আইপিএল টিমের মালিকরা, যে-যাঁর নিজস্ব কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন, যা ক্রমে তাঁর দলের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী, শচীন জানাচ্ছেন, এই দলগুলোর মধ্যে এমন একখানা দলও রয়েছে যার পুরোহিত একটা সময়সূচি ঠিক করে দেন। কী ব্যাপারে? কোন সময় খেলোয়াড়দের হোটেল রুমে আসতে হবে। এবং কোন সময় হোটেল রুম ছাড়তে হবে তাদের! সেটা দিনের যে কোনও সময়ই হতে পারে, এবং ব্যাপার হল, এ ব্যাপারে কারও কোনও গাঁইগুঁইও শোনা হবে না। লিখছেন বোরিয়া মজুমদার।
আইপিএলের ভরা বাজারে, সাজঘরে, টিম মালিকদের আচরণের বিচিত্র রকমসকম দেখা যায়। শচীন তেন্ডুলকরের ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’-তে এ বিষয়ে খানিক টীকাটিপ্পনী রয়েছে। সচিন জানাচ্ছেন, আইপিএল টিমের মালিকরা, যে-যাঁর নিজস্ব কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন, যা ক্রমে তাঁর দলের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী, শচীন জানাচ্ছেন, এই দলগুলোর মধ্যে এমন একখানা দলও রয়েছে যার পুরোহিত একটা সময়সূচি ঠিক করে দেন। কী ব্যাপারে? কোন সময় খেলোয়াড়দের হোটেল রুমে আসতে হবে। এবং কোন সময় হোটেল রুম ছাড়তে হবে তাদের! সেটা দিনের যে কোনও সময়ই হতে পারে, এবং ব্যাপার হল, এ ব্যাপারে কারও কোনও গাঁইগুঁইও শোনা হবে না। সে যে অবস্থাতেই ক্রিকেটাররা থাকুক না কেন! পুরোহিত যখন বলেছেন, ধরে নিতে হবে সেটাই শেষকথা। সচিন লিখছেন, ‘ক্রিকেটারদের হতভম্ব হয়ে করিডরে স্রেফ এক টুকরো তোয়ালে পরে ঘুরে বেড়াতে দেখেছি আমি। আবার এমনও হয়েছে যে, খেলোয়াড়দের খিদে-টিদে কিস্যু পায়নি, কিন্তু জোর করেই তাদের ‘ব্রাঞ্চ’ (ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ একযোগে) করতে পাঠানো হচ্ছে! কারণ একটাই– হোটেল রুমে ওই সময়টায় থাকা যাবে না!’
আরেকজন আইপিএল টিম মালিকের ঘোর বিশ্বাস বাস্তুতে। তাদের সাজঘর বাস্তুমতে যথাযথভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা– আয়নাগুলোও নির্দিষ্ট কোণের ছক মেনে রাখা। ফেরা যাক তেন্ডুলকরের কথায়। শচীন লিখছেন, ‘একবার আমাদের (মুম্বই ইন্ডিয়ানস) বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ, মুম্বইতেই, এই সংস্কারের ব্যাপারটা বোধহয় মাত্রাছাড়া হয়ে গিয়েছিল। ওয়াংখেড়েতে আমাদের সাজঘরের চেহারাটাই বদলে ফেলা হয়েছিল! ঘরের মাঠে খেলা থাকলে যেরকম থাকে আয়নাগুলো, তাদের অবস্থান বদলে ফেলা হয়েছিল। যেহেতু এটাও ছিল আমাদের ঘরের ম্যাচ, এই বদলটা ঘটেছিল রাত্তিরবেলায়। আয়নাগুলো ঢেকে রাখা হয়েছিল তোয়ালে দিয়ে, এটাই নিশ্চিত করতে যে, বিপক্ষকে তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের লক্ষ্ণণরেখা থেকে বের করে দেওয়া যাবে।
তবে, এই সংস্কারের ঝোঁকে অসংখ্য মজার ঘটনাও ঘটে । একবার, কোনও এক বিশেষ মুহূর্তে, মুম্বই ইন্ডিয়ানস-এর ক্রিকেটারদের বলা হয় যে, সাজঘরের বাথরুম তাঁরা ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকী, সেই বাথরুমের বাইরে ঝোলানো ছিল একটি সাইন বোর্ড, যেখানে লেখা: ‘বাথরুম আউট অফ অর্ডার’। একবার দু’বার নয়, প্রায়শই এমনটা ঘটছিল। বারবার এহেন ঘটায়, নেহাতই কৌতুহলবশে এক ক্রিকেটার সেই আদেশ অমান্য করে বাথরুমে ঢুকে দেখেছিলেন– কোনওরকম সমস্যাই নেই, বরং দিব্যি ব্যবহারযোগ্য! সচিনের স্মৃতি বলছে, অবশেষে এইবার, সে-দলের প্রত্যেকেই ঠিক করেন যে, এই বাথরুমই ব্যবহার করব আমরা। মোটেই এই ব্যাপারখানা আমাদের এই ম্যাচ জেতা আটকাতে পারবে না!
দরজার সামনে শম্ভু মিত্র, রেকর্ডিং শেষ করে সবে ফ্লোর থেকে বেরিয়েছেন। গম্ভীর মানুষ, সাহস সঞ্চয় করে কাছে গিয়ে প্রণাম করি, মাথায় হাত রাখলেন। পাশে ছিল চৈতি ঘোষাল অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর বাড়ির টিভিতে আমাকে দেখতে পায় তাই এই বিস্ময়, নিচু গলায় জানাল ডাকঘরের অমল।