Robbar

দ্বিতীয় ইনিংস যে কারণে অদ্বিতীয়

Published by: Robbar Digital
  • Posted:November 26, 2024 4:39 pm
  • Updated:November 26, 2024 7:05 pm  

সব কিছুরই থাকা উচিত দ্বিতীয় ইনিংস। কখনও কখনও তা হয়ে উঠতে পারে, অদ্বিতীয় ইনিংসও। যেমন খেললেন ২২ বছরের যশস্বী। জীবন কখনও সখনও বুঝিয়ে দেয়, প্রথমবারেই হেরে যেতে নেই। স্বপ্নের জানলার কাচ ভাঙতে নেই। আর যদি ভাঙেও, তা দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত যেন দেখা যায়, নিজের ফেলে আসা পুরনো পথটিকে, যেখানে রক্ত আর ঘামের দাগ স্পষ্ট। তা না হলে, দ্বিতীয় ইনিংস খেলবেন কী করে?  

অরিন্দম মুখোপাধ্যায়

সোমবারের নিয়মমাফিক সকাল। তবু অফিস যাওয়ার তাড়া কিংবা স্কুলের ব্যাগ গোছানোর ব্যস্ততার মধ্যেও স্বস্তির হাসি। সক্কলের মুড ফার্স্টক্লাস। চায়ের দোকান, সেলুনে উৎসবের আমেজ। সপ্তাহের শুরুতে যে বিরক্তি, ছুটির দিন পেরনোর খচখচানি– তা এই সোমবারে তেমন টের পাওয়াই যাচ্ছে না। হেতু? অস্ট্রেলিয়ার পারথ থেকে ভেসে আসা খুশির খবরে মাতোয়ারা গোটা দেশ। ২৯৫ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে জয়ী ভারত। অথচ আপনাকে এই কথাটাই যদি শুক্রবার সকালে বলা হত, আপনি বিশ্বাস করতেন?

Image
পারথ টেস্টে দুরন্ত জয় টিম ইন্ডিয়ার

বিশ্বাস– যে শব্দটার আড়ালে গড়ে ওঠে সভ্যতা। প্রশমিত হয় প্রতিরোধ। যে শব্দটায় ভর করে ভূত-ভগবান চলছে পৃথিবীতে। সম্পর্কে নানা রং লাগছে এই বিশ্বাসেই। শ্বাসের সঙ্গে যা জড়িয়ে আছে প্রতি পলে। ভারত তখন ৪৭/৪। আগুনের মতো আছড়ে পড়ছেন কামিন্স, স্টার্ক আর হ্যাজেলউড। দারিদ্র থাবা বসাচ্ছে পরিবারে। পেটে খিদের বসবাস। মাথায় ছাদের ঊনতা। জীবন থেকে বিপরীত শব্দ শিখে নিচ্ছে এক যুবক। বস্ত্রাবাস গড়ে তুলছে মুম্বইয়ের রিজিউজি ক্যাম্পে। মালিদের নির্যাতন আর মানসিক যন্ত্রণায় ভেঙে পড়া সম্বলের ফুচকার ভিতর মিশিয়ে নিচ্ছে আস্থার তেঁতুল জল। একমাত্র ওই একটি শব্দের দিকে তাকিয়ে।

১৫০ রানে অলআউট হওয়ার পর যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামছে ভারত, তখন বুমরাদের দাপটে ইতিমধ্যেই গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং। দেহ রেখেছে ১০৪-এ। জেতার যথাযথ পরিস্থিতি তৈরি কর‍তে দরকার তিনশোর বেশি রানের একটা লিড। বাকিটা অধিনায়ক আর তাঁর সহকারীরা বুঝে নেবেন। একদিকে যখন অভিজ্ঞ কে এল রাহুল নিজস্ব শৈলীতে সামলাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান পেস অ্যাটাক তখন অন্যদিক থেকে ক্রমাগত স্কোরবোর্ডকে এগিয়ে যাচ্ছেন যশস্বী।

Image
যশস্বী জয়সওয়াল

বয়স ২২। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জীবনের প্রথম টেস্ট। সামনে স্টার্ক, কামিন্স আর হ্যাজেলউড। অথচ প্রতিটা শট, প্রতিটা রান থেকে ঝরে পড়ছে দৃপ্ততা। মনে পড়ছে কি ক্ষুধার চিৎকার? ক্রমাগত নেট প্র্যাকটিস? শূন্যতার ভয়ের গায়ে ব্যাট দিয়ে মাখিয়ে নিচ্ছেন বিশ্বাসের প্রলেপ। রানের ঘড়ির কাঁটা ধীরে ধীরে পঞ্চাশ পেরচ্ছে। তারপর একে একে একশো, দেড়শো পেরিয়ে শেষে গিয়ে যখন থামছে, তখন তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১৬১। যখন আউট হয়েছেন, সহজে, হাতে ক্যাচ দিয়ে, ভুল শটের দরুন, তিনি অখুশি। ১৬১-তে যেন সন্তুষ্ট নন। কেন, কেন এই শট, জপতে জপতে খানিক পরে বুঝলেন, এই বিদেশের মাটি, এই ১৬১ রান– আজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে। হয়তো বিদেশের মাটিতে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের রূপকথা লেখার জন্য যে কালি ফুরিয়ে গিয়েছিল প্রথম ইনিংসে, দ্বিতীয় ইনিংসে আনা হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন এক কালির শিশি।

……………………………………………………..

বয়স ২২। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে জীবনের প্রথম টেস্ট। সামনে স্টার্ক, কামিন্স আর হ্যাজেলউড। অথচ প্রতিটা শট, প্রতিটা রান থেকে ঝরে পড়ছে দৃপ্ততা। মনে পড়ছে কি ক্ষুধার চিৎকার? ক্রমাগত নেট প্র‍্যাকটিস? শূন্যতার ভয়ের গায়ে ব্যাট দিয়ে মাখিয়ে নিচ্ছেন বিশ্বাসের প্রলেপ। রানের ঘড়ির কাঁটা ধীরে ধীরে পঞ্চাশ পেরচ্ছে। তারপর একে একে একশো, দেড়শো পেরিয়ে শেষে গিয়ে যখন থামছে, তখন তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১৬১।

……………………………………………………..

আসলে সবেরই একটা সেকেন্ড ইনিংস থাকে। জীবনে কিংবা খেলায়। প্রথম ইনিংস যেতে পারে বিফলে, প্রথম ইনিংসে আসতে পারে ঝড়ঝঞ্ঝা, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংস ঘুরে দাঁড়াতেই পারে, দ্বিতীয় ইনিংসের স্বপ্ন তাই ছাড়া যায় না সহজে।

Image
যশস্বী: পারথ টেস্টে জয়ের অন্যতম কারিগর

পারথে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম হার। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫০ রান করেও, ২৯৫ রানে জয় ভারতের। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপদস্থ হয়েও এই অভাবনীয় ক্যামবাক নিজেদের প্রতি বিশ্বাসের কথা বলে। যে বিশ্বাস এক দশ বছরের কিশোরকে উত্তরপ্রদেশ থেকে মুম্বই নিয়ে এসেছিল। যে বিশ্বাস তাকে বস্তিতে শুয়ে আকাশ দেখতে শিখিয়েছে। তাকে করে তুলেছে অপ্রতিরোধ্য।

Image
পারথে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত শতরানের পর যশস্বী

বুমরার অসামান্য বোলিং। বিরাটের ত্রিশতম টেস্ট সেঞ্চুরি এই টেস্টের অন্যতম হেডলাইন। তবুও ভবিষ্যতে যখন ক্রিকেটপ্রেমীরা এই সময়টার দিকে তাকাবে। এই টেস্টটার দিকে তাকাবে। তারা খুঁজে নিতে চাইবে একটা গল্পকে। পনেরোটা চার আর তিনটে ছয় দিয়ে সাজানো একটা ইনিংসকে। একটা অদমনীয় আলোকে। একটা আঁকড়ে ধরা জেদকে। যা তাদের স্বপ্ন দেখতে শেখাবে। বিশ্বাস করতে শেখাবে। বোঝাবে ধৈর্যের মাহাত্ম্যও। জীবনের সমস্ত অবসাদে ভেঙে পড়া মুহূর্তে যাতে তারাও মিশিয়ে নিতে পারে ভরসার তেঁতুল জল।

……………………………………….

ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল

……………………………………….