ফ্রিদার ব্যক্তিত্বের ও ব্যক্তিগত জিনিসের প্রদর্শন সারা বাড়ি জুড়ে। তাছাড়া এই বাড়ির অতিরিক্ত প্রাঙ্গনে রয়েছে ফ্রিদার জামা, নানা গয়না, জুতো, এমনকী যে মেডিকেল কাস্ট তার শরীর দেওয়া হয়, তার একাধিক অসুস্থতা (ও অপেরেশনের) পর্বে– সেসবই। তবে এই স্মারককরণ, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, এবং বাজারিকরণের বাইরেও আর এক ফ্রিদা-দিয়েগো রয়েছেন। যাঁরা এককথায় প্রথম বিশ্বের পুঁজিবাদকে খারিজ করেছেন, শ্রমজীবী মানুষের পাশে থেকেছেন, এবং নিজেদের অর্থ ও সামর্থ ব্যয় করে সংগ্রহ করেছেন প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মেক্সিকান শিল্প।
ফ্রিদা: পিঞ্জর, শরীর, শয্যা
অধ্যাপক কবিতা পাঞ্জাবির কাছে ফ্রিদা কাহলোর নীল বাড়ির গল্প প্রথম শুনেছিলাম। তারপর দেশ, কাল, সময় অনেকটাই পাল্টে গেছে, বাজার ছেয়ে গেছে ফ্রিদা-মেমোরিবিলিয়ায় (স্মৃতিচিহ্ন)। শেষমেশ ২০২৩-এ কাজের সূত্রে হাজির হলাম মেহিকো সিটিতে– অপূর্ব শহর, মানুষজন, খাবার-দাবার। মিগুয়েল নামের এক ট্যাক্সি-ড্রাইভার আমায় প্রথমে নিয়ে গেলেন ১৯৩১-’৩২ সালে তৈরি দিয়েগো রিভেরা ও ফ্রিদা কাহলোর যৌথ বাড়িতে– টুইন-বিল্ডিং, স্টুডিও ও রেসিডেন্স। এই নীল-সাদা-বোগেনভিলিয়া রঙের বাড়ির অবশ্য কোনও প্রাচীর নেই, আছে ক্যাকটাসের বেড়া। বাড়ির মূলে রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ (মেক্সিকান) মিনিমালিস্ট দর্শন; এই বাড়ি এখন মিউজিয়াম ও রিসার্চ সেন্টার।
শিল্পী হুয়ান ও’গরমন-এর (Juan O’Gorman) নির্মাণ, অসাধারণ আর্কিটেকচার– বিশেষ করে এই দুই আর্টিস্ট ও তাঁদের কাজের প্রয়োজনে তৈরি এই ‘কাসা’। ফলে, বিশাল স্টুডিওর একটি গোটা দেওয়াল কাচের; মূলত, মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ফোল্ডিং জানলা। স্টুডিও ভর্তি মেক্সিকান আর্টিফ্যাক্টস ও পেপার-ম্যাসের পুতুল। সর্পিল সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলেই দিয়েগোর ছোট বসার ঘর ও শোয়ার ঘর। এই ঘরেই দিয়েগোর শেষ দিনগুলি কেটেছে, পড়ে রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত আসবাবপত্র, ব্যক্তিগত জিনিস, সুটকেস ও পেপার-ম্যাসের পুতুল। আন্তঃসংযুক্ত আরও একটি বাড়ি, তার স্ট্রাকচার একই রকম, সেটা ফ্রিদার– ‘কাসা ফ্রিদা’; কিন্তু, তাঁর কোনও চিহ্নই নেই, শুধুমাত্র বাথরুম ছাড়া। এই ক্ষণস্থায়ী স্থানকে মনে রেখেই ফ্রিদা এঁকেছিলেন: ‘হোয়াট দি ওয়াটার গেভ মি’ (১৯৩৮)।
‘হোয়াট দি ওয়াটার গেভ মি’ ছবিটি বিখ্যাত হলেও সাধারণভাবে দেখতে পাওয়া যায় না। এক হিসাবে এই ছবিটি ফ্রিদার ক্যাপসুল স্মৃতিকথা। আমরা দেখি একটি বাথটব, জল, দু’টি পা ও তার নিগূঢ় প্রতিবিম্ব। জলের মধ্যে আমরা দেখি আগ্নেয়গিরি, বহুতল, মধ্যবয়সি দম্পতি (সম্ভব, ফ্রিদার মা-বাবা), দুই প্রেমিকা, নগ্ন নারীদেহ, ফুল, একজন পুরুষ, একটি মৃত পাখি, জলজ গাছ ও ফ্রিদার জামা। যে পা দু’টি দৃশ্যমান, তার মধ্যে ডান পা থেকে রক্তক্ষরণ স্পষ্ট। এই ছবিতে একাধারে যেমন রয়েছে সিম্বলিজম, অন্যদিকে রয়েছে ফ্রিদার ব্যক্তিগত অনুভূতি। স্বভাবতই এটি আন্দ্রে ব্র্যতোঁর পছন্দের কাজ এবং তিনিই ফ্রিদার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ এগজিবিশন– নিউ ইয়র্ক (১৯৩৮) ও প্যারিসে (১৯৩৯) ব্যবস্থাপনা করেন। ‘হোয়াট দি ওয়াটার গেভ মি’-ই ছিল নিউ ইয়র্ক প্রদর্শনীর সেন্টার-পিস। এই সূত্রে ফ্রিদার দু’টি ফোটোগ্রাফ দেখতে পাওয়া যায়– একটিতে তিনি এই ছবিটি আঁকছেন, অন্যটিতে অসাধারণ পোশাক পরে (নিউ ইয়র্ক এগজিবিশনে) ছবির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। পরবর্তী সময়ে, ফ্রিদা ও তাঁর ছবি প্যারিস পৌঁছয়, বেশ প্রচার পায়, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ফ্রিদার একটি ছবি ‘দ্য ফ্রেম’ (১৯৩৮) বাদে কোনও ছবিই বিক্রি হয় না। ‘হোয়াট দি ওয়াটার গেভ মি’ ছবিটি যখন মেহিকোতে ফেরত আসে, ফ্রিদা তাঁর প্রেমিক (ফোটোগ্রাফার) নিকোলাস মারেকে ছবিটি দিয়ে দেন। আজ ফ্রিদা-দিওগোর বাড়ি গেলে অবশ্য যা দেখতে পাওয়া যায়, তা হল ওই ছবির ভিজ্যুয়াল ফ্রেম– ফ্রিদার বাথটব।
ফেরার আগের দিন (দিয়েগোর একাধিক প্রকাণ্ড মিউরাল দেখার পর), মিগুয়েল আমায় নিয়ে যায় কাসা আজুলে– দ্য ব্লু-হাউস, ফ্রিদার বাড়িতে। এই বাড়িতেই ফ্রিদার জন্ম, মৃত্যু। ফ্রিদা ও দিয়েগোর বিচ্ছেদের পর, এবং বিশেষভাবে তাঁর বাবার মৃত্যুর (১৯৪১) পর, এমনকী, দ্বিতীয়বার (দিয়েগোর সঙ্গে) বিবাহের পরও, ফ্রিদা এই বাড়িতেই থাকতেন। ১৯৪৩-এ, ফ্রিদা যখন ‘ন্যাশনাল স্কুল অফ পেইন্টিং’, ‘স্কাল্পচার অ্যান্ড প্রিন্টমেকিং’-এ শিক্ষকতা করছেন, তাঁর অসুস্থতার সময়ে কাসা আজুলই হয়ে ওঠে ‘ন্যাশনাল’ আর্ট-স্কুল।
জায়গাটি এখন মিউজিয়াম ও টুরিস্ট স্পট। যাই হোক, সেই আশ্চর্য নীল, কোলোনিয়াল আর্কিটেকচারের বাড়িতে ঢুকতেই যা দেখা যায়, তা হল এগজিবিশন হল (পুরনো বাড়ির বসার-ঘর)। কাসা আজুলে অবশ্য ফ্রিদার তেমন কোনও বিখ্যাত কাজ নেই। বিশ্বব্যাপী বাজারের ফলে, এবং ফ্রিদার (সাম্প্রতিক) বিস্ময়কর মার্কেটেবিলিটির ফলে, তা থাকার কথাও নয়। তবে যা রয়েছে, তা সুবিদিত। কিন্তু ছবির কথায় পরে আসব, কাসা আজুলের কথা বলি এখন।
এগজিবিশনের ঘরগুলি পেরিয়ে ফ্রিদার খাওয়ার-ঘর ও বাঁদিকে বড় রান্নাঘর– দুটোই ক্যানারি ইয়েলো।অর্থাৎ, হলুদ পাখির গায়ের রং বা বলা চলে সূর্যমুখীর মতো ঝকঝকে হলুদ। মেঝে, টেবিল, আলমারি, এমনকী সেল্ফও হলুদ, এবং তাতে রাখা নানা ট্রেডিশনাল ও কলোনিয়াল পিরিয়ডের কাচের ও মাটির পাত্র। রান্নাঘরে দেওয়ালের নিচের দিকে কোবাল্ট-ব্লু টাইলস, জানলার ওপরে দু’টি পাখির (পারাবত) মিউরাল। আশ্চর্য সব কারুশিল্পে ঘর উজ্জ্বল। ঘরের মাঝখানে রাখা বড় হলুদ রঙের টেবিল ও চেয়ার।খাবার-ঘরের ডানদিকে দিয়েগোর ছোট ঘর। তাতে রয়েছে আসবাবপত্র, ছবি, ভাস্কর্য, টুপি, জ্যাকেট ও দিয়েগোর রাইফেল।
ওপরে উঠতেই ফ্রিদার স্টুডিও, এখানেও প্রায় মাটি থেকে ছাদ পর্যন্ত কাচের জানলা। এই ঘরে পা দিলেই অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়, কারণ ঢুকতেই দেখা যায় টেবিলে রাখা রং, তুলি, রং মেশানোর ডায়ালুটার, রং তৈরি করার সরঞ্জাম ও ছোট ইজেল। মনে হয়, যেন ফ্রিদা কোথায় গিয়েছেন, এক্ষুনি ফিরবেন। টেবিলের পাশেই একটি বড় ইজেল, সামনে ফ্রিদার হুইল-চেয়ার, ইজেলে বসানো ফ্রিদার স্টিল-লাইফ পেইন্টিং। হুইল-চেয়ারের পাশে আরও একটি টেবিল, এবং তার ওপর রাখা রঙের শিশি বা পাউডার পিগমেন্ট– হলুদ, সবুজ, লাল। ফ্রিদার বর্ণময় উপস্থিতি। এছাড়াও রয়েছে পেপার-ম্যাসের পুতুল, নানা কারুশিল্প, ট্রাঙ্ক, গ্লোব ও আয়না। এই আয়না অবশ্য যতটা জরুরি ছিল তাঁর সাজের জন্য, ঠিক ততটাই দরকার ছিল সেলফ-পোর্ট্রেটের জন্য।
এরপর ফ্রিদার বেডরুম। খাট, মাথার ওপর আয়না (সেলফ-পোর্ট্রেটের জন্য), পাশে ক্রাচ ও পায়ের দিকে দেওয়ালে পাঁচজন মহানায়কের ছবি– স্তালিন, লেনিন, মার্কস, এঙ্গেলস, মাও। খাটের ওপরে রাখা ফ্রিদার ‘ডেথ মাস্ক’– অর্থাৎ ফ্রিদার মুখের বা মুখের আদলের প্লাস্টার কাস্টের ছাঁচ, তাতে সযত্নে স্কার্ফ জড়ানো। ভেতরের ঘরে আরও একটি খাট, অন্যান্য আসবাবপত্র ও ফ্রিদার ব্যক্তিগত নানা জিনিস– খেলনা, পুতুল, গ্রামোফোন, স্কার্ফ, পারফিউম ও আয়না। এই আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব লক্ষ করতেই হঠাৎ চোখে পড়ে সামনে রাখা একটি টেরাকোটার পাত্র– এই পাত্রেই রয়েছে ফ্রিদার ভস্ম। যেন: the spectre of Frida is here to haunts us.
বস্তুত, ফ্রিদার ব্যক্তিত্বের ও ব্যক্তিগত জিনিসের প্রদর্শন বাড়ি/মিউজিয়াম জুড়ে। তাছাড়া এই বাড়ির অতিরিক্ত প্রাঙ্গণে রয়েছে ফ্রিদার জামা, নানা গয়না, জুতো, এমনকী যে মেডিকেল কাস্ট তার শরীর দেওয়া হয়, তার একাধিক অসুস্থতা (ও অপেরেশনের) পর্বে– সেসবই। তবে এই memorialization, institutionalization, and merchandising– স্মারককরণ, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, এবং মার্চেন্ডাইজিং (বাজারিকরণ)– এর বাইরেও আর এক ফ্রিদা-দিয়েগো রয়েছেন। যাঁরা এককথায় প্রথম বিশ্বের পুঁজিবাদকে খারিজ করেছেন, শ্রমজীবী মানুষের পাশে থেকেছেন, এবং নিজেদের অর্থ ও সামর্থ্য ব্যয় করে সংগ্রহ করেছেন প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মেক্সিকান শিল্প।
কাসা আজুলে রয়েছে ফ্রিদার অসমাপ্ত ছবিগুলি। এছাড়া, এই ঘর-বিছানা ফ্রিদার একাধিক কাজের স্থান এবং উৎস। তাঁর ফোটোগুলিতে বা ‘উইথআউট হোপ’ (১৯৪৫) ও ‘দ্য ড্রিম’ (১৯৪০) পেইন্টিংয়ে তা প্রতীয়মান। ‘উইথআউট হোপ’ ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখা যায় অনুর্বর জমি ও লাল সূর্য, ফোরগ্রাউন্ডে ফ্রিদা বিছানায় শুয়ে, তার শরীরের ওপর প্রকাণ্ড ইজেল এবং এই ইজেলের ওপর জড়ো হয়েছে মাংসপিণ্ড, মৃত প্রাণী ও কঙ্কাল। সেই তালগোল পাকানো মাংস গলে পড়ছে তাঁর শরীরে। ফ্রিদার অসুস্থ অবস্থায় খাটে শুয়ে বুকের ওপর ইজেল নিয়ে ছবি আঁকার ফোটোগ্রাফটি দেখলে এই পেইন্টিংয়ের ‘রিয়ালিটি’ বুঝতে অসুবিধে হয় না। আরও একটি ফোটোগ্রাফ রয়েছে– ফ্রিদা বিছানায় শয্যাশায়ী, বুকের উপর ইজেল, এবং যে ছবিটি আঁকছেন সেটি হল ‘মাই ফ্যামিলি’ (১৯৪৯)। ছবিটি অসমাপ্ত, ফলে সম্ভবত বিক্রয়েযোগ্য নয়, এবং কাসা আজুলে দেখা যায়। তাছাড়া, অসমাপ্ত ছবির মধ্যে কাসা আজুলে রয়েছে: ‘ফ্রিদা অ্যান্ড দি সিজারিয়ান’ (১৯৩১)।
বিশেষভাবে যে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করতে চাইছি, তা হল ফ্রিদার শরীর, পিঞ্জর, ঘর ও বিছানা– যা আদপে ফ্রিদার কাজের স্থান ও বিষয়। ‘ফ্রিদা অ্যান্ড দি সিজারিয়ান’-এ দেখা যায় ফ্রিদা সোজাসুজি বা চিত হয়ে শায়িত, মাথার পিছনে অস্ত্রপচার চলছে, পাশে দিয়েগোর ‘হেড-শট’ ও একটি নিথর শিশু; বিছানা বেয়ে রক্ত সমস্ত ঘরে ছড়িয়েছে। আরও কিছু আঁকিবুকি রয়েছে, কিন্তু তা অব্যক্ত (বা অসমাপ্ত)। ফ্রিদার এই শরীর ইউরোপীয় রেনেসাঁসের ধাঁচে নুড নয়; দিয়েগোর কাজের মতোও নয়। এই শরীর যেন ‘মেডিকেল-স্টাডির’ শরীর– সোজাসুজিভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কাঁটা-ছেড়ার অপেক্ষায়। ফ্রিদার নিজের ডাক্তারি পড়ার অভিজ্ঞতা ও নিরন্তন অসুস্থতা এই ছবিতে একে-অপরের মধ্যে দ্রবীভূত হয়েছে।
‘দ্য ড্রিম’ ছবিটিতে যে চার-খুঁটির খাট দেখি, সেই বিছানা ফ্রিদার নিজের– কোনও কাল্পনিক শয্যা নয়। কাসা আজুলে, ফ্রিদার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আমার মনে হল এই ‘ড্রিম’-এর কথা। ফ্রিদা এই বিছানায়ে শুয়ে, গায়ে সোনালি আবরণ, তার ওপর উত্থিত লতা-পাতা। মাথার ওপর যে আচ্ছাদন রয়েছে, ঠিক সেখানে একটি কঙ্কাল শায়িত। এই কঙ্কালের গায়ে বিস্ফোরক বাঁধা, কিন্তু হাতে ফুল– জীবন-মরণের সীমানা ছাড়িয়ে মেহিকোর সাংস্কৃতিক প্রতীক। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনও ঘর বা দেওয়াল নেই– রয়েছে গাঢ় নীল আকাশ ও সাদা মেঘ। পিছনে, ফ্রিদার স্টুডিও-র কাচের দেওয়াল বা জানলার বাইরে দেখি সন্ধ্যা নেমে এসেছে, সাদা মেঘের তরঙ্গ। আমাকেও এবার বাড়ি ফিরতে হবে।
১৯৫৩ সালে ফ্রিদার ডান-পা কেটে বাদ দেওয়া হয়, যদিও সেই একই বছর মেহিকোতে ফ্রিদার ছবির প্রদর্শনী হয়, এবং সেই অনুষ্ঠানে এই চার-খুঁটির খাট নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে, ১৩ জুলাই, ফ্রিদা নিউমোনিয়া বা ঘুমের ওষুধের ওভারডোজে মারা যান। অথচ সেই বছর ফ্রিদা একাধিক ছবি আঁকেন, যেমন ‘মার্কসিজম উইল গিভ হেলথ টু দ্য সিক’, ও ‘ভিভা লা ভিদা, ওয়াটারমেলনস’। ‘মার্কসিজম…’ ছবিতে দেখা যায় ফ্রিদা, পরনে সবুজ স্কার্ট ও চামড়ার করসেট, মাথার পিছনে কার্ল মার্কস, এবং ফ্রিদাকে আগলে রেখেছে প্রকাণ্ড দু’টি হাত। এই দুই হাত অবশ্য পাখির ডানার মতো দেখায়, পাশে ছিটকে গেছে ফ্রিদার ক্রাচ, ও ব্যাকগ্রউন্ডে একটা গ্লোব রক্ষা করছে পারাবাত। ‘ভিভা লা ভিদা’ বা ‘লং লিভ লাইফ’ তার স্টিললাইফের ধারার প্রাণোচ্ছ্বল কাজ, এবং বলা হয় তাঁর শেষ (সমাপ্ত) ছবি। চোখে পড়ে ফলের গায়ে লেখা জীবনের জয়গান, যা প্রতিধ্বনিত হয় ফ্রিদা ও তাঁর (লাল) ভেলভেটের পোশাক ছবিটিতে (‘সেলফ-পোর্ট্রেট ইন আ ভেলভেট ড্রেস’, ১৯২৬)। ঘটনাক্রমে, এই ছবির সামনে দ্বিতীয়বার দঁড়িয়ে মনে হল: দুনিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে লাল-সবুজ-সাদা-কালোর এবং তরমুজের নতুন সংজ্ঞা তৈরি হয়েছে। ফ্রিদার ছবি সেই বেঁচে থাকার লড়াইয়ের দিকনির্দেশ করে, এখনও করে চলেছে।
………………………………………………………..
পড়ুন মধুজা মুখার্জির লেখা প্রথম পর্ব: চোখে দেখার আগে পর্যন্ত ধারণা ছিল, ফ্রিদা বিশাল ক্যানভাসে কাজ করতেন
………………………………………………………….