প্রিয়াঙ্কা যদি রায়বরেলিতে প্রার্থী হন, তা হলে অনিবার্যভাবে জনমানসে ফিরবেন ইন্দিরা। কংগ্রেসিদের ভাষ্য অনুযায়ী রায়বরেলি যদি ‘ভুল’ না করে, তা হলে তিন প্রজন্মের বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পথ প্রশস্ত হতে পারে। অনেক যদি, কিন্তুর ওপর বিষয়টা দাঁড়িয়ে। আসল প্রশ্ন, সোনিয়া-রাহুল কি জামার আস্তিন থেকে আদৌ তাঁদের শেষ তাসটি বের করবেন?
রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর রায়বরেলির মানুষকে সোনিয়া গান্ধীর বার্তা প্রিয়াঙ্কার এখানে ভোটে দাঁড়ানোর জল্পনাকে আরও প্রবল করেছে। আদৌ প্রিয়াঙ্কা ভোটের রাজনীতিতে নামবেন কি না, নামলেও সেটা রায়বরেলি হবে কি না– এইসব প্রশ্নের সঠিক জবাব পেতে বড়জোর আর একমাস। জোটের পর, আমেঠির সঙ্গে রায়বরেলি যে কংগ্রেসের জন্য ছাড়া থাকবে, সে-কথা সমাজবাদী পার্টির কর্ণধার অখিলেশ যাদব অনেক আগেই ঘোষণা করে রেখেছেন। আমেঠিতে রাহুল প্রার্থী হবেন, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। সুতরাং, গান্ধী পরিবারের হাতে রায়বরেলি থাকলে প্রার্থী প্রিয়াঙ্কাই।
রায়বরেলিতে ‘তিন প্রজন্মের মিথ’ অটুট থাকবে কি না– এখন প্রশ্ন সেটাই। পারিবারিক ব্যবসা তিন প্রজন্ম ধরে জামার আস্তিন থেকে আস্তিনে প্রবাহিত হয় বলে যে স্কটিশ প্রবাদ রয়েছে, তা আজকের দিনে সবটা কার্যকর নয়। বিশ্বজুড়ে এখন অনেক ব্যবসার গড় আয়ুই ১৫ বছর পার করতে পারছে না। আবার বহু পারিবারিক ব্যবসা তিন প্রজন্ম অতিক্রম করে বহমান। ব্রাজিলীয় প্রবাদ বলে, ‘ধনী পিতা, সম্ভ্রান্ত সন্তান ও গরিব নাতি’। অর্থাৎ তিন প্রজন্মেই খেলা শেষ। শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই তিন প্রজন্মের একটা মিথ আজও মানুষের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। প্রথম প্রজন্ম শুরু করে শূন্য থেকে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। চতুর্থ প্রজন্ম আবার শূন্যে পৌঁছে যায়।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
১৯৬৭ সালে স্বামীর কেন্দ্রে প্রার্থী হন ইন্দিরা গান্ধী। প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র হিসেবে সেই থেকে ইতিহাসে জায়গা করে নেয় উত্তরপ্রদেশের এই ছোট অখ্যাত শহরটি। ১৯৭৭ সালে এই রায়বরেলিতে ঐতিহাসিক নির্বাচনে জনতা দলের রাজ নারায়ণের কাছে পরাজিত হন ইন্দিরা। একবছর পর তিনি যখন কর্নাটকের চিকমাগালুর থেকে উপনির্বাচনে জিতে আসেন, তখন কংগ্রেস বাংলার দেওয়ালে দেওয়ালে লিখেছিল, ‘রায়বরেলি ভুল করেছে, চিকমাগালুর করেনি, সিপিএম জেনে রেখো ইন্দিরা এখনও মরেনি।’ বাঙালির রায়বরেলির সঙ্গে পরিচয় সেই থেকে।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
রায়বরেলিতে প্রিয়াঙ্কার দাঁড়ানো নিয়ে জল্পনা শুরু হতেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে এক্ষেত্রেও কি তিন প্রজন্মের মিথ সত্য হবে? ১৯৫২ সালে স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কার ঠাকুরদা ফিরোজ গান্ধী রায়বরেলিতে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালেও তিনি জেতেন। ১৯৬৭ সালে স্বামীর কেন্দ্রে প্রার্থী হন ইন্দিরা গান্ধী। প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্র হিসেবে সেই থেকে ইতিহাসে জায়গা করে নেয় উত্তরপ্রদেশের এই ছোট অখ্যাত শহরটি। ১৯৭৭ সালে এই রায়বরেলিতে ঐতিহাসিক নির্বাচনে জনতা দলের রাজ নারায়ণের কাছে পরাজিত হন ইন্দিরা। একবছর পর তিনি যখন কর্নাটকের চিকমাগালুর থেকে উপনির্বাচনে জিতে আসেন, তখন কংগ্রেস বাংলার দেওয়ালে দেওয়ালে লিখেছিল, ‘রায়বরেলি ভুল করেছে, চিকমাগালুর করেনি, সিপিএম জেনে রেখো ইন্দিরা এখনও মরেনি।’ বাঙালির রায়বরেলির সঙ্গে পরিচয় সেই থেকে।
২০০৪ সালে ইন্দিরার পুত্রবধূ সোনিয়া যখন রায়বরেলিতে গিয়ে দাঁড়ালেন, তখন ফের একবার দেশবাসীর ‘রায়বরেলি রোমান্টিকতা’ উসকে উঠল। সেই সময় নির্বাচনের রিভিউতে কাগজে কাগজে লেখা হল ‘রায়বরেলি বাজার মে ঝুমকা গিরা রে’। ভোটে জেতার পর সোনিয়া প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার প্রত্যাখ্যান করায় রায়বরেলির বাজারে হয়তো প্রত্যাশিত ‘ঝুমকা’ ঝরে পড়েনি। তবে নিশ্চিত করেই গত দু’দশক লোকসভা ভোট এলেই দেশের নজর রায়বরেলিতে থেকেছে। রায়বরেলি নামটার সঙ্গে গান্ধী-পরিবার আরও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: গোয়ার জাতিগত অস্মিতা কি দেশের মিশ্র সংস্কৃতিকেই ধূলিসাৎ করছে না?
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
প্রিয়াঙ্কার মধ্যে একসময় ইন্দিরার ছায়া দেখত দেশবাসী। ইন্দিরা ছিলেন প্রিয়দর্শিনী। কিশোরীবেলার শেষপ্রান্তে তিনি যখন শান্তিনিকেতনে পড়তে গিয়েছিলেন, তখন রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রিয়দর্শিনী নামকরণ করেছিলেন। সোনিয়ার ভোট প্রচারের হাত ধরে যখন প্রিয়াঙ্কা রাজনীতির ময়দানে পা রাখলেন, তখন আরও এক প্রিয়দর্শিনীর আবির্ভাবে মেতেছিল দেশ। রূপে, লাবণ্যে, চলনে-বলনে কী অদ্ভুত মিল ঠাকুরমা ও নাতনির। কিন্তু যে-কারণেই হোক, প্রায় আড়াই দশক রাজনীতির ময়দানে পদচারণার পরেও ঠাকুরমার ক্যারিশমার ধারে কাছে পৌঁছতে পারেননি রাজীব-তনয়া। রায়বরেলি প্রিয়াঙ্কাকে সেই জনমোহিনী ক্ষমতা দিতে পারবে কি না, এখন রাজনৈতিক মহলে চর্চা এটাই।
প্রিয়াঙ্কা যদি রায়বরেলিতে প্রার্থী হন, তা হলে অনিবার্যভাবে জনমানসে ফিরবেন ইন্দিরা। কংগ্রেসিদের ভাষ্য অনুযায়ী রায়বরেলি যদি ‘ভুল’ না করে, তা হলে তিন প্রজন্মের বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পথ প্রশস্ত হতে পারে। অনেক যদি, কিন্তুর ওপর বিষয়টা দাঁড়িয়ে। আসল প্রশ্ন, সোনিয়া-রাহুল কি জামার আস্তিন থেকে আদৌ তাঁদের শেষ তাসটি বের করবেন? যদি রামমন্দিরের হাওয়ায় রায়বরেলি প্রিয়াঙ্কাকে ফিরিয়ে দেয়? যদি রায়বরেলি ৭৭ সালের মতো ‘ভুল’ করে? আরও কয়েকদিন এইসব প্রশ্নের বিস্তর কাটাছেঁড়া হবে।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved