দীর্ঘদিন ধরে সুনীল ভারতীয় দলে খেলছে, আমাদের চোখও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল সুনীলকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখতে। সেই অভ্যাসটায় এবার ছেদ পড়বে। কিন্তু ওই যে বললাম, সবাইকে একটা জায়গায় থামতে হয়, সঠিক সময় মেনে। সেদিক থেকে সুনীলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি। একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। ওর নতুন করে প্রমাণ করার কিংবা দেওয়ার আর কিছু নেই। চুনী, পিকে-র মতো ও ভারতীয় ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছে।
একজন ফুটবলারের পক্ষে অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিন কাজ। দাপিয়ে খেলতে পারার মতো সঠিক সময়ে কেরিয়ারকে বিদায় জানানোটাও একজন ফুটবলারের বড় গুণ। সবার মধ্যে সেটা থাকে না। যাদের মধ্যে সেই গুণ আছে, সুনীল (ছেত্রী) সেই দলে পড়ে।
অবসর চুনীদাকেও (গোস্বামী) নিতে হয়েছিল। সবাইকেই নিতে হয়, কেউ চিরকাল খেলে যাবে, তা তো হয় না। তবে ১৯ বছর দেশের হয়ে খেলতে পারা যেকোনও ফুটবলারের কাছে গৌরবের। সেই দিক থেকে বলতে গেলে সুনীলের আজ গর্ব হওয়ার কথা। ওর অনুরাগীদের হয়তো মন খারাপ হবে, ওর অবসরের সিদ্ধান্তে। কলকাতায় কুয়েত ম্যাচটায় শেষবার খেলবে ভারতের হয়ে। তারপর আর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখা যাবে না সুনীলকে। আসলে দীর্ঘদিন ধরে ও ভারতীয় দলে খেলছে, আমাদের চোখও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল সুনীলকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখতে। সেই অভ্যাসটায় এবার ছেদ পড়বে। কিন্তু ওই যে বললাম, সবাইকে একটা জায়গায় থামতে হয়, সঠিক সময় মেনে। সেদিক থেকে সুনীলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি। একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। ওর নতুন করে প্রমাণ করার কিংবা দেওয়ার আর কিছু নেই। চুনী, পিকে-র মতো ও ভারতীয় ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছে।
আর পাঁচজনের কাছে সুনীল ভারতীয় ফুটবল আইকন হতে পারে। কিন্তু আমার সঙ্গে ওর সম্পর্কটা একটু অন্য। পারিবারিক দিক থেকে বলছি না। মোহনবাগানে ওর কেরিয়ারের শুরু। আমিই ওকে মোহনবাগানে প্রথম নিয়ে এসেছিলাম। তখন ওকে কেউ চিনত না। একটা বাচ্চা ছেলে। সবসময় মাথা নিচু। কম কথা বলত। কিন্তু ভীষণ ছটছটে। আর গোল করতে ভালোবাসত। সেই ভালোবাসার তাগিদটাই ওকে এতদূর নিয়ে এসেছে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
অবসর চুনীদাকেও (গোস্বামী) নিতে হয়েছিল। সবাইকেই নিতে হয়, কেউ চিরকাল খেলে যাবে, তা তো হয় না। তবে ১৯ বছর দেশের হয়ে খেলতে পারা যেকোনও ফুটবলারের কাছে গৌরবের। সেই দিক থেকে বলতে গেলে সুনীলের আজ গর্ব হওয়ার কথা। ওর অনুরাগীদের হয়তো মন খারাপ হবে, ওর অবসরের সিদ্ধান্তে। কলকাতায় কুয়েত ম্যাচটায় শেষবার খেলবে ভারতের হয়ে। তারপর আর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখা যাবে না সুনীলকে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
সুনীল আমার মেয়ে মেমকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিতে এসেছিল, ইংলিশে কুড়ি পাতা ওর বক্তব্য লিখে, সেটাকে রিহার্সাল দিয়ে। আমি দেড় লাইন শুনেই সুনীলকে বলেছিলাম, ‘ওকে ডান। তুমি ভালো ছেলে। অনেকদিনের চেনা। আমার মেয়েরও তোমাকে পছন্দ। তোমরা সুখী হবে।’ সত্যি বলছি, মেমকে সেদিন সুনীলের প্রপোজ করার কাণ্ডকারখানা মনে পড়লে আজও আমার অবাক লাগে, মজা পাই।
দিল্লি থেকে টাইট প্যান্ট, তাতে গুঁজে পরা ফুল স্লিভ শার্ট, ব্লেজার, চকচকে জুতো পরে সেজেগুজে ভোর চারটের ফ্লাইট ধরে সকাল সাড়ে সাতটায় আমাদের বাড়ীতে এসে হাজির হয়েছিল সুনীল। শুধু বিয়ের সুটটা পরে আসেনি এই যা! আমি তো অবাক। এই সাত সকালে এরকম সেজেগুজে হাজির কেন? সেদিন রাতেই আবার ও দুবাই চলে যাবে। সাহেবকে বললাম , ‘আরে ওকে শর্টস দে, গেঞ্জি দে। সুনীল আগে কমফোর্টেবল হোক।’ মেম তখন আমার ভয়ে পালিয়ে গেছে ঘর থেকে। সাহেব ছিল আমার ঘরে। সুনীলকে দেখে ও মুচকি মুচকি হাসছিল। তারপর আমাকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে শুরু করল। আমি একটু শুনেই ‘হ্যাঁ’ করে দিই। সুনীলের ওপর আমার বরাবরের অগাধ বিশ্বাস। আজও তাই। সুনীল দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা। আন্তর্জাতিক ফুটবল কেরিয়ারকে মাথা উঁচু করে বিদায় জানাচ্ছে। ক’জন ভারতীয় তা করতে পেরেছে? এখানেই সুনীল বাকিদের চেয়ে আলাদা।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
আরও পড়ুন: আবেগ আছে, গতিবেগ নেই, ভারতীয় ফুটবল যেন ঘাটে বাঁধা নৌকা
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
বাড়তি কিছু বলছি না। প্রশংসা ওর প্রাপ্য। দেশকে ও অনেককিছু দিয়েছে। ওর পরিশ্রম, জেদ, অধ্যাবসায়ের কোনও তুলনা হয় না। নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। সাফল্যের খিদেটা প্রথম দিন থেকেই ওর মধ্যে ছিল, সেটাই ওকে বাকিদের থেকে আলাদা করেছে।
অবসর যে সুনীল নিতে চলেছে, জানতাম। ওর সঙ্গে এই নিয়ে কথাও হয়েছে আগে। কী কথা, তা আর বলছি না। সেটা ব্যক্তিগতই থাকুক। তবে জানি, জাতীয় দল থেকে অবসর নিলেও ফুটবলই ওর ধ্যানজ্ঞান থাকবে। ফুটবল ছাড়া আবার সুনীল ছেত্রী হয় নাকি!
লেখা সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক