ডিজিটাল মাধ্যমে পথচলা শুরু হল রোববার-এর। আর সেখানেও থেকে গেল পত্রিকার প্রথম পুরুষের প্রথম ভাবনা। ঋতুপর্ণ-ভাবনার পথ ছুঁয়েই নতুন ভোরের রং রোববার-এ। নতুন পথচলার শুরুতে নতুন ভাবনার কথা জানালেন সংবাদ প্রতিদিন-এর প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস।
ডিজিটাল মাধ্যমে আসছে রোববার– ঋতুপর্ণ ঘোষের সতেরো বছরের আগের ভাবনা নতুন করে বাস্তবায়িত হল। কেন বলছি, খুলে বলি।
সে প্রায় দেড় দশক আগের কথা। ‘রোববার’-এর এই পথচলায় যখন নতুন ভোরের রং, তখন মনে পড়ছে যাত্রাশুরুর সকালগুলো। সংবাদপত্রের সঙ্গে সপ্তাহান্তে নানা স্বাদের একটি পত্রিকা পৌঁছে যাক বাঙালির ড্রয়িংরুমে, এই ছিল আমাদের পরিকল্পনা। প্রাথমিক ভাবে ভাবা হয়েছিল, সাহিত্যের পাশাপাশি সমসাময়িক নানা বিষয়-বৈচিত্রে সেজে উঠবে ‘রোববার’। সম্পাদক ঋতুপর্ণ ঘোষের সেই ভাবনাতেই শুরু হয়েছিল পত্রিকার পথচলা। কিছুদিন পর একটু পথবদল। বিশেষ একটি সংখ্যার পর থেকে আমরা অনুভব করি, বাংলায় সাপ্তাহিক রুচিশীল সাহিত্য পত্রিকার গভীর অভাব। পাঠকের প্রতিক্রিয়া দেখে ঋতুদাই এ-লক্ষণটি চিহ্নিত করেন। তার পর থেকে মূলত সাহিত্য পত্রিকা হিসাবেই জারি থাকে রোববার-এর জয়যাত্রা। প্রতি সপ্তাহে বাঙালির হাতে পৌঁছে যাওয়া এমন একটি পত্রিকা, যা আলোড়িত করে বাঙালির মননকে। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। ঋতুদার চলে যাওয়ার পর ‘রোববার’-এর ক্যাপ্টেন অনিন্দ্য। প্রায় সতেরো বছরের পথচলায় জমা হয়েছে কত না মণিমুক্তো! সত্যি বলতে, যে বাঙালি ভাল লেখা পড়তে ভালবাসেন, ‘রোববার’ ছাড়া তাঁদের রোববার আক্ষরিকই সম্পূর্ণ হয় না। স্বয়ং ঋতুপর্ণ ঘোষ থেকে শুরু করে নবনীতা দেবসেন, তারাপদ রায়, সমরেশ মজুমদার, জয় গোস্বামী, রবিশঙ্কর বল, অশোককুমার মুখোপাধ্যায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু– আরও কতজন খ্যাতনামা লেখক কলম ধরেছেন এই পত্রিকার জন্য। নতুন লেখকরাও অক্ষরসূত্রে তাঁদের জাত চিনিয়েছেন এই পত্রিকার পাতাতেই। বিষয়-বৈচিত্রে, ধারাবাহিকের টানে ধীরে ধীরে বাঙালি আপন করে নিয়েছে পত্রিকাটিকে; বলা যায়, ক্রমে বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে ‘রোববার’।
সেই অভিজাত ঘরানাতেই এবার ছায়াপাত নয়া প্রযুক্তির। আসলে সময়টা বদলেছে দ্রুত। ডিজিটাল অভ্যাস এখন আমাদের কাছে দূরতম নক্ষত্র তো নয়ই, বরং যাপনের সংস্কৃতি। পরিবর্তনই সজীবতার লক্ষণ, প্রাণের চিহ্ন। অতএব যুগ বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এই পরিবর্তনের পথে হাঁটা। বিশ্বায়িত পৃথিবীতে গত দেড় দশকে পেশার সূত্রে যে বাঙালির বাস বিশ্বের নানা প্রান্তে, তাঁরাও হয়তো এক সময় পাঠক ছিলেন এই পত্রিকার। ভৌগলিক দূরত্বের কারণে টান পড়েছে আত্মিক সম্পর্কেও। অতএব তীব্র হয়েছে পত্রিকা হাতে না-পাওয়ার আপশোস। সে-কথা আমার কাছেও এসে পৌঁছেছে বহুবার। এই পরিবর্তন তাই যেমন অবধারিত, তেমনই বাস্তব অনুসারী। তাছাড়া নয়া প্রজন্মের পঠনপাঠনের অভ্যাস অনেকটাই মোবাইল কিংবা কম্পিউটার নির্ভর। যুগের আন্তরিক চাহিদা মেনেই আধুনিক ও সমসাময়িক হল ‘রোববার’, যার পোশাকি নাম robbar.in। রোববার-এর যে-আভিজাত্য, সাংস্কৃতিক কৌলীন্য, তা থেকে আমরা সরে আসছি না। অর্থাৎ এই পরিবর্তন চরিত্রগত নয়, বরং অনেক বেশি মাধ্যমগত। তবে, নতুন কিছু সংযোজনও থাকল। সেই প্রথম দিনে যে সমসাময়িকতার কথা ভাবা হয়েছিল, নয়া সংস্করণে তা বাস্তবায়িত হল। রোববার ডিজিটাল যেমন প্রবহমান বাস্তবকে ছুঁয়ে থাকবে, বিশ্লেষণী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে সাম্প্রতিককে, তেমনই তা ছুঁয়ে থাকবে সাহিত্য-সংস্কৃতির সনাতনী পথ। রবীন্দ্রনাথ থেকে অধ্যাত্ম, রান্না থেকে ফ্যাশন– কোনও বিষয়ই ব্রাত্য নয়। আবার ডিজিটাল বলেই তা লঘুও নয়। রুচিশীলতা ও সংস্কৃতিমনস্কতা বজায় রেখেও আধুনিক সময়ের নাড়ির স্পন্দন ছুঁয়ে থাকাই রোববার ডিজিটাল-এর লক্ষ্য। আমার বিশ্বাস, ডিজিটাল মাধ্যমে ‘রোববার’-এর পথচলা একদিকে যেমন প্রবীণের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের বাঙালিকেও টেনে রাখবে, তেমনই নতুন সময়ের লেখালিখির ক্ষেত্রেও একটা নয়া পরিসর খুলে দেবে। গোটা বিশ্বের কাছেই নতুন লেখকরা তুলে ধরতে পারবেন তাঁদের ভাবনাবিশ্ব। ‘রোববার’-এর জন্য সপ্তাহান্তের অপেক্ষা যেমন কমল, তেমনই ডিজিটাল মাধ্যমে ভাল লেখা পড়ার সুযোগও বাড়ল।
‘রোববার’ থেকে robbar.in তো নতুন এক সোপানে উত্তরণ। রোববার-এর প্রথম পুরুষের প্রথম ভাবনা যেন পথ পেল নয়া মাধ্যমে। আর-একটু প্রসারিত হল রোববার-এর পরিধি। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগণন রুচিশীল বাঙালি আরও একটু সহজে খুঁজে পাবেন তাঁদের প্রাণের আরাম। সপ্তাহান্তের দীর্ঘ অপেক্ষা কিঞ্চিৎ কম হল। নতুন প্রজন্ম, যারা বড় হচ্ছে ডিজিটাল পরিসরে, তারা আরও একটু আপন করে পাবে রোববার-কে। পত্রিকার পাশাপাশি শুরু হল robbar.in-এর পথচলা। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে!
পরিশেষে যা বলার, ‘রোববার’ থাকল মুদ্রিত ও ডিজিটাল– দুই মাধ্যমেই। এতদিন রোববার যেভাবে বাঙালির মননে জায়গা করে নিয়েছে, ডিজিটাল পথচলাতেও সেই মননে রেখাপাত করুক। বাঙালি নতুন মাধ্যমেও আপন করে নিক তার প্রাণের পত্রিকাটিকে, আবিশ্ব পাঠকের কাছে এই আমার আরজি।
সকলে ভাল থাকুন। আর robbar.in ক্লিক করতে ভুলবেন না।
সৃঞ্জয় বোস
প্রধান সম্পাদক
সংবাদ প্রতিদিন
যখন আমরা, তথা সকল ব্যতিক্রমী লিঙ্গ-যৌনমানস ঠিক করব কোন ধরনের স্বাধীন সিদ্ধান্ত আমরা নেব, কিংবা জড়বৎ বাঁচা থেকে নিজেদের বের করে নিয়ে এসে, অপরের সিদ্ধান্তকে নিজের বলে প্রচার করা বন্ধ করব, তখন-ই আমাদের এই জড়বৎ অস্তিত্ব, অপরের শর্তে তৈরি করা জগৎ থেকে মুক্ত পাব।
মানুষের মনের ভিতর যে ঈর্ষা-হিংসা-দ্বেষ, তাকে মানুষ প্রশমিত করে রাখে কখনও ‘ঈশ্বর’ নামে কল্পনার নীতি দেবতাটিকে আশ্রয় করে, কখনও পরিবার-পরিজনের প্রতি স্নেহ-দুর্বলতা-ভালবাসায়, কখনও সমাজরক্ষায়। আর এই নীতিবোধের শিক্ষা বা চর্চা, চলে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অথবা প্রজন্মবাহিত পারিবারিক শিক্ষায়। দুঃখের বিষয়– এই দুই ব্যবস্থাটিই প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে।