বিড়াল সত্যিই এমন একটি প্রাণী, যার চাঁদে চলে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ ধরাধামে এদের সর্বত্র অবাধ বিচরণ। সেই ট্র্যাক রেকর্ড ধরলে এ মোটেই অবাস্তব কিছু নয়। ধরা যাক, কোনও বাঙালি মহাকাশচারী হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তাঁর সাধের চিড়ে-খইভাজার ব্যাগে লুকিয়ে এসেছে কোনও বিড়াল। পোষ্যটি নেহাতই ‘সুবোধ’, যদিও ভাজা থেকে কাঁচা সব মাছই সে উল্টেপাল্টে দিব্যি খেতে পারে।
গুগল এআই ওভারভিউ এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিল যে, নভোচারীরা চাঁদে বিড়ালের সঙ্গে খেলতেন। ভুল উত্তরের কারণে গুগলের এই পরিষেবা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। লোকে হাহাহিহি করছে। এআই-এর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কিন্তু এআই যতই যা বলুক না কেন, পৃথিবীতে এই উত্তরের পাশে আর কেউ এসে দাঁড়াক না কেন, আমি দাঁড়াবই। কারণ এ উত্তর একেবারেই ঠিক। আই মিন, হতিই পারে।
বিড়াল সত্যিই এমন একটি প্রাণী, যার চাঁদে চলে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কারণ ধরাধামে এদের সর্বত্র অবাধ বিচরণ। সেই ট্র্যাক রেকর্ড ধরলে এ মোটেই অবাস্তব কিছু নয়। ধরা যাক, কোনও বাঙালি মহাকাশচারী হঠাৎ আবিষ্কার করলেন, তাঁর সাধের চিড়ে-খইভাজার ব্যাগে লুকিয়ে এসেছে কোনও বিড়াল। পোষ্যটি নেহাতই ‘সুবোধ’, যদিও ভাজা থেকে কাঁচা সব মাছই সে উল্টেপাল্টে দিব্যি খেতে পারে। এক্ষেত্রে মনিব সঙ্গে আনেননি, তাই নিজেই চলে আসার মতো উচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। বিড়ালের গণতন্ত্র হল এই। সে কোনও ভূতের রাজার বরপ্রাপ্ত, ফলে ‘যেখানে খুশি যাইতে পারি’র ক্যারিশমা তার রয়েছে।
ফিরে আসি সেই মহাকাশচারীর বিড়ালের কাছে। তার তো ফেরার বাস নেই। ক্যাব নেই। তাছাড়া এসেই যখন পড়েছে, সঙ্গেই থাক। ফলে আগামী কয়েকমাস মহাকাশে সঙ্গী হবে। সে বেড়াল মনিটরে চোখ রেখে নানা পর্যবেক্ষণে ব্যস্ত। সময় সময়ে খেলাধুলো করছে। শূন্যে গড়াগড়িও দিচ্ছে!
পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া হলে গাল ফোলাচ্ছে। আবার কাজের ফাঁকে গলার কাছে হাত বুলিয়ে দিলে সেই পরিচিত ঘড়ঘড় আওয়াজ। চিলি-চিকেন খাওয়ার বায়না।
কী বলছেন? গাঁজাখুরি গল্প? বিড়ালের স্পেস সুট, অক্সিজেন মাস্ক কোথায়? ধ্যাত! বাঙালি হয়ে এত বেরসিক হলে চলে। বেড়ালের ওসব লাগে নাকি? ন’খানা প্রাণ নিয়ে যে ধরাধামে এসেছে, মহাকাশের ঝক্কি কাটাতে পারবে না, এ হয় বলুন? হ্যাঁ, বিড়াল তবু মারা যায় জানি, সে এক দুঃখের ব্যাপার। কারণ তারা তো আর কড় গুনতে পারে না। কেসি নাগের অঙ্কবই আঁচড়ালেই তো আর অঙ্কে সিদ্ধি মেলে না।
আপনারাই বলুন, বেড়াল যেতে পারে না এমন কোনও জায়গা আছে?
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
মুরগির ডিমগুলোয় শুয়ে তা দিচ্ছে। এমনকী, বাচ্চা হওয়ার পর ছোট বাচ্চাগুলোকে কোলের কাছে শুইয়ে কল্পিত আঁচলের স্নেহ বিতরণ করছে। জিভ দিয়ে মুরগির বাচ্চাদের আদর করছে। পাশে বিব্রত মুরগিমাতা চেষ্টা করছেন বাচ্চাদের ফিরে পেতে। কিন্তু বেড়ালের ওঠার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ভাইরাল ভিডিও-তে এমন ছবি দেখলে রসিকজন বলে উঠবেন, ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।’ বাঘের মাসি এখন মুরগিসন্তানদেরও মাসি।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
বেড়ালরা স্বাভাবিকভাবে ল্যাদখোর আর ঘরকুনো না হলে দেখতেন! এরা মেরু অভিযান করত, এভারেস্ট জয় করে একহাতে দেশের পতাকা ধরত, অন্য হাতে মোহনবাগানের। তারপর গলা ছেড়ে ‘আমাদের সূর্য মেরুন’ গাইত। কিংবা ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর বেশে জাহাজে চড়ে মৎস্য-শিকারে বেরত।
তাছাড়া ‘সাতশো চুহা খাকর বিল্লি চলি হজ্বকো’ কাহাবত শোনেননি নাকি মশাই?
মুরগির ডিমগুলোয় শুয়ে তা দিচ্ছে। এমনকী, বাচ্চা হওয়ার পর ছোট বাচ্চাগুলোকে কোলের কাছে শুইয়ে কল্পিত আঁচলের স্নেহ বিতরণ করছে। জিভ দিয়ে মুরগির বাচ্চাদের আদর করছে। পাশে বিব্রত মুরগিমাতা চেষ্টা করছেন বাচ্চাদের ফিরে পেতে। কিন্তু বেড়ালের ওঠার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। ভাইরাল ভিডিও-তে এমন ছবি দেখলে রসিকজন বলে উঠবেন, ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।’ বাঘের মাসি এখন মুরগিসন্তানদেরও মাসি। সভ্যতার ইতিহাস-বিজ্ঞান-জীবনপ্রণালী সব হিসাব গুলিয়ে যায় বিড়ালের কাছে।
বাড়ির বেড়ালকে থাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়ায় হয়েছে। তিনি কিন্তু সেখানে থাকবেন না৷ তাঁর মাথার মধ্যে ঘুরছে আপনার ব্যাগের ওপর বসার বাসনা। আপনি কাজে ব্যস্ত? ব্যস! আপনার ব্যাগের জমি অধিগৃহীত হয়ে গেল। ব্যাগের উপর শুয়ে ঝিমুবেন। আপনার ব্যাপারটি ভালো লাগল না? তাড়িয়ে দিলেন, তখন এমন একবার দুষ্টু চোখে তাকাবেন। যেন আপনি কত বড় অন্যায় করে ফেলেছেন সেই অপরাধবোধে ভুগতে বাধ্য৷ যদি বেড়ালপুরাণ পড়ে থাকেন, তবে নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারবেন আপনার পোষ্যটি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করল, ‘দাঁড়াও হচ্ছে তোমার৷ তাড়িয়ে দেওয়ার ফল ভালো হবে না।’
সাধের ল্যাপটপের উপর সাধুবেশে বসে আছে এক চারপেয়ে। তপস্যা করছে। নামাতে গেলেই রেগে আগুন!
ক্রমে বুঝবেন ল্যাপটপ, সিপিইউ, ঢাউস কেমিস্ট্রি বই ইত্যাদি বেড়ালদের প্রিয় বসার জায়গা৷ তারপর আরেকটু অধিকার জন্মালে আপনার কোল হয়ে উঠবে ওদের সাম্রাজ্য। মগের মুলুক বললেও ভুল হবে না।
আধখোলা বইয়ের দিকে এমন মনোযোগ দিয়ে তাকাবে যেন এবারই জয়েন্ট এনট্রানসে র্যাঙ্ক করে দেবে। একটা সরু ফ্রেমের চশমা পরিয়ে দিলেই শেয়ালপণ্ডিতের মার্জার সংস্করণ বেড়ালপণ্ডিত।
যুক্তির বুনোট সামান্য আলগা করলেই বেড়াল জলের মতো। যে পাত্রে রাখা হবে তার আকার ধারণ করবে। ছোট বেড়ালকে দেখবেন বয়ামের ভিতর ঢুকে তার আকার নিয়েছে। কখনও জুতোর ভিতরে ঢুকে জুতোর সাইজে খাপ খেয়ে গেছে। জলের পাইপ, ওষুধের বাক্সও এদের বাসস্থানের তালিকা থেকে বাদ যায় না। এমনকী আশপাশে ভূতের কস্টিউম পেলে সেটা পরে ভয় দেখিয়ে বেড়াবে!
এর মধ্যেই কত মান-অভিমান, টানাপোড়েন। বিছানায় উঠতে দেওয়া হয়নি। আর রক্ষে নেই! লাফ মেরে উঠে পড়েছেন মশারির ছাদে। মশারির মধ্যভাগ ঝুলে দোলনা হয়ে গেছে৷ আরামে ঘুমাচ্ছেন মার্জারসুন্দরী৷
বেড়াল থাকে হৃদয়ে, নিঃসঙ্গ মানুষের বাঁচার সঙ্গী হয়ে। একা মানুষের কথার সঙ্গী হয়। যার কথা বলার সঙ্গী নেই, কত অব্যক্ত কথা শোনে৷ পাশে এসে বসে৷ মনখারাপ উবে যায়৷
‘কিউরিওসিটি কিলস দ্য ক্যাট’-এর সবচেয়ে বিচ্ছিরি উদাহরণ হচ্ছে বিড়ালদের এমন এমন জায়গায় থাকার প্রবণতা, যেখানে বিপদ হতে পারে। গৃহস্থের বাড়ির বেড়াল গিয়ে শুয়ে আছে স্ট্যান্ডের টোটোর নিচে। ওটাই তার জিরানোর জায়গা৷ টোটো চালক সাতপাঁচ না ভেবেই চালিয়ে দিলেন। আহত হয়ে বেড়াল ফিরল ঘরে। মালিক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বললেন, ‘আর যেও না বাছা।’
তবু কে কার কথা শোনে! আবার ছুটে যাবে দুষ্টু বাচ্চার স্বভাবের মতো৷
…………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়-এর লেখা: দোষে নয়, আলুর গুণে থাকুন
…………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ল্যাদখোর বেড়ালদের কথা অবশ্য আলাদা। তারা ঘুমের মধ্যেও ঘুমাচ্ছে এমন স্বপ্ন দেখে৷ ঘুমের জন্যই তাদের বেঁচে থাকা।
বিড়াল যদি মেঝেতে খুব গড়াগড়ি খায় তখন আপনাকে বুঝতে হবে, সে এই মুহূর্তে কিছুটা সময় চাচ্ছে এবং খেলতে চাইছে।
পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে গাড়ির গ্যারাজ, বেড়ালদের বিচরণ সর্বত্রই। সর্বঘাটের কাঁঠালিকলা!
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এক নেটনাগরিক জানিয়েছেন, তাঁর পোষ্য মার্জারের দাপটে গ্যারাজে অন্য কোনও প্রাণী ঢুকতে পারে না৷ কিন্তু কী আশ্চর্য! ঝড়-বাদলের দিনে সবাইকে ডেকে এনে আশ্রয় দিয়েছে। নিজে বসেছে গাড়ির ছাদে। রাজার মতো।
কিছুটা অতীতে গেলে গেলে জানা যাবে এই বেড়ালের নাম সিম্বা। একটি দৃশ্যে তার তালিমের ব্যাপারটি ফুটে উঠেছে। তাকে শেখানো হচ্ছে, ‘একটা কথা মনে রেখো সিম্বা। একজন সাধারণ ব্যক্তি মনে করে সে কী পাবে। কিন্তু একজন সত্যিকারের রাজা ভাবে সে কী দিতে পারবে।’ শ্রেণি সচেতন বেড়াল এমনই! তারা সমবণ্টনে যৌথখামারে বাস করে।
রেঞ্জটা বুঝুন স্যর! বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা থেকে ব্যাটম্যানের পাশে লাস্যময়ীরূপে।
বেড়াল সর্বত্রগামী। সে কি চিনের প্রাচীর থেকে কিংবা আমাদের ফোরটি টু বিল্ডিং থেকে টুক করে চাঁদে ঝাঁপ দিতে পারে না? আলবাত পারে। অন্য গ্রহেও ঝাঁপ দিতে পারত, কিন্তু এ তো চাঁদ, আমাদের মামা বলে কথা! তাছাড়া পৃথিবীরই উপগ্রহ। এ জিনিস– যাঁরা বেড়ালপ্রেমী তাঁরা নির্ঘাত বুঝবেন। যাঁরা বুঝলেন না এতদসত্ত্বেও, তাঁরা এবার না-হয় বিড়াল পুষে দেখুন।
………………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
………………………………………..