জননীই পুত্রের সহস্র সহস্র অপরাধ সহ্য করেন, মানুষ তা জেনেও কেন জগন্মাতার অর্চনা করে না, তা বুঝতে পারি না। তবে, শুধুমাত্র সহনশীলতার জন্যই নয়, মা ও ছেলের সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে এক সহজ স্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতা, প্রাণের টান। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের উক্তি— ‘কথায় বলে, মায়ের টান বাপের চেয়ে বেশি। মায়ের উপর জোর চলে, বাপের উপর চলে না।’
এক বছর আগে তাঁকে কানে কানে বলে দিয়েছিলাম, ‘আবার এসো।’ বছর কোথা দিয়ে ঘুরে এসেছে, বুঝতে পারিনি আমরা। প্রকৃতি তার রূপ বদলে নিতে শুরু করেছে মা আসবেন বলে। মহা সমারোহে শত-সহস্র উপচার সাজিয়ে আমরা প্রস্তুতপ্রায়। কারণ মায়ের পূজা আসছে।
মা সবচেয়ে মধুর নাম, তাঁকে ভালবেসে এসেছি তখন থেকেই, যখন তাঁর নামটুকু উচ্চারণ করতে শিখিনি। তিনি আমাদের চির-আশ্রয়, অনন্ত আশ্বাস। যেদিন ধরাধামে এসেছিলাম, তখন মাতৃক্রোড়ই ছিল আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। কী আনন্দেই কেটেছিল শৈশবের দিনগুলি! ছিল না ভয়, সংকোচ, অহংকার, মায়া-মোহের স্পর্শ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, ধীরে ধীরে নানা আবিলতা, জটিলতা এসে অধিকার করে নেয় আমাদের এই দেহ-মনকে। জান্তে-অজান্তে নানা কামনা-বাসনা, স্বার্থ আর দ্বন্দ্ব-মোহের বিবিধ বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছি আমরা। প্রাত্যহিক এই দুঃসহ জীবনযাত্রায় মাঝে-মধ্যে ভাবি, আবার কি শিশু হয়ে মাতৃক্রোড়ের ‘নিভৃত আশ্রয়’-এ ফিরে যাওয়া সম্ভব? কে সেই মহাশক্তি, যিনি আমাদের সকল আবিলতা মুছিয়ে ফিরিয়ে দেবেন আমাদের শৈশবের সেই অনাবিল আনন্দকে?
সৃষ্টির অতীত যে চরম সত্য, বেদান্তে তাকে ‘ব্ৰহ্ম’ বলে। তন্ত্র তাকেই শক্তির স্বরূপ বলে বর্ণনা করে থাকে। শক্তি ব্রহ্মস্বরূপিণী— এই শাক্তদের মত। দুর্গাসপ্তশতীতে ব্রহ্মাস্তবে রয়েছে— ‘হে দেবী, আপনিই এই জগৎ ধারণ করে আছেন। আপনিই এই জগৎ সৃষ্টি করেন, আপনিই এর পালন করেন এবং প্রলয়কালে আপনিই এর সংহার করেন।’ এছাড়া রয়েছে দেবীর আশ্বাস ও অভয়বাণী। প্রয়োজন হলে দেবী মানবকে দানবের অত্যাচার থেকে রক্ষা করার জন্য মর্ত্যধামে আবির্ভূতা হবেন। শুধুমাত্র এই আশ্বাসই নয়, দেবীভাগবতে রয়েছে— ‘অপরাধসহস্রাণি মাতৈব সহতে সদা।/ ইতি জ্ঞাত্বা জগদ্যোনিং ন ভজস্তে কুতো জনাঃ।।’ অর্থাৎ, জননীই পুত্রের সহস্র সহস্র অপরাধ সহ্য করেন, মানুষ তা জেনেও কেন জগন্মাতার অর্চনা করে না, তা বুঝতে পারি না। তবে, শুধুমাত্র সহনশীলতার জন্যই নয়, মা ও ছেলের সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে এক সহজ স্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতা, প্রাণের টান। শ্রীরামকৃষ্ণদেবের উক্তি— ‘কথায় বলে, মায়ের টান বাপের চেয়ে বেশি। মায়ের উপর জোর চলে, বাপের উপর চলে না।’ তাই মাতৃভাব অবলম্বন করে ঈশ্বর-আরাধনার মতো আর কোনও সহজ শুদ্ধ পন্থা নেই।
মা আসছেন— অনেকেই আমরা জগজ্জননীর দুর্গামূর্তি গড়ে পূজার্চনা করব। পার্থিব ও অপার্থিব, লৌকিক ও অলৌকিক— এই দুইয়ের অপরূপ মেলবন্ধনই এই মাতৃপৃজা। দেবী এখানে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সম্মিলিত শক্তি, যিনি জীবকুলের দুঃখ-দুর্গতি হরণ করেন, তিনিই দুর্গা। তিনিই সেই মহাশক্তি, যিনি আমাদের সমস্ত আবিলতাকে মুছিয়ে দিয়ে আমাদের আনন্দ সাগরে ডুবিয়ে দেবেন।
বস্তুত, জীবন মানেই তো নিরন্তর সংগ্রাম, এই সংগ্রাম অবশ্যই দেবাসুরের সংগ্রামেরই দ্যোতক। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই মানবজীবনে এই দেবাসুরের সংগ্রাম চলে আসছে। আমাদের দেবত্ব-বিমুখ বৃত্তিগুলি আসুরিক শক্তির প্রকাশ। করুণাময়ী আদ্যাশক্তি যে জীবনে প্রকটিতা হন, সেই জীবনই এই দেবাসুর-সংগ্রামে নিশ্চিত বিজয়ী হয়ে অনাবিল শান্তি ও আনন্দ লাভ করে। তাই তো মা দুর্গাকে প্রাণভরে ডাকা!
আলোকের পথযাত্রী আমরা। জীবনের এই ক্ষুরধার পথে লক্ষ্য হারানোর ভয় যেমন রয়েছে, তেমনই এই পথে প্রচ্ছন্ন রয়েছে জগন্মাতার উপস্থিতি, তা আমাদের জীবন-সমুদ্রে বাতিঘরের মতো। অনুভব করার চেষ্টা চাই। ‘মা’ বলে আন্তরিক ডাকলে মাতৃরূপিণী ঈশ্বরী-দুর্গা সন্তানের প্রার্থনায় বিগলিত হয়ে সহজেই সাড়া দেন। আন্তরিক মাতৃ-আরাধনার ফলে তাঁরই অনুগ্রহে সন্তানের মন শুদ্ধ ও সূক্ষ্ম হইয়া উঠে। প্রাণ ভরে তাঁকে ডাকলে তিনি হৃৎপদ্ম আলো করে প্রকাশিতা হন, জীবনে পরমক্ষণ এসে উপস্থিত হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণের শক্তি রাখাল মহারাজের মধ্য দিয়ে কী অনুপম ধারায় দেশে-দেশে, অজস্র মানুষের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। শত শত মানুষকে তৃপ্ত ও শান্ত করেছে। রাখাল মহারাজ অর্থাৎ পরম পূজ্যপাদ শ্রীমৎ স্বামী ব্রহ্মানন্দজি মহারাজের জীবনের একটি বিশেষ অংশ নিয়েই কথামৃতের চতুর্থ পর্ব।
রিয়েঙ্কা ইউক্রেনের স্থানীয় ফুটবল দল নাইভা-র হয়ে গলা ফাটাত মাঠে গিয়ে। যুদ্ধের সময় চার মাস রুশ সেনার অধীনে বন্দিত্ব এবং ছাড়া পেয়ে ফ্রন্টলাইনে রাইফেল নিয়ে থাকা। গত ২১ মে মাত্র ২১ ছোঁয়া রিয়েঙ্কা চলে যায় গানশটে! গ্যালারিতে সেই মুখ, টিফো– লেখা– ‘পিস হ্যাজ আ প্রাইস’।