আলিপুর চিড়িয়াখানা মোটামুটি ঝেঁটিয়ে ফাঁক করে বাঘ, সিংহ, হাতি, পেঁচা, রাজহাঁস একের পর এক প্রাণীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন দেব-দেবীরা। গরুড়ের ব্যাপারটা জানা নেই। হয়তো ডাইনোসরের কেউ হবে, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম থেকে একটা ফসিল উড়ে গিয়েছিল কি! এখন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ভ্রমণ ফসিল ছোড়া দূরত্ব হতে পারে, ঢিল ছোড়া দূরত্ব তো আর নয়।
পুজোর শুরু গণপতি-কে দিয়ে, তার কারণ হিসেবে হিন্দু পুরাণ বলে– তিনি সর্ববিঘ্নকারী,পুজোর সমস্ত বিচ্যুতি তিনি কাটিয়ে দেন, শুদ্ধতা আনেন; আবার লোককথায় এই গল্প ঘোরেফেরে, কোন দেবতার পুজো আগে হবে, সেই নিয়ে নাকি মহাদেবের ক্লাসে প্রত্যেক দেবতাই হাত তুলেছিলেন। বিতণ্ডা এড়াতে আয়োজন হল এক প্রতিযোগিতার। যে আগে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরে আসতে পারবে, সে-ই পাবে মর্তে প্রথম পুজো! তো, আলিপুর চিড়িয়াখানা মোটামুটি ঝেঁটিয়ে ফাঁক করে বাঘ, সিংহ, হাতি, পেঁচা, রাজহাঁস একের পর এক প্রাণীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন দেব-দেবীরা। গরুড়ের ব্যাপারটা জানা নেই। হয়তো ডাইনোসরের কেউ হবে, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম থেকে একটা ফসিল উড়ে গিয়েছিল কি! এখন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ভ্রমণ ফসিল ছোড়া দূরত্ব হতে পারে, ঢিল ছোড়া দূরত্ব তো আর নয়। বাঘ, সিংহ, হাতির দম আছে ভাই। পেঁচার জন্য রাতের সিগন্যালমুক্ত আকাশ আছে, রাজহাঁসের জন্য তিনভাগ জল রাজি, হাঁফ ধরলে ওড়ার মতো ডানাও আছে। ইঁদুরের দৌড় তো ওই গর্ত থেকে গুদামঘর অবধি, তায় গণপতির মতো বপু। আগেভাগেই হেরে বসেছিলেন আমাদের গণুদা, কিন্তু বুদ্ধি তো আর কম ধরেন না। নিজের বাপ-মাকে তিনপাক ঘুরে ঢিপ করে প্রণাম করেই বলে উঠলেন, বাবা-মায়ের চরণেই তো বিশ্বের ঠাঁই। ব্যস, আর যায় কোথা! গণেশই প্রতিযোগিতার ফার্স্ট বয় নির্বাচিত হলেন।
মাঝখান থেকে বাপ-মাকে বাড় খাইয়ে ‘ইঁদুর দৌড়’ থেকে নিজেকে বিরত রাখলেন তো বটেই, একইসঙ্গে ইঁদুরের খ্যামতার ব্যাপারটাও চেপে দেওয়া গেল। ফলে, প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, গণুবাবার ওই চেহারা নিয়ে ইঁদুরের দেরি বলেই কি আগেভাগে রওনা দেওয়ার ইশারা?
তা সেই প্রতিযোগিতায় নাকি দ্বিতীয় হয়েছিলেন কুমার কার্তিক! ময়ূরের পেখমে যে এত জোর, কই, কস্মিনকালেও তো দেখিনি বাবা! দুষ্টু লোককে খোঁচা দেওয়ার জোর দেখেছি ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমায়। বরং থাকে তো সে নিজের মনে মনে, উড়েফুঁড়ে বেড়ায় তো না, মাটিতেই মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে পোকা খুঁটে খায় মুরগিছানার মতোই। দেবের রাজ্য়ে সবই গতিময় হয়তো-বা, নয়তো এত পশু থাকতে দ্বিতীয় ময়ূর!
এসব প্রতিযোগিতা বাদ দিয়ে দেবী দুর্গা ও তাঁর পরিবারের চালেই যদি চোখ রাখা যায়, দেখা যাবে লক্ষ্মী-গণেশের অবস্থান একেবারে পাশাপাশি। ভাই-বোনের মধ্যে খুনসুটি কতখানি জানা নেই, কিন্তু তাঁদের বাহনদের তো সম্পর্ক তো তুঙ্গে! এক্কেবারে মারমার কাটকাট! খাদ্য-খাদক সম্পর্ক! তবু দেখুন, পেঁচা আর ইঁদুর দিব্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আছে। আর আমরা নাকি শান্তির জন্য গান্ধীকে খুঁজে মরছি। হে রাম!
ওদিকে হাঁস ও ময়ূর একদম ঠিকঠাকই আছে। যে যার তালে, হংস আছে হংসীর খোঁজে, ময়ূরমশাই পেখমে শান দিচ্ছে ময়ূরীর ইশারাসংকেতে– অন্যমনস্কতায়। দু’জনেই বেশ মুডি। ফলে, ফোটো-অপে এরা তেমন পাত্তা দেয় না, পাত্তা চায়ও না। তবে, শো-স্টপার অবশ্যই সিংহমামা। গর্জনই কাফি ঠাট। আর মহিষ বাবাজিকে যেভাবে বাগে আনে সে, তাতে রাগ বাগেশ্রী না হয়ে যায় কোথা! যদিও, মহিষকে তো কখনও দেখা যায়নি লড়তে। রাস্তায় সে দুলকি চালে হুঁসফুঁস করতে করতে নিতান্ত ঘাসপাতার খোঁজে হেঁটে যায়। তবে হতেও পারে। যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চরকি দিয়ে ময়ূর উড়ে দ্বিতীয় হতে পারে, মহিষাসুরের মহিষ কেন লড়ার সাহস দেখাতে পারবে না সিংহের বিপরীতে?
তা, যা বোঝা গেল, বাহনদের গতিই যেখানে আলাদা, দেবী ও তাঁর পরিবার একসঙ্গে আসছেন কীভাবে? নিশ্চয়ই সাম্যের গল্প আছে! ইকুয়িটি ম্যাচিওর করছে! নয়তো বাহন যদি বেঁকে বসে, দেব-দেবীদের মানুষ তো আর টেনে আনবে না! মানুষ যে কেবল বিসর্জনই জানে, শেখে, রপ্ত করে, আর কোমর দুলিয়ে নাচে, তা ঈশ্বরও ভালমতো জানেন।