এই যে মাতৃশক্তিকে অবলম্বন করেই এই সমাজের পুরুষদের পৌরুষেয়তার বিপ্রতীপ উত্থান, এটা যদি রুদ্ধ করতেই হয়, তাহলে সেই ঋগবৈদিক মন্ত্রে মহাদেবী অহং শব্দে যেটা বলেছিলেন– আমিই সেই রাষ্ট্রশক্তির পরিচালিকা, আমিই অর্থ-ধনের সাংগ্রহিকী শক্তি– ‘অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমনী বসূনাম’– আমিই সেই জ্ঞান, সেই প্রথমা বিদ্যাশক্তি, যা দিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করার যজ্ঞ আরম্ভ হয়েছিল– ‘চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্’– এসবই আমি। আমি বলব– মহাদেবীর অহংকার যে রাষ্ট্রের মধ্যে সমাহিত; সেই রাষ্ট্রেরই কাজ এটা। রাষ্ট্রই সেই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শারীরিকভাবে অধিক শক্তিধর পুরুষকে চরম শাস্তির ভয় দেখিয়ে নখদন্তহীন করে দিতে পারে সময়মতো।
২.
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার একটি ক্লাস করার সময় কালিদাসের রঘুবংশ পড়াতে-পড়াতে প্রসঙ্গত নারীর ক্ষমতায়নের কথা উঠল। ছাত্রছাত্রীদের অনেকের কথা শুনে মনে হল যেন নারীদের ক্ষমতায়ন ব্যাপারটা এই কালেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে, প্রাচীনকালে যেন সব মেয়েদেরই ভীষণভাবে চাপে রাখা হত এবং বাপের বাড়ি তথা শ্বশুরবাড়ি, সর্বত্রই তাদের অপমান-অত্যাচারে জর্জরিত করা হত। এইরকম একটা আবহে আমি নিজেকে খুব নিয়ন্ত্রিত রেখে জিজ্ঞাসা করলাম– আচ্ছা! তোদের বাড়িতে মা-বাবার মধ্যে যদি ভালোরকম ঝগড়া লাগে, তাহলে শেষ পর্যন্ত কে জেতেন? দু’-চারজন এই ব্যক্তিগত প্রশ্নে উদাসীন্য অবলম্বন করলেও বেশিরভাগই উত্তর দিল– মা জেতেন।
আমি জানি– দাম্পত্য-কলহে একজন বিবাহিত রমণীর জিতে যাওয়াটা কখনওই প্রায় গলার জোরের উচ্চতা কিংবা cock’s shrill clarion-ও নয়। রমণীরা এ ঝগড়া জিতে যান, যাওয়াটা কখনওই ক’ফোঁটা চোখের জলে, পুরুষের কুটিল তর্ক এবং গলার জোরের প্রতিপক্ষে অনমনীয় মৌনতায় অথবা ‘পায়ে ধরে সাধা/ রা নাহি দেয় রাধা’– রমণীর চরম ক্রোধও সেখানে সমাহিত হয় ভ্রুকুটি-কুটিল কটাক্ষের মধ্যে– যেমন আমার কবি লিখেছিলেন– ‘কোপো যত্র ভ্রুকুটি-রচনা বিগ্রহো যত্র মৌনম্।’ কিন্তু তবু জানি– এমনভাবে ঝগড়া জিতে যাওয়ার মধ্যে যে কাব্যিক রোমাঞ্চ আছে, তা কোনও ভাবেই নারীর ক্ষমতায়নের ইঙ্গিতবহ কোনও ইঙ্গিত নয়, প্রমাণও নয়– অন্তত আধুনিক মতে তো নয়ই।
…………………………….……………………..
পুরুষের অন্যায়-অসভ্যতার প্রতিপক্ষে রমণীর ভ্রুকুটি-করাল কঠিন দৃষ্টিপাতেও যেখানে কাজ হয় না, সেখানে তো রমণীর হাতে অস্ত্র ধরা উচিত, তা নাহলে তো এই অসম লড়াই তার পক্ষে জেতা সম্ভবই নয়। কিন্তু এই আধুনিককালে দেবতার মতো সরলতায় দিব্যাস্ত্র ধারণের কোনও উপায় নেই বলেই আধুনিক রাষ্ট্রকেই নারীর ক্ষমতায়নের কথা ভাবতে হবে।
……………………………………………………
বরঞ্চ অত্যাচারী, অপমানকারী পুরুষকে যেভাবে শাস্তি দিতে হবে– তার জন্য নারীর পুরুষায়ন তত্ত্বটাই সঠিক মনে হয় বলেই মহিষাসুর-বধের পর দেবতারা দেবী চণ্ডীর স্তুতি করে বলেছিলেন– এটা বড় অদ্ভুত লাগে আমাদের, এটা পরম আশ্চর্যও বটে যে, তুমি মহিষাসুরের ব্যবহার দেখে যখন ভীষণ ক্রুদ্ধ-কুপিত হয়ে উঠলে, তখন তোমার চাঁদের মতো মুখখানি যেভাবে ভ্রুকুটি-করাল হয়ে উঠেছিল, সেই ভ্রুকুটি-কুটিল কটাক্ষ দেখেই তো মরে যাওয়া উচিত ছিল মহিষাসুরের– ‘যন্ন… প্রাণান্ মুমোচ মহিষস্তদতীব চিত্রম– আরও আশ্চর্যের বিষয় হল– ওইরকম চাঁদমুখের হাসিটি মুখে ধরে রেখেও তোমাকে শূল বিঁধিয়ে দিতে হল মহিষাসুরের বুকে– ‘অত্যদ্ভুতং প্রহৃতমাপ্তরুষা তথাপি।’
দেবী দুর্গার এই মোহন মুখে হাসি বজায় রেখেও অসুরের ওপর অস্ত্র-প্রহার করার যে নিরুপায় প্রয়োজনটা দেবতাদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে– তার গভীর তাৎপর্যটাই আজকের দিনের এক যুবতী রমণীর সঙ্গে অসুর-প্রকৃতি পুরুষের মেশামিশির বাস্তব। পুরুষের অন্যায়-অসভ্যতার প্রতিপক্ষে রমণীর ভ্রুকুটি-করাল কঠিন দৃষ্টিপাতেও যেখানে কাজ হয় না, সেখানে তো রমণীর হাতে অস্ত্র ধরা উচিত, তা নাহলে তো এই অসম লড়াই তার পক্ষে জেতা সম্ভবই নয়। কিন্তু এই আধুনিককালে দেবতার মতো সরলতায় দিব্যাস্ত্র ধারণের কোনও উপায় নেই বলেই আধুনিক রাষ্ট্রকেই নারীর ক্ষমতায়নের কথা ভাবতে হবে।
লক্ষণীয়, চণ্ডীপাঠ এবং দুর্গাপূজার আরম্ভে ঋগ্বেদ থেকে যে দেবীসূক্ত পড়তে হয়, সেই দেবীসূক্তের যিনি ঋষি এবং দেবতা, তিনি অম্ভৃণ ঋষির কন্যা, তাঁর নাম বাক্– অর্থাৎ, পৃথিবীর যত শব্দরাশি, বর্ণ-পদ-বাক্য সব তিনি এবং তিনি একজন স্ত্রীলোক। তিনি এমনই সর্বময়ী এক নিয়ন্ত্রণী শক্তি যিনি ঋষি থেকে দেবতা হয়ে গেছেন, হয়তো বা এই বিশাল নিয়ন্ত্রণী শক্তির অধিকারী বলেই তিনি দেবী দুর্গা বা চণ্ডীর সঙ্গে একাত্মিকা হয়ে গেছেন। ঋগ্বেদের মন্ত্রগুলির আরম্ভেই এই দেবীর চরম মেজাজটা দেখার মতো। তিনি বলছেন– রুদ্র, অগ্নি, ইন্দু, বরুণ– এঁদের সঙ্গে আমিই বিচরণ করি, সময়কালে আমি এঁদেরও ধারণ করি, অবলম্বন করি। সবচেয়ে বড় কথা, আমি হলাম রাষ্ট্রী অর্থাৎ রাষ্ট্রের অধিশ্বরী আমি এবং সকলের জন্য অর্থ-ধনের ব্যবস্থাও করি আমি– ‘অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমনী বসূনাম্।’
ঋগ্বেদের এই মন্ত্রমুক্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য এখানেই যে, একজন নারী– তিনি সমস্ত পৌরষেয় ভাবনা নস্যাৎ করে দিয়ে, আপনার মধ্যে সমস্ত শক্তি সমাহিত করে বলছেন– অহম্। আমি সব করি– সমস্ত দেবতাদের চালিকা শক্তিও আমি। আমরা কিন্তু পরমা শক্তির ‘অহংকারে’ আশ্চর্য হই না, আশ্চর্য হই এটা ভেবে যে, সেই বৈদিক কাল থেকে পুরাণগুলির পরম্পরায় আমরা কিন্তু কোনও শক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবতার মধ্যে কোনও পুরুষ খুঁজে পাইনি। আপনি বিদ্যা-জ্ঞানের শক্তি চান, আপনি সরস্বতীর কাছে চাইবেন, আপনি ধনৈশ্বর্যের শক্তি চান, আপনি লক্ষ্মীপুজো করে মিনতি করবেন– ‘এস মা লক্ষ্মী, বস মা লক্ষ্মী, থাকো মা লক্ষ্মী আমার ঘরে।’ এমনকী সাহংকারে একটা ডাকাতি করতে গেলেও ডাকাতরা দুর্গারই আরও এক স্বরূপ– কালীর কাছে শক্তি চায় ডাকাতির নির্বিঘ্ন সমাপ্তির জন্য।
একেবারে লৌকিক জগতে চলে এলেও আপনি পুত্রকন্যার জন্য ষষ্ঠীর উপাসনা করছেন; বসন্ত-রোগ সারানোর জন্য শীতলা-মায়ের পদতলে মাথা নোয়াচ্ছেন। এমনকী সেকালে কলেরার মতো মহামারী প্রশমনের জন্য ওলাবিবির মতো একটা নতুন দেবতাই তৈরি হয়ে গেল। সাপের মতো বিষধর প্রাণীকে বাগে আনার জন্যও কোনও পুরুষ দেবতা নেই, আছেন আদি অকৃত্রিম মনসা।
তাহলে আমরা ভারতবর্ষে কী দেখলাম– প্রাচীনকালেই কিন্তু আমরা নারীকে সমস্ত শক্তির উৎস হিসেবে দেখেছি– আমাদের চাওয়া-পাওয়া সবই প্রায় স্ত্রী-দেবতার কাছে– বিশেষত শক্তি– নিজেকে সর্বার্থে শক্তিমান তৈরি করার প্রার্থনা থেকে শত্রুশাতনের শক্তিটাও কিন্তু আমরা ভগবতী দুর্গার কাজেই চেয়েছি– ‘রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো দেহি।’ শেষ দু’টি শব্দের সোজা মানে হল– আমার শত্রুদের মারো। রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ ঘেঁটে এটা দেখানো কঠিন হবে যে, পুরুষ মানুষ পুরুষ দেবতার কাছে শক্তি চাইছেন – যুধিষ্ঠির অজ্ঞাতবাসে যাওয়ার আগে দেবী দুর্গার কাছেই প্রার্থনা করছেন যাতে নির্বিঘ্নে বিরাট-নগরে অজ্ঞাতবাস সমাপ্ত করতে পারেন। আর ওদিকে রামচন্দ্রকে রাবণ-বধে উত্তীর্ণ করার জন্য স্বয়ং ব্রহ্মা অকালে রাত্রিবেলায় দেবী দুর্গার বোধন করতে বাধ্য হয়েছিলেন– ‘রামস্যানুগ্রহার্থায় রাবণস্য বধায় চ।’
সেই বৈদিক কালের দেবীসূক্ত থেকে মহাভারত-পুরাণে পরমা প্রকৃতি দুর্গা এই ‘নারীশক্তির প্রতীক শুধু নয়, তিনি অসুর-দানবের অসভ্যতা নাশ করার মহাশক্তি হিসেবে পরিচিত হলেও আমাদের প্রাগাধুনিক কাল থেকে এখনও পর্যন্ত পুরুষেরা সেই নারীশক্তিকেই চরম অপমান করে যাচ্ছেন ঘরে-ঘরে সর্বত্র। শনি-মঙ্গলের সান্ধ্য কালীমন্দিরে আমি শত-শত পুরুষকে মাতৃমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে অতিভক্তিভরে চেঁচিয়ে বলতে শুনেছি– ‘মাগো শক্তি দাও; শক্তি দাও মাগো!’ কিন্তু এই শক্তি মায়ের কাছে আদায় করে আপন স্ত্রীর ওপরেই প্রয়োগ করেন বেশিরভাগ পুরুষ– এটাই কিন্তু এ-যুগের সবচেয়ে বিপ্রতীপ এক আশ্চর্য।
এই যে মাতৃশক্তিকে অবলম্বন করেই এই সমাজের পুরুষদের পৌরুষেয়তার বিপ্রতীপ উত্থান, এটা যদি রুদ্ধ করতেই হয়, তাহলে সেই ঋগবৈদিক মন্ত্রে মহাদেবী অহং শব্দে যেটা বলেছিলেন– আমিই সেই রাষ্ট্রশক্তির পরিচালিকা, আমিই অর্থ-ধনের সাংগ্রহিকী শক্তি– ‘অহং রাষ্ট্রী সঙ্গমনী বসূনাম’– আমিই সেই জ্ঞান, সেই প্রথমা বিদ্যাশক্তি, যা দিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করার যজ্ঞ আরম্ভ হয়েছিল– ‘চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্’– এসবই আমি। আমি বলব– মহাদেবীর অহংকার যে রাষ্ট্রের মধ্যে সমাহিত; সেই রাষ্ট্রেরই কাজ এটা। রাষ্ট্রই সেই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শারীরিকভাবে অধিক শক্তিধর পুরুষকে চরম শাস্তির ভয় দেখিয়ে নখদন্তহীন করে দিতে পারে সময়মতো।
বস্তুত এও তো এক ধরনের মাৎস্যন্যায়, যেখানে বলবত্তর পুরুষ রাষ্ট্র এবং দম্ভের তোয়াক্কা না করে শারীরিক শক্তিহীন এক রমণীকে ধর্ষণ করতে পারে, হ্যাঁ করতে পারে, হত্যা করতে পারে, গ্রাস করতে পারে– কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে তাই বলেছেন– ‘বলীয়ান অবলং হি গ্রসতে দণ্ডধরাভাবে।’ এখানে ‘দণ্ড’ মানে কিন্তু ‘ধর্ম’, ‘দণ্ড’ মানে শৃঙ্খলা রক্ষার আইন– তাকেই ধর্ম বলা হয়েছে আমাদের শাস্ত্রে– ‘দণ্ডং ধর্মং বিদুর্বুধাঃ।’
এই ধর্ম-দণ্ডের শক্তিতেই একজন অবল-দুর্বল মানুষও কিন্তু অধিকতর বলবান মানুষকেও ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে পারে। এমনকী এই ধর্ম বা আইন এমনই ভয়ংকর এক বস্তু, যা একটি রাষ্ট্রের রাজাকেও ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে পারে।
ভগবতী দেবী শুধু রাষ্ট্র নন, তিনি যে রাষ্ট্রী অর্থাৎ ক্ষত্রিয় রাজারও তিনি নিয়ামিকা, নিয়ন্ত্রণী আইনি শক্তি, তিনিই যে ধর্ম, দণ্ড, আইন, সেই ধর্মের বলেই দুর্বলতর ব্যক্তিও বলবত্তর ব্যক্তিকে পর্যুদস্ত করতে পারেন, চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, সেটা পর্যায়ক্রমে বুঝিয়ে দিয়েছে ব্রহ্মবাদী বৃহদারণ্যক উপনিষদ। এই উপনিষদ বলেছে– এই জগতের সমস্ত অপরিশীলিত শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিধাতা পুরুষ প্রথমে ক্ষত্রিয় রাজার সৃষ্টি করলেন। কিন্তু দেখা গেল– নিরঙ্কুশ শক্তি একজন রাজার মধ্যে নিহিত হলে তাঁর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাতে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে ওঠে। সেই কারণে তিনি বুদ্ধি-প্রজ্ঞা এবং বিদ্যার প্রতীক হিসেবে ব্রাহ্মণদের সৃষ্টি করলেন। রাষ্ট্রের জীবনযাত্রা চলমান রাখার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে বিধাতা বৈশ্যদেরও সৃষ্টি করলেন। এমনকী যারা তামাম দুনিয়ার জন্য খাদ্যশস্য, অন্নের জোগাড় করে, সেই সর্বপোষক শূদ্রদের সৃষ্টি করার পরেও বিধাতা দেখলেন যে, দুনিয়াদারির মধ্যে তবু কোনও শান্তি নেই।
এই অশান্তি দূর করার জন্যই বিধাতা এবার ধর্মের সৃষ্টি করলেন– ‘স বৈ নৈব ব্যভবৎ। তছ্ছেযোরূপম্ অত্যসৃজৎ ধর্মম্।’ এই ধর্ম কোনও ফুল, বেলপাতা-নৈবেদ্যের ধর্ম নয়, এই শাক্ত-বৈষ্ণব-শৈব ধর্মও নয়। এই ধর্ম হল Law, ordinance, discipline and scepter, সোজা ভাষায় আইন এবং রাজদণ্ড। আর ধর্ম মানে যে আইন, সে কথাটা এই সেদিনও টিকে ছিল– Court-কে বলা হত ধর্মাধিকরণ, জজ-সাহেবকে বলা হত– ধর্মাবতার। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের প্রাচীনকালে রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তিশালী রাজা কিন্তু আইন প্রণয়ন করতেন না– তাঁর হাতে অনন্ত শক্তি নিহিত বলেই তিনি যথেচ্ছ আইন তৈরি করে মানুষের ওপর অত্যাচার করতে পারেন। ঠিক সেই কারণেই আইন তৈরি করতেন প্রজ্ঞা-বুদ্ধিসম্পন্ন ব্রাহ্মণরা। তাঁদের তৈরি করা আইন রাজা প্রয়োগ করতেন মাত্র।
তবু প্রশ্ন ওঠে– শাসন-নিয়মনের জন্য ক্ষত্রিয় রাজাই যথেষ্ট ছিলেন, আবার ধর্ম কেন? এর উত্তরটাই বৃহদারণ্যক দিয়েছে একেবারে আধুনিক ভাবনায়। বলেছে– ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়ত্ব, তাঁর শাসন নির্ভর করে এই ধর্মের ওপর, এই ধর্মের থেকে শক্তিমান আর কিছু নেই। কেননা এই ধর্মের শক্তিতেই একজন সর্বার্থে দুর্বল মানুষও অতি-বলমান মানুষকেও ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে পারে– ‘তদৈতৎ ক্ষপ্রস্য ক্ষত্রং যদ্ধর্মঃ। তস্মাদ্ ধর্মাৎ পরং নাস্তি অথো অবলীয়ান বলীয়াংসম্ আশংসতে ধমেণ।’ এই ধর্মের শাসন আছে বলেই শারীরিকভাবে দুর্বল এবং শক্তিহীন মানুষও যেহেতু বলবত্তর এবং শক্তিমত্তর মানুষকে জয় করতে পারে– তাই সেই আইনটাই এখনও এত কড়া হওয়া দরকার, যেখানে একজন দুর্বিনীত, অসভ্য, লম্পট পুরুষ রমণী-শরীর স্পর্শ করার অপচেষ্টা মাত্রেই ভবিষ্যতের ভয়ে যেন প্রকম্পিত অবস্থায় মূর্চ্ছিত হয়ে পড়ে।
………………………………………………..
এই সিরিজের প্রথম পর্ব: অস্ত্রহীন বাগবিভূতিতেই নারী এক্সট্রাঅর্ডিনারি
………………………………………………..