একা থাকতে হবে ভাবলেই অনেকের মনের মধ্যে এক ভয়ের চিত্র ভেসে ওঠে। ‘একা বাড়িতে মরে পড়ে আছি’– এই উদ্বেগ-বাক্য বহু ‘একা’ মানুষের মুখে শুনেছি। এমন তো ঘটেও। আমরাও খবরে পড়ি অমুক বাড়ি থেকে কঙ্কাল উদ্ধার হল। একা থাকা বা অনেকে মিলে থাকা দিয়ে মৃত্যু ঠেকানো যায় না। মৃত্যু বাড়ির লোকসংখ্যা গুনে গুনে আসবে না। কিন্তু মৃত্যুর পর আমাদের দেহ কঙ্কালে পর্যবসিত হবে কি না, সেটা আটকানো সম্ভব।
(লেখাটি মৃত্যু নিয়ে। যদি মনে হয় পড়লে অস্বস্তি হবে, পড়বেন না। বা মাঝপথেও যদি অসুবিধে হয় থেমে যাবেন)
ফ্ল্যাটের মূল দরজাটা লক করার সময় কথাটা মাথায় এল। আচমকা মনে হল, আজ রাতেই যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে কী হবে? অসুস্থ হলে কী হবে, নয়। খুব নির্দিষ্টভাবে মনে হল মৃত্যু হলে কী হবে…
একা থাকি। যে পরিচারিকা দিদি সাধারণত থাকেন, তিনিও তখন লম্বা ছুটিতে দেশের বাড়ি গিয়েছেন। তাহলে? তাহলে আবার কী? মরেই যদি যাই, বাকিটা তো আমাকে সামলাতে হবে না। আমাকে তো পৃথিবী ত্যাগ করার জন্য দরজার লক খুলতে হবে না। যারা বেঁচে রইলেন– এ ভাবনা তো তাঁদের। সাময়িক আরাম হতে না হতেই কয়েকটা মুখ মনে পড়ল। পরের দিন সকালে হয়তো মেসেজ করবেন। উত্তর না পেয়ে ফোন। তখনও না পেয়ে বাড়ি এসে বেল বাজাবেন। তারপর? কী ভীষণ হয়রানি হবে! আহা রে, খুব মায়া হল। মৃত্যু-পরবর্তী ‘আমি’ না হয় এসবের ঊর্ধ্বে, কিন্তু মৃত্যু-পূর্ববর্তী ‘আমি’র তো কিছু দায়িত্ব বর্তায়। যাঁরা আমার দৈনন্দিনতায় জুড়ে থাকেন, তাঁদের এমন একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবই বা কেন? আচমকা খবর পাওয়া মৃত্যুশোক একরকম। কিন্তু এই অস্থিরতা, দরজা ভাঙার লোক খোঁজা এবং তারপর মৃত্যু আবিষ্কার! এ তো ট্রমাটিক গ্রিফের আদর্শ উৎস! যাঁদের ভালোবাসি, তাঁদের আমার কারণে এমন অভিজ্ঞতা হোক, কখনও চাই না। কিন্তু যাতে এমন না হয়, তার কী ব্যবস্থা নিয়েছি?
কেন এতদিন এই নিয়ে ভাবিনি? কেন ধরে নিয়েছি এমনটা অন্যের সঙ্গে হলেও আমার ক্ষেত্রে হবে না? ভাবিনি, কারণ সেটাই দস্তুর। আমরা মৃত্যু নিয়ে কবিতা লিখতে পারি, প্রিয়জন আগে গেলে আমার কী হবে– এই নিয়ে আগাম কষ্ট পেতে পারি, এমনকী, কঠিন অসুখ হলে ‘মারা যাব না তো’– এই নিয়ে আতঙ্কিত হতে পারি, কিন্তু যেদিন সত্যি মারা যাব– সেদিনটি মাথায় রেখে কিছু বাস্তবসম্মত ভাবনা-চিন্তা করি না। পরিকল্পনা করি না। কাছের মানুষের কাছে এ প্রসঙ্গ তুললে তারাও ‘এসব কী অলুক্ষুণে কথা’ বলে থামিয়ে দেন। কিন্তু এ তো আর অন্য গ্রহের প্রাণী হানা দিলে কোথায় যাব এমন পরাবাস্তব বিষয় নয়, যা না ভাবলেও চলবে। এ অতি-বাস্তব। অবশ্যম্ভাবী। ফলে, এ নিয়ে নিজের সঙ্গে কিছুটা স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন।
সেই রাতে মৃত্যু নিয়ে নিজের সঙ্গে একটা সৎ সংলাপে আসি এবং কিছু সিদ্ধান্ত নিই।
কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বলব। তার আগে মৃত্যু-ভাবনা নিয়ে কিছু সংশয় নিরসন করা প্রয়োজন।
মৃত্যু-চিন্তা মানেই মৃত্যু-প্রার্থনা নয়। মৃত্যুবাসনাও নয়। এটি আত্মহননের সুপ্ত লক্ষণ নয়। অবসাদ নয়। মৃত্যু অনিবার্য। সে ভোগান্তির পর আসতে পারে, আবার অতর্কিতেও আসতে পারে। সুতরাং মৃত্যু-পরবর্তী দেহ এবং স্থাবর-অস্থাবর যা রয়ে গেল, তা নিয়ে আমার মৃত্যুর পর পরিপার্শ্ব কী করবেন, সেই নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত। সেটি নির্ভরযোগ্য কাউকে জানিয়ে রাখা উচিত। তিনি যদি বলেন, এক্ষুনি এসব কথা কেন, তাঁকে বলুন মৃত্যু এখন-তখন মেনে আসে না।
যেসব মানুষ একা থাকেন তাঁদের আরেক ধাপ এগিয়ে ভাবা প্রয়োজন, তাঁদের কাছে অন্যেরা পৌঁছবেন কীভাবে? এমনকী, যদি তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাক্যব্যয় করার মতো, চলাফেরার মতো অবস্থায় না থাকেন, তাঁর কাছে চিকিৎসাই বা পৌঁছবে কী করে?
‘একা’ শব্দটি শোনা মাত্র আরেক সমস্যা আসে। যাঁরা আমার মতো একা থাকেন, বার্ধক্য এবং মৃত্যু নিয়ে সমাজ তাঁদের সারাক্ষণ ভয় দেখাতে থাকে। এই ভয় আমাকে দেখিয়ে লাভ হয়নি, কারণ আমি অতি অল্প বয়সে দেখেছি এক বাড়ি লোকের মধ্যেও মৃত্যু এক ঝটকায় আসতে পারে। বয়সের রেয়াত না করে আসতে পারে। কোনও অসুখের নোটিস নেই, তাও আসতে পারে। এবং যার কাছে আসে সে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর সঙ্গে একা হয়ে যায়! লোকজন নাগালে থাকলে হয়তো তার পারলৌকিক ক্রিয়ার বন্দোবস্ত দ্রুত হয়। কিন্তু পাশে থাকলেই ধরে রাখা যায় না।
একা থাকতে হবে ভাবলেই অনেকের মনের মধ্যে এক ভয়ের চিত্র ভেসে ওঠে। ‘একা বাড়িতে মরে পড়ে আছি’– এই উদ্বেগ-বাক্য বহু ‘একা’ মানুষের মুখে শুনেছি। এমন তো ঘটেও। আমরাও খবরে পড়ি অমুক বাড়ি থেকে কঙ্কাল উদ্ধার হল। একা থাকা বা অনেকে মিলে থাকা দিয়ে মৃত্যু ঠেকানো যায় না। মৃত্যু বাড়ির লোকসংখ্যা গুনে গুনে আসবে না। কিন্তু মৃত্যুর পর আমাদের দেহ কঙ্কালে পর্যবসিত হবে কি না, সেটা আটকানো সম্ভব।
‘এই যদি বিয়ে করত সংসার থাকত তাহলে অমন বেঘোরে পড়ে থাকত না’– অনেকেই বলেন। ঠিক বলেন না। সঙ্গী মানেই ‘অমর’ সঙ্গী নয়। কে আগে যাবেন, আমরা জানি না। সন্তান থাকলেও তারা সর্বদা এক শহরে না-ও থাকতে পারেন। বিপদের খবর পৌঁছনো এবং তাদের এসে উঠতে পারার মধ্যে অনেকটা সময় কেটে যাওয়া অসম্ভব নয়। সুতরাং বিয়ে এবং সন্তান দিয়ে এ সমস্যা আটকানো যাবেই এমন বলা যায় না।
অনেকে হয়তো বহুকাল একা থেকেই অভ্যস্থ এবং দিব্য থাকেন। অনেকে আগাগোড়া একা থাকতে চেয়েছেন বা থেকেছেন এমন না-ই হতে পারে। হয়তো একসময় অনেকের মধ্যেই থেকেছেন। কিন্তু জীবনের নানা অধ্যায় পেরিয়ে আজ একা। একা থাকা কখনও সিদ্ধান্ত কখনও পরিস্থিতি। কিন্তু একার জীবন শুধুই আতঙ্কের, অসহায়তার, বিপন্নতার– এই ধারণা ভুল। একার জীবনের কিছু চ্যালেঞ্জ অবশ্যই থাকে। চ্যালেঞ্জ যৌথ জীবনেরও থাকে। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য হওয়ারও কিছু ঝামেলা থাকে। একা মানেই কঠিন জীবন এবং ভবিষ্যতে তাঁর কঙ্কাল উদ্ধার হবে– এইটা যেন আমরা প্রথমেই ধরে না নিই।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
একা থাকি। যে পরিচারিকা দিদি সাধারণত থাকেন, তিনিও তখন লম্বা ছুটিতে দেশের বাড়ি গিয়েছেন। তাহলে? তাহলে আবার কী? মরেই যদি যাই, বাকিটা তো আমাকে সামলাতে হবে না। আমাকে তো পৃথিবী ত্যাগ করার জন্য দরজার লক খুলতে হবে না। যারা বেঁচে রইলেন– এ ভাবনা তো তাঁদের। সাময়িক আরাম হতে না হতেই কয়েকটা মুখ মনে পড়ল। পরের দিন সকালে হয়তো মেসেজ করবেন। উত্তর না পেয়ে ফোন। তখনও না পেয়ে বাড়ি এসে বেল বাজাবেন। তারপর?
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
এক্ষেত্রে আরেকটি বক্তব্য উঠে আসে। আজকের যুগে সবাই শুধু নিজেরটুকু নিয়েই থাকে। কেউ কারও খবর রাখে না। এই যুক্তির কিছুটা সত্যতা থাকলেও বিষয়টি অত সরলরৈখিক নয়।
যে ব্যক্তি একা, সে হয়তো মিশতে গিয়েও পিছিয়ে আসছে। বহু সময় আমরা অনাবশ্যক কৌতূহল দেখিয়ে ফেলছি। অযাচিত উপদেশ দিতে থাকছি। সে আদৌ স্বচ্ছন্দ কি না, না ভেবেই বলে বসছি – ‘ওই তো, ও একা থাকে ওর বাড়িতেই বিজয়া সম্মেলনী হোক।’ বস সস্ত্রীক সিনেমা যাবেন বলে তাঁদের সন্তানের বেবি সিটিংয়ের জন্য যে কর্মচারী ‘একা’ থাকেন, তাকেই ডেকে পাঠাচ্ছেন। অন্যত্র বলছেন, আমরা তো ওঁকে নিজেদের পরিবার ভাবি। সারাদিন খাটনির পর তার নিজের সঙ্গে একটা মোলায়েম যাপন থাকতে পারে। আমরা সেই অবসরটুকুতেও ঢুকে পড়ছি।
কোন কথা তাঁর ব্যক্তিগত, কোথায় তাঁর অস্বস্তি– সে দিকে নজর দিচ্ছি না। মেশা মানে তো তাঁর ইচ্ছে-অনিচ্ছে পাত্তা না দিয়ে ঘাড়ে চেপে বসা নয়! ফলে যিনি একা থাকেন তিনি নিরুপায় হয়ে চারপাশে দেওয়াল তুলতে বাধ্য হচ্ছেন । তখন আবার বলছি, ‘আমরা তো ডাকি, ওই তো মেশে না।’ ‘উদ্ধত’ ‘স্বার্থপর’ অথবা বোধহয় কিছু ‘সমস্যা’ আছে বলে আমরা বহু সময় দায় সারছি। কেন সে একসময় আসত, আজ আর আসে না– সে উত্তর নিজের মধ্যে খতিয়ে দেখছি না।
অনেক সময় ব্যক্তিরও দায় থেকে যাচ্ছে। হয়তো পরিপার্শ্ব যথেষ্ট সংবেদনশীল, কিন্তু তিনি নিজেই সকলকে বাতিল করে বসে আছেন। কোনও এক-আধজন মনের মতো আচরণ করেনি বলে গোটা পাড়া, পুরো কমপ্লেক্স, আপামর বন্ধুমহল ত্যাগ করছেন। অথবা কোথাও গেলেই এমন ঝগড়া অশান্তি বাধাচ্ছেন যে, সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে।
অনেকে আবার কেবল দু’-একজনকে কেন্দ্র করেই বেঁচে থাকায় বিশ্বাসী। হয়তো মা এবং পুত্র। একে অপরের বহির্প্রাণ অন্তঃপ্রাণ। এবার যে মুহূর্তে একজন প্রাণ ত্যাগ করছেন, অন্যজনের কেবল আয়ুটুকু রয়ে যাচ্ছে– জীবনীশক্তি থাকছে না। তিনি আর কারও সঙ্গেই মেশার জোর পাচ্ছেন না। তাগিদ পাচ্ছেন না।
কেউ হয়তো পণ করছেন, যাকে খুব ভালোোবেসেছিলাম সে যোগাযোগ রাখে না বলে আর কারও ডাকে সাড়া দেব না। অমুক আমার সঙ্গে রইল না তাই সবাই ছেড়ে যাবে। এঁরাও নিজেদের ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছেন। অভিমানে গুটিয়ে নিচ্ছেন। অনুমানে গুটিয়ে নিচ্ছেন।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
পড়ুন রত্নাবলী রায়ের লেখা: চিনে মনখারাপের ছুটি, ভারতে কি সম্ভব?
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
যে সমস্ত ব্যক্তি জীবদ্দশায় সমাজের প্রতি তীব্র বিরাগ এবং অভিমান লালন করছেন, তিনি হঠাৎ মৃত্যুর আগে নাগরিক কল্যাণে ব্রতী হবেন– এমনটা ধরে নেওয়া কঠিন। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ কীভাবে উদ্ধার হবে, তাঁর কঙ্কাল দেখে প্রতিবেশী ছাদ আঁতকে উঠবে কি না– এ নিয়ে তিনিও মাথা ঘামাচ্ছেন না। এই দূরত্ব কয়েক দিনের নয়। এর ইতিহাস থাকে। দীর্ঘতা থাকে। সমাজ এবং ব্যক্তি উভয়েরই ভূমিকা থাকে। দায়িত্ব থাকে। স্বাস্থ্য-সুবিধা এবং নাগরিক সুরক্ষার পরিকাঠামোর ভূমিকাও এক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। অনেক সময় নিয়মের গেরো, ফর্মের দৈর্ঘ্য, কিংবা অ্যাপের জটিলতার ঠ্যালায় হিতকারী প্রকল্পের সঙ্গে জনসাধারণের লিঙ্ক চিরবচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
সমাজকে বুঝতে হবে ‘একদিন আমার বাড়ি এসো’– শোনাটুকুর অপেক্ষা না করে– ‘একদিন তোমার বাড়ি যাব’ বললে অন্যের অস্বস্তি হতে পারে। সে তেমন উৎসাহ দেখাল না তবু একই আর্জি জানাতে থাকলে অস্বস্তি বিরক্তিতে পরিণত হতে পারে। কেউ হয়তো দু’-এক পা মিশে দেখছেন। তাঁকে তাঁর মতো করে সহজ হতে দিন। সংকেত নিন। পরিমিতি রাখুন। মাত্রা চিনুন। অন্যের সীমারেখার প্রতি সম্মান রেখেও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যায়।
উল্টোদিকে, যিনি মনে করছেন ‘বাবাই একমাত্র আশ্রয় হতে পারে’, ‘স্ত্রীর মতো করে কেউ আমায় বোঝে না’– তাঁরাও ওই অতি প্রিয় সম্পর্কগুলির বাইরেও কিছু যোগসূত্র খুলুন। হয়তো অমুকের সঙ্গে যতটা ভালো লাগত, ততটা লাগবে না, কিন্তু কিছু মানুষ যারা অপ্রয়োজনে ‘কেমন আছেন’ বা ‘ঠিক আছিস তো?’ লিখবেন, এমন পরিসর প্রত্যেকের থাকা দরকার। সে মানুষ রক্তের সম্পর্কের, বৈবাহিক সূত্রের কিংবা প্রেম না-ই হতে পারে। হয়তো দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু কিংবা পুরনো শিক্ষার্থী। কী সূত্রে পরিচয়– সেটা বড় কথা নয়। নিয়মিত যোগাযোগের সূত্রটুকু থাকুক। ওটাই আসল।
অনেকে আছেন, যাঁরা মাঝে মাঝে সম্পূর্ণ বেপাত্তা হয়ে যান। আবার ভেসে ওঠেন। তাঁরাও যদি একা থাকেন, নিদেনপক্ষে এক-আধটা মেসেজের উত্তর দিন। ‘বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু ঠিকই আছি’– এটুকুই লিখুন। জানান দিন। যোগাযোগ ধারণ করতে পারাও একটা চর্চা। যে কোনও সম্পর্কের মতো সেও যত্ন চায়। কিছুটা ধারাবাহিকতা চায়।
সেই রাতে মৃত্যু বিষয়ক যে কেজো সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছিলাম, এবার তাতে আসি। বোধ-শরীর-বাকশক্তি শেষ নিশ্বাস অবধি একই রকম সচল থাকবে– এমনটা নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায় না। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ নথির একটা করে কপি এবং ব্যাঙ্কের কিছু প্রাথমিক তথ্য নির্ভরযোগ্য কারও কাছে পাঠিয়ে রাখা প্রয়োজন। এমনকী, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য যা দরকার, তা যেন ঘনিষ্ঠ বৃত্তের কারও কাছে থাকে। যে ডাক্তার সাধারণত চিকিৎসা করে থাকেন, তাঁর নাম্বারও পাঠিয়ে রাখা দরকার। উইল করে রাখুন। সেটি বাড়ির কোথায় থাকে আস্থাভাজন কাউকে জানিয়ে রাখুন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, চাবি! অন্যান্য নথির সঙ্গে বাড়ির চাবির ডুপ্লিকেটও আমি ছাড়া আরেকজনের কাছে যেন অবশ্যই থাকে– এইটা খুব স্পষ্টভাবে সেই রাতে টের পাই।
যিনি চলে যাচ্ছেন, তাঁর দরজা তো মৃত্যু খুলে দেয়। কিন্তু যাঁরা রয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা যেন বাড়ির দরজা পেরতে পারেন। যাঁর সঙ্গে নৈকট্যের দাবি রাখি, তাঁর কাছে একটা চাবিও থাকুক।