মানচিত্রে প্যালেস্তাইন কেবল নবগঠিত ইজরায়েলের উত্তরে একটুকরো, পূর্বে তার চেয়ে একটু বড় টুকরো এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর কিনারে একফালি ওই গাজা। তরতর গতিতে ইজরায়েল এগিয়ে যায়। এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন বিষয়ে ৬৭ লক্ষ ইহুদি, ১৯ লক্ষ সংখ্যালঘু আরবের দেশ ইজরাইল উন্নত এক রাষ্ট্র। আবার দমন পীড়ন, অত্যাচার, দখলদারিতেও এ হেন দেশ ইজরায়েল অগ্রগামী। আর প্যালেস্তাইন? বছরে বছরে ইজরায়েলি গ্রাসে গিয়েছে প্যালেস্টাইনের ভূমি। এখন দৃশ্যত প্যালেস্টাইন দেশটি প্রায় উধাও, পশ্চিমে গাজা স্ট্রিপের ফালিটি অর্ধেক, উত্তরের অংশটি লোপাট, পূর্বে কিছু ছিটমহল– এই হল এখনকার প্যালেস্তাইন! ১৯৬৭ সাল থেকে গবগব করে গিলে খাওয়ার, কচকচ করে চিবনোর এই ঘটনাবলিকে আন্তর্জাতিকভাবেই আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম সামরিক দখলের ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়।
ফেল, একেবারে ডাহা ফেল করে গিয়েছে ‘মোসাদ’। বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ, সবচেয়ে সফল, তুখোড় গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে নামডাক ইজরায়েলের ‘মোসাদ’-এর, সেই গোয়েন্দা-দলটি আগাম কিচ্ছুটি টের পায়নি প্যালেস্তাইনি ‘হামাস’ সশস্ত্র সংগঠনের আচমকা রকেট আক্রমণের। শনিবার, ৭ অক্টোবর ভোর থেকে গাজা সীমান্ত অতিক্রম করে হামাস-যোদ্ধাদের ইজরায়েলে ঢুকে হামলার পর গত কয়েক দিনে জোর যুদ্ধ বেধে গিয়েছে! গাজায় পাল্টা বিমানহানা চালাচ্ছে ইজরায়েল। তবু রবিবার, ৮ অক্টোবর যুদ্ধঘোষণা করে তেল আভিভে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধকালীন প্রথম নির্দেশ।
আমার সহপাঠী উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. উদয় হাজরার ছেলে সোমোদয় হাইফায় আছে। জীববিজ্ঞানে গবেষণারত আমার বন্ধুপুত্র সোমোদয় বাইরে মুহুর্মুহু সাইরেনের শব্দ ও ক্ষেপণাস্ত্রের পতন-গর্জনের ভেতর জানিয়েছে, নিরাপদ আশ্রয়ে ইজরায়েলিদের ছোটাছুটির ভেতর লোক ছ্যা ছ্যা করছে মোসাদের এই হাবুডুবু খাওয়া নিয়ে। কাকপক্ষী টের পায়নি, এমনই ছিল হামাসের ওই শনিবারের প্রারম্ভিক আক্রমণ।
১৯৪৮-এ ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরের বছরই, ১৯৪৯ সালে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের জন্ম। মোসাদ কেবল ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট দিতে পারে, জবাবদিহিও কেবল প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ইজরায়েলের আরও দু’টি গোয়েন্দা সংস্থা– ‘আমান’ হল সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, ‘শিন বেত’ হল অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগ। ফেল ফেল, সক্কলে ডাহা ফেল!
১৯৭৩ সালের ৫০ বছর পর আবার মধ্যপ্রাচ্যে এই বড় রকমের যুদ্ধ। এর আগে গত পাঁচ দশকে অন্তর্ঘাত, নাশকতা, ইতিউতি ইজরায়েল-আরব সশস্ত্র সংগঠনগুলির সংঘর্ষ হলেও ৭ অক্টোবর যা ঘোরতর যুদ্ধে দাঁড়াল, তা গত ৫০ বছরে ঘটেনি। ১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর দক্ষিণ থেকে মিশর, উত্তর থেকে সিরিয়া ইজরায়েল আক্রমণ করে। ক্রমে আরও ১০টি আরব দেশ ওই যুদ্ধে শামিল হয়। ইজরায়েলে ইয়োম কাপ্পুর উৎসবের দিন এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল বলে এই যুদ্ধ ওই উৎসবের নামে নামকরণ হয়েছে। এরপর প্রায় ওই তারিখ মিলিয়ে, এই সেদিন ৭ অক্টোবর হামাসের এই হামলায় যুদ্ধ শুরু। এবারের যুদ্ধের পঞ্চমদিনে বিমান থেকে কার্পেট বম্বিংয়ে হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। সেখানে স্থলযুদ্ধ শুরু হয়েছে, ঢুকছে ইজরায়েলের ট্যাঙ্কবাহিনী। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে গাজার প্যালেস্তিনীয়রা। সেখানে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে ইজরায়েল। হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি বলেছেন, দশকের পর দশক ধরে প্যালেস্তাইনের ভূমি দখল, প্যালেস্তিনীয়দের ওপর নৃশংস অত্যাচার, এসবের প্রতিবাদে তাদের এই আক্রমণ। খালেদ বলেছেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আমাদের। একই সঙ্গে পবিত্র স্থান আল আকসা কলুষিত করার প্রতিবাদ জানাচ্ছে তারা। হামাসের এই অভিযানের নাম, ‘অপারেশন আল আকসা ফ্লাড’।
যুদ্ধ চলছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। হামাস বেশ কিছু ইজরায়েলি নাগরিককে পণবন্দি করেছে বলে খবর। আবার ইজরায়েলি সূত্রে দাবি হল, অনেককে উদ্ধার করা হয়েছে। এ লেখায় স্থিরভাবে পরিসংখ্যান দেওয়ার নেই। তবু শনিবারের পর পঞ্চম দিনে ইজরায়েলের দাবি হামাসের অন্তত ১৫০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। হামাস বলেছে, ১২০০-এর বেশি ইজরায়েলি সেনা ও সামরিক লোকজন মারা গিয়েছে। ইজরায়েলে ঢুকে পড়তে গাজায় হামাস একটি সুড়ঙ্গপথও ব্যবহার করেছে বলে খবর। উন্নত প্রযুক্তির জিপিএস-নিশানাযুক্ত ড্রোনে বিস্ফোরক ভরে হামাস নির্দিষ্ট লক্ষে ইজরায়েলে আঘাত হেনেছে, এমনও খবর দিয়েছে সংবাদমাধ্যম। বলা হয়েছে, এতে ইজরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তির আকাশ নিরাপত্তার ঢাল (ডোম) কোনও কাজ করতে পারেনি। শনিবার, ৭ অক্টোবর ১৯ মিনিটে ৫০০০ মিসাইল ছোড়া হয়েছিল বলে খবর। ইজরায়েল বলেছে, উঁহু, তার অর্ধেক।
গাজার কাছাকাছি ইজরায়েলি উপকূলে পৌঁছেছে মার্কিন রণতরী। নেতানিয়াহু যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছে। এরপরই আমদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান জানিয়ে ইজরায়েলকে সমর্থন করেছেন। এরপর নেতানিয়াহু ফোন করে মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। টিভিতে এ খবর দেখতে দেখতে মনে পড়ল, বেজোট দেশগুলির সম্মেলনে দিল্লিতে এসেছিলেন ‘পিএলও’ প্রধান ইয়াসের আরাফত। ১৯৮৩ সাল। হাসিমুখটি মনে পড়ল আরাফতের, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে, মাথায় সাদা-কালো চেক কাটা বেদুইনের পাগড়ি, হাত নেড়ে ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছিলেন আরাফত, প্যালেস্তাইনকে ভারতের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের জন্য। শুধু ইন্দিরা নন, নেহরু আমল থেকেই একেবারে মনমোহন সিংয়ের আমল পর্যন্ত আমাদের বিদেশনীতিতে আরবদের বন্ধুদেশ ভারত ছিল প্যালেস্তাইনের পাশে অবিচল। হাসিমুখের সেই রোদ ঝলমল দিনগুলি আর নেই, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন এখন। যুগ পরিরর্তিত হয়েছে। ফেসবুকে দেখলাম, হিন্দিবলয়ে ইজরায়েলি ভাইবেরাদর যথেষ্ট, ‘জয় শ্রীরাম, ইজরাইলকে রক্ষা করবেন’– এমনটিও বাসনা অনেকের। এসবের ভেতরই বুধবার ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুজিবকন্যা হাসিনা বলেছেন, আমরা প্যালেস্তাইনের পাশে ছিলাম। আমরা প্যালেস্তাইনের পাশে থাকব। ভারতে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার ইজরায়েলকে সমর্থন করলেও বিরোধীদল কংগ্রেস ও বামদলগুলি তাদের পূর্ব অবস্থান বহাল রেখে প্যালেস্তাইনকেই সমর্থন করেছে। রাষ্ট্র হিসেবে ইরান ঘোষিতভাবে হামাসের পাশে দাঁড়িয়েছে।
হামাসের সমর্থনে তাদের অনেক দিনের বন্ধু সংগঠন ‘হিজবুল্লাহ’ বুধবার রাতে লেবানন থেকে ইজরায়েলে হামলায় নামায় যুদ্ধ আরও ঘোরালো হয়ে পড়েছে। তবু এ এক অসম যুদ্ধ। এ যুদ্ধ থেমে গেলেও এর কোনও আশু নিষ্পত্তি আশা করা যায় না। কারণ এ সমস্যার সূত্রপাত ১৯৪৮-এ ইজরায়েলের জন্মকাল থেকে। এ সমস্যা রাষ্ট্র সীমানা নির্ধারণ, ভূমি নির্ধারণ, এবং দখলদারি সংক্রান্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই হিটলারের ইহুদি নিধনের নৃশংসতায় ইউরোপে ছিন্নভিন্ন, নিপীড়িত, রাষ্ট্রহীন ইহুদি উদ্বাস্তুদের নেতারা তাঁদের আদি বাসস্থান হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে নির্দিষ্ট ভূমি দাবি করছিলেন তিনের দশকের শেষদিক থেকেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ-মার্কিন ব্যবস্থাপনায় সেসময়ে সদ্যগঠিত রাষ্টসংঘ প্যালেস্তাইনের একটি ভূখণ্ড নির্ধারণ করে, যা ব্রিটিশ কর্তৃত্বাধীন ছিল। মহাত্মা গান্ধী সে সময় প্যালেস্তাইনের এই ভূমি ইহুদিদের দেওয়ায় আপত্তি তুলেছিলেন। ১৯৩৮-এ ‘হরিজন’ পত্রিকায় মহাত্মা গান্ধী লিখেছিলেন, ‘ইহুদিদের জাতীয় হোমল্যান্ডের জন্য কান্নাকাটি আমাকে স্পর্শ করে না। ইংল্যান্ড যেমন ইংরেজদের, ফ্রান্স ফরাসিদের, ঠিক তেমনই প্যালেস্তাইন আরবদের। তাদের ওপর ইহুদিদের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়।’ কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৬ থেকেই ইহুদিরা প্যালেস্তাইনে যেতে শুরু করে। ১৯৪৭-এ রাষ্টসংঘ প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের ভূমি চিহ্নিত করে। প্যালেস্তাইনের অর্ধেকের বেশি ভূখণ্ড দিয়ে দেওয়া হয়। ১৯৪৮-এ ইঙ্গ-মার্কিন ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রসংঘ নির্ধারিত ওই ভূখণ্ডেই ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই মানচিত্রে প্যালেস্তাইন কেবল নবগঠিত ইজরায়েলের উত্তরে একটুকরো, পূর্বে তার চেয়ে একটু বড় টুকরো এবং পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর কিনারে একফালি ওই গাজা। তরতর গতিতে ইজরায়েল এগিয়ে যায়। এখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন বিষয়ে ৬৭ লক্ষ ইহুদি, ১৯ লক্ষ সংখ্যালঘু আরবের দেশ ইজরাইল উন্নত এক রাষ্ট্র। আবার দমন পীড়ন, অত্যাচার, দখলদারিতেও এ হেন দেশ ইজরায়েল অগ্রগামী। আর প্যালেস্তাইন? বছরে বছরে ইজরায়েলি গ্রাসে গিয়েছে প্যালেস্তাইনের ভূমি। মানচিত্র দেখলেই তার প্রমাণ মিলবে। এই এখন দৃশ্যত প্যালেস্তাইন দেশটি প্রায় উধাও, পশ্চিমে গাজা স্ট্রিপের ফালিটি অর্ধেক, উত্তরের অংশটি লোপাট, পূর্বে কিছু ছিটমহল– এই হল এখনকার প্যালেস্তাইন! বাকি প্যালেস্তিনীয় ভূভাগ ইজরায়েলের গ্রাসে গিয়েছে। ১৯৬৭ সাল থেকে গবগব করে গিলে খাওয়ার, কচকচ করে চিবনোর এই ঘটনাবলিকে আন্তর্জাতিকভাবেই আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম সামরিক দখলের ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়। তথ্য ও দলিল-সহ ২০২১-এর এপ্রিলের রিপোর্টে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ বলেছে, ইজরায়েলি সরকার ইহুদিদের অগ্রাধিকার প্রদান করে, অধিকৃত গাজা ও পশ্চিম তীরের প্যালেস্তিনীয়দের প্রতি বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করে। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ডে গণহারে ভূমি জবরদখল, অব্যাহতভাবে ইজরায়েলি বসতি নির্মাণ ও উঁচু পাঁচিল দিয়ে প্যালেস্তাইনদের ছিটমহলে অবরুদ্ধ করে রাখা, বলপূর্বক তাদের বসবাসের অধিকার ও নাগরিক অধিকার হরণ ও তাদের উপরে দমন-নিপীড়নের মতো কাজ করে চলেছে ইজরায়েলি প্রশাসন। কিছু কিছু এলাকায় এই ধরনের বৈষম্য এতই প্রবল যে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, ইজরায়েলি সরকারের আচরণগুলি একটি সীমা লঙ্ঘন করেছে এবং এ সমস্তই জাতিবিদ্বেষভিত্তিক পৃথকাবাসন (অ্যাপার্থাইট) ও নিপীড়নের মতো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য। ২০১৭ সালে মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ বিবৃতি দেয় যে, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইজরায়েল প্যালেস্তাইনের ভূমি জবরদখল, আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধভাবে ইজরায়েল সরকার ৬ লক্ষ ইহুদির জন্য ২৮০টি বসতি গড়েছে, প্যালেস্তিনীয়দের বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের পাশাপাশি অবাধ বৈষম্যমূলক আচরণে প্রতিদিন তাদের কর্মস্থলে যাওয়া, কলেজ-বিদ্যালয়ে যাওয়া, বিদেশে গমন, আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ, অর্থ উপার্জনে বাধা দেওয়া, কৃষিভূমিতে কাজ করায় বাধা দেওয়া, এমনকী, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ করে মৌলিক অধিকারগুলি লঙ্ঘন করে চলেছে ইজরায়েল প্রশাসন।
১৯৭৪ সালে আরব লিগ ‘পিএলও’-কে প্যালেস্তাইন জনজাতির বৈধ প্রতিনিধি ঘোষণা করেছিল। সেই সঙ্গে প্যালেস্তিনীয়দের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব তুলেছিল। ২২ নভেম্বর, ১৯৭৪ থেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে একটি জাতিসত্তা গণ্য করে পিএলওকে রাষ্ট্রহীন পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়। পিএলও প্রতিনিধি বক্তব্য পেশ করতে পারতেন। ভোটাভুটির অধিকার ছিল না। ১৯৮৮-র ১৫ নভেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এবং প্যালেস্তাইন জাতীয় পরিষদ (পিএনসি) প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। গাজা ও পশ্চিম তীরের ভূখণ্ড, সেই সঙ্গে ইজরায়েলভুক্ত কিছু অঞ্চল দাবি করা হয়। ইজরায়েলের দখলে থাকা জেরুজালেম শহরটিকে প্যালেস্তাইনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ‘পিএলও’ প্রধান ইয়াসের আরাফত হন, বিদেশের মাটিতে গড়া সরকারের প্রেসিডেন্ট। এই ঘোষণার সময় এসব অঞ্চলে পিএলও-র তেমন কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
বছরের পর বছর গড়ালে আরফতের পিএলও-র নরম নীতিতে জনসমর্থন কমতে থাকে। ক্ষিপ্ত হতে থাকে কট্টরপন্থীরা। ১৯৯০-এ আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইজরায়েল ও পিএলও-র অসলো চুক্তিতে পিএলও-র গণভিত্তি ধ্বসে যায়। ১৯৮৭ সালে গাজা ও পশ্চিম তীরে (ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক) ইজরায়েলি ভূমিগ্রাসের বিরুদ্ধে প্যালেস্তাইনে জনজাগরণের ইন্তিফাদা আন্দোলন শুরু হয়। ওই সময়ই শেখ আহমদ ইয়াসিন ও আজিজ আল আন্তেসি বিক্ষোভরত তরুণদের হামাস সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল কাশেম ব্রিগেড। হামাস অসলো চুক্তিকে নাকচ ঘোষণা করে। ২০০৪ সালের মার্চে গাজায় ইজরায়েলি রকেট হানায় মারা যান শেখ আহমদ ইয়াসিন। পরের মাসে ইজরায়েলি রকেটে মৃত্যু হয় আজিজ আল আন্তসির। তবে কিনা গাজাকে ২০০৭-এর ভেতর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে হামাস।
যুদ্ধ চলছে। অসম যুদ্ধ। তবে কি না, কীসের আরব! কীসের ইহুদি! মহাবলী একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে ভিটেমাটি খোয়ানো ভাসমান মানুষের মরিয়া এ লড়াই। বাড়িঘরদোর জায়গাজমিন পুনরুদ্ধারের লড়াই। কলকাতার অর্ক ভাদুড়ী গিয়েছেন লন্ডনে। পূর্ব লন্ডনে কেনসিংটনে ইজরায়েলি দূতাবাসগামী প্যালেস্তাইনের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল দেখেছেন তিনি। তাতে যোগ দিয়েছে জায়নবাদ (ইহুদিবাদ) বিরোধী ইহুদিরা। যোগ দিয়েছে ইজরায়েল কমিউনিস্ট পার্টির প্রবাসী সমর্থক, কর্মীরা।
যুদ্ধ চলেছে। চাইব যুদ্ধের অবসান। সেই সঙ্গে ভাসমানদের হিল্লে চাই। নিষ্পত্তি চাই।