‘অ্যালবার্ট পিন্টো কো গুসসা কিউ আতা হ্যায়’ সিনেমায় সইদ মির্জার থেকে একটা টাকাও চাননি নাসিরুদ্দিন শাহ। জানতেন তাঁর কাছে কোনও টাকা নেই। পরে ওই সিনেমার অভিনেত্রী শাবানা আজমি এই ঘটনা শুনে বললেন, ‘ইউ আর অ্যান ইডিয়ট, নাসির!’
অম্বরীশ রায়চৌধুরী
উদয়ন ঘোষচৌধুরি
সেলিম-জাভেদের লেখা স্ক্রিপ্টে কাজ করতে চাইবেন না, এমন কোনও অভিনেতা বোধহয় এদেশে ছিলেন না। সাতের দশকের শেষ দিকে, একদিন এই লেখক জুটি মিটিং-এ বসলেন তরুণ নাসিরউদ্দিন শাহের সঙ্গে। আলোচ্য সিনেমার নাম শান। নাসিরকে তাঁরা ভেবেছিলেন সেই চরিত্রে, পরে যেটায় অভিনয় করেছিলেন শত্রুঘ্ন সিনহা। গল্প-টল্প শুনে, নাসিরের পছন্দই হল; ভাবলেন কাজটা করা যেতে পারে। মুশকিল বাঁধল ডেট নিয়ে। তখন তিনি ব্যস্ত অন্য একটা সিনেমার কাজে। লেখকেরা জানতে চাইলেন, ‘কী করছ এখন?’ অভিনেতা বললেন, ‘অ্যালবার্ট পিন্টো কো গুসসা কিঁউ আতা হ্যায়।’ শুধু নামটুকু শুনেই, দুই লেখক অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন, ‘ভাই, ইয়ে ক্যায়সা টাইটেল হ্যায় ফিল্ম কা?’
‘অ্যালবার্ট পিন্টো…’-র নামকরণ যতটা অভিভূত করেছিল নাসিরকে, স্ক্রিপ্ট ততটা ভাল লাগেনি তাঁর। মনে হয়েছিল, অদ্ভুতভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চিত্রনাট্য চলছে। অ্যালবার্টের প্রেমিকার চরিত্রে শাবানা আজমিকে কাস্ট করার কথা শুনে, ভেবেছিলেন এখানে নায়িকা হিসেবে শাবানাকে ঠিক মানাবে না। নিজের চরিত্র সম্বন্ধেও খুঁতখুঁত করছিলেন তিনি। পরিচালক যেরকম ‘স্ট্রিট-স্মার্ট’ চাইছেন, তিনি যেন সেরকম হতে পারছেন না। ওই সিনেমাতে নিজের অভিনয়কে তিনি এখনও অপরিণত মনে করেন। কিন্তু, শাবানাকে পর্দায় দেখার পর, নায়িকার কোনও খুঁত কখনও বের করতে পারেননি নাসির। শাবানার উপস্থিতিই যেন অ্যালবার্টকে উজ্জ্বল করে তুলেছিল।
‘অ্যালবার্ট পিন্টো…’ আর ‘জানে ভি দো ইয়ারো’– এই দুটো সিনেমার জন্য নাসির, অভিনয় ছাড়াও, অনেক কিছু করেছেন। ‘অ্যালবার্ট পিন্টো…’ করার জন্য তিনি পারিশ্রমিকও নেননি। জানতেন, প্রযোজক-পরিচালক সইদ আখতার মির্জার কাছে টাকাকড়ি নেই। যখন নাসিরকে ক্যামেরার সামনে থাকতে হত না, তখন তিনি প্রোডাকশনের কাজ সামলাতেন। সেই সময়ে তিনি তেমন পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেননি; তাই, আউটডোর শুটিং-এ সহজেই ভিড় সামলাতে পারতেন। এমনকী, কখনও কখনও প্রপসও জোগাড় করে আনতেন। নিজের মোটরবাইক এনে দিয়েছিলেন ওই সিনেমার জন্য। সেই বাইকটা এখনও সযত্নে রেখে দিয়েছেন নাসির।
শুটিং শেষ হওয়ার পর, নাসিরউদ্দিনকে ডেকে সইদ মির্জা তাঁর হাতে এক হাজার টাকা দিলেন। দু’হাত জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘আমি তোমাকে এর শতগুণ দিতে চাই, নাসির! কিন্তু, জানোই তো, টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে গেছে… কী করব, বলো?’ শুনে, আবেগে আপ্লুত হয়ে সত্যিই কেঁদে ফেললেন তরুণ অভিনেতা; ভাবলেন, এই মানুষটার কাছে কিচ্ছু নেই, তবুও আমাকে এতগুলো টাকা দিলেন! তিনি বাক্যহীন হয়ে বসে রইলেন।
দিন দুয়েক পর নাসিরের সঙ্গে হঠাৎ দেখা শাবানা আজমির। তিনি শাবানাকে ঘটনাটা বলে, বললেন, ‘দেখেছ, মানুষটা খুব ভাল।’ শাবানা বললেন, ‘ইউ আর অ্যান ইডিয়ট, নাসির! মাত্র পাঁচ দিনের কাজের জন্য সইদ আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে… স্মিতাকেও (পাটিল) তোমার থেকে অনেক বেশি টাকা দিয়েছে…’
নাসিরের মাথা প্রচণ্ড গরম হয়ে গেল! তক্ষুনি তিনি গেলেন সইদ মির্জার বাড়িতে। মির্জা কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, ‘তুমি বিশ্বাস করো, মেয়েগুলো আমাকে ব্ল্যাকমেল করেছে…’ রক্তচক্ষু নাসির তেড়ে উঠলেন, ‘এক ঘুসিতে এখানেই তোমার মুখ ভেঙে দেব! ওরা আমার বন্ধু, আমি ওদের যথেষ্ট চিনি, ওরা এরকম জঘন্য কাজ করতেই পারে না… আমি জানি না, জানতেও চাই না তুমি কী কারণে আমার সঙ্গে এরকম করলে… কিন্তু ব্যাস, এনাফ ইজ এনাফ… আর কোনও দিন আমি তোমার সঙ্গে কাজ করব না…’
যদিও সেদিন রেগেমেগে বেরিয়ে গেছিলেন নাসির, তবে এরপরেও তিনি সইদ আখতার মির্জার পরিচালনায় আরেকটা কাজ করেছিলেন, আটের দশকে। সিনেমার নাম ‘মোহন জোশি হাজির হো!’ কারণ, ওই ফিল্মে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন তাঁর শাশুড়ি দীনা পাঠক। নয়ের দশকে সইদ মির্জা আবার নাসিরউদ্দিনের দরজায় কড়া নেড়েছিলেন। সিনেমার নাম ‘নাসিম’। চরিত্রটা ছিল এক ৭৫ বছরের বৃদ্ধের। কিন্তু অভিনেতা তখন দৃঢ় গলায় ‘না’ করে দিয়েছিলেন। পরে, সেই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন কাইফি আজমি; এটাই ছিল তাঁর সুদীর্ঘ জীবনে একমাত্র অভিনীত ফিল্ম।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলতে পিছ-পা হন না নাসির। রেগে গেলে সোজাসাপটা জানিয়ে দেন মুখের ওপর। তাঁর রাগ যে কী ভীষণ, নানা ঘটনায় তা টের পেয়েছিলেন বিনোদ চোপড়া, কেতন মেহেতা, গোবিন্দ নিহালনি ও আরও অনেকে।
আমি ছাড়া কোথাও কোনও ভাঁড় ছিল না, ছিল না কোনও জোকার। আমিই জোকার– the joker is me আর আজ থেকে নেই কোনও জোকার, কারণ আমি অস্বীকার করছি আপনাদের আমোদ আর রক্ত উপহার দিতে।