জেন ওয়াইয়ের জীবনে এখন নতুন ট্রেন্ড– ‘স্লিপ ডিভোর্স’। শুনে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। বিচ্ছেদ বটে, তবে বিবাহিত জীবনে নয়। এমনকী, শারীরিক সম্পর্কেও ছেদ পড়ে না। শুধু ঘুমের সময় বিছানা আলাদা হয়ে যায়। এখন অনেক রিলেশনশিপ কাউন্সিলরই নাকি সম্পর্কের তিক্ততা বাঁচাতে এই পরামর্শ দিচ্ছেন।
জীবনের নানা ওঠাপড়া যেন গায়ে না লাগে, এটাই মানুষের অন্যতম লক্ষ্য। কিন্তু বাস্তব এত সহজ নয়। তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে জীবনকে বয়ে নিয়ে যেতে হয়।
জীবনের মতোই বিবাহিত জীবনেও নানা ধরনের ওঠাপড়ার সাক্ষী থাকি আমরা। প্রেম-পিরিতির অনেক আঠা, অনেক জ্বালা, অনেক রোমাঞ্চ। উথালপাথাল প্রেমজীবন পেরিয়ে যখন চার হাত এক হয়, তখন শুরু হয় আসল পরীক্ষা। ধৈর্য ধরে উইকেটে টিকে থাকার লড়াই। স্টাম্প যেন ছিটকে না যায়। কখনও সার্কাসের ট্রাপিজের মতো ব্যালান্সের খেলাও চলে। একদিকে মা-বাবা, অন্যদিকে স্বামী বা স্ত্রী, বর্ধিত পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন। ভারসাম্যে ঘাটতি হলেই পপাত ধরণি তলে।
এভাবেই এক ছাদের তলায় বছরের পর বছর কাটাতে কাটাতে সম্পর্ক এক সময় পানসে লাগতে শুরু করে। জীবনটা হয়ে ওঠে একঘেয়ে। নানা ছোটখাটো বিষয়েও কর্তা-গিন্নির মধ্যে শুরু হয় অশান্তি। অনেকেই তখন ভাবেন, আলাদা হয়ে যাওয়াটাই সেরা উপায়। বিচ্ছেদে হয়তো শান্তি আসে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এতগুলো বছরের স্মৃতি, ভাল লাগা– এক লহমায় কি মিথ্যে হতে পারে?
অনেকে বলেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। অতীতের অনেক কিছুই নতুন নামে, নব রূপে ফিরে আসে। আবার কোনও দেশের প্রচলিত প্রথা নয়া আঙ্গিকে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। এক সময় বাঙালি পরিবারে দু’তিনটি সন্তান জন্মের পর কর্তা-গিন্নির শয্যা পৃথক হয়ে যেত। ছেলেপুলে নিয়ে শুতেন স্ত্রী। কর্তার ঠাঁই হত আলাদা খাটে, কখনও আলাদা ঘরে। তাতে কিন্তু তাঁদের জীবনে ভালোবাসার ঘাটতি হত না। সুখে-দুঃখে ঠিকই জীবন কেটে যেত। আবার জাপানে বহুদিন ধরেই বিবাহিত দম্পতিদের আলাদা বিছানায় শোওয়ার প্রথা রয়েছে। প্রথমত, জাপানি মায়েরা বাচ্চাদের সঙ্গে ঘুমোন। কারণ, এতে বাচ্চার তাপমাত্রা থাকে স্থিতিশীল, বজায় থাকে হার্ট রেট। এটা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত। বাচ্চাদের সঙ্গে মায়ের ঘুমোনো তাই জাপানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাপানি সিনেমা-সিরিজেও দেখা যায়, তাদের খাট-বিছানা অনেক ছোট। অর্থাৎ একা ঘুমানোর সংস্কৃতি বেশ পুরনো।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………….
এই ‘স্লিপ ডিভোর্স’ কেন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা? বিজ্ঞানসম্মত কারণ হিসেবে তাঁদের ব্যাখ্যা, কোনও কারণে ঘুমের দফারফা হলে হতে পারে বিপদ। শরীরে-মনে নেমে আসে ক্লান্তি, মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। ছোট ছোট সমস্যা থেকে সম্পর্কে ভাঙন পর্যন্ত ঘটতে পারে। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে শুলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতেই পারে। হয়তো দু’জনের ঘুমের ধরন ও সময় আলাদা।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………….
সেটাই এখন জেন ওয়াইয়ের জীবনে নতুন ট্রেন্ড– ‘স্লিপ ডিভোর্স’। শুনে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। বিচ্ছেদ বটে, তবে বিবাহিত জীবনে নয়। এমনকী, শারীরিক সম্পর্কেও ছেদ পড়ে না। শুধু ঘুমের সময় বিছানা আলাদা হয়ে যায়। এখন অনেক রিলেশনশিপ কাউন্সিলরই নাকি সম্পর্কের তিক্ততা বাঁচাতে এই পরামর্শ দিচ্ছেন। এই ‘ডিভোর্স’ দম্পতিদের দূরে ঠেলার বদলে নাকি কাছে টানে। পিরিতির আঠা নাকি আরও ঘন হয়। এই প্রবণতা এখন দারুণ জনপ্রিয়। আমেরিকান ‘অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন’-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তাতে অংশ নেওয়া এক তৃতীয়াংশ পুরুষই রাতে স্ত্রীর থেকে আলাদা ঘুমোতে পছন্দ করেন।
এই ‘স্লিপ ডিভোর্স’ কেন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা? বিজ্ঞানসম্মত কারণ হিসেবে তাঁদের ব্যাখ্যা, কোনও কারণে ঘুমের দফারফা হলে হতে পারে বিপদ। শরীরে-মনে নেমে আসে ক্লান্তি, মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে। ছোট ছোট সমস্যা থেকে সম্পর্কে ভাঙন পর্যন্ত ঘটতে পারে। স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে শুলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতেই পারে। হয়তো দু’জনের ঘুমের ধরন ও সময় আলাদা। কেউ ফুলস্পিডে পাখা না চললে ঘুমোতে পারেন না। কারও আবার এসি চললে আপাদমস্তক ঢাকতে হয়। কেউ এসি সহ্যই করতে পারেন না। কেউ হালকা আলো জ্বেলে রাখতে চান। কারও চোখে আলো পড়লে ঘুমই আসে না। কারও আবার রাতে কয়েকবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার অভ্যাস। সঙ্গীর ঘুম পাতলা হলে তাতে সমস্যা। অনেকে হাত-পা ছোড়েন। কারও থাকে নিদ্রাহীনতা বা স্লিপ অ্যাপনিয়া। সঙ্গীর রাত জেগে ল্যাপটপে অফিসের কাজও অনেকের অসুবিধার কারণ। আর নাসিকা গর্জনের সমস্যা তো আছেই। অনেক সময় ঝগড়া হলেও পরস্পরের পাশে শুতে অস্বস্তি হয়। মান-অভিমানের পালা না মেটা পর্যন্ত কেউ কাছে আসতে চান না। এ সব কারণে যুগ যুগ ধরেই দাম্পত্যে ‘কলহ’ জিনিসটার আমদানি। আর তা থেকে মুক্তি পেতেই অনেকে ঝুঁকছেন ‘স্লিপ ডিভোর্স’-এর দিকে।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন প্রহেলী ধর চৌধুরী-র লেখা: ১০ মিনিট শেষমেশ পাংচুয়াল হল
…………………………………………………………………………………………………………………………………………….
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না ঘুমিয়ে শরীরের বারোটা বাজানোর দরকার নেই। প্রয়োজন নেই সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ানোর। তার চেয়ে আলাদা ঘরে, পৃথক বিছানায় শুলেই মঙ্গল। এতে পর্যাপ্ত ঘুম হবে, মন হবে সতেজ। শরীর থাকবে চাঙ্গা। দূর হবে ক্লান্তি-অবসাদ। ফুরফুরে মন নিয়ে নতুন করে প্রেমের জোয়ারে গা ভাসাতে পারবেন। এবং এতে নাকি দম্পতিদের মধ্যে তিক্ততাও কমছে বলে উঠে এসেছে সমীক্ষায়!
তবে বিপরীত মতও কিন্তু কম নেই। অনেকেই মনে করেন, জীবনসঙ্গীকে পাশে নিয়ে ‘আরামে ঘুমোনো’ গেলেই সবচেয়ে ভালো। সম্পর্কের গভীরতার জন্য শারীরিকভাবে কাছাকাছি থাকার কোনও বিকল্প নেই। মনোবিদ ওয়েন্ডি ট্রক্সেল বলছেন, এতে দু’জনেই গভীর নিরাপত্তার অনুভূতি পান। ঘুমের সময় আলিঙ্গন, চুম্বন, গল্পে ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরণ হয়। ফলে ঘুম ভালো হয়। সকালে একসঙ্গে ঘুম থেকে ওঠার আবেশও অন্য রকম। বরং আলাদা ঘুমোলে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা থাকে বেশি। অকারণে সন্দেহ করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। কারও মতে, আলাদা শুলে সম্পর্কের উষ্ণতা, অন্তরঙ্গতা কমে যায়। তখন অন্য পুরুষ বা মহিলার প্রতি আকর্ষণ তৈরি হতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত।
তাই কী কারণে আলাদা শোওয়ার প্রয়োজন, সেটা আগে বুঝে নেওয়া দরকার। সঙ্গত কারণ থাকলে ‘স্লিপ ডিভোর্স’ নিশ্চয়ই স্বাগত। কিন্তু ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ হয়ে নিজের পায়ে কুড়ুল মারার ভুল করাও বাঞ্ছনীয় নয়।