্নীতিবাজের আলাদিনের চেরাগের গল্প প্রায় প্রতিদিনই বের হচ্ছিল। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে দ্রব্যমূল্য। ফলে জন-অসন্তোষ উঠেছিল চরমে। অন্যদিকে, আন্দোলনরত শত শত ছাত্রহত্যা। সঙ্গে শিশু, মেহনতি মানুষ ও পেশাজীবীরা গুলিতে মৃত বা আহত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন তাঁর পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দীর্ঘ প্রায় দেড় মাসের আন্দোলনের পর গত সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের ঘটনায় বিজয় উল্লাসে মুখরিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিজয়ের উল্লাসে উদ্বেলিত তরুণ, যুব-সহ সর্বস্তরের মানুষ । বলা যায়, দুপুরের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগের আভাস পেয়েই বিজয় উচ্ছ্বাস শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আসা হাজারো আন্দোলনকারী। ওইদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টিএসসি ও ভিসি চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে, নেচে-গেয়ে, আতশবাজিতে বিজয় উদযাপন করছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে অবস্থিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

‘মৃত্যুঞ্জয় ভাস্কর্য’-এর ওপর বিক্ষুব্ধদের হামলা

এরপরেই বলতে হয় ‘মৃত্যুঞ্জয়’ ভাস্কর্য’র কথা। ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর তারিখে ঢাকার বিজয় সরণিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়’ স্থাপিত হয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত এই চত্বরের সাতটি দেওয়ালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্দোলন ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও অবদানকে চিত্রিত করা হয়। গত ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৩টের দিকে একশ্রেণির জনতাকে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যকে হাতুরি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে। একই দিনে ময়মনসিংহ নগরের কাঁচিঝুলি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালার সামনে জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করা হয়েছে।

শিল্পস্থাপনা ভাঙচুর: আরেক ভয়ের সংস্কৃতি
জয়নুল আবেদিনের মূর্তি ভাঙচুর

দুর্বৃত্তরা ভেঙে ফেলেছে ময়মনসিংহ নগরীর শশীলজ ফোয়ারার মাঝখানে গ্রিক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি ভেঙে এর মুখাবয়ব নিয়ে গিয়েছে তারা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ভাঙচুর করার পাশাপাশি সারা দেশে অজস্র ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঐতিহাসিক নিদর্শন শশীলজ ভাঙার বিপক্ষে লিখেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তিনি ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘জিহাদিরা উপড়ে ফেলেছে ময়মনসিংহের শশীলজের সামনের সেই শ্বেত পাথরের সুন্দর ভাস্কর্য। বাংলাদেশটা এদের!’

ছাত্র-জনতার জয়ে যখন সবাই উদ্বেলিত তখন কে বা কারা ভাস্কর্য ভাঙার কাজে মনোনিবেশ করল? শেখ হাসিনা পদত্যাগের খবর শোনার সঙ্গেই সারাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য-সহ বিভিন্ন ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম ভাঙা শুরু হয়ে গেল– এমন বাস্তবতা এদেশে আর দেখা যায়নি। এই ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্কৃতিকর্মীরা সোচ্চার রয়েছে। একের পর এক প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকে তাঁরা এ ধরনের অপকাণ্ড বন্ধ ও যারা এর সঙ্গে যুক্ত, তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

ভেঙে ফেলা হয়েছে শশীলজ ফোয়ারার মাঝখানে গ্রিক দেবী ভেনাসের ভাস্কর্য

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ৭ আগস্ট জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির সামনে ‘শিল্প স্থাপনা ও শিল্পাঙ্গন ধ্বংসের বিরুদ্ধে আমরা’ ব্যানার থেকে লেখক-শিল্পীদেও এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে এক মানব প্রাচীর তৈরি করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। তারপরেও তাঁরা গানের মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে চলে যায়। সাম্প্রদায়িক হামলা, নির্যাতন, ধর্মীয় উপাসনালয় ও ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে গত ৮ আগস্ট প্রগতিশীল গণসংগঠনসমূহের ব্যানারেও ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে সংস্কৃতিকর্মীদের এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সমবেতরা এ-ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড দ্রুত বন্ধ করে এর দায়ীদেরও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

গত শুক্রবার সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী ও তীরন্দাজের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পরিস্থিতির ব্যাপারে বরেণ্য চিত্রশিল্পী ও চারুশিল্পী সংসদের নেতা জাহিদ মুস্তাফা বলেন, ‘ভাস্কর্য-সহ যেকোনও শিল্পকর্ম ভাঙা মানে আমাদেও ইতিহাস ঐতিহ্যকে অস্বীকার করা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবেই আমাদেও জাতির পিতা, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধেও স্থপতিও। তার ভাস্কর্য ভাঙা এটা গুরুতর অপরাধ। এইসব অপরাধীদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

…………………………………………..

আরও পড়ুন পীযূষ দত্ত-র লেখা: স্বদেশ প্রেম থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি হয়

…………………………………………..

বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি ও বরেণ্য কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু বলেন, ‘ভাস্কর্য শিল্পকলার অন্যতম মাধ্যম। শিল্পকলার এই মাধ্যমটির মধ্য দিয়ে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো ভাঙচুর করা মানে সংস্কৃতির ওপরে একটা বড় ধরনের আঘাত করা। এসব যারা ভাঙছে তারা আমাদেরও বাঙালি জাতিসত্তার শত্রু।’ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিতরঞ্জন দে বলেন, ‘ভাস্কর্য ভাঙার মধ্য দিয়ে আমাদের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিয়ে একটি অপশক্তি ঘোলাজলে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। এদেরও বিরুদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই।’ তবে ভাস্কর্যের যারা বিরোধিতা করে, তারা ছাড়া এ কাজ আর কে করবে?

১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর গণহত্যার ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে

মানুষ তার উত্তেজনা-রাগ-ক্ষোভ থেকে মন্ত্রী-এমপিদেরও বাড়িতে হামলা করেছে। কিন্তু শিল্পকলার ওপরে এত রাগ কাদের, এটা ভেবে দেখা দরকার। ভাস্কর্য সুন্দরের প্রতীক, শিল্পকলার একটি শক্তিশালী মাধ্যম সেটা ভাঙা দরকার হয় কেন? ধর্মের কথা বললে বলব, মুসলিম বিশ্বের দেশ তুরস্কের রাজধানী-সহ বিভিন্ন শহরে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের বিশাল ভাস্কর্য রয়েছে। সে ভাস্কর্য কেউ ভাঙার কথা ভাবে না। বাগদাদে সাদ্দাম হোসেনে বিশাল ভাস্কর্য ছিল। ইরাকের আলেম সমাজ সে ভাস্কর্য নিয়ে দ্বিমত করেননি। তাহলে আমাদের দেশে ভাস্কর্য ভাঙা এত জরুরি হয়ে পড়ল কেন? শেখ হাসিনার ওপর বিদ্বেষ থেকে নাকি ধর্মীয় কারণে? এটা বুঝতে সময় লাগবে। তবে এই সময়ে শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কথা বলবেই। সংস্কৃতির এ দায় পূরণে সবাই এগিয়ে আসবে– ইতিপূর্বের সব ঘটনা সে কথাই বলে।

……………………………………………………

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

……………………………………………………