গ্রামে যাত্রাপালা চলছে। রাবণ আর সীতার এপিসোড। মোড়ল নবদ্বীপ দেখতে এসেছেন। উপভোগ করছেন। দুরভিসন্ধির ডিপো রাবণ সেফটি সার্কেলের চারপাশে পাক খাচ্ছে। সীতাকে মন ভোলানো ডায়ালগ ছাড়ছে। ফাঁদে পা দিতেই সীতার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান। ভেউ ভেউ, হাঁউমাঁউ। এই পরিস্থিতিতে মোড়ল ঝাঁপিয়ে পড়লেন মঞ্চে। সঙ্গে গালিগালাজের অস্ত্র। উনি নিজের গ্রামে এই অপকর্ম কিছুতেই হতে দেবেন না। বিচ্ছিরি অবস্থা। দর্শক হল্লা করছে। শেষে মোড়লকে বোঝানো হল, ‘এ তো সত্যি নয়, অভিনয়’, বুঝতে পারায় গোলমাল থেমে গেল। ভারতীয় মোড়ল সেন্সরকে কে বোঝাবে এসব?
সিন কেটেছে সিনেমায়। যেমন মাঝেমাঝে কাটে। তারপর ফিল্মের নম্বর প্লেটে যে হুমকিটা সেঁটে দেওয়া হয়েছে তার মানে, বড়দের ব্যাপার, সাওধান! বাচ্চা দেখতে পারে তবে গুরুজনদের সঙ্গে। কোলের বাচ্চার কথা হচ্ছে না। হচ্ছে পাকতে শুরু করা, বখাটেপনার এয়ারব্রিজ পেরনো, উড়তে উদ্যত ছোট টিন-দের। সমুদ্র যেমন এগিয়ে এসে অনেক দ্বীপকে খেয়ে ফেলছে, বয়সজনিত পক্বতাও এগিয়ে এসেছে অনেকটাই। নারী ও পুরুষের ঝিনচ্যাক, উত্তেজক রসায়নটা ১৮ বছরে পড়ার ঢের আগেই জেনে বুঝে গিয়েছে সবাই। আদর্শবাদীরা যেসব ব্যাপারকে ‘অশ্লীল’ বলেন সেগুলো ভারতীয় মূল স্রোতের সিনেমায় লিটার লিটার বয়ে চলে। সঙ্গে ব্যারেল ব্যারেল খুনোখুনি, বিদ্বেষ, মিথ্যে প্রোপাগান্ডা। ওসব সিন কেউ কাটে না। ছোট-বড় সবাই দেখে। আহ্লাদ করে। তাহলে কোনও এক পাতি হলিউডি অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে এক খিলি মিঠে অসভ্যতা নিয়ে এত মাথাব্যথার কী আছে? হাউমাউ করে সেন্সর করেই বা কী লাভ? যা দেখা হল না, তা নিয়ে দর্শকেরই বা এত কী পাইনি তার হিসাব মেলানোর দরকার পড়ছে?
ফিরিঙ্গি সুপারম্যান কিন্তু আর কিছুই ‘করে’নি। সিনেমায় চুমু খেয়েছে। তা নিয়ে দেশি আপত্তির কারণটা একটু বুঝে নেওয়া যাক। সাধারণ ভারতীয় ঘরে অতি শক্তিধর নায়ক চরিত্র নতুন কিছু নয়। পুরাণটা তো ম্যানহাটানে থইথই করছে। ডি সি কমিকসের সুপারম্যান অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলে কারণ জয়ের গ্যারান্টি আছে। দ্রুত চলাচলের জন্য মাটিতে পা ফেলে সময় নষ্ট করে না। জাস্ট উড়ে যায়। ফ্যাতাড়ুর মতো। হনুমান গরুড়ের মতো পাখি নয়। তার মহা-জাম্পটাই হল ফ্লাইট। হনুমানের সিগনেচার মূলত ফাংশনাল লেজে। সুপারম্যান, আসলে যেহেতু ম্যান, নীলরঙা গা-সাঁটা জার্সি পরে থাকে। পাচ্ছে কেউ ভুল বোঝে তাই সামনে স্টিকারে আদ্যক্ষর লিখে রাখে। জাঙিয়া বাইরে, অরণ্যদেবের মতো। তাছাড়া একটা লাল চাদর-ও সঙ্গে রাখে। শো-পিস্ এক্সটেন্ডেড গামছা। ব্যাটম্যানও তাই। ডার্ক মডেল। সুপারম্যান মাঝেমাঝেই নরমাল ম্যান। হনুমান অলটাইম হনু। হনুমান লাগাতার কলা খায়। সুপারম্যান একবার চুমু খেয়েছে, ব্যস, অশান্তি শুরু হয়ে গিয়েছে!
ব্যানের আবহে আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক, চুম্বন আসলে কী? ‘খায়’ বলা হয় ক্যানো? মৌখিক বলে? না সলিড, না লিকুইড, না বাষ্প, তার মানে খাবার জিনিস নয়। প্রাথমিক গলদ ওখানেই। ‘চ’-এর প্রপার্টিটাই নির্ধারিত হয়নি। এই কামে হিন্দিতে বোধহয় একটা ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়। বাংলায় একেবারে সুকুমার খাই খাই ব্যাপার। যাই হোক, অস্বীকার করি কী করে, ওই কর্মটি তো পরবর্তী আরও অজস্র উপকর্ম ও গ্র্যান্ড অ্যাকশনের উপক্রমণিকা। সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করে শব্দ-শক্তি ক্ষয় করার কোনও মানে হয় না। বড়রা বিভ্রান্তির শিকার হয় প্রায়ই। ছোটরা স-অ-অ-ব জানে। অন্তত এটুকু বোঝে যে, কাজটি পাপ নয়। তবে ব্যক্তি স্বাধীনতা, অধিকারবোধ ও ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রেক্ষিতে তার উচিত-অনুচিতের আইনাবলি থাকে। সংবিধানে কিছু আছে বলে আমার জানা নেই। আর এই জন্যই গোপন চুম্বন আরও সুন্দর। চুম্বনকে খাদ্য হিসেবে দেখলেও ক্ষতি নেই। মানসিক পুষ্টির দেদার জোগান। ইউরিয়া থাকে না। সম্পূর্ণ অরগ্যানিক। তদুপরি অর্গ্যাজমিক। যতক্ষণ মুখ দেখার ও দেখানোর পরিস্থিতি আছে, শরীরে যতক্ষণ প্রাণ আছে, এর জোগান কমে না। এতগুলো সদর্থক, স্বাস্থ্যবন্ধু সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ পেলেই একে দাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু গুস্সা কিঁউ আতি হ্যয়? একটা কারণ ঈর্ষাজনিত। ‘হ্যাভ’ ও ‘হ্যাভ নট’-এর পুরনো গল্প।
ভারতীয় দর্শকরা যে দৃশ্য থেকে বঞ্চিত হলেন, সেটির ব্যাপারেও জানাই। সুপারম্যানের সিনেমা বরাবরই বেশ একটা ঝলমলে ব্যাপার। তার মারপিট দেখলে চোয়াল শক্ত হয় না, ঠোঁটের কোণে বেশ একটা হাসি খেলে যায়। ব্যাটম্যান সবসময় ভায়োলেন্সের তালে থাকে। অন্ধকারে। তার থিমসং, নিঝুম অন্ধকারে তোমাকে চাই। নতুন সুপারম্যানে ফিরি। সে বদলেছে। ঠিক যেমন জেমস বন্ড, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। প্রযুক্তির নবতর উদাহরণ হাজির হয়েছে। চরিত্রটা কঠিনতর হয়েছে। বন্ড-অনুরাগী হিসেবে বলতে পারি, শ্যন কনারির ‘বন্ড’ আপন মিশনের মধ্যে ক্রমাগত নারীসঙ্গের ধান্দা করতেন। রজার মুর শাম্মি কাপুরের চেয়ে ফিট হলেও অ্যাকশনগুলো আদতে রোম্যান্টিক। এনাদের না দেখেই কবি লিখে গিয়েছেন–
মুখে নাহি নিঃসরে ভাষ,
দহে অন্তরে নির্বাক বহ্নি।
ওষ্ঠে কী নিষ্ঠুর হাস,
তব মর্মে যে ক্রন্দন তন্বী!
মাল্য যে দংশিছে হায়,
তব শয্যা যে কণ্টকশয্যা
মিলনসমুদ্রবেলায়
চির- বিচ্ছেদজর্জর মজ্জা।
মজ্জায় মজ্জায় দুষ্টুবুদ্ধি ভরা পরের বন্ডরা বহ্নি ছড়িয়েছেন দেদার। সে ডিটোনেশনে ওষ্ঠের ভূমিকা কমই ছিল। দুনিয়া বদলেছে। প্রেম শুকিয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মার মার। কোথাও কোনও কাট কাটের দরকার পড়েনি। বিস্ফোরক টেকনিক্যাল গুন্ডামির মধ্যেও রোম্যান্সের অভাব ঘটেনি। আমাদের সুপারম্যান কিন্তু সেই তুলনায় ‘নির্মল হে’। আগে স্থানীয় দাঙ্গাবাজদের ডিল করত। এখন জড়িয়ে পড়েছে রাষ্ট্রীয় কনফ্লিক্টে। এইখানে রয়েছে অতি জরুরি সূত্র। কেন একটি নেহাতই সাধারণ চুম্বনদৃশ্য নিয়ে খড়্গে শান দেওয়ার দরকার পড়ল? সিনেমায় দেখা গেছে, বিবিধ বিধ্বংসী কাণ্ডকারখানার পর, চারপাশ যখন শান্ত হয়েছে, বদ্ধভূমির মধ্যে সে পেয়ে গিয়েছে তার গার্লকে। কিছু পরে বায়োস্কোপ ফুরবে। দর্শক বাড়ি যাবে। একটু ফুরসত মিলেছে। খেয়েছে এক পিস্ চুমু। প্রায় এক মিনিট ধরে। এইখানেই প্রিসিশন স্ট্রাইক করেছে ভারতীয় সেন্সর জেঠু। খাবলে নিয়েছে অনেকটা সুখদৃশ্য। যা দেখে দর্শকের মনে প্রশান্তি জেগে ওঠার কথা। মন ভালো হয়ে ওঠার কথা। মানবতার খাতিরে এত কিছু করল, এটুকু তার প্রাপ্য হওয়ারই কথা। সেই জন্য। এই শান্তি-মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পেল না ক্লান্ত, বিভ্রান্ত, চির বঞ্চিত, অবসন্ন ভারতীয় জনগণ। যেটা পেল, তা আরও সাংঘাতিক। দু’-ঘণ্টার সিনেমার পরিবর্তে দশ সেকেন্ডের রিল মজাতে আগ্রহী পাবলিক পেল– যা তার প্রাপ্য, সেটাই। আলাপ থেকে ঝালাতে পৌঁছনোর স্বাভাবিক বিস্তারটিকে মাঝপথে কোপ মারায় উঠল মারাত্মক ভিস্যুয়াল হেঁচকি। চুমুটা পিছলে গেল। এইখানে বেজায় চটেছে পয়সা খরচ করে সিনেমা দেখতে আসা আমোদগেঁড়ে লোকজন।
এমনিতেই মুখের কথার কোনও দাম নেই। মুখের কাজে একটু বেশি সময় নিলেই মালিক চটবে। ছোটবেলার কথা মনে পড়ল। স্কুলে ক্লাস চলছে। দুপুরবেলা। স্যর ঝিমোচ্ছেন। আমরা চাপা স্বরে উত্তেজক গল্পের অণু প্যাকেজ দেওয়া নেওয়া করছি, হঠাৎ হুংকার– ‘…অ্যাই লাস্ট বেঞ্চ, তুমি এতক্ষণ ধরে কথা বলছ ক্যানো?’ তার মানে আপত্তিটা সময়ের বিস্তারে! আমার ধারণা নয়া সুপারম্যানেও তাই। সেন্সর হয়তো বলতে চাইছে, পরিমিতিবোধ জরুরি। নিখিলেশ বিমলাকে তো কিছু বলেনি। ওকে? অন্য কারণ যা বুঝলাম, চুপচাপ পার্কের বেঞ্চে বসে চুমু খেলে হয়তো কোনও সমস্যা হত না।
আর একটা ব্যাপার। সিনেমায় দেখা গিয়েছে সুখ দেওয়া-নেওয়া চলছে ভার্টিকালি। মাটিতে তাদের পা পড়ছে না। অর্থাৎ ফ্লাইং কিস! কী স্পর্ধা! এক্ষুনি ধ্বংস হোক এই লাভ ড্রোন! না, এখানেই তদন্তের ইতি হচ্ছে না। এত সহজ নয়। দৃশ্যের মধ্যে অতি সেন্সুয়ালিটির বিষবাষ্প ছিল না, সেটা সেন্সর বোর্ড জানে। অর্থাৎ অন্য বৃহত্তর ইস্যু রয়েছে। বুঝতে হবে। পুরো সিনেমাটা দেখতে হবে। দেখলে অবধারিতভাবে একটা কথা মনে হবেই হবে। সুপার খোকা নয়, নজর রাখতে হবে তার বিচরণক্ষেত্রে। এখানে সেটি আন্তর্জাতিক আঙিনা। যুদ্ধ চলছে। একটা বজ্জাত, ক্ষমতাবান দেশের সঙ্গে দুর্বল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এইটুকু পড়ে যা মনে হচ্ছে, সেটাই সত্যি। এই ছায়াছবি রিলিজের এবং চলার সময় সেই ঘটনা বিদ্যমান, যার ছায়ায় এটি নির্মিত। হতেই পারে। গোলমাল অন্য জায়গায়। রাখ-ঢাকের ব্যাপার নেই। সিনেমার ইজরায়েলকে ভিলেন দেশ দেখানো হয়েছে। এমন মনে হচ্ছে অনেকের। প্রো-প্যালেস্টাইন লোকজন বাহবা দিচ্ছেন। পরিচালক যদিও এই ধারণা নস্যাৎ করে বলেছেন, গাজার যুদ্ধের অনেক আগেই তিনি এই চিত্রনাট্য লিখে ফেলেছিলেন। যে যাই বলুক! ভবি ভোলাবার নয়। ইন্ডিয়া ইজরায়েলের রাজনৈতিক সমর্থক। আমেরিকার সুপার বখাটে হুমদোর সঙ্গে ঝগড়া করে লাভ নেই। ফিল্ম ব্যান করলে খারাপ দেখাবে। তাই একটা টোকেন টুসকি মারা হল। ব্যাপক ভায়োলেন্স বহাল রইল। মাঝখান থেকে মাইক্রো লাভ কোতল হয়ে গেল।
এরপরেও যদি কেউ চিৎকার করে প্রতিবাদ করেন তাহলে নবদ্বীপ হালদারকে ডেকে আনতে হবে। অজস্র দু’-তিন মিনিটের কৌতুক নাট্যের স্রষ্টা উনি। একটা এইরকম, গ্রামে যাত্রাপালা চলছে। রাবণ আর সীতার এপিসোড। মোড়ল নবদ্বীপ দেখতে এসেছেন। উপভোগ করছেন। দুরভিসন্ধির ডিপো রাবণ সেফটি সার্কেলের চারপাশে পাক খাচ্ছে। সীতাকে মন ভোলানো ডায়ালগ ছাড়ছে। ফাঁদে পা দিতেই সীতার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান। ভেউ ভেউ, হাউমাউ। এই পরিস্থিতিতে মোড়ল ঝাঁপিয়ে পড়লেন মঞ্চে। সঙ্গে গালিগালাজের অস্ত্র। উনি নিজের গ্রামে এই অপকর্ম কিছুতেই হতে দেবেন না। বিচ্ছিরি অবস্থা! দর্শক হল্লা করছে। শেষে মোড়লকে বোঝানো হল, ‘এ তো সত্যি নয়, অভিনয়’, বুঝতে পারায় গোলমাল থেমে গেল। ভারতীয় মোড়ল সেন্সরকে কে বোঝাবে এসব?
এরপরেও দর্শকরা যদি গোঁ ধরে বসে থাকেন তাহলে আমাদের একমাত্র আশ্রয় রবিজেঠুকে টেনে আনতেই হবে। গ্ল্যামারাইজড অশিক্ষার সাম্প্রতিক বাংলাবাজারে একটু লেভেল ভাবনা, শিক্ষা নিয়ে চলা উত্তরোত্তর কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যে কোনও একটা কাজ, সিনেমা, সাহিত্য, গানের মাঝখান থেকে খাবলে খেলে যথেষ্ট বিপদের কারণ আছে। এই টুকরোটার কথা ধরা যাক–
সে যে তোমার মুখে মুখ তুলে চায় উন্মনে,
আমার চিত্ত-কমলটিরে সেই রসে
কেন তোমার পানে নিত্য-চাওয়া চাওয়াও না?
বেশ সিনেম্যাটিক ব্যাপার না? মাখন মাখন নায়ক, ন্যাতপ্যাতে নায়িকা ক্লোজ থেকে ক্লোজতর হচ্ছে কি না? আগের পঙক্তিতেই আছে ‘বিশ্বকমল ফুটে চরণচুম্বনে’, শেষ লাইন ক’টিও পড়া যাক…
পাখির কণ্ঠে আপনি জাগাও আনন্দ,
তুমি ফুলের বক্ষে ভরিয়া দাও সুগন্ধ,
তেমনি করে আমার হৃদয়ভিক্ষুরে
কেন দ্বারে তোমার নিত্যপ্রসাদ পাওয়াও না?
মিলল? না স্যর। মিলল না। এটি পূজা পর্যায়ের গান ছিল।
ওহে ভারতবাসী, শুনো! তোমরা ইতিহাস পড়ো নাই। তোমরা ভুলিয়া গিয়াছ যে, সেন্সর এক প্রাচীন ও সভ্য প্রথা। সাহেব আমলে নেটিভদের বিলিতি সিনেমা দেখিতে বাধা দেওয়া হইত। ক্যানো? পশ্চিমা সুন্দরী দর্শনে উহাদের চিত্তবৈকল্য হইতে পারে। সভ্য শ্বেতজাতির কাছে তাহা গ্রহণযোগ্য ছিল না। বিপ্লবের সম্ভাব্য কামাগ্নি উহারা পূর্বেই নির্বাপিত করিয়াছিল। আজ সেই ট্র্যাডিশনের পুনরাবৃত্তি হইতেছে। পরিবর্তনের পৃথিবীতে ট্যাঁস প্রভুর সিংহাসনে বসিয়াছে লোকাল স্যাম্পলগণ। মিশিয়াছে নানাবিধ জিওপলিটিক্যাল চোনা। বলিহারি, তোমরা আজও রক্তহীন ফ্যাকাসে ত্বকের অগ্রে একজোড়া রঞ্জিত ওষ্ঠদ্বয়ের চু-কিতকিত ক্রীড়া দর্শনে বঞ্চিত হইয়া মিছিলের মোমবাতি সংগ্রহ করিতেছ।
এই ধার্মিক সুন্নি সম্রাট জীবনে কোনও দিন বিলাসবহুল রাজসজ্জায় শয়ন করেননি। সম্রাট ঔরঙ্গজেবের জীবন কেটেছে ভূমিসজ্জায় শয়ন করে। সমস্ত জীবন সুফি ও ফকিরদের সঙ্গ করেছেন। আর্যাবর্ত নয়, ফুল্ল-কুসুমিত বঙ্গভূমি নয়, তিনি ছিলেন দিল্লির এক সম্রাট, যাঁর প্রিয় ভূমি ছিল দাক্ষিণাত্য।