সত্যজিৎ নিজের গোয়েন্দা গল্পে জটায়ু নামের এমন একজন লেখককে নিয়ে এলেন, যিনি পুরোদস্তুর পাল্প সাহিত্যিক না হলেও পাল্প ফিকশন ঘেঁষা। কেন এমন করলেন সত্যজিৎ? কারণ আমরা সময়-অসময়ে ফেলুদাকে জটায়ুর লেখা নিয়ে ঠাট্টা করতেও দেখি অবলীলায়। তবে কি পাল্প ফিকশনের প্রতি সত্যজিতের অনীহা ছিল? বটতলার গোয়েন্দারা যখন বিখ্যাত হয়ে উঠছেন, তখন ভদ্রলোকের ড্রয়িংরুমে রুচিশীল গোয়েন্দা এনে বসানোর জন্যই কি ফেলুদার গল্পগুলো লেখা? মধ্যবিত্ত যাতে বটতলার গোয়েন্দায় গা না ভাসায়, তাই তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আনা হল ফেলুদাকে? এ নিয়ে প্রবন্ধে, সিনেমায় বিস্তর হাততালি কুড়োনো ‘ওয়ান লাইনার’ থাকলেও আমার তা মনে হয়নি কোনও দিন।
‘রাবণ রাজা যব সীতা মাইজীকো হরণ করকে লে যা রাহা থা তব জটায়ু পকশি আকে উসকো বহুত পরেশন কিয়া… বড়িয়া পকশি– জটায়ু, মেরা ছদ্ম নাম!’ ঠিক এই জবানিতেই জটায়ু নিজের সাহিত্যিক সত্তার পরিচয় দিচ্ছেন ‘সোনার কেল্লা’ সিনেমার ইন্ট্রোডাকশন সিকোয়েন্সে। উল্টো বার্থ-এ বসা মারোয়াড়ি (সম্ভবত) গোগ্রাসে সেসব জ্ঞান গেলার ঢঙে সস্তা টিফিন কৌটো থেকে মুচমুচে জাঙ্কফুড গিলে চলেছেন। সত্যজিৎ রায়ের মতো উৎকৃষ্ট পরিচালকের জন্য এই দুটো শটের ইন্টারকাটই যথেষ্ট একজন রহস্য রোমাঞ্চ লেখক আর তার পাঠকের নিবিড় সম্পর্ক বোঝানোর জন্য। জটায়ুর রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ যদিও পাল্প সাহিত্য কি না– এ নিয়ে মতান্তর থাকলেও সত্যজিৎ তাঁর গল্পে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন জটায়ুকে, তাতে অন্তত এটুকু স্পষ্ট তিনি ফেলুর মতো এক্সট্রাঅর্ডিনারি বুদ্ধির কাছে গাঁজাখুরি গল্প লিখিয়ে।
পাল্প সাহিত্যের জন্ম যদিও তারও অনেক আগে, পশ্চিমে। সাহেবদের ডাইম সাহিত্যর উত্তরাধিকারী লেখককুল ১৯২০-’৩০-এর আশপাশে প্রসব করেছিল পাল্প ফিকশন। ‘পাল্প’ শব্দটা ফিকশন-এর আগে যোগ হওয়ার কারণ যদিও অন্য। সস্তা কাঠের পাল্প বা ভুসি থেকে যে কাগজ তৈরি হত, তা সস্তা দামে বিক্রি হত স্লিক বা আর্ট পেপারের চেয়ে। আর সেটা ব্যবহার হত কেবল এক বিশেষ ধরনের বই ছাপার জন্য। কী সেই বই? রগরগে থ্রিল, অ্যাডভেঞ্চার, অ্যাকশনে ঠাসা গল্পগাছা, যার দায় নেই ক্লাসিক হওয়ার। তার দাবি সমকালের অগণিত পাঠক মন, যারা ক্লান্ত, বীতশ্রদ্ধ বাস্তবের রূঢ় গরিমায়। দুর্ভিক্ষ, ধ্বংসস্নাত পুঁজিবৎ পৃথিবীতে যখন কল্পনাকে বাস্তবের শত্রু আর প্রতিযোগিতাকে সাফল্যের একমাত্র রাস্তা হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ঠিক তখনই স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনে যেন সান্তা ক্লজ হয়ে নেমে এল ‘পাল্প ফিকশন’। তার জনপ্রিয়তাও হু হু করে ছড়িয়ে পড়ল কলেরার মতো। যুক্তি আর দর্শনের সঙ্গে ছিল তার আজন্মের বিরোধ। সাধারণ মানুষ বিশ্বযুদ্ধ আর আর্থিক মন্দার প্যাঁচঘোঁচ দেখেশুনে দর্শন আর যুক্তি– দুইয়ের প্রতিই যখন সন্দিগ্ধ, তখনই এক গোষ্ঠীর সাহিত্যিক হলদে পাতার ভেতর থেকে তারা বলে উঠল– খুব জমেগা রং, যব মিল ব্যায়ঠেঙ্গে তিন ইয়ার আপ, ম্যায় অউর পাল্প ফিকশন।
পাল্প ফিকশনের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হল ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্র। মূল চরিত্র সাধারণত এতটাই ফোলানো ফাঁপানো যে, জনসাধারণের মুখ হাঁ হয়ে যাবে তার বহর দেখে। যদিও বাস্তবে তা মিলবে না, কিন্তু তাতে কীই-বা এসে গেল। জটায়ু যখন প্রখর রুদ্রর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছেন– ‘‘উচ্চতায় ছ’ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চি, ছাতি ছেচল্লিশ, কোমর বত্রিশ, কাঁধ বাইশ, কব্জি সারে আট’’– তখন আক্ষরিক অর্থে পাল্প গল্পের নায়কদের কথাই মনে পড়ে বেশি। পুরুষ হলে সে এতটাই পুরুষ, যার পাশে সাধারণ পুরুষমানুষদের ক্যাবলা লাগে। তারা করেও যেসব কাণ্ডকারখানা, তা দেখে শুধু তাকই লাগে না, শিহরণও জাগে রোমে রোমে।
বাংলায় যদিও পাল্প ফিকশনের একটা ডাকনাম আছে– বটতলার উপন্যাস। দীনেন্দ্রকুমার রায়, শশধর দত্ত বা স্বপনকুমাররা তার উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু আদতে বটতলার লেখক বলতে ঠিক যেটা বোঝায়, সেটা বোধহয় জটায়ু নন। এমনকী ফেলুদা সিনেমার দৌলতে ‘করাল কুম্ভীর’ আর ‘দুর্ধর্ষ দুশমন’ নামের জটায়ু রচিত যে দু’টি বই দেখার সুযোগ আমাদের হয়, তার চেহারাও যেন বটতলার মলাটের মতো নয়। যদিও শিল্পী ময়ূখ চৌধুরিকে দিয়ে সত্যজিৎ আঁকিয়েছিলেন জটায়ুর বইয়ের প্রচ্ছদ। দুরন্ত ব্রাশের আঁচড়ে সঠিক অ্যানাটোমি ড্রয়িং আর অ্যাকশন মুখর দৃশ্যকল্প। কিন্তু বটতলার উপন্যাসের মতো তার কলেবর নয়। বরং বলা ভালো দেখেশুনে খানিকটা পরবর্তী কালের ফেলুদা সংকলনগুলোর মতোই লাগে তার চেহারা। কিন্তু সত্যজিৎ নিজে না এঁকে কেন ময়ূখ চৌধুরিকে দিয়ে আঁকালেন প্রচ্ছদ সে নিয়ে, বিস্তর গবেষণা তর্কাতর্কির অবকাশ থাকলেও এটা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই, সত্যজিৎ তাঁর গল্পের মধ্য দিয়ে ফেলুদা আর তাবৎ বটতলার হিরোর মধ্যে একটা সুস্পষ্ট বিভাজন আনতে চেয়েছিলেন। তাই প্রখর রুদ্রর বইয়ের প্রচ্ছদের স্টাইল যাতে একেবারেই ফেলুদার বইয়ের চেয়ে আলাদা হয়, তার জন্য নিজে না এঁকে ময়ূখ চৌধুরিকে দায়িত্ব দেন।
কিন্তু আসলে জটায়ু কী ধরনের লেখক ছিলেন তাহলে? সত্যজিৎ কোন গোত্রে ফেলতে চেয়েছিলেন তাঁকে? আজীবন শিশু-কিশোরদের দুনিয়ায় বিচরণ করে লেখক হিসেবে সত্যজিৎ হয়তো শিশুদের জন্য লেখা উপযোগী পাল্প ফিকশন খুঁজে পাননি সেভাবে। রুকু, মুকুল, তোপসে– সবাইকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে জটায়ু আসলে পাল্প সাহিত্য করতে এসেও লিখছেন সেইসব শিশু-কিশোরদের জন্য, যারা আলো করে রয়েছে সত্যজিতের ইউনিভার্স। তাই তার লেখা বইগুলো গাঁজাখুরি হলেও ঠিক রগরগে বলা যায় কি?
বটতলার উপন্যাসের দু’হাতে বন্দুক এক হাতে টর্চ, বা একমুঠো অ্যাটম তুলে নিয়ে অ্যাটম বোমা বানানোর যে আকাশ কুসুম কিস্সা, সেটার তুলনায় জটায়ুর উট আর উটের পেটের ওয়াটার সাপ্লাই– তাও খানিকটা বিজ্ঞান আর যুক্তির কাছাকাছি। ফেলুদাকে রাখাই হয়েছে উটের পেটটাকে সংশোধন করে পিঠে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য, নইলে চরিত্রের মজা জমে না। কিন্তু কথা হল, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমায় রুকুর স্পার্ক-প্রীতি নিয়ে ফেলুদা যখন জটায়ুকে ঠাট্টা করে, তখন জটায়ু স্পার্ক এবং তার স্রষ্টা নিশাচরকে নিয়ে যে ধরনের সমালোচনার অবতারণ করেন, তার সারমর্ম হল অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক সাহিত্যসৃষ্টির মতো অধম কাজ করার চেয়ে না করাই ভালো। জটায়ুর লেখায় পাল্প বা বটতলার যে বাড়াবাড়িটা– সেটা নিয়ে সমস্যা ফেলুদার অতটা না থাকলেও, উটের পাকস্থলি আর কুঁজ গুলিয়ে যাওয়া নিয়ে ঘোরতর ভাবে রয়েছে। উল্লেখ্য বটতলার লেখকদের মতো আজগুবি সত্তাকে আঁকড়ে না ধরে থেকে জটায়ু কিন্তু উটের ওয়াটার সাপ্লাই ভ্রান্তিটা শুধরে নিতে কুণ্ঠিত বোধ করেননি।
জটায়ুর বইয়ের নাম যে ক’টা পাওয়া যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল– ‘সাহারায় শিহরণ’, ‘আরক্ত আরব’, ‘বোর্নিওর বিভীষিকা’, ‘দুধর্ষ দুশমন’, ‘মেরু মহাতঙ্ক’, ‘গোরিলার গোগ্রাস’, ‘আনবিক দানব’, ‘হিমালয়ে হৃদকম্প’, ‘করাল কুম্ভীর’, ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’, ‘ভ্যানকুভারের ভ্যাম্পায়ার’, ‘পিঠাপুরমের পিশাচ’, ‘নরকের নাম কারাকোরাম’, ‘হংকং-এ হিমসিম’, ‘অতলান্তিক আতঙ্ক’, ‘হন্ডুরাসে হাহাকার’, ‘সাংঘাইয়ে সংঘাত’, ‘হনলুলুতে হুলুস্থূল’, ‘কাম্পুচিয়ায় কম্পমান’, ‘মাঞ্চুরিয়ায় রোমাঞ্চ’, ‘লন্ডনে লণ্ডভণ্ড’, ‘রক্ত হীরক রহস্য’। খেয়াল করলে দেখা যাবে কেবল একটা বইয়ের নাম ছাড়া বাকি সবক’টাই অনুপ্রাসের উদাহরণ। সত্যজিতের লেখা ফেলুদায় শুরুর দিকের গল্পগুলোর নাম অনুপ্রাসে বাঁধা না পড়লেও পরবর্তীকালের গল্পগুলো, যেমন ‘কৈলাশে কেলেঙ্কারি’, ‘ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর’, ‘ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা’, ‘রবার্টসনের রুবি’, ‘গ্যাংটকে গন্ডগোল’-এ অনুপ্রাসের ব্যবহার দেখা যায়। এক্ষেত্রে সত্যজিৎ জটায়ুর দ্বারা প্রভাবিত কি না– সেটা ভেবে দেখার বিষয়।
………………………………………………………..
সত্যজিতের মতো অপরাজেয় শিল্পীরা শুধু মানুষকে বিনোদন দিতে বা তার মন জয় করার জন্য শিল্প করে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। তাঁরা তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে প্রচলিত স্টিরিওটাইপকে ঢেলে সাজাতে চান। ‘আর্ট ফিল্মমেকার’ বলে দেগে দেওয়া হলে তার উত্তরে যেমন একটা ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ বা ‘সোনার কেল্লা’ বানানো হয়, ঠিক তেমনই পাল্প ফিকশনের ডিটেকটিভদের অযৌক্তিক কাণ্ডকারখানায় বিজ্ঞানমনস্ক মন অতিষ্ট হয়ে উঠলে উপস্থিত হন একজন ফেলুদা। খেয়াল করলে দেখা যাবে, তোপসের চোখে ফেলুদার যে ইমেজ, সেটার লার্জার দ্যান লাইফ প্রতিচ্ছবিটা কোনও পাল্প গল্পের নায়কদের মতো অতটা ঝাঁঝাঁলো না হলেও চমকপ্রদ।
…………………………………………………………
কিন্তু একথা ঠিক– সত্যজিৎ নিজের গোয়েন্দা গল্পে জটায়ু নামের এমন একজন লেখককে নিয়ে এলেন, যিনি পুরোদস্তুর পাল্প সাহিত্যিক না হলেও পাল্প ফিকশন ঘেঁষা। কেন এমন করলেন সত্যজিৎ? কারণ, আমরা সময়-অসময়ে ফেলুদাকে জটায়ুর লেখা নিয়ে ঠাট্টা করতেও দেখি অবলীলায়। তবে কি পাল্প ফিকশনের প্রতি সত্যজিতের অনীহা ছিল? বটতলার গোয়েন্দারা যখন বিখ্যাত হয়ে উঠছেন, তখন ভদ্রলোকের ড্রয়িংরুমে রুচিশীল গোয়েন্দা এনে বসানোর জন্যই কি ফেলুদার গল্পগুলো লেখা? মধ্যবিত্ত যাতে বটতলার গোয়েন্দায় গা না ভাসায়, তাই তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আনা হল ফেলুদাকে? এ নিয়ে প্রবন্ধে, সিনেমায় বিস্তর হাততালি কুড়োনো ‘ওয়ান লাইনার’ থাকলেও আমার তা মনে হয়নি কোনও দিন।
সত্যজিতের মতো অপরাজেয় শিল্পীরা শুধু মানুষকে বিনোদন দিতে বা তার মন জয় করার জন্য শিল্প করে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। তাঁরা তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে প্রচলিত স্টিরিওটাইপকে ঢেলে সাজাতে চান। ‘আর্ট ফিল্মমেকার’ বলে দেগে দেওয়া হলে তার উত্তরে যেমন একটা ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ বা ‘সোনার কেল্লা’ বানানো হয়, ঠিক তেমনই পাল্প ফিকশনের ডিটেকটিভদের অযৌক্তিক কাণ্ডকারখানায় বিজ্ঞানমনস্ক মন অতিষ্ট হয়ে উঠলে উপস্থিত হন একজন ফেলুদা। খেয়াল করলে দেখা যাবে, তোপসের চোখে ফেলুদার যে ইমেজ, সেটার লার্জার দ্যান লাইফ প্রতিচ্ছবিটা কোনও পাল্প গল্পের নায়কদের মতো অতটা ঝাঁঝাঁলো না হলেও চমকপ্রদ। এমনকী মন্দার বোস ট্রেনের কামরা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরও ফেলুদা যখন ‘জটায়ুজি আপনার মত সঙ্গী থাকলে প্রখর রুদ্রর হাত থেকেও শিকার ফসকে যাবে’ বলেন, তখন পাল্প ডিটেকটিভকে উত্তম-অধমের নিরিখে উত্তমেই স্থান দিয়েছেন সত্যজিৎ। আসলে জটায়ু হলেন সেই চরিত্র, যাকে দিয়ে হয়তো পাল্প প্রভাবিত বাংলা ফিকশনের কিছু বাড়াবাড়ি অযুক্তি শুধরে নিতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ!
…………………………………………
আরও পড়ুন সন্তোষ দত্ত-কে নিয়ে সিদ্ধার্থ চ্যাটার্জী-র লেখা: ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই জাঁদরেল আইনজীবী হয়ে উঠতেন জটায়ু
…………………………………………
কিন্তু সৃষ্টির অকরিক স্থানে তার বিদঘুটে কল্পনার সীমানায় জটায়ুকে সমীহ করতেন মনে মনে। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর ক্লাইম্যাক্সে তাই রুকু আর দাদুর গণেশ লোকানোর প্ল্যান প্রকাশ পাওয়ার পর ‘করাল কুম্ভীর’ লেখক জটায়ুকে আরেকবার পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে ফেলুদা যতটা গর্ব অনুভব করে তার রেশ ধাক্কা দেয় আমাদের মনেও। জটায়ু ওর সাহিত্যে খেলাচ্ছলে কুমিরের মুখের হিরে লুকোনোর ঘটনাকে যত সহজ ভাবে নিয়েছে, ততটা সহজে সমাধান করতে পারেনি ফেলুদার যুক্তিবাদী মন। কিন্তু ছোট্ট রুকু তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে বাস্তবে গণেশটা একই কৌশলে লুকিয়ে অজান্তেই ট্রিবিউট দেয় জটায়ুকে। আসলে সত্যজিৎ নিজের ট্রিবিউটটাই রুকুর হাত দিয়ে দিলেন, এটা বোঝাতে যে ফেলুদা ভদ্রলোকের ড্রয়িং রুমের গোয়েন্দা শুধু নয় ভদ্রলোকের ড্রয়িংরুমে প্রখর রুদ্রর মতো পাল্প গোয়েন্দার যুক্তিবাদী শুভাকাঙ্ক্ষী।
…………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………………
যে উন্মত্ত জনতার ঢেউ রবীন্দ্রনাথকে প্রয়াণের পর ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, সেই ঢেউ হয়ে ওঠা জনতার অন্তর্গত মানুষগুলি কি জানতেন, তাঁদের এই মানুষটির প্রতি বিশ্বের মানুষের গভীর শ্রদ্ধার কথা! কয়েক মাস পড়ে, এই সংখ্যাটি কি হাতে নিয়ে দেখেছিলেন ভিড়ের মানুষেরা?