গোঁড়ামির বিরুদ্ধে যে কোনও সচল মানুষের অবস্থান থাকবে, তাই-ই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রথম টের পাচ্ছি, এই গোঁড়ামির ধারণার আবার একটা ধর্মভিত্তি আছে। শব্দ এক-ই। কিন্তু হিন্দু আর মুসলমানদের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগে অর্থের মাত্রার অনেকখানি হেরফের হয়ে যায়, যখন হিন্দুরা তা প্রয়োগ করে। একজন হিন্দুর ক্ষেত্রে গোঁড়ামি অনেকখানি নরম প্রয়োগ, হয়তো কেউ খুব আচারনিষ্ঠ– তা বোঝাচ্ছে, বা একটু বিরক্তিই তাতে মিশে থাকল; তবে খুব একটা রাগের উদ্রেক নেই। আবার এই গোঁড়ামির কারণে অনেকে সম্ভ্রম-সম্মান পাচ্ছেন, এমনটাও হয় ‘উনি কিন্তু খুব গোঁড়া ব্রাহ্মণ’ বা ‘বানান নিয়ে উনি খুব গোঁড়া’ ইত্যাদি। মুসলমানের ক্ষেত্রে তা পালটে যায়।
১৩.
এক রবিবার, রুমের দরজায় এসে রজতদা বলল, ‘নাটক দেখতে যাবি?’
রজতদা যেন গল্প হলেও সত্যি! মেসে আচমকা সে এসেছিল। অনেকটাই সিনিয়র। যাদবপুরে পরীক্ষা দেওয়ার কিছু ব্যাপার-স্যাপার। কাঁধের ব্যাগে গাদাখানেক বইপত্র নিয়ে একদিন তাই হাজির। মেসের সবথেকে ছোট ঘর, বাড়ির হিসাবে ‘স্টোররুম’ বলা যায়, সেটাতেই তার থাকা। খাওয়া কখনও হোম ডেলিভারি, কখনও হোটেলে। মিশুকে, হাসিমুখ, দিলদরিয়া। যেরকম লোকের সঙ্গে দেখা হলে বলতে ইচ্ছে করে, এতদিন কোথায় ছিলেন? সেসব বলার দরকার পড়েনি। আড্ডা-মশগুল মাসকয়েক চুপিসারে বলেই ফেলেছিল ‘মুখ্তসর সি বাত হ্যায় তুমসে পেয়ার হ্যায়’; মোদ্দা কথাটি হল, রজতদার সঙ্গে ভাব হয়েছিল দ্রুত। শনি-রবি বন্ধু যখন আত্মীয়ের বাড়ি যায়, আমি গিয়ে বসি রজতদার ঘরে। কোঁকড়া-ঝাঁকড়া চুলে দ্রুত আঙুল চালিয়ে সে কিছুক্ষণের জন্য পড়াশোনা মুলতবি রাখে। বইপত্র সরিয়ে গল্প জুড়ে দেয়। আমাদের সেই গল্পের ভিতর ঢুকে পড়ে অবিন্যস্ত একটা শহর। কেই তার চুল আঁচড়ে দেয়নি যেন! সে শহরটা গান বাঁধে, সিনেমা দেখে, নাটকের টিকিট কেটে হরিদার দোকানের এক কাপ চায়ে প্রাণ জুড়োয়; এদিকে ভিতরে ভিতরে একটা উসখুশ চিন্তাও আছে। চাকরি-বাকরির কী হবে? ভবিষ্যতের দৌড় কতদূর!
ভবিষ্যৎ শিল্পে, ভিত্তি কৃষিতে। আসা-যাওয়ার মাঝে তখন আমাদের চোখে পড়ে আগামীর ঢাউস ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গ তখনও পুরোপুরি পরিবর্তনের পথ ধরেনি। ততদিনে সকলেই প্রত্যেকে বুঝে ফেলেছে যে, মনরে কৃষিকাজ জানো না। পৈতৃক যার যেটুকু জমি-জিরেত অতএব রইল পড়ে। পড়ে দূরে যাওয়া প্রায় দস্তুর। ভিত্তি কৃষির কিস্তিমাত আমাদের কাছে তখন স্পষ্ট। বর্গা আর বর্গের যে হিসাবগুলো ঠাকুদ্দা-বাবার কাছে স্পষ্ট, আমাদের কাছাকাছি এসে সেই সব বুড়ো গল্পের মুখে বলিরেখা। কী-একটা যেন হাতছানি দিচ্ছে! দিয়ে থাকেও আবহমান। আর ভুল করে যুধিষ্ঠির সবকিছু বাজি রাখে, যা তার রাখার অধিকার নেই, অথবা ছিল! আমরা জানি না, সময় কখন কোন পাশাখেলায় মজে যায়, জমে যায়, হেরেও যায়। পেশা নিয়ে তখন আমাদের নতুন মহাভারত। কেউ একজন লিখছেন, যেখানে ভিত্তি পেরিয়ে যাওয়াই আদিপর্ব। এদিকে শিল্প নিয়ে আগাম কোনও ধারণা নেই। কলেজ পাস-আউট সকলেই বিদেশের দিকে পা বাড়িয়ে। আর অতদূর না হলেও অন্য রাজ্যে তো পাক্কা। এমনকী, কেউ যদি এখানে ভালো মাইনেতে থেকেও যায়, তবু মন বলে, ও বোধহয় তেমন ভালো নয়। এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের কার্ড যত তামাদি হচ্ছিল, জীবনে সচ্ছলতার ধারণাতেও তত নতুন পালিশ। খেয়েপরে চলে গেলেই আর চলে না, দূরে চলে না-গেলে আর চলে কী করে! যেন দূরের স্বীকৃতি না-এলে গীতাঞ্জলি প্রাণে বাজে না। শহরে মাথা গলানোর সেই একেবারে গোড়ার দিকে, জীবন যখন উন্মাদের পাঠ্যক্রম প্রায়, এইসব দেখে-শুনে, একান্তে আমরা নবীন জনাকয় গল্প করতে-করতে ভাবতাম, এই শহরেও তাহলে থাকা হবে না। বছর চারেকের বন্দর মাত্র! পড়াশোনার পথ যেন ক্রমশই বাইরের দিকে, ঘরে ফেরা বন্ধ করে দিচ্ছে। রাজ্যের আকাশে তখন অযুত সম্ভাবনার অঙ্ক। কী-একটা হচ্ছে, তবু যেন অনেককিছুই হচ্ছে না। কী যেন একটা হওয়া উচিত ছিল। তার কিছু কিছু নাকি শুরু হচ্ছে। নতুন একটা কিছু হবে-হবে আশা তখনও ডানা মেলেছে। ছায়ার কল্পনায় উপশম পাচ্ছেন কেউ। বৃথা আশা মরিতে মরিতেও নাকি মরে না! সেই ধুকপুকুনির ভিতর আচমকা এসে গেল বিখ্যাত আমরা-ওরা। শহরের চৌকাঠ আমরা তখন পেরিয়েছি মাত্র কিছুদিন।
কলেজে সরাসরি রাজনীতির বালাই নেই। একবার প্রথম বর্ষের কয়েকজন দ্বিতীয়-তৃতীয় বর্ষের দাদাগিরিতে তিতিবিরক্ত হয়ে কলেজ-প্রশাসনের কাছে কলজেয় সাহস এনে কয়েকজনের নামে নালিশ ঠুকল। বেশ একটা ফ্রন্ট হয়-হয় গোছের ব্যাপার। একদিন সব পক্ষের যৌথ বৈঠক ডাকা হল। ডিরেক্টর স্যরের ঘরে, প্রকাশ্যে, তখনও লাইভ করার চল হয়নি। স্যর দিলদরিয়া মানুষ, চেন স্মোকার। তো সেই বৈঠকের কানাঘুষো যা শোনা গেল, তাতে ঘটনাক্রম এরকম– স্যর সব শুনছেন, গল্প করছেন, এ-পক্ষ, ও-পক্ষ নিজের বক্তব্য জানাচ্ছে, স্যর শুনছেন, টুকটাক মন্তব্য করছেন, সিগারেট থেকে সিগারেট ধরাচ্ছেন, এ-পক্ষ বলছে ‘তুমি এটা করলে কেন?’, ও-পক্ষ জবাবে একটা কিছু বলছে, স্যর মাথা নাড়েন, হয়তো বলছেন ‘এটা না করলেই হত’, আবার ছেলেমেয়েরা নিজেদের মধ্যে একটু ঝগড়া করে নেয়, স্যর বলেন ‘তাই বলে কি এত ঝগড়া করতে আছে!’– এই করে করে কখন এক ঘণ্টা কেটে গেল। যখন বের হল সবাই, তখন যৌথফ্রন্টের মিলিজুলি কদম কদম বাড়ায়ে যা…। সামনেই ফ্রেশারস্, ফেস্ট আর তোরা যুদ্ধ করে করবি কী তা বল? অতএব অধিকার বুঝে নেওয়া প্রখর দাবি-দাওয়ার কমিটি-সম্ভাবনায় সেখানেই ইতি। আমরা পরে খেয়াল করে চমকেই উঠলাম যে, ‘এ-পক্ষ’ ‘ও-পক্ষ’ থেকে বাছাই কয়েকজন দিনকয়েকের মধ্যেই হৃদয়ের পক্ষপাতে অলির কথা শুনে ভ্রমর হাসে। কমিটি ঘেঁটে দিয়ে সেদিন স্যর ভালো করেছিলেন না মন্দ, আমরা তাই আর তার হিসাব রাখিনি।
ফলত বাইরের রাজনীতির প্যাঁচ-পয়জার যে আমরা কলেজ দিয়ে ডিকোড করতে পারছি, এমনটা নয়। তবে রোজ সকালে একখানা বাংলা আর ইংরেজি কাগজ উলটে দেখে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করি, রাজ্যটা চলিতেছে নড়িতে নড়িতে। আর কয়েক বছরে মধ্যেই তীব্র ওলটপালট অপেক্ষায়, ইতিহাস বদলে নেবে নিজের অভিমুখ; সেই ক্রান্তিতে দাঁড়িয়ে আমরা; কিন্তু তখন কে জানত যে আমরাই সেই ঐতিহাসিক বোড়ে! যাদের একদিকে অ্যানালগ, অন্যদিকে ডিজিটাল। একদিকে সৌরভ, অন্যদিকে ধোনি। একদিকে ভিত্তি, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ। পুরোটা খোলসা হতে সময় লাগবে, আর তার ভিতর অনেকখানি চরকিপাক খাব আমরা। অবশ্য মেস কখনই স্বকল্পিত ধারণার বুদ্বুদে বাস করায় না। অনেকগুলো মানুষ, পাশাপাশি থাকে, নানা বাস্তবতা, নানা ধারণায় ঠোকাঠুকি লেগেই মেসের জীবন তৈরি।
একদিন কলেজে থাকতে থাকতেই শুনলাম, শহরে গন্ডগোল। কী? না, তসলিমা নাসরিনের বই নিয়ে ঝামেলা, আর যথেষ্ট উত্তেজনা চারিদিকে। আমাদের রুটিনে বোধহয় খুব বেশি ফারাক হয়নি সেদিনও। কলেজ শেষের ক্রিকেটটা বাতিল করে আমরা ফিরলাম। রাস্তায় বেশ জ্যাম। বিভিন্ন দিক সম্ভবত আটকে রেখেছিল পুলিশ, যাতে ঝামেলা বেশিদূর না গড়ায়। তসলিমাকে কি আমরা পড়েছি? মেসে উঠল সেই প্রশ্ন। আমরা যথারীতি পড়িনি। তবে তাতে আলোচনার গতিরোধ হল না। তা পাঠ থেকে গড়িয়ে গেল খানিক অন্য প্রসঙ্গে। এবং সে প্রসঙ্গ একটা স্থায়ী আলোচনা হয়ে দাঁড়াল ক্রমশ। গোঁড়ামির বিরুদ্ধে যে কোনও সচল মানুষের অবস্থান থাকবে, তাই-ই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই প্রথম টের পাচ্ছি, এই গোঁড়ামির ধারণার আবার একটা ধর্মভিত্তি আছে। শব্দ এক-ই। কিন্তু হিন্দু আর মুসলমানদের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগে অর্থের মাত্রার অনেকখানি হেরফের হয়ে যায়, যখন হিন্দুরা তা প্রয়োগ করে। একজন হিন্দুর ক্ষেত্রে গোঁড়ামি অনেকখানি নরম প্রয়োগ, হয়তো কেউ খুব আচারনিষ্ঠ– তা বোঝাচ্ছে, বা একটু বিরক্তিই তাতে মিশে থাকল; তবে খুব একটা রাগের উদ্রেক নেই। আবার এই গোঁড়ামির কারণে অনেকে সম্ভ্রম-সম্মান পাচ্ছেন, এমনটাও হয় ‘উনি কিন্তু খুব গোঁড়া ব্রাহ্মণ’ বা ‘বানান নিয়ে উনি খুব গোঁড়া’ ইত্যাদি। মুসলমানের ক্ষেত্রে তা পালটে যায়। গোটা একটা সম্প্রদায়ের রিজিডিটিকে প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ওই একই শব্দ। তার ভিতর ধর্ম, ধর্মের ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা ধারণা-ভুল ধারণা জুড়ে তা বেশ বহুমাত্রিক জটিল একটা ব্যাপার। গোঁড়ামির মাত্রা বদলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে আর এক রকম আমরা-ওরা।
এত পরত আমার জানা ছিল না। হাওড়ার অনেকখানি– প্রায় মেদিনীপুর ছুঁই ছুঁই– ভিতরে আমার দেশের বাড়ির গা-লাগোয়া গ্রামেই মুসলমানদের বাস। আমরা হাঁ করে মহরমের তাসা দেখতে যেতাম। পাশাপাশি দুই গ্রামে কল খারাপ হলে জল নিতে আসায় কোনও বাধা ছিল না। আমাদের হিন্দুদের গ্রামে তো শিব-মনসার সঙ্গে একটা পিরের থানও ছিল, সেখানে হিন্দুরাই সন্ধে-প্রদীপ দিত, বছরে একবার সেই চাতালে রামায়ণের গানও হত। মোড়ের চায়ের দোকানে কারওর বসা নিয়ে অন্যের আপত্তি ছিল না। দুই সম্প্রদায় যে আলাদা তা না বোঝার কিছু নেই, তবে ঝুটঝামেলা যা হত, তা সাধারণ, তাতে সম্প্রদায়ভিত্তি নেই। আমাদের সেই শান্ত বাতাসে বহু দূর– দু’-তিন গ্রামের ওপার থেকে ভেসে আসত ভোরের আজান। শোনামাত্র আজীবন বিছানা ছাড়তেন আমার ঠাকুমা। তারপর দরজায় জলের ছিটে দিয়ে, শাঁখ বাজাতেন। পরীক্ষার সময় সেটাই আমাদের ভোরে পড়তে ওঠার অ্যালার্ম। কিন্তু মেস বলল, এটাই একমাত্র ছবি নয়। যে মালদায় থাকে, তার কাছে এই অভিজ্ঞতা হয় নেই, নয় ভীষণ অন্যরকম। দুই সম্প্রদায়ের মেলামেশার এই সরল জীবন ফলত তার দূরতম কল্পনায়। সে বরং ঠোকাঠুকি চিনেছে আরও বেশি করে। আজানের সুরও তার কাছে সুখকর নয়। গোঁড়ামির অর্থও অনেকখানি উগ্রতা আর ক্রোধের মিশেলে তার কাছে ধরা দিচ্ছে। আবার এ-ও দেখা গেল যে, অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও একটা সাধারণ বিদ্বেষ কেউ কেউ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কারও পাকা ধানে মই দেয়নি, তবু কে যেন কানে ফুসমন্তর দিয়েছে, আর কেউ কেউ রাগে কালো হয়ে সর্বত্র ধানের বদলে মই খুঁজতে বেরিয়েছে। অবিশ্রান্ত অযুক্তি। তক্কো কিংবা গপ্প দিয়ে তা ঠেকানো যায় না। মেস সেই গোড়ার দিনেই চিনিয়ে দিয়েছিল, মাল্টিভার্স না হলেও, এক পৃথিবীর ভিতর থাকে অনেক পৃথিবী। এখন কাজের জীবনেও দেখি, কারও কাছে আজান ভালো, কারও কাছে বিষবৎ– অকারণেই। আমার কাছে এ জিনিস অচেনা নয়। দু’-তরফের জীবন যে তবু এক ঘরে অন্য অন্য সত্তায় মিলে থাকতে পারে, সেই লোকশিক্ষে মেসের পাঠাশালাতেই। মেস আমাদের শিখিয়েছে, দেশ অনেক রকম।
রজতদার সঙ্গে গল্পের ভিতর ঢুকে পড়ত এইসব। কখন যে বেলা গড়িয়ে যেত, বলত, গান শুনবি? শোনাত গান, আগে তা শুনিনি, রেডিওতেও নয়। গান কার, বলল, পল্লব কীর্তনীয়ার। বলল, ‘বাড়িতে সিডি আছে, তোকে এনে দেব।’ পরে জোগাড় করে আমি সেইসব গান শুনলাম। সুমন-নচিকেতা রাজত্বে আরও একজন, একটু অন্যরকম। একদিন তার বইপত্রের ডাঁই থেকে টেনে আনি ‘টিনের তলোয়ার’। পড়ি আর ভাবি, আমাদের সিলেবাসের সেমিকন্ডাক্টর যে পৃথিবীর কথা বলে, তা কি খোঁজ রাখে কলকেতার তলার মানুষের! যাই হোক, সেই রজতদাই একদিন বলল, নাটক দেখতে যাবি? আপত্তির প্রশ্ন-ই নেই। দেখা হয়ে গেল ‘রক্তকরবী’, বিশুপাগল পল্লব কীর্তনীয়া। রজতদা হয়তো তাঁর টানেই নাটক দেখতে গিয়েছিল। আর আমি পড়লাম রবীন্দ্রনাথের সমূহ আক্রমণে, টেক্সট হিসাবে নাটক পড়ার আগেই মঞ্চের উপস্থাপনা টেনে নিয়ে গেল যক্ষপুরীতে।
রজতদা একদিন তল্পি গুছিয়ে যেমন এসেছিল, চলেও গেল। ভোর ভোর ট্রেন ধরার ছিল। ঘুমচোখে তাকে বিদায় জানালাম। সে আমার হাতে দিয়ে গেল ‘ক্ষণিকা’। মেস চলল নিজের মতো। শুধু একদিন টের পেলাম রজতদা আমায় দিয়ে গেছে ‘রক্তকরবী’-ঘোর। সিলেবাস এগোয়, সেমিস্টার পেরোয়, কিন্তু এই টেক্সট আর ফুরোয় না। ফুরোবেও না। কলকেতার তলায় শেষমেশ আমরা যারা থেকে যাব, মাটির তলা থেকে সোনার তাল তোলায় নিযুক্ত হয়ে ‘৪৭ফ’ হয়ে উঠব অচিরেই। আর থাকবে কুকুর-মারা-চাবুক— ‘যে রশিতে এই চাবুক তৈরি সেই রশির সুতো দিয়েই ওদের গোঁসাইয়ের জপমালা তৈরি।’ সেই চাবুকের দেশে নন্দিনীর পালা যে ফুরবে, তার উপায়-ই বা কই!
অলংকরণ দীপঙ্কর ভৌমিক
…পড়ুন মেসবালক-এর অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ১২। মেসবাসীর হিসাবশাস্ত্র এমন কুটিল যে স্বয়ং কৌটিল্যও তল পান না
পর্ব ১১। ছেড়ে যাওয়া ঘরে মেরা কুছ সামান থেকেই যায়
পর্ব ১০। বই বন্ধ করলেও, বন্ধ হয় না কিছু কিছু বই
পর্ব ৯। বোবার শত্রু নেই, বন্ধু তো আছে
পর্ব ৮। মেস কি কোনও নারীচরিত্রবর্জিত একাঙ্ক নাটক!
পর্ব ৭। যে ভাতের হোটেলে মাছকে ‘তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া’ বলতে হবে না, সেখানেই রোজের বেঞ্চি বুক করতাম
পর্ব ৬। মেসের বাড়ি না থাকলে দেশের বাড়িকে ঠিক চেনা যায় না
পর্ব ৫। মেসে থাকতে গিয়ে বুঝেছিলাম বিছানা আর বেডের মধ্যে বিস্তর তফাত
পর্ব ৪। ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ কখনও মেসে থাকেননি
পর্ব ৩। মেস আসলে জীবনের ক্রিকেট-সংস্করণ
পর্ব ২। আদরের ঘরের দুলালদের সদর চেনাল মেস
পর্ব ১। মেস এমন দেশ যেখানে বাঁধাকপির পৃথক আত্মপরিচয় চিবিয়ে নষ্ট করা যায় না