কেরি নিজে লিখেছিলেন কম, লিখিয়েছিলেন বেশি। তাঁর প্রেরণায় ১৮০১-১৮১৫ সময়কালে রচিত হয় ১২টি বাংলা বই। বাংলার অধ্যাপক হিসেবে কেরির সামনে ছিল তিনটি সমস্যা: বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনা, উন্নত গদ্যশৈলী উদ্ভাবন যা দিয়ে উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক রচনা সম্ভব, এবং মাতৃভাষার প্রতি বাঙালির আগ্রহ সৃষ্টি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য ইউরোপীয় অধ্যাপকের বাংলার প্রতি যে চরম অবজ্ঞা, কেরির কাছে তা ছিল অত্যন্ত বেদনার। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা ভাষা ও বাংলা বিভাগের বিরুদ্ধে অন্য অধ্যাপক ও কলেজ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে একা লড়াই করেছিলেন কেরি।
সময়টা আঠারো শতক। বাঙালিরা তখন বাংলা ভাষায় কথা বলে বটে, কিন্তু সে ভাষা কবিতার ভাষা, ছন্দ মিলিয়ে। প্রতিদিনের জীবনে, প্রতি মুহূর্তে পরস্পরের সঙ্গে নিজেদের মনের কথা উজাড় করে বলার জন্য যে ভাষার দরকার, তা গদ্যভাষা। কারণ, গদ্যের কোনও নির্দিষ্ট চলন নেই, তার ভিতটা নির্ভর করে বক্তার ইচ্ছার ওপর, তার ভাবকে প্রকাশ করার জন্য কোনও উপমার দরকার হয় না। এই সহজ স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশই গদ্যের স্বভাব। কিছু চিঠিপত্রের কথা বাদ দিলে, বাঙালিরা গদ্যভাষা লিখতে জানে না।
বাংলা ভাষা যখন তার প্রাকৃত, অপভ্রংশের খোলস ছেড়ে হাতড়ে বেড়াচ্ছিল নিজের আসল পরিচয়, সেই সময় সাগর পেরিয়ে এলেন এক খ্রিস্টান ইউরোপীয় মিশনারি। যে সময় বাঙালি পণ্ডিতরাও বাংলা ভাষা নিয়ে ভাবিত ছিলেন না, বাঙালির ভাষা শিক্ষার জন্য একটি বই রচনার তাগিদও তাঁরা বোধ করেননি– সেইসময় বাংলা ভাষা শিখে বাংলা গদ্যের পথ নির্মাণে নিজেকে উজাড় করে দিলেন এক বিদেশি। জুতোর দোকানে কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীকালে হলেন জুতোর দোকানের মালিক। তাঁর ভবিষ্যৎ জীবন সাধারণভাবে সেই নির্ধারিত পথেই যাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি, নাটকীয় ভাবে তাঁর জীবন মোড় নিয়েছে অন্যদিকে। তিনি উইলিয়াম কেরি। ভাষা শিক্ষায় তাঁর অসাধারণ দক্ষতা, শারীরিক ক্লেশ অতিক্রম করে তাঁর অপরিসীম অধ্যবসায় তাঁকে দিয়েছে বিশিষ্টতা।
১৭ আগস্ট, ১৭৬১। ইংল্যান্ডের নর্দাম্পনশায়ারের কাউন্টি টাউসেস্টারের তিন মাইল দূরের এক অখ্যাত গ্রাম পলার্সপিউরিতে উইলিয়াম কেরির জন্ম। উদার প্রকৃতির মাঝে দারিদ্র ছিল এই গ্রামের মানুষদের নিত্যদিনের সঙ্গী। চামড়া আর সুতোর কাজ ছিল তাঁদের প্রধান জীবিকা। ঘরের মেয়েরাও তাঁত বুনে আর বালিশের লেস বানিয়ে কিছু উপার্জন করত। ছেলেবেলা থেকে কেরি পেয়েছেন ঠাকুমার স্নেহের উত্তাপ। বাবা এডমণ্ড সকাল-সন্ধ্যা তাঁত বুনেও সংসারকে সহজ করে তুলতে পারেননি। কিন্তু তাঁর বই পড়ার অভ্যাস ও মনোযোগ তিনি সঞ্চারিত করেছিলেন পুত্র উইলিয়ামের মধ্যে।
উইলিয়াম কেরি চাষের কাজ করেছেন। এক মারাত্মক চর্মরোগে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। দারিদ্র তো ছিলই, পুত্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ছায়ায় আশঙ্কিত বাবা তাঁকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এক মুচির কাছে শিক্ষানবিশি করতে। ভাষা শেখার সহজাত ক্ষমতা ছিল কেরির। ঝোঁক ছিল ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে। ব্যবসা চালাতে চালাতেই তিনি শিখে নিলেন হিব্রু, ইতালিয়ান, ডাচ, ফ্রেঞ্চ আর গ্রিক ভাষা। তাঁর এরকম পাণ্ডিত্য কাজে লাগাবার উদ্দেশ্যে তাঁকে একটি স্কুলে পড়াবার জন্যও আহ্বান জানানো হল। তখন তাঁর বয়স ২৪। এরই মধ্যে তিনি নিয়মিত গির্জায় গিয়ে ভাষণ দিতেন। জন রাইল্যান্ডের কাছে দীক্ষিত হয়েছিলেন ব্যাপটিস্ট মতে।
আঠারো শতকের ভারত। পরাক্রান্ত মুঘল শক্তি তখন একেবারেই দুর্বল। পলাশির যুদ্ধে সুবে-বাংলার নবাব পরাজিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি ক্লাইভের কূটবুদ্ধি ও রণকৌশলের কাছে। তলোয়ার ও বন্দুকের সাহায্যে এক-একটা রাজ্য জয়ের পরই আসেন ধর্মপ্রচারকরা। ভারতে এসে তারা দেখলেন এত বড় দেশটার মানুষদের মধ্যে একতাবোধ নেই। অস্ত্রবল নেই। সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ম নেই। কিন্তু রয়েছে এক প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বেশিরভাগ মানুষ অজ্ঞাতসারেই সেই ঐতিহ্যের অনুসরণ করে। এই ভারতের অধিকাংশ অধিবাসী হিন্দু। বহু শতাব্দীর অবক্ষয়ে এই হিন্দু ধর্মের মধ্যে ঢুকে গেছে কঠোর জাতিভেদ-প্রথা, অস্পৃশ্যতা এবং অন্য ধর্মের কোনও মানুষকেই এই ধর্মে গ্রহণ না-করার অনমনীয় সংস্কার। কিন্তু এই ধর্ম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সব পথ খোলা। তথাকথিত উচ্চশ্রেণির অত্যাচারে বহু হিন্দু ধর্মত্যাগ করে মুসলমান হয়েছে। তাহলে তো তারা খ্রিস্টান হতেও পারে। এই ধারণা থেকেই দলে দলে খ্রিস্টধর্ম প্রচারকদের এই দেশে আগমন।
উইলিয়াম কেরিরও মনে হয়েছিল সারা পৃথিবীর মানুষকেই খ্রিস্টধর্মের পবিত্র আলোকের মধ্যে নিয়ে এসে দীক্ষা দেওয়া উচিত। ঠিক করলেন তিনি ছোট্ট গণ্ডি ছেড়ে বৃহত্তর জগতে এই ধর্মপ্রচারের মহান ব্রত নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন। তিনি ব্যাপটিস্ট আন্দোলনের অন্তর্গত ছিলেন, যাদের একটা ঘোষিত নীতিই হচ্ছে, ‘প্রোপাগেশন অব দ্য গসপেল অ্যামংস্ট দ্য হিদেন’। তবে ভারতে আসার প্রেরণা কেরি শুধুমাত্র মিশনারিদের কথা শুনেই পেয়েছিলেন তা নয়, তার খানিকটা পেয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কুকের বিস্ময় জাগানো অভিযান থেকেও।
ছোটবেলায় ধর্মগ্রন্থের চেয়ে অভিযান কাহিনির বই তাঁকে বেশি টানত। সেই সময়ে টমাসের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে উইলিয়াম কেরির। টমাস ছিলেন জাহাজের চিকিৎসক। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুন টমাসের সঙ্গে কেরি সপরিবারে সাগরে ভেসে পড়লেন। গন্তব্য ভারত। উদ্দেশ্য খ্রিস্টধর্ম প্রচার। জাহাজেই কেরি টমাসের কাছ থেকে বাংলা শিখতে আরম্ভ করেন। দীর্ঘ পাঁচ মাস সমুদ্রযাত্রা করে ১১ নভেম্বর তাঁরা এসে পৌঁছলেন কলকাতায়। জাহাজঘাটায় তাঁদের অভ্যর্থনায় হাজির ছিলেন রামরাম বসু। তাঁকে মাসিক ২০ টাকা বেতনে মুন্সি নিযুক্ত করেন উইলিয়াম কেরি।
বাংলায় আসার পর সাত মাস কেরি সমস্ত পরিবার সমেত প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় কলকাতা থেকে ব্যান্ডেল, ব্যান্ডেল থেকে নদীয়া, নদীয়া থেকে মানিকতলা এবং শেষপর্যন্ত সুন্দরবনের দেবহট্টায় জীবন কাটান। এই দরিদ্রের মধ্যেও বাঙালিকে তাঁর মাতৃভাষাতেই খ্রিস্টধর্মের পাঠ পড়াতে বাংলা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করার কাজ শুরু করেন উইলিয়াম কেরি। সাল ১৭৯৪। নীলকুঠির ম্যানেজারের চাকরি নিয়ে কেরি চলে যান উত্তরবঙ্গের মালদহ শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বামনগোলা ব্লকের মদনাবতী গ্রামে। ছিলেন পাঁচ বছর। মুদ্রণযন্ত্র, কাগজ, কালি ও হরফ সংগ্রহ করে বাংলা হরফে বাইবেলের অনুবাদ ছাপার কাজ শুরু করেন তিনি।
সাল ১৭৯৬। নিউ টেস্টামেন্ট শুধু ছাপার অপেক্ষা। হিসেব করে দেখা গেল ১০,০০০ কপি ছাপাতে ৪৩,৭৫০ টাকা খরচ হবে। এছাড়াও পরিশ্রম এত বেশি, তাতে পুস্তক প্রকাশ করা সাধ্যাতীত ব্যাপার। কেরির সঙ্গে যোগাযোগ হল পঞ্চানন কর্মকারের। পঞ্চানন তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ছাপাখানায় হরফ তৈরির কাজ করেন। তাঁকে বাংলায় হরফ তৈরি করার কথা বললেন কেরি। বাংলায় বাইবেল মুদ্রণ, তা-ও হরফপিছু মাত্র একটাকা চার আনা খরচে, সে ব্যাপারে কেরিকে নিঃসংশয় করলেন পঞ্চানন।
সেইসময় কেরির কাছে খবর আসে বিলেত থেকে আসছেন জোশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড আর বার্নসডন প্রমুখ মিশনারিরা। হুগলি নদীর তীরে শ্রীরামপুরে তাঁরা এলেন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ অক্টোবর। তাঁদের সাথে স্বাক্ষাৎ হল কেরির। বৃহৎ কর্মযজ্ঞে তাঁরা নিয়োজিত হলেন। প্রতিষ্ঠিত হল শ্রীরামপুর মিশন। ১০ জানুয়ারি, ১৮০০। জর্জ উডনির বদান্যতায় উইলিয়াম কেরি একটি কাঠের মুদ্রণযন্ত্র কিনেছিলেন তা দিয়েই সূচনা হল শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের। মার্চ মাসের গোড়ায় পঞ্চানন কর্মকার এসে যোগদান করলেন শ্রীরামপুর মিশন-ছাপাখানার কাজে। ১৮ মার্চ নিউ টেস্টামেন্টের প্রথম সিট মুদ্রণের জন্য প্রস্তুত। সেদিন মিশন গোষ্ঠীর উৎসাহ ছিল অসীম– বাংলার আকাশ-আচ্ছন্ন করা কুসংস্কারের মেঘ ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।
…………………………………………………………
সাল ১৭৯৬। নিউ টেস্টামেন্ট শুধু ছাপার অপেক্ষা। হিসেব করে দেখা গেল ১০,০০০ কপি ছাপাতে ৪৩,৭৫০ টাকা খরচ হবে। এছাড়াও পরিশ্রম এত বেশি, তাতে পুস্তক প্রকাশ করা সাধ্যাতীত ব্যাপার। কেরির সঙ্গে যোগাযোগ হল পঞ্চানন কর্মকারের। পঞ্চানন তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ছাপাখানায় হরফ তৈরির কাজ করেন। তাঁকে বাংলায় হরফ তৈরি করার কথা বললেন কেরি। বাংলায় বাইবেল মুদ্রণ, তা-ও হরফপিছু মাত্র একটাকা চার আনা খরচে, সে ব্যাপারে কেরিকে নিঃসংশয় করলেন পঞ্চানন।
…………………………………………………………
১৮০০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসের শুরুতে ‘মঙ্গল সমাচার মতীয়ের রচিত’ প্রকাশিত হয়। শ্রীরামপুর মিশন-ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত প্রথম গদ্য-পুস্তক। ছাপা হতে থাকল কৃত্তিবাসের রামায়ণ, কাশীরামের মহাভারত, দুই খণ্ডে বাংলা বাইবেল। এছাড়াও নানা ভারতীয় ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ প্রকাশিত হল। শ্রীরামপুর মিশন শুধুমাত্র ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষায় ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং প্রাচ্য সাহিত্যকে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য বিজ্ঞান এবং ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষার জ্ঞান অনুবাদ করার কাজেও প্রসারিত ছিল। এর পরবর্তী ৩২ বছরে শ্রীরামপুরের ওই ছাপাখানা থেকে মোট ৪৫টি ভাষায় ২ লক্ষ ১২ হাজার বই প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময়ের হিসাবে যা এককথায় দৃষ্টান্তমূলক, নজিরবিহীন।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল ওয়েলেসলি ইংল্যান্ড থেকে আগত কোম্পানির তরুণ সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষা, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভূগোল ইত্যাদি শেখানোর উদ্দেশ্যে কলকাতায় স্থাপন করেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। ১৮০১ সালের ৪ মে ৫০০ টাকা মাসিক বেতনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম শিক্ষক হিসাবে সেখানে যোগদান করেন উইলিয়াম কেরি। তখন অ্যাংলিকান খ্রিস্টান (চার্চ অব ইংল্যান্ডের শাখাভুক্ত খ্রিস্টান) ছাড়া কেউ এ কলেজে চাকরি পেতেন না। কেরিকে তাই অধ্যাপক না করে অর্ধেক বেতনে শিক্ষকের পদে নিয়োগ করা হয়।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে কেরি বাংলা গদ্যগ্রন্থের অভাব টের পেলেন। রামরাম বসুকে দিয়ে লেখালেন ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’, কেরির কথায় বাংলা গদ্যে লেখা প্রথম মৌলিক গ্রন্থ। কেরি নিজে লিখেছিলেন কম, লিখিয়েছিলেন বেশি। তাঁর প্রেরণায় ১৮০১-১৮১৫ সময়কালে রচিত হয় ১২টি বাংলা বই। বাংলার অধ্যাপক হিসেবে কেরির সামনে ছিল তিনটি সমস্যা: বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনা, উন্নত গদ্যশৈলী উদ্ভাবন যা দিয়ে উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক রচনা সম্ভব, এবং মাতৃভাষার প্রতি বাঙালির আগ্রহ সৃষ্টি। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য ইউরোপীয় অধ্যাপকের বাংলার প্রতি যে চরম অবজ্ঞা, কেরির কাছে তা ছিল অত্যন্ত বেদনার। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা ভাষা ও বাংলা বিভাগের বিরুদ্ধে অন্য অধ্যাপক ও কলেজ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে একা লড়াই করেছিলেন কেরি। হিন্দুস্থানি ও বাংলা বিভাগকে মিশিয়ে, বাংলা বিভাগের অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে যেভাবে তিনি বাংলা ভাষা ও বিভাগের অস্তিত্ব রক্ষা করেছিলেন তা এক ইতিহাস। কেরির লড়াই বিফলে যায়নি, ১৮২৮ থেকে তিন বছরে বাংলা বিভাগে ছাত্রসংখ্যা বেড়ে হয় তিন থেকে ৩৪।
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা ছাড়াও এক সময় সংস্কৃত ও মরাঠি ভাষার অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন কেরি। ১৮৩১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা ভাষা সংক্রান্ত ব্যাকরণ, অভিধান ও বাংলা পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। বাংলা ছাড়াও বহু ভারতীয় ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ এবং সংস্কৃত, মারাঠি, ওড়িয়া, অসমিয়া, পাঞ্জাবি, কর্ণাট ভাষার অভিধান ও ব্যাকরণ বইও সংকলন ও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে ভারতীয় ভাষাগুলির মধ্যে বাংলাই কেরিকে মুগ্ধ করেছিল সবচেয়ে বেশি। বাংলার গতিময়তাকে সক্রিয় রাখতে ১৮২৪-এ কেরি প্রকাশ করেন ‘ডিকশনারি অব বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ’, এতে ছিল ৮৫,০০০ শব্দ। ৩০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। ১৮২৫ সালের আগে বাংলা, সংস্কৃত ও ফরাসিতে মুদ্রিত পুস্তকের সংখ্যা এতটাই নগণ্য ছিল যে, শুধু তাদের ওপর নির্ভর করে অভিধানের জন্য শব্দ নির্বাচন করা সম্ভব ছিল না। তিনি তাই বাংলা, সংস্কৃত ও ফরাসি পাণ্ডুলিপি থেকেও শব্দচয়ন করেছেন। কথ্য ভাষার শব্দ তিনি গ্রহণ করেছেন নিঃসংকোচে। প্রত্যয়, উপসর্গ প্রভৃতি যোগ করে বহু নতুন শব্দ এনেছেন তাঁর অভিধানে।
বাংলা ভাষা নিজের ক্ষমতায়, নিজের গরিমায় মাথা তুলে দাঁড়াবে, কেরির মনে এই প্রত্যয় ছিল। বাংলা ভাষার পরিশীলিত রূপ, যা গদ্য রচনার জন্য অপরিহার্য, তা নিয়েই শুধু চিন্তিত ছিলেন না তিনি। বাংলা কথ্যভাষার রূপসন্ধানও ছিল তাঁর লক্ষ্য। এদেশে আগত ইংরেজদের স্থানীয় ও লৌকিক ভাষা শেখানোর জন্য সংলাপের মাধ্যমেই ‘কথোপকথন’ গ্রন্থটি পরিকল্পিত ও রচিত হয়। সাল ১৮০১। আগস্ট মাস। এতে মোট ৩১টি অধ্যায়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কথোপকথন কেরি যথাযথ তুলে ধরেছিলেন। ফলে চরিত্রগুলি হয়ে উঠেছিল প্রত্যক্ষ ও জীবন্ত। বাংলার লৌকিক জীবনের সঙ্গে কেরির এত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আমাদের বিস্মিত করে।
কেরির ‘ইতিহাসমালা’ প্রকাশিত হয় ১৮১২-তে। ‘ইতিহাসমালা’ গ্রন্থটি অবশ্য ইতিহাস নয়, বাংলার নানা অঞ্চলে প্রচলিত প্রায় দেড়শত গল্পের সংকলন। এর মূল আকর্ষণ স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জল গদ্যশৈলী। কিন্তু বইটি ছাপা হওয়ার পরই আগুন লাগে প্রেস ও গুদামে। লেলিহান আগুনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল প্রেসে রাখা তাঁর অমূল্য সব অনুবাদ, অভিধান, ব্যাকরণের পাণ্ডুলিপি। বিশেষ করে ‘ইতিহাসমালা’র পুরো স্টক শেষ। কেউ কেউ অবশ্য ইঙ্গিত করেছেন যে, আগুন এমনি এমনি লাগেনি, এই বইয়ের কিছু কিছু গল্পে নীতিবাগীশদের আপত্তি ছিল, তাদের কারও নির্দেশে বইগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার ফলে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে গণ্য হওয়ার মতো এই বইটির কথা কেউ জানতেই পারল না। লং সাহেবের বাংলা মুদ্রিত গ্রন্থের তালিকায় এই বইয়ের নাম নেই। এমনকী কেরি সাহেবের রচনাবলিতেও এই বইয়ের নাম স্থান পায়নি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস যাঁরা রচনা করেছেন তাঁরাও অনেকে এই বইয়ের নাম জানতেন না। কিন্তু আগুনেও নাকি সব কিছু দগ্ধ হয় না। ‘ইতিহাসমালা’র দু’-চার কপি কোনও ক্রমে বেঁচে যায়। সেই রকম একটি কপি কোথা থেকে খুঁজে পেয়ে প্রথম মুদ্রণের ১৬০ বছর পরে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির অতি আপনজন ফাদার দ্যতিয়েন এর একটি সটীক সংস্করণ প্রকাশ করেন।
গদ্যের প্রাথমিক প্রয়োজন যোগাযোগ, ‘যুক্তি-চিন্তার বাহন হয়ে মানুষের জ্ঞান-জীবনকে মুক্ত করা’। বাঙালিদের মধ্যে সেই সামাজিক সংযোগ গড়তে চেয়েছিলেন কেরি। কেরির সামনে বাংলা গদ্যের কোনও নমুনা ছিল না। সমস্যাটা তিনি ধরতে পেরেছিলেন বঙ্গসমাজের নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়সূত্রে। আসলে বাঙালি পণ্ডিতদের ধারণাই ছিল না যে, তাঁরা যে ভাষায় কথা বলেন ও যা লিখতে চান, এই দুটোর মধ্যে কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে।
বাঙালিকে বাংলা গদ্যভাষা শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাহেবরা, স্বেচ্ছায়। বাংলা ব্যাকরণের জন্ম ১৭৭৮-এ নাথানিয়েল হ্যালহেড-এর হাতে। তবে তা উপযোগিতা হারিয়েছিল কারণ, তখন বাংলা ভাষার কোনও সুগঠিত রূপ ছিল না। ১৮০৫-এ উইলিয়াম কেরি হ্যালহেড-এর বাংলা বাক্যগঠনের আনুমানিক অন্বয়কে একটা নিয়মে বাঁধেন। বাংলা ভাষার বিশৃঙ্খল রূপের অবসান ঘটে, ফুটে ওঠে একটা নির্দিষ্ট চেহারা। সজনীকান্ত দাস তাঁর ‘বাংলা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থে লিখছেন, ‘বাংলা সাহিত্য বাঁচিয়া থাকিলে কেরী স্বমহিমায় চিরদিন বাঁচিয়া থাকিবেন, কারণ তিনিই সর্বপ্রথম প্রভূত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলা ভাষাকে ভদ্র ও শিক্ষিত জনের আলোচ্য ভাষার মর্যাদা দান করিয়াছিলেন।… তিনিই প্রথম অনুভব করিয়াছিলেন একটি বৃহৎ জাতির অন্তরের সর্ববিধ ভাবপ্রকাশের পক্ষে এবং সাংসারিক, ব্যবহারিক, দৈনন্দিন সকলবিধ প্রয়োজন সাধনের পক্ষে বাংলা ভাষাই যথেষ্ট, মাতা সংস্কৃত ছাড়া অন্য কোনও ভাষার উপর নির্ভর না করিয়াও তাহার চলিতে পারে।’
…………………………………………………………….
আরও পড়ুন ঈশা দেব পাল-এর লেখা: পার্ক স্ট্রিটে বিদেশি খাবার দোকানে মাছের ঝোলের খোঁজ করছিলেন ফাদার দ্যতিয়েন
…………………………………………………………….
ইতিহাসবিদ ডেভিড কফ-এর মতে, কেরি বাংলা ভাষা পছন্দ করতেন তার মাধুর্যের জন্য নয়, বাংলার মানুষের সান্নিধ্যে যাওয়ার সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম বলে। বাংলা ভাষার জন্য কেরি লড়েছিলেন টানা ২৫ বছর। গভীর মমত্ববোধ না থাকলে এই ধৈর্য ও নিষ্ঠা আসত না। বাঙালি পণ্ডিতদের কাছে ব্রাত্য, অন্য প্রাচ্যভাষার তুলনায় মর্যাদাহীন বাংলা ভাষার অন্তর্লীন শক্তিকে আবিষ্কার করে বাংলা ভাষাকে তিনি নতুন এক প্রাণে জারিত করেছিলেন। বাংলা যাঁর মাতৃভাষা নয়, এমন এক বিদেশির সেই ভাষার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা– বাঙালির কাছে এটাই তাঁর মহত্ত্ব। এ প্রসঙ্গে সজনীকান্ত দাস লিখেছিলেন, ‘অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বৈদেশিক কেরী যাহা বুঝিয়াছিলেন, বাঙালী প্রধানদের তাহা সম্যক প্রণিধান করতে আরও শতাব্দীকাল সময় লাগিয়াছিল।’
কেরির কর্মকাণ্ডের একটি অনালোকিত দিক হল, এদেশের কৃষির উন্নতির জন্য তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং উদ্ভিদবিদ হিসেবে তাঁর কৃতিত্ব। হাতে-কলমে বাগান গড়ে তোলার কাজ ও চাষবাসের প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ। আসলে শৈশব থেকেই কেরির গাছপালা, প্রাণীকুল নিয়ে অদম্য আগ্রহ। কাকা ছিলেন মালি, তাঁর কাছ থেকেই ছোট্ট কেরি শিখেছিলেন বাগানে গাছপালার যত্ন নেওয়ার কারিগরি। পরে অসুস্থতার জন্য রোদে বেরোনো যখন বন্ধ, তখন ঘরের ভেতরেই তৈরি করেছিলেন হরেক উদ্ভিদ আর প্রাণী নিয়ে ছোট্ট মিউজিয়াম। কেরি দেখেছিলেন, ভারতীয়রা মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে। বীজ, যন্ত্রপাতি সবেরই অবস্থা করুণ। ফলন খুব কম। খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন দারিদ্রের অতলে তলিয়ে যাওয়া চাষিদের অবস্থা। সেই অভিজ্ঞতালব্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮১১ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে। তিনি বুঝেছিলেন, কৃষির উন্নতি হলে তবেই মানুষের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব। প্রথমে নীলকুঠির ম্যানেজার হিসেবে মালদা জেলার মদনাবতীতে থাকার সময় ও পরে শ্রীরামপুরে তাঁর নিজের দীর্ঘ চাষবাসের অভিজ্ঞতা থেকে মাটির কাছাকাছি থাকা এই মানুষটি পেয়েছিলেন উত্তরণের পথ।
১৮১১ সালে লেখা কেরির নিবন্ধে চাষবাসের পাশাপাশি ছিল বনানী সংরক্ষণের কথাও। তিনি সোসাইটির বাগানে বিলুপ্তপ্রায় অনেক গাছ এনে লাগিয়েছিলেন। শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে ২০ বছরের পরিশ্রমে রক্সবার্গ যে ৩২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ করেন, তার একটি বড় অংশ কেরিই পাঠিয়েছিলেন। রক্সবার্গ কেরির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একটি উদ্ভিদ প্রজাতির নাম রাখেন ‘কেরিয়া’। রক্সবার্গ যখন অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে গেলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন কেরি। এদেশের গাছপালার ওপর লেখা রক্সবার্গের অসমাপ্ত দু’টি বইও যত্ন নিয়ে প্রকাশ করেন— ‘Hortus Bengalensis’ (১৮১৪) ও ‘Flora Indica’ (১৮৩২)।
কেরির উদ্দেশ্য ছিল, ভালো জাতের নতুন শস্যবীজ এনে আধুনিক উন্নত পদ্ধতিতে চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া। সেই লক্ষ্যে তিনি গড়ে তুলেছিলেন বর্তমান কলকাতার আলিপুরের বিরাট জায়গা জোড়া ফুলে ফলে ঘেরা এগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটি। সাল ১৮২০। কেরির মতে, কৃষির উন্নতিতে সরকার, বিভিন্ন আধিকারিক সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইউরোপীয়দের সঙ্গে ভারতীয়দের মানুষদের যোগদানের ব্যাপারেও তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। অর্থকরী ফসল চাষের লক্ষ্যে কেরি সাহেব ভুট্টা, তুলো, চা, আখ, সিঙ্কোনার ভালো মানের বীজ বা চারা নিয়ে আসেন বিভিন্ন দেশ থেকে।
কেরি প্রতি সোমবার নদীপথে পৌঁছতেন কলকাতা, শুক্রবার ফিরতেন শ্রীরামপুরে। কলকাতায় থাকার সময় অনুবাদ বা ধর্মপ্রচারের কাজ থেমে থাকত না। আবার মিশনের মধ্যে নিজের বাড়ির কাছে পাঁচ একর জমিতে বড়সড় বাগানও গড়ে তুললেন। সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াসের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে অসংখ্য গাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। ৪২৭টির বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ ছিল এই বাগানে। ভারতের বিভিন্ন অংশ শুধু নয়, সারা বিশ্ব থেকে তিনি রকমারি উদ্ভিদের বীজ বা চারা আনিয়েছিলেন। ১৮২৩ সালে লন্ডনের লিনিয়ান সোসাইটির ফেলো হিসেবে স্বীকৃতি পান কেরি। দুঃখের বিষয়, যে বছর লিনিয়ান সোসাইটি কেরিকে স্বীকৃতি দিল, সেই বছরই ভয়ঙ্কর বন্যায় ভেসে গিয়েছিল তাঁর সাধের বাগান। ভেঙে গিয়েছিল বাড়িও। বাগান তখন যেন শূন্যতার এক দৃশ্যপট। তবু মন টানত সেখানেই। হার মানার মানুষ নন কেরি। বীজ বা চারার জন্য অনুরোধের চিঠি পাঠালেন নানা দেশে। কয়েক বছরের মধ্যে আবার সেজে উঠল বাগান।
উইলিয়াম কেরি একটি অত্যন্ত মূল্যবান হারবেরিয়াম তৈরি করেছিলেন যা এন অয়ালিচ তাঁর ‘প্লান্টেই এশিয়াটিক রারিওরেস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এই গ্রন্থে কেরির সংগৃহীত সমস্ত উদ্ভিদের উল্লেখ-সহ একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। তাঁর গভীর অনুভূতি এবং আন্তরিক ভালোবাসা ভারতের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষকে তাঁদের দেশের কৃষি ও উদ্যান উন্নয়নের জন্য নীরবে একটি শক্তিশালী আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যেতে প্রাণিত করেছিল।
যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে একরকম লুটতরাজ চালাচ্ছে, সে সময় কেরি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে। সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য তিনি রামমোহনেরও আগে প্রকাশ্যে আবেদন জানিয়েছেন। শিশুবলি বা কুষ্ঠরোগীদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মতো নানা কুপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। মদনাবতী গ্রামের মানুষকে শিক্ষার আলোয় আনতে গড়ে তুলেছিলেন স্কুল। গ্রামের দরিদ্র ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সঙ্গেই দুপুরের খাবার ও পোশাকও দিতেন তিনি। গ্রামের মানুষদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। উনিশ শতকের অন্ধকারে ডুবে থাকা বাংলায় স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের মতো আলোকবিন্দুগুলি এক-এক করে ফুটে উঠেছিল কেরির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।
……………………………………………………………….
আরও পড়ুন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়-এর লেখা: নিজেদের রাজার নামেই ডেনিসরা শ্রীরামপুরের নাম রেখেছিল ফ্রেডরিক নগর
……………………………………………………………….
কেরির কথায় বাংলা ভাষা ‘ওয়ান অব দ্য মোস্ট এক্সপ্রেসিভ অ্যান্ড এলিগ্যান্ট ল্যাঙ্গুয়েজেস অব দি ইস্ট।’ কেরি তাঁর জীবনের ৪০-৪২ বছর এই বাংলায় কাটিয়েছেন। কিন্তু এই বহুভাষাবিদ পণ্ডিতটির খ্যাতি শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি বিশ্ববিখ্যাত। পৃথিবীর নানা দেশে তাঁর সম্মানে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর নাম যুক্ত। যেমন, উইলিয়াম কেরি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন পাসাডেনা, ক্যালিফোর্নিয়া, তেমনই ভ্যানকুভার, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, শ্রীলঙ্কার কলম্বো এমনকী বাংলাদেশের চট্টগ্রামে উইলিয়াম কেরি অ্যাকাডেমি।
আর আমাদের কলকাতায়? উইলিয়াম কেরির জন্মদিন চলে যায় নীরবে। কোনও অভিযোগ নয়, অতি লজ্জায় মাথা নত করে বসে থাকি।
তথ্যসূত্র:
শক্তিব্রত ঘোষ। ১৩৬৭। উইলিয়ম কেরী: সাহিত্য সাধনা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতা।
সজনীকান্ত দাস। ১৩৪৯। উইলিয়ম কেরী। বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। কলকাতা।
সজনীকান্ত দাস। ১৩৬৬। বাংলা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাস। মিত্রালয়। কলকাতা।