নবযৌবনের সরণি নবজাতক লিখবে নিশ্চিত। তার একহাত ধরে থাকবে ভুবনগোলক, অন্যহাত ছুঁয়ে থাকবে রোববারের হৃদয়, জয়যাত্রায় যাও গো, নতুন। পাঠককে স্বাগত জানালেন রোববার-এর সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়।
কী কাণ্ড! আঠেরো হওয়ার আগেই রোববার লায়েক হয়ে গেল। ডানা গজিয়েছে তার, সন্ধে নামার আগে বাড়ি ফেরে না, কাগজপাতা ড্রইংরুমে আর তার মন আঁটে না। শেষ কৈশোর এমনই অমলিন, এমনই বেপরোয়া। যৌবন জলতরঙ্গ রোখে কার সাধ্য। বড় হওয়ার এর’মই নিয়ম। নব্যযুবক গায়– আমায় রাখতে যদি আপন ঘরে, বিশ্বঘরে পেতাম না ঠাঁই। সেই বিশ্বযোগে উড়ল রোববারের নতুন পালক। হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে যা একদিন দেশ থেকে ছড়িয়ে পড়বে দেশান্তরে। রোববার ডট ইন। এ এক নতুন পরিচয়, নতুন ভ্রমণ। হাওয়া-গাড়িতে সওয়ার হোক তামাম পাঠক। বাংলা ভাষার প্রতিটি কামরায় খুশির বর্ণমালা উপচে উঠুক উৎসবে।
মনে পড়ছে ‘রোববার’ ম্যাগাজিনের জন্মলগ্ন। ঋতুদাকে সামনে রেখে চার-পাঁচজনের একটা দল বাংলা সাহিত্য পত্রিকার কাশবনে পা রেখেছিল। ছিল সৃঞ্জয় বোসের ভরসার হাত, অফিসের অফুরান শুভেচ্ছা। মাত্র সতেরো বছরে রোববার তার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছে অক্ষর-অঙ্গনে। সহজ নয়, এমন ‘পর্দানসীন’ দুনিয়ায়, যেখানে প্রত্যেকেরই চোখে ঠুলি, হাতে স্ক্রিন। যেখানে প্রতিটি লেখা পড়ানোর নিত্যনৈমিত্তিক চ্যালেঞ্জ। ‘রোববার ডিজিটাল’ বুক ঠুকে এর থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ নিতে চলেছে। শুধু একদিন কেন, সপ্তাহে সাতদিনই রোববার হোক। যে কাগজের নাম ‘সংবাদ প্রতিদিন’, তারাই তো চ্যালেঞ্জ নেবে সাহিত্য প্রতিদিন করার। আরও বেশি লেখা জন্ম নিক, আরও বেশি লেখক। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যাঁরা টেনশনে ভুগছেন, তাঁদের জন্যই এই এক্সটেনশন– রোববার ডট ইন। রোববার গল্প, কবিতা নির্ভর নয়। চিরকালই এ পত্রিকা কলাম নির্ভর। নবনীতা দেবসেনের ‘ভালোবাসার বারান্দা’, জয় গোস্বামীর ‘গোঁসাইবাগান’, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রোববার লাইব্রেরি খোলা’, সুধীর চক্রবর্তীর ‘দেখা না দেখায় মেশা’ – রোববার জন্ম দিয়েছে অবিস্মরণীয় সব কলামের! ঋতুপর্ণ ঘোষের এডিটোরিয়ালের নামটি রোববারের দ্যোতক। ফার্স্ট পার্সন। বাকি সব কলামগুলির আত্মাতেও কিন্তু সেই প্রথম পুরুষ বসে আছে। নিজের ভাবনা, নিজের কাঠামো, নিজের অবস্থান– এই অন্তরঙ্গতার স্মৃতির তুলোট রোববার জুড়ে।
নতুন রোববার ডিজিটালও কি একই রাস্তায় হাঁটবে? না, নিজের রাস্তা সে নিজেই তৈরি করে নেবে একদিন। যেমন ‘রোববার’ করেছিল। ঋতুদার ইচ্ছে ছিল রোববার হয়ে উঠুক প্রকৃত লাইফস্টাইল এক ম্যাগাজিন, যা সাহিত্য-অনুসারী। আজ এত বছর পর রোববারের নবকলেবরে সবচেয়ে বোধহয় খুশি হতেন ঋতুদা। হয়তো তাঁর, এগিয়ে থাকা সে-ভাবনাটুকুর মর্যাদা দিতেই এই রোববার.ইন।
নবযৌবনের সরণি নবজাতক লিখবে নিশ্চিত। তার একহাত ধরে থাকবে ভুবনগোলক, অন্যহাত ছুঁয়ে থাকবে রোববারের হৃদয়, জয়যাত্রায় যাও গো, নতুন। হে পাঠক, স্পর্ধায় এই মাথা তোলার ঝুঁকিতে সময় করে একটু উঁকি দিন। আপনার লাই ও লাইকে ধন্য হোক এই নবীনকিশোর।
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
সম্পাদক, রোববার