নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে, এক গপ্প শুনেছিলাম এক মহারাজের কাছে। পরীক্ষা দেওয়ার পর, প্রশ্নপত্রটি জল-মিছরি দিয়ে খেয়ে নেওয়ার চল ছিল সেখানে। তা সম্ভবত বন্ধ হয়, ওই কাগজের কালি শরীরের পক্ষে তেমন স্বাস্থ্যকর নয়, এই কথা ভেবে। যদিও এই নিয়মে ছেদ পড়লেও পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র নিয়ে পুনর্বিবেচনা বন্ধই ছিল। যা হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে এত বৈঠকখানা খুলে হবেটা কী! কবি তো বলেই গিয়েছেন– সত্যরে লও সহজে।
রেজাল্ট বস্তুটা যতক্ষণ না বাস্তবের ঝুলি থেকে বেরয়, ততক্ষণ দাঁতই নেলকাটার। তবে দেখবেন, এই ভোটের বাজারে, বাম হাতের নখ চিবোতে চিবোতে নীল কালিটাই না সাঁটিয়ে ফেলেন! এমনিই বামহাত স্মৃতিনির্ভর– খুব সুখকর কিংবা স্বাদু, তা নয়, তার ওপর নখে ক্যালোরি, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস কত– তা আমি জানি না বাপু। তবে গণতন্ত্রর ছাপখানা পেটে গিয়ে নির্ঘাত পেট গুড়গুড় করবে। সারা দেশেরই করে, বাঙালির পেট তো এমনিই গড়বড়ে। তাছাড়া, আজ অবধি এমন কোনও ডায়েটিশিয়ানের কথা শুনিনি, যিনি নিয়ম করে নখ খেতে বলেছেন। তাও জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে টেনশনকালে মানুষ এই বিস্বাদ বস্তুটিকে চিবিয়েই থাকে। ছাড়ুন সেসব কথা। প্রশ্নটা অন্য, দাঁত-নখ ব্যাপারখানাই আসলে হিংসার সঙ্গে জড়িয়ে!
ভেবে দেখবেন, সব রেজাল্টেরই একখানা এগজিট পোল থাকে। বলেন কী, চোখে দেখেননি এমন? আলবাত দেখেছেন। পরীক্ষা চলাকালীন যে কোনও স্কুলের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখুন, যে-পড়ুয়া সবার আগে পরীক্ষার হল থেকে মহানন্দে পরীক্ষা সালটে বেরিয়ে এসেছে, মুক্তির আনন্দ আর হাত টনটন– এইরকম এক বৈপরীত্যে টাল খাচ্ছে, তখনই তাকে ঘিরে একেবারে মিলনমেলা! প্রশ্ন কেমন হয়েছে? সিলেবাস থেকে ছিল? গার্ড কেমন ছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি বহু জিজ্ঞাসার ঝাঁক এসে পড়েছে হু হু করে। অ্যাকোয়ারিয়ামে সদ্য ফেলা কেঁচোর কাছে মাছেরা যেমন, এক্কেবারে সেইরকম। তখন তার আসল গার্জেনটি ভিড় ঠেলে সন্তানের হাত পাকড়াও করে, ‘আগে বেরলি কেন? রিভাইস দিয়েছিস তো?’ পড়ুয়া হা-ক্যাবলা তাকিয়ে থাকে। বুঝতেই পারে, এই ঘোরতর পাপের ফল পাওয়া যাবে রেজাল্টের গরমিল হলেই। তারপর চলে দিনের দ্বিতীয় পরীক্ষাটি। উত্তরগুলো সঠিক কি না, তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ। পরে, প্রাইভেট টিউশনেও এই একই উত্তর দিয়ে যেতে হয়।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
সব রেজাল্টেরই একখানা এগজিট পোল থাকে। বলেন কী, চোখে দেখেননি এমন? আলবাত দেখেছেন। পরীক্ষা চলাকালীন যে কোনও স্কুলের বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখুন, যে-পড়ুয়া সবার আগে পরীক্ষার হল থেকে মহানন্দে পরীক্ষা সালটে বেরিয়ে এসেছে, মুক্তির আনন্দ আর হাত টনটন– এইরকম এক বৈপরীত্যে টাল খাচ্ছে, তখনই তাকে ঘিরে একেবারে মিলনমেলা! প্রশ্ন কেমন হয়েছে? সিলেবাস থেকে ছিল? গার্ড কেমন ছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি বহু জিজ্ঞাসার ঝাঁক এসে পড়েছে হু হু করে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে, এক গপ্প শুনেছিলাম এক মহারাজের কাছে। পরীক্ষা দেওয়ার পর, প্রশ্নপত্রটি জল-মিছরি দিয়ে খেয়ে নেওয়ার চল ছিল সেখানে। তা সম্ভবত বন্ধ হয়, ওই কাগজের কালি শরীরের পক্ষে তেমন স্বাস্থ্যকর নয়, এই কথা ভেবে। যদিও এই নিয়মে ছেদ পড়লেও পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র নিয়ে পুনর্বিবেচনা বন্ধই ছিল। যা হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে এত বৈঠকখানা খুলে হবেটা কী! কবি তো বলেই গিয়েছেন– সত্যরে লও সহজে।
এ তো গেল সত্যিকারের পরীক্ষার কথা। প্রেমও তো পরীক্ষাই একরকম। যেনতেন প্রকারেণ প্রপোজ করার পর, অন্যদিক থেকে ‘হ্যাঁ’ আসছে বা ‘না’– তার এগজিট পোল নিয়েই তো মেতে থাকে প্রেমিক-প্রেমিকেরা। এক মুহূর্তে উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, পর মুহূর্তে পাল্টে যায়। মনে মনেই তৈরি হতে থাকে যুক্তি-প্রতিযুক্তির যত ঝঞ্ঝাসফল হরমোনাল লোচা। একখানা গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে ছিঁড়ে প্রেমের ভবিষ্যৎবাণী চলে। ভাবুন তো, এইভাবে যদি সমস্ত লোকসভা-বিধানসভার ভোটের বিচার চলত, কী কেলোর কীর্তিটাই না ঘটত! সমস্ত কেন্দ্রের সব প্রার্থী মিলে হু হু করে ফুল ছিঁড়ছেন! পায়ের কাছে ফুলশয্যার খাটের মতো জমা হয়ে আছে অসংখ্য পাপড়ি। রি-কাউন্টিং হলে আর দেখতে হবে না! তবে ওই– গোলাপের বিক্রি বাড়ত, ভালোবাসা বাড়ত না।
বেনারসে, লাল রঙের একটা পুরনো বাড়ির কথা মনে পড়ছে। নাম: মোক্ষ ভবন। ১২টা অল্প আলোর ঘর। খুব সামান্য আসবাব সেইসব ঘরে। কারা থাকতে পারেন সেখানে? শুধুমাত্র তাঁরাই– যাঁরা জরাগ্রস্থ, দ্রুতই চলে যাবেন অন্যলোকে। জীবনের নানা কাণ্ডকারখানা মিটিয়ে, শরীর যখন মৃত্যুকে গ্রহণ করে নিতে চায়, তখন অনেকেই চান বেনারসে মৃত্যুবরণ করতে। বেনারসই– কারণ ঈশ্বরের আপন ভূমিতে মোক্ষলাভ সম্ভব, এই বিশ্বাস বহুকাল ধরে চালু। ১২ দিন ধরে চলে সেই এগজিট পোল, প্রতিদিন একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। কখনও আগেই চলে আসে এই মৃত্যু, জীবনের ফলপ্রকাশ হয়ে যায়। আর কখনও কখনও এমনও হয় যে, মৃত্যু আসে না, অপেক্ষা করায়।
সব এগজিট পোল তাই ঠিক না হলেও চলে। ভুল করলেও এই মহাজীবনের আয়ু বেড়ে যায় ঠিক।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved