আড়াইটে নাগাদ এসির বন্ধ কামরার মধ্যে বাঙালিদের প্রাণাধিক প্রিয় এক সুবাস ভাসতে শুরু করে। অম্বলে ভোগা বা পেট রোগা বাঙালি ছাড়া সবযাত্রীই তখন অল্পবিস্তর ক্ষুধার্ত। সেই সন্ধিক্ষণে ওই আপেটাইজিং সুবাসে সব প্যাসেঞ্জারের দৃষ্টি একটি মুখের ওপর গিয়ে থিতু হয়। সেই দৃষ্টির আবেদন শুধু ওই হাসিমুখের মানুষটিই বোঝেন। এই স্থিতধি মানুষটি, মুখার্জিবাবু, যার মার্কেটিং টেকনিক বহু মার্কেটিং গুরুদের তাক লাগিয়ে দেবে। একটা কথা খরচ হল না,পরিবেশ নষ্ট হল না, বিজ্ঞাপনের হেডলাইন, বডি কপি, মডেল, বাজেট– কিছুই দরকার হল না। শুধু এক মাতোয়ারা সুবাসে সারা কামরা ‘আমায় দিন’ ‘আমায় দিন’ শব্দে মুখর হয়ে উঠল।
আজকে এক অন্য ধরনের বিজ্ঞাপন ও বিক্রির কথা বলব। এক সময়ে মাঝে মাঝেই শান্তিনিকেতন যেতাম হয় বেড়াতে না হয় বিশ্বভারতী-তে বিজ্ঞাপনের বিষয় নিয়ে পড়াতে কিংবা ওয়ার্কশপ করাতে। শান্তিনিকেতন ড্রাইভ করে অনেকে যান। কিন্তু ম্যাজিকাল জার্নি হচ্ছে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে। একটি এসি চেয়ার কার এর টিকিট কেটে বসে পড়ুন। পুরো বিনোদনের প্যাকেজ আপনার জন্য রেডি। ‘লাল পাহাড়ির দেশে’ দিয়ে শুরু হবে। ঝালমুড়ি-লেবু চাতে শেষ। এ তো যাওয়ার সময়।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ব্র্যান্ড বাজাও ১৭: বাড়িতে আগুন লাগলে আপনি কি চকোলেট খাবেন?
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ফেরার সময়চিত্রটা কিন্তু আলাদা। যেহেতু ট্রেনটা দুপুর ১টা নাগাদ ছাড়ে,তাই শান্তিনিকেতন ফিরতি মানুষ জন হালকা লাঞ্চটা সেরেই ট্রেনে ওঠেন এবং স্মৃতিচারণ করতে করতে এয়ার কন্ডিশন কমফর্ট-এ একটু ঝিমতে শুরু করেন। ওই সময়ে ট্রেনের হকাররা তাদের কাস্টমারদের বিরক্ত করেন না। তাই বেশ কিছুক্ষণ ট্রেন জার্নিটা একটু শান্তিতেই হয়। গোল বাঁধে বর্ধমান এলেই। লেবু চা, ডিম আর কফির আওয়াজের মধ্যে এবং বেশ কিছু যাত্রী, বেশিরভাগই বর্ধমান ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও কর্মচারীতে ট্রেনের কামরা ভর্তি হয়ে যায় ও কামরা গমগম করে ওঠে। এই সময় নিঃশব্দে আমাদের আলোচ্য ব্রান্ডিং এক্সপার্ট একটি বড় ডেকচি নিয়ে এসি কামরায় ঢুকে হাসি হাসি মুখে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকেন। ট্রেন ছেড়ে দেয়।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
ব্র্যান্ড বাজাও ১৬: বিজ্ঞাপনের গোলকধাঁধায় চিকিৎসাও পণ্য!
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
কামরা শান্ত হয়। এই, আড়াইটে নাগাদ এসির বন্ধ কামরার মধ্যে বাঙালিদের প্রাণাধিক প্রিয় এক সুবাস ভাসতে শুরু করে। অম্বলে ভোগা বা পেট রোগা বাঙালি ছাড়া সবযাত্রীই তখন অল্পবিস্তর ক্ষুধার্ত। সেই সন্ধিক্ষণে ওই আপেটাইজিং সুবাসে সব প্যাসেঞ্জারের দৃষ্টি একটি মুখের ওপর গিয়ে থিতু হয়। সেই দৃষ্টির আবেদন শুধু ওই হাসিমুখের মানুষটিই বোঝেন। এই স্থিতধি মানুষটি, মুখার্জিবাবু, যার মার্কেটিং টেকনিক বহু মার্কেটিং গুরুদের তাক লাগিয়ে দেবে। একটা কথা খরচ হল না,পরিবেশ নষ্ট হল না, বিজ্ঞাপনের হেডলাইন, বডি কপি, মডেল, বাজেট– কিছুই দরকার হল না। শুধু এক মাতোয়ারা সুবাসে সারা কামরা ‘আমায় দিন’ ‘আমায় দিন’ শব্দে মুখর হয়ে উঠল। শাল পাতার বাটিতে একটি উদ্ভিন্ন যৌবন শিঙারা আর পাশে বিনয়ে চ্যাপ্টা কচুরি, ওপরে ছড়ানো ওড়নার মতো হলদেটে পেঁপের চাদর দিয়ে ভরা বাটিটি হাতে নিয়ে সারা কামরার বাঙালির রসনা তৃপ্ত করে খালি ডেকচি নিয়ে গ্রেট ব্রান্ডিং জিনিয়াস মুখার্জিবাবু গর্বিত মুখে ডেকচি নিয়ে হাওড়া স্টেশন-এ নামলেন আর আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম! এখন ভাবি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞাপন মেলায় এদেরকে কেন আমরা উপস্থিত করি না। এরাই তো আসল বিজ্ঞাপন শিল্পী। আমরা কতটুকু জানি! ভেবে দেখুন মুখার্জীবাবুর টার্গেট, টাইম, মিডিয়া অ্যান্ড প্রোডাক্ট সিলেকশন কী পারফেক্ট। শুধু এসির বন্ধ কামরায় সুবাস ছড়িয়ে প্রতিটি প্যাসেঞ্জারের খাবার ইচ্ছেকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলেন।
এরাই তো ব্র্যান্ডের আসল বাজনদার।