এলেন দেখলেন এবং কলকাতা জয় করলেন। অতটা সহজ উপায়ে কলকাতা জয় করা যায় না। হুসেন অনেকটা পেরেছিলেন। তিনি যে কোনও শহরে সবার বন্ধু বা আত্মীয় হয়ে উঠতেন তাড়াতাড়ি। সমস্ত শিল্প মহলে তার আনাগোনা। হঠাৎ না বলে কারও বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়ে যাওয়া, ছবি এঁকে নিজহাতে বয়ে নিয়ে গিয়ে উপহার দেওয়া, এসব তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। কলকাতা বনেদি শহর, ধনী শহর, কিন্তু গোঁড়া শহরও বটে। প্রতিভা, আধ্যাত্মিকতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি শিল্পক্ষেত্রে একদিকে, অন্যদিকে শিল্পকে পেশাদারিত্বের আলোয় নিয়ে আসা, বাজারদর, হইচই হাততালি– এসবগুলোও কিন্তু একটা সময়কে জাহির করার হাতিয়ার। কলকাতা হালকা শিল্পে, চটকদারিতে হাততালি দিতে পারেনি অনেক দিন।
৫.
কথা কম কাজ বেশি– এটাই মন্ত্র মানুষটার। হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, দেশ-বিদেশ, মারামারি– এমনকী খুনোখুনি, ক্যানভাসে একটি তুলির আঁচড়ও না দিয়ে উনি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারতেন না। সব ঘটনা, সমস্ত বিষয়ই ছিল ওঁর কাছে সেলিব্রেশন, একটা উদযাপন। তিনি মকবুল ফিদা হুসেন। ওঁর বিশাল কর্মকাণ্ডের এবং রঙিন জীবনের কণামাত্র নেই এ লেখায়। এখানে রইল হুসেন সান্নিধ্যের এক ডজন গপ্প অথবা ১২টি দৃশ্য।
হুসেনের কলকাতা অথবা কলকাতার হুসেন
এলেন দেখলেন এবং কলকাতা জয় করলেন। অতটা সহজ উপায়ে কলকাতা জয় করা যায় না। হুসেন অনেকটা পেরেছিলেন। তিনি যে কোনও শহরে সবার বন্ধু বা আত্মীয় হয়ে উঠতেন তাড়াতাড়ি। সমস্ত শিল্প মহলে তাঁর আনাগোনা। হঠাৎ না বলে কারও বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়ে যাওয়া, ছবি এঁকে নিজহাতে বয়ে নিয়ে গিয়ে উপহার দেওয়া, এসব তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। কলকাতা বনেদি শহর, ধনী শহর, কিন্তু গোঁড়া শহরও বটে। প্রতিভা, আধ্যাত্মিকতা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি শিল্পক্ষেত্রে একদিকে, অন্যদিকে শিল্পকে পেশাদারিত্বের আলোয় নিয়ে আসা, বাজারদর, হইচই হাততালি– এসবগুলোও কিন্তু একটা সময়কে জাহির করার হাতিয়ার। কলকাতা হালকা শিল্পে, চটকদারিতে হাততালি দিতে পারেনি অনেক দিন। শহরের বণিক শ্রেণিকে শিল্পের আঙিনায় আহ্বান করতে তাদের পছন্দের এবং স্বাচ্ছন্দ্যের কিছু আয়োজন যে করতে হয়, সেগুলোকে আপাতত ‘গিমিক’ বলে মনে হলেও আখেরে কাজে দিয়েছে তো বটেই। ‘অর্থং অনর্থম’, কথাটা মুখে বললেও কাজে এবং আচরণে আজকাল সেটা বদলে গিয়েছে অনেকখানি। নিজের নাম এবং বদনাম দিয়ে সেইটা করা হুসেনের কিছুটা অবদান বলতে হবে। সচেতনভাবে হয়তো উনি করেননি, আমরা অনুসরণ করেছি। কলকাতার শিল্পের বাজারদর শিল্পকর্মের মূল্য নির্ধারণ এবং ঊর্ধ্বমুখী করে তোলা ইত্যাদির ব্যাপারে যে হালচিত্র আমরা এখন দেখছি, তাতে শিল্পের কতটা এল-গেল এক-একজনের কাছে তার এক-এক অর্থ। কলকাতার, তথা বাংলার যা কিছু মহৎ, তা মুহূর্তে পটে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা এবং পরিশ্রম করেছেন হুসেন। বাংলার মনীষী, সাহিত্য, সিনেমা, দেব-দেবী, মাদার টেরেসা মায় ব্রিটিশরাজকে উনি তুলে ধরেছেন ওঁর চিত্রমালায়। কলকাতার শিল্পকলাকে তোল্লাই দিয়েছেন কলকাতার বাইরে। বিকাশ ভট্টাচার্য, শ্যামল দত্তরায়, গণেশ পাইনের মতো সমকালীন শিল্পীদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলার বাইরে। উনি দ্বিধাহীনভাবে গণেশ পাইনকে বলেছেন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ শিল্পী। এক নম্বর।
তাঁহার পরাণ যাহা চায়
কেউ কেউ বলতেন, ওঁর যা প্রাণে চায়, তা করতে ওঁকে কে বাধা দেবে? বাধা পাননি বলে অনেক কাজ করতে পেরেছিলেন জীবনে। কিন্তু সবাই জানে যে, পরবর্তীকালে বড় বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কলকাতায় উনি যা কিছু নতুনত্বের উদাহরণ তৈরি করেছিলেন তার মধ্যে একটা হচ্ছে ‘বিসর্জন’। আমাদের প্রতিমা, শুধু লোককলা নয়। একটা মহৎ এবং বিশাল শিল্পকর্ম। সেগুলোকে যদি সব সময় জমিয়ে রাখা হয় তাহলে তো একদিন একটা পাহাড় হয়ে দাঁড়াবে! তাছাড়া এই যে সাময়িক, ক্ষণিক আনন্দ সেটা আবিষ্কার করার জন্য উনি আয়োজন করলেন ছবির বিসর্জন। তাই বলে কি ছবি জলে ফেলে দিলেন, না তা নয়। অভিনব পদ্ধতিতে করলেন। প্রথমে প্রদর্শনী কক্ষে উনি সবার সামনে আঁকলেন দেবদেবীর ছবি, তারপরে যেমন নির্মাণ করেছিলেন তেমনি তার বিনির্মাণ করলেন, অর্থাৎ ছবিটা মুছে দিলেন। এই মুছে ফেলার কাজটাও কিন্তু নান্দনিক ভাবেই করলেন। ধীরে ধীরে, সাদা রঙের তুলির আঁচড়ে ছবিটা আস্তে আস্তে ঢেকে দিলেন। ঠিক যেমন নদীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময় কাঠামো থেকে ডুবতে ডুবতে আস্তে আস্তে সব শেষে ডোবে মুখ। শুরুতেই নাকে-চোখে তুলির আঁচড় নয়, অপ্রধান অংশ থেকে ঢাকতে ঢাকতে আসছেন এবং প্রতিটি স্ট্রোক বাকি অংশকে অসম্মান করছে না। বেদনাবিহীন বিলীন হওয়ার মতো উদাহরণ।
তরুণ প্রতিভার খোঁজে কলকাতায় হুসেন
অল্পবয়সেই আমার কপালে জুটে গেল মকবুল ফিদা হুসেনের সঙ্গে আলাপ। কলকাতায়। শুধু তাই নয় ওঁর সঙ্গে একই প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া। সালটা ১৯৮২। টেনিস প্লেয়ার নরেশ কুমারের আয়োজনে কলকাতার টাটা সেন্টারে আয়োজন হল একটি প্রদর্শনী। ‘টেন ইয়ং ট্যালেন্টস উইথ এম এফ হুসেন‘ এই শিরোনামে। হুসেনের প্রতিটি এগজিবিশনে থাকত একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম, যেটা তার ছবি ছাড়াও একটা বাড়তি বাণিজ্যিক দিক, যেটাকে অনেকে ভালোভাবে নিতেন না। কিন্তু সারা পৃথিবীতে এর মূল্য আছে। ছবি বাছাই, শিল্পী বাছাই ইত্যাদির জন্য একটি গ্রুপ বানানো হয়েছিল– সেখানে ছিলেন শিল্প সমালোচক সন্দীপ সরকার, রাধা প্রসাদ গুপ্ত এবং সত্যজিৎ রায়। এক ধাক্কায় পেশাদারিত্বের আঙিনায় ঢুকে পড়া। ওঁর ছবির দাম তখন ৬০ হাজার টাকায় একটা মাঝারি ক্যানভাস। সেক্ষেত্রে আমাদের ছবির দাম রেখেছিলেন দু’হাজার। কায়দাটা ভারী অদ্ভুত! ৬০,০০০-এর কাছে ২,০০০ ভীষণ কম, একটা ধাঁধার মতো। হুসেন আরও একটা জিনিস ঘোষণা করলেন, এই ছবিগুলো বিক্রি করে ইয়ং আর্টিস্টরা তাদের আর্ট মেটেরিয়াল কেনার কিছু পয়সা পাবে। যার ছবি বিক্রি হবে না হুসেনের বিক্রীত ছবি থেকে তাকে দেওয়া হবে ২,০০০ করে টাকা। আমাদের তরুণ ১০ জন বাছাই শিল্পীদের দলে ছিল সঞ্জয় ভট্টাচার্য, দিপালী ভট্টাচার্য, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ করচৌধুরী, ওয়াশিম কাপুর, গৌতম বসু ইত্যাদি।
কথা ক‘য়ো না, হুসেন ঘুমোচ্ছেন
মুম্বইয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় কাজ করার সময় হুসেনের বাড়িতে গিয়েছিলাম একদিন প্রীতীশদার সঙ্গে। গিয়ে দেখি উনি তখন ঘুমোচ্ছেন। এ বাড়িতে কোনও লোককে জিজ্ঞেস করে ঢুকতে হয় না, দরজাটা এমনিতে খোলাই থাকে। ঠেলে ঢুকলাম, গিয়ে দেখলাম উনি ঘুমোচ্ছেন। সামনে যে ছবিটা, সেটা হচ্ছে যে উনি দরজার দিকে পা আর ঘরের ভেতরের দিকে মাথা করে উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন। অবাক হয়ে দেখলাম শক্তিশালী শক্ত অ্যানাটমির ফাটাফাটা দু’খানা পা। এই সেই পা, তার একলা চলার। এই সেই পা যেখানে হুসেনকে বিখ্যাত করেছে নগ্ন পায়ে হাঁটার জন্য। ওঁর ছবির মতো শরসজ্জায় শুয়ে আছেন যেন মহাভারতের পিতামহ ভীষ্ম। এখানে ভীষণ মনে পড়ছে একটি নাটকের দৃশ্যের কথা। নাটকের নাম ‘স্ট্যালিন কোথায়?’ বহুদিন না বিশ্রাম, না খাওয়া, স্ট্যালিন দীর্ঘ পরিক্রমা এবং কাজকর্ম সেরে এসে ক্ষণিকের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছেন। হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো এক কমরেড। কোনও এক বিশেষ কারণে এক্ষুনি দেখা করা চাই স্ট্যালিনের সঙ্গে। সেবায় নিযুক্ত পাহারারতা মহিলা ঠোঁটে আঙুল রেখে ইঙ্গিত করলেন, কথা বলো না। স্ট্যালিন ঘুমাচ্ছেন। পরিশ্রান্ত বিপ্লবী, কর্মবীর, যোদ্ধাদের মানুষ কখনও ঘুমোতে দেখেনি।
হুসেন সেদিন বরযাত্রীর ভূমিকায়
কলকাতার গ্যালারি ৮৮-এ প্রীতীশ নন্দী এবং আমার প্রদর্শনীতে বরযাত্রীর মতো বিমান ভরে মুম্বই থেকে যেসব নামীদামিরা এসেছিলেন, তার মধ্যে ছিলেন হুসেন। আরও দু’একবার প্লেনে যাতায়াত করার সময় এয়ারক্রাফটের মধ্যে দেখেছি ওঁকে। এত বড় জনপ্রিয় লোকটা ভিড়ের মধ্যে যেন একা সবসময়। একা থাকতে ভালোবাসেন। দেখেছি প্লেনের মধ্যে বসার সময় ওঁর সিট বাছাই। বসেন একেবারে সামনে, ককপিটের দেওয়ালের দিকে মুখ করে, সামনে কোনও মানুষকে তিনি দেখতে চান না ওই সময়। থাকতে চান নিজের মনে একা একা, কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না। আসলে উনি গুছিয়ে কথা বলতেও পারতেন না। এটাই হয়, বড়দের এটা একটা ব্যাপার, যিনি একটা কাজ ভালো করেন তিনি আর একটা কাজে অনেকটা দুর্বল থাকতেও পারেন।
সাহিত্যের অলংকরণ একসঙ্গে
‘ইলাস্ট্রেটেড উইকলি’র সময় এডিটর প্রীতীশ নন্দীর একটা ইচ্ছে ছিল লেখার সঙ্গে সাপোর্টিং ইলাস্ট্রেশনের জন্য উনি তথাকথিত ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করবেন না। তাই দেশের অনেক প্রথিতযশা শিল্পীর কাজ ব্যবহার করতেন কবিতা, গল্প, সম্পাদকের পাতা, প্রবন্ধ ইত্যাদিতে। কলকাতার প্রচুর শিল্পী সেখানে দেখতাম। কে নেই, বিকাশ ভট্টাচার্যি, গণেশ পাইন, শুভাপ্রসন্ন থেকে শুরু করে অনেকে এবং হুসেন। আমিও সেই সঙ্গে ওখানে কাজ করতাম। মনে পড়ছে ‘রূপা’ থেকে বেরল প্রীতিশদার সঙ্গে কবিতা-ছবির বই, হুসেনের আর আমার। হুসেনের বই-এর মলাট সমেত ভেতরের অক্ষর এবং অঙ্গসজ্জার কাজ আমি করে দিয়েছিলাম। তখনকার দিনে ছাপাখানায়, প্রসেসিং বলে একটা ব্যাপার ছিল, মানে ছবির কালার সেপারেশন, নেগেটিভ, পজিটিভ এইসব ব্যাপার। সেইটা করার জন্য সারা ভারত থেকে লোক আসত মুম্বইয়ে। দু’তিনটে নামকরা প্রসেসিং কোম্পানি। তার মধ্যে একটা ছিল রবি যশ্রা। রবি আমাদের বন্ধু, সেখানে প্রসেসিং করা হয়েছিল এবং ভারতে তখনকার নামী ছাপাখানা হায়দরাবাদের ‘প্রগতি‘ থেকে ছাপা হয়েছিল সেই কবিতা-ছবির বই। প্রগতি আবার অফসেটে চার কালার নয়, স্পেশাল কালার নিয়ে ছ‘কালারে ছাপছিল তখন।
টুলের গায়ে তুলির দাগ
হুসেন ছিলেন প্রলিফিক পেইন্টার। শুধু পেইন্টিং বা বলি কেন, শিল্পকর্মের অন্যান্য মাধ্যম– যেমন সিনেমা, ইনস্টলেশন, আর্কিটেকচার, ট্যাপেস্ট্রি ইত্যাদি অনেক মাধ্যমে কাজ করেছেন। যে কারণে লোকে তাকে ‘ইন্ডিয়ান পিকাসোও’ বলে। পিকাসোর এত কাজ যে, কোনও দেশে তাঁর সংগ্রহের পরিমাণে একটা করে মিউজিয়াম তৈরি হয়ে যেত। হুসেনের ক্ষেত্রে ততটা না হলেও জীবদ্দশায় তার শিল্পকর্মের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। ওঁর ইচ্ছে ছিল ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এক এক রকমের নতুন আইডিয়া সমেত মিউজিয়ামের মতো করে নিজের কাজ রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা। করেওছিলেন অনেকগুলো। যেমন আহমেদাবাদে ‘আমদাবাদ নি গুফা’ অথবা ‘হুসেন দোশী গুফা’। বেঙ্গালুরুতে ‘হুসেন সংকলন’ আর হায়দরাবাদে ‘সিনেমাঘর’। সিনেমাঘরে ওঁর অসংখ্য শিল্পকলা, ছবির প্রিন্ট ছাড়াও একটা ছোট অডিটোরিয়াম আর সেই সঙ্গে আছে সিনেমা তৈরির সরঞ্জামের সংগ্রহ। ক্যামেরা, আলো, এছাড়াও সিনেমাতে ব্যবহার করা ওঁর কাজের তুলি রং ইত্যাদ নানা প্রপ্স। তার মধ্যে হঠাৎ দেখলাম একটি বড়সড় টুল এবং তার ওপরে অনেক রঙের কৌটো, বড় বড় তুলি ইত্যাদি রাখা। আর লক্ষ করলাম টুলের গায়ে কাজ করার সময় মাঝেমাঝে বাড়তি রং মুছে নেয়ার জন্য সেখানে তুলির দাগ। সেই দাগগুলো দেখে আমি চমকে গেছিলাম, ঠিক যেমনভাবে চমকে যায় মানুষ মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখলে কিংবা কোনও গাছের গায়ে কোনও হিংস্র জন্তুর নখের আঁচড় দেখলে। তুলি মোছা দাগগুলোকে দেখেই পরিষ্কার মনে হয়েছিল, এ তো হুসেনের চিরপরিচিত ছবির রেখা। অজস্র কাজ করা মানুষের নিজস্ব সাক্ষর। এমনই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে রবীন্দ্রনাথের বেলায়। যদি কোনও কারণে একটি ফাঁকা কাগজে রবীন্দ্রনাথ তার কলম টেস্ট করেন, একটি-দু’টি অক্ষর কিংবা আঁকিবুকি কাটেন, তা দেখে গ্রাফোলজিস্টের দরকার হবে না, অতি সাধারণ মানুষও বোধহয় সনাক্ত করতে পারবে যে এই কলমের দাগ রবীন্দ্রনাথের।
ছবি জন্ম নিচ্ছে অপারেশন থিয়েটারে
অনেকেই জানেন, হুসেনের কাজের কোনও স্টুডিও নেই। উনি যেখানে এগজিবিশন করেন সেইখানে কোনও একটা জায়গায়, মাঠে-ঘাটে, কোন ছাউনিতে, কারওর বাড়িতে– যেখানে হোক কাজ করতে পারতেন। আর প্রায়শই উনি শহরের যে হোটেলে থাকতেন সেই হোটেল রুমটা হয়ে যেত স্টুডিও। সবসময় নিজে ঢোকার আগেই তার রংয়ের কৌটো, ক্যানভাস ইত্যাদি আগে ঢুকে যেত। এগজিবিশনের উদ্যোক্তারা আয়োজন করেন ওঁর থাকার এবং কাজের জায়গা। ঘটনাচক্রে আমি তেমনই একটি জায়গায়। দেওয়ালের দিকে মুখ করে পিছন ফিরে বসে আছেন হুসেন। একটা ছোট্ট টুলে যেরকমভাবে রান্নাঘরে মেয়েরা রান্নার কাজের সময় বসে, সেই রকম। চিনতে অসুবিধা হল না। পেছন থেকে পরিষ্কার চেনা যায় দুটো মানুষকে– সত্যজিৎ রায় আর হুসেন। সামনে মেঝের ওপরেই দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে মাঝারি মাপের একটা ক্যানভাস। তার নিচে একটি খবরে কাগজের ওপর বেশ কয়েকটা নানা সাইজের তুলি আর দু’-একটি তেলের বা ওই জাতীয় জিনিসের পাত্র। বাঁদিকে মেঝেতে অনেক রকম রঙের কৌটো, মুখগুলো সব খোলা। বাঁহাতে ধরা একটি রংয়ের কৌটো, যেটা থেকে রং নিয়ে আপাতত ছবিতে লাগানো হচ্ছে। ছবিতে কালো দিয়ে বলিষ্ঠ রেখায় ড্রইং করে সারা ক্যানভাস ভরা হয়ে গেছে, তেমন সময় আমি ঢুকেছিলাম। এখন তারই ফাঁকে ফাঁকে নানা রকম রং দিয়ে ক্যানভাসের বাকি অংশগুলোকে ভরাট হচ্ছে। নিচে বসে গ্যালারির মালিক। সে সহকারীর মতো এক একটি রংয়ের কৌটো শিল্পীকে ধরিয়ে দিচ্ছে। ঠিক যেমন অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তার সহকারীর দিকে তাকালেই বা হাত বাড়ালেই তার হাতে ধরিয়ে দেয় কোনও না কোনও যন্ত্রপাতি। এখানে যে ঘটনাটা ঘটছে খুব মজার, দেখছি যে, হুসেন রঙের কৌটোর দিকে তাকাচ্ছেন না। নিজের পছন্দগত রং চাইছেনও না, বরং সহকারী তাঁকে যেটা ধরিয়ে দিচ্ছে আসলে সেটা সহকারীর পছন্দের রঙের কৌটো। ছবিতে এইভাবে যে রঙ লাগাচ্ছেন তাতে রঙের পাশে রঙের কোন ঝামেলা বা বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে না! ঠিক কোথায় সেই রংটা লাগাবেন এবং কতটা অংশ জুড়ে লাগাবেন, সেই খেলাটা চলছে। মুহূর্তে ছবিটা শেষ হয়ে আসছে এবং সমস্ত রং কালো রেখার চারপাশ ঘিরে এমনভাবে লাগানো হল, তাতে সবাই খুব হারমোনিয়াসভাবেই ছবিতে সঙ্গ দিচ্ছে যেন। কোন সংঘাত নেই, বেশ মানানসই।
হুসেনের শিল্পকর্মের বই
১৯৮৮ সালে হুসেনের বই বেরোল। ৬০ বছরের বাছাই কাজ। বিশাল চেহারায় সে বইয়ের ওজন অনেক, দামও বিশাল। প্রকাশক টাটা স্টিল। বইটা পাওয়ার ব্যাপারে তখন একটা প্রতিযোগিতার মতো অবস্থা, সবাই হামলে পড়ে কিনছেন। তখনকার দিনে ওই বইটার দাম ছিল ১০,০০০ টাকা আর যদি হুসেন সই করে দেন তাহলে ১৫,০০০টাকা। কেনার ক্ষমতা ছিল না। ভাগ্যি ভালো, বইটা প্রীতীশদার কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম। সেই প্রথম আমাদের দেশে অসাধারণ ছাপা রঙিন আধুনিক শিল্পের বই দেখলাম। আজ অবধি ওঁর যত বই বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলো কখনওই চটি বই হতে পারে না, সেগুলো সাংঘাতিকভাবে বড়, মানে এক একটি মহাভারত বা মহাভারতের ঠাকুরদা। বইটা আমার কাছে আজও আছে। মলাটে আত্ম-প্রতিকৃতি আর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বড় সোনালি রঙের স্বাক্ষর। কনসেপ্ট আর ডিজাইন হুসেনের নিজের।
ফেমাস স্টুডিওতে হুসেনের জন্মদিন
জন্মদিনের অনুষ্ঠান তো নয়, সে এক মহা উৎসব, মহাযজ্ঞ! জায়গাটা ফেমাস স্টুডিও। মুম্বইয়ের মহালক্ষ্মীর রেসকোর্স সংলগ্ন এশিয়ার প্রাচীনতম ফিল্ম স্টুডিও। সিনেমার ঢঙে সেট বানানো হয়েছে। শহর, শহরতলি আর গ্রামের টুকরো টুকরো ল্যান্ডস্কেপের অংশ জুড়ে একটা অদ্ভুত অচেনা পাড়া। রাস্তাঘাট দোকানপাট, আবার কোথাও মঞ্চ। সেখানে মহারাষ্ট্রের গ্রামীণ বিনোদনের নাচ ‘তামাশা’ চলছে। সঙ্গে স্থানীয় গান-বাজনা। দোকানপাট যা আছে তার মধ্যে বেশ কিছু খাবারের দোকান। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, সেখানে স্থানীয় রাস্তার খাবার পাওয়া যাচ্ছে, যেমন ফুচকা, চাট এবং আরও বসে খাওয়ার মতো নানা খাবার। অদ্ভুতভাবে সেখানে এই খাবারগুলো খাওয়া যায় অথচ পয়সা দিতে হয় না। একটা ছেলেবেলায় ফিরিয়ে দেওয়ার মতো পরিবেশ। সময়মতো শুভেচ্ছা জানানোর পালা এল। ওপরে একটা বিশাল ব্রিজ, ধোঁয়া বানিয়ে সে ব্রিজটাকে ঢেকে দেওয়া হল। সেই ধোঁয়ার মধ্যে স্বর্গীয় শূন্যতায় ভেসে উঠলেন দীর্ঘদেহী হুসেন। স্পেশাল এফেক্টে তাঁর আশেপাশে নর্তকীরা নাচছে, যেন স্বর্গের অপ্সরা স্পিকারে গান বাজছে– জিও হাজারো সাল।
হুসেনের পরিবার
ছেলেমেয়ে এবং তাঁদের সংসার, নাতিপুতি মিলে হুসেন সাহেবের পরিবার বেশ বড়। বিশাল পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যর সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়েছে। বন্ধু হয়েছে মেজ ছেলে শামশাদ আর ছোট ছেলে ওয়েজ হুসেন। কারণ ওরা দু’জনেই শিল্পী। দিল্লিতে শামশাদের সঙ্গে আমাদের খুব ভাব। খ্যাতিমান শিল্পী স্বামীনাথনের ছেলে হর্ষবর্ধনের সঙ্গে সুব্রত কুন্ডুর বাড়িতে আড্ডা। দিল্লি গেলে শামশাদের সঙ্গে খানা-পিনায় যা বসা হয়েছে, তাতে সব সময় রাতকাবার! ছোট ছেলে ওয়েজ হুসেনও মুম্বইয়ে আমাদের অসমবয়সি বন্ধু। হুসেন ছিলেন নিরামিষাশী এবং তথাকথিত কোনও নেশার ধারে-কাছে কখনও দেখিনি। এত যে বিশাল ছবির দাম, এত যে বিক্রি, নিলাম ইত্যাদি মিলিয়ে অর্থনৈতিক খবরাখবর, শুনেছি এই বিশাল সংসারে আয়-ব্যয়ের হিসেবের শেষে হুসেনের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নাকি জিরো!
শ্বেতাম্বরীর বিড়ম্বনা
মুম্বইয়ে জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে সমস্ত হল মিলিয়ে একটি ইনস্টলেশন আর্টের পরীক্ষামূলক কাজ করেছিলেন হুসেন ১৯৯১ সালে। শিরোনাম, ‘শ্বেতাম্বরী’। সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল শুরুর দিন থেকেই। দর্শকদের মধ্যে হাসি-ঠাট্টার অন্ত নেই। অনেক গ্যালারি জুড়ে একটি গ্যালারি। মাঝখানে পার্টিশনগুলোকে নিজের মতো এদিক-ওদিক সরিয়ে সাজানো হল। আপাদমস্তক– মানে ছাদ থেকে দেয়াল পার্টিশন এবং মেঝে পর্যন্ত উনি সবটাই নতুন রং করিয়ে নিলেন। সাদা রং। কাপড়ের মিল থেকে আনা বহু শত মিটার সাদা কাপড়ের থান। সেগুলোকে কখনও মেঝেতে লুটিয়ে, কখনো সাপের মতো ওপর দিয়ে পার্টিশনের মাথা পেরিয়ে। কখনও আবার দেওয়ালের গায়ে পর্দার মতো ভাঁজে ভাঁজে। কখনও কোথাও টান টান করে ছাদ থেকে বাঁধা শামিয়ানার মতো, ঢেউ খেলানো পেরেক দিয়ে আটকানো কোথাও আবার দেওয়ালে। মেঝেতে একরাশ শুকনো পাতায় সম্পূর্ণ ঢেকে যাওয়া উঠানের মত কোঁচকানো খবরের কাগজ রাশি রাশি। সাদার ওপর সাদার খেলা। প্রয়োজনমতো বিভিন্ন জায়গায় কম-বেশি আলোর ব্যবস্থা। এই হল তাঁর শিল্পকর্ম, এই হল তাঁর শ্বেতাম্বরী।
দর্শক থতমত, হলে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। দরজা থেকে এক পা ঢুকেই পিছিয়ে আসছে, কারণ দরজা খুললেই মেঝেতে খবরের কাগজ বিছানো, সেখানে পা রাখবে কীভাবে। ভেতরে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার তরফ থেকে আমরা ক’জন, মানে কিছু আর্টিস্ট, ফটোগ্রাফার ইত্যাদি। আর আছেন হুসেন নিজে। সবাই ভাবছে, সাজানোর কাজটা এখনও বোধহয় চলছে। কী দেখব, ছবি কোথায়, কাকে জিজ্ঞেস করব, একটা অগোছালো দৃশ্য, ধাঁধার মতো। আমি কার লোক, তুমি কে আমি কী– এরকম ভাব আর কী। এখানে আমি লিখতে গিয়েও ওই মুডটাই আসছে, তাই পাঠকের উপরে ছেড়ে দিচ্ছি। কিছু অচেনা আধচেনা মুখ দরজার বাইরে। আমি ইঙ্গিতে ভেতরে আসতে বললাম। আসব? আসুন, না হলে দেখবেন কী করে! মেঝেতে বিছানো খবরের কাগজ বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে কিছু লোক ঢুকে পড়ল। সেখানে সত্যিকারের তুমি কে, আমি কার অবস্থা! প্রশ্ন-উত্তর-সন্দেহ-সংশয়-ঝামে
দু’তিনজন এবার আমাকে ঘিরে ধরল। আপনি তো এটা দেখছেন, কিছু বুঝতে পারছেন? আমি বললাম, বুঝতে পারছি না পুরোটা তবে ভাগে ভাগে বোঝার চেষ্টা করছি। কীভাবে চেষ্টা করছেন? এই ধরুন, এটা একট বিরাট হলঘর তাই সাইজটাও সাংঘাতিক বড়। তা ধরুন চওড়ায় ৩০-৪০ ফুট আর লম্বায় ২০০ ফুট। শিল্পকর্ম দেখার জন্য আপনার মনের মধ্যে একটা সাইজ থাকে। ছবি হলে দু’-চার ফুট থেকে বড়জোর ৮-১০ ফুট, মূর্তি হল এক ফুট থেকে পাঁচ-ছয়। এখানে কিন্তু ৪০ বাই ২০০ বাই ২৫ ফুটের একটাই শিল্পকর্ম। দেখার গোলমাল সেখানেই! ধরুন আপনি যদি একটা লম্বা দেওয়ালে ছবি দেখেন, যে ছবিটা ১০০০ ফুট লম্বা, কী করবেন? আপনি যখন কাছ থেকে দেখছেন তখন তো খানিকটা দেখছেন। ওই ছবিটা যদি পুরোটাই দেখতে হয় তাহলে আপনাকে ছবিটার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে, দেখতে দেখতে চলতে হবে।
এখানে এই শিল্পকর্মটার মধ্যেই আপনি ঢুকে আছেন, প্রথমে সেটাকে মাথায় ঢোকাতে হবে।
আপনি এখানে দেখুন দূরে একটা জোরালো আলোটা জ্বলছে। তার সামনে যে কাপড়টা আছে সে কাপড়টা আপনি দেখছেন আপনার দিকে, আলোটা আছে কাপড়ের ওপারে আপনি কাপড়টাকে দেখছেন সাদা নয়, কালো। ঠিক তেমনিভাবে যখন আলোটা আপনার দিক থেকে সোজাসুজি কাপড়ে পড়ছে তখন আপনি দেখছেন সাদা, কখনও আবার দেখছেন খানিকটা সাদা, খানিকটা কালো, ভাঁজে ভাঁজে আলো ছায়ার খেলা। নীচে যে খবরের কাগজগুলো আছে সেগুলো দেখুন। ছড়ানো আছে অসংখ্য কোঁচকানো খবরের কাগজ। সেগুলো কিন্তু সাদা নয়, কালো নয়, মাঝারি। আমরা যাকে বলি ‘অফ হোয়াইট’। এই কাগজগুলো কিন্তু সাদা-কালো দুটোর মাঝখানে একটা লিংক-এর কাজ করছে, একটা সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। আবার দেখুন দর্শকরা শুধু দাঁড়িয়ে নেই, এটার মধ্যে দিয়ে হাঁটছে। কাগজগুলো সরে সরে যাচ্ছে। আমার এখানে মনে হচ্ছে এই যে খবরের কাগজগুলো দর্শকের পায়ে পায়ে সরে সরে যাচ্ছে, তাতে সর্বদা পরিবর্তনশীল একটা দৃশ্য তৈরি হচ্ছে, বদলাচ্ছে। খসখস হালকা একটা শব্দ হচ্ছে, যা এই দৃশ্যের সঙ্গে আরেকটা অন্যরকম সংযোজন।
লক্ষ করবেন দর্শকরা, অর্থাৎ অনেকগুলো মানুষ যখন এই ছবির মধ্যে ঢুকে পড়েছে তখন এরা শিল্পের কম্পোজিশনের অংশ হয়ে যাচ্ছে, এই যা কিছু ইনস্টলেশনের মেটেরিয়াল তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অনেকগুলো মানুষের অবয়ব তারা কখনও গ্রুপে, কখনও একা। কখনও আলোর বিপরীতে, আলোর সামনে, কখনও মানুষগুলোর গায়ে আলো। তখন আর শিল্পকর্মটি শুধুমাত্র জড়বস্তুকে বাধা রইল না, এল চলমান শরীরী সংযোজন। এখন আর সাদাকালো শিল্পকর্ম রইল না, নানা মানুষের নানা পোশাকের রঙের ছোঁয়ায় রঙিন হয়ে উঠল। এই প্রাণবন্ত নাটকের মঞ্চের সামনে নয়, নাট্যমঞ্চের ঠিক মাঝখানটায় আপনি দর্শক, আপনার চারিদিকে অভিনেতা আলো আর আনুষঙ্গিক নানা সরঞ্জাম। এমন একটা অন্য ধরনের দেখা বা দেখানোর ইচ্ছা হতেই পারে কোনও সৃজনশীল শিল্পীর। আমি যখন এইরকম অনর্গল বকে চলেছি, নেশাগ্রস্তের মতো বক্তৃতা করে চলেছি ঠিক তখনই হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেলাম। চোখে পড়ল, ভিড়ের মধ্যে বুকে দু’হাত বেঁধে বিবেকানন্দের মতো দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে আমার বক্তৃতা শুনছেন একজন। শ্বেত বসন, শ্বেত শ্মশ্রুগুম্ফধারি, শ্বেতাম্বরীর স্রষ্টা। মকবুল ফিদা হুসেন।
… পড়ুন ‘মুখ ও মণ্ডল’-এর অন্যান্য পর্ব …
পর্ব ৪: যে পারে সে এমনি পারে শুকনো ডালে ফুল ফোটাতে, বলতেন চণ্ডী লাহিড়ী
পর্ব ৩: সহজ আর সত্যই শিল্পীর আশ্রয়, বলতেন পরিতোষ সেন
পর্ব ২: সব ছবি একদিন বের করে উঠোনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম, বলেছিলেন অতুল বসু
পর্ব ১: শুধু ছবি আঁকা নয়, একই রিকশায় বসে পেশাদারি দর-দস্তুরও আমাকে শিখিয়েছিলেন সুনীল পাল