কিরণ, আমিরের দ্বিতীয় স্ত্রী। রিনা প্রথম। দু’জনের সঙ্গেই খান সাহেবের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে বহুদিন হল। কিন্তু আমিরের কন্যার বিয়েতে দুই প্রাক্তনের উপস্থিতি দেখে (কিরণের গালে আবার সস্নেহ চুম্বনও এঁকে দিয়েছেন মহানায়ক) লোকজনের টনক নড়েছে বড়। এ আবার কী অলুক্ষণে কাণ্ড রে বাবা! প্রাক্তনের পারিবারিক অনুষ্ঠানে প্রীতিভোজ খেতে কখনও আসে নাকি তার পূর্ব স্ত্রী?
আমির খানের একখানা ছবি নিয়ে এখন বড় হট্টগোল হচ্ছে। উঁহু, কোনও সিনেমা-টিনেমা আসেনি খান সাহেবের। ‘লাল সিং চাড্ডা’ গাড্ডায় পড়ার পর এখনও তেমন জুত করে উঠতে পারেননি তিনি। ছবিটা বিয়ের। আমির খানের কন্যার বিয়ের। কিন্তু হল্লাটা ঠিক বিয়ে নিয়ে নয়। বিয়েতে উপস্থিত অতিথিদের নিয়ে। রিনা দত্ত ও কিরণ রাওকে নিয়ে।
কিরণ, আমিরের দ্বিতীয় স্ত্রী। রিনা প্রথম। দু’জনের সঙ্গেই খান সাহেবের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে বহুদিন হল। কিন্তু আমিরের কন্যার বিয়েতে দুই প্রাক্তনের উপস্থিতি দেখে (কিরণের গালে আবার সস্নেহ চুম্বনও এঁকে দিয়েছেন মহানায়ক) লোকজনের টনক নড়েছে বড়। এ আবার কী অলুক্ষণে কাণ্ড রে বাবা! প্রাক্তনের পারিবারিক অনুষ্ঠানে প্রীতিভোজ খেতে কখনও আসে নাকি তার পূর্ব স্ত্রী? কিছুই হয়নি, ভাবভঙ্গি করে কখনও ঘুরে বেড়ায়? মান। অভিমান। রাগ। কলহ। যা যা এককালে কলুষিত করেছিল দাম্পত্যকে, ছিন্ন করে দিয়েছিল জীবনের গাঁটছড়া, তারা সব গেল আজ কোথায়? আধুনিকতা এ সমস্ত শব্দের বাদ্যি বন্ধ করে এক্সপায়ারি ডেট ধরিয়ে দিল নাকি? এআই, চ্যাটজিপিটির যুগে ‘প্রাক্তন’ শব্দটাও শেষে পুরনো হয়ে গেল?
প্রাক্তন কি আজ আর অতীত নয়, বর্তমানেরই অনুষঙ্গ?
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
‘প্রাক্তন’ শব্দটার এক বিশেষ সম্পদ আছে। মায়া। প্রাক্তন সেই নিষিদ্ধ বস্তু, সময়ের নিয়মে যার উপর অধিকার থেকেও থাকে না। চাইলেও আর ছুঁয়ে ফেলা যায় না যাকে। তা থাক না সে তেমন, ইডেনের নিষিদ্ধ ফল হয়ে। ছুতো-নাতায়, অছিলায় তাকে বর্তমানে টেনে আনার প্রয়োজন কী? প্রাক্তন কষ্টেই ভালো। আদিখ্যেতায় নয়।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
কে জানে বাছা, হাল দুনিয়া বড় কঠিন ঠাঁই। আরও বোঝা মুশকিল, এই সিনেমাওয়ালাদের মতিগতি। কখন যে কে কার প্রাক্তন, আর কখন যে কে কার বর্তমান, হিসেব রাখতে গেলে চিত্রগুপ্তও লাট খেয়ে যেতেন নির্ঘাৎ! এই যেমন দিন দুই আগে এক পার্টিতে বাংলার এক লাবণ্যময়ী নায়িকাকে দেখলুম, নাচছেন। এবং নাচছেন যাঁদের সঙ্গে, তাঁরা দু’জনেই সেই নায়িকার প্রাক্তন! ছোটবেলায় পাড়া পিছু একজন মুরুব্বি দাদা থাকত, প্রেমে হাফসোল খেয়ে যারা বুকনি ঝাড়ত যে, অধরা প্রেমিকার বিয়ে না খাওয়া পর্যন্ত ক্ষান্ত দেবে না! সেটাই নাকি হবে ‘ট্রু রিভেঞ্জ’, প্রতিশোধের ‘কেমন দিলাম’! আচ্ছা, এ সমস্ত প্রেমের পাড়া-সর্দাররাই কি বড় হয়ে সিনেমা করে? জানি না বাপু। সাড়ে চুয়াত্তরখানা প্রেমও করিনি, কিউপিড কিংবা প্রেমের তারিণীখুড়ো রঞ্জন বুড়োও (রঞ্জনদা অপরাধ নেবেন না, এ নেহাতই বেশরম লেড়কার ফচকেমি) নই। প্রাক্তন ছিল গোটা তিনেক। কিন্তু ছাড়াছাড়ির পর তারা বিয়ে খেতে ডাকা দূরের কথা, জিন্দেগিতে আর ফোনও করেনি। নিজেও ধাষ্টামো করে কখনও তাদের বিয়ে খেতে যাইনি। যো বিত গ্যয়া, উয়ো বিত গ্যয়া।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আশ্চর্যজনক ‘সুপারব্র্যান্ড’ বলতে দ্বিধাবোধ করব না
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
এটা ঠিক যে, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মন ঠান্ডা হয়। পরিণতবোধ বাড়ে। প্রেমিকা কিংবা স্ত্রীর প্রাক্তনের সঙ্গে মুখোমুখি হলে হাত আর জামার হাতা গুটোয় না। কখনও কখনও বেশ বন্ধুত্বও হয়। ইয়ার-দোস্তের মতো চারজনে কালেভদ্রে বিয়ার-টিয়ারও চলে। লিখলাম না, বয়স পুরনো সম্পর্কের জীবাশ্মর উপর পলিমাটি বিছিয়ে দেয় প্রথমে! তারপর তাতে নতুন সম্পর্কের চারাগাছ বসায়। তাতে সার-জল পড়ে, উপর-উপর “আমরা দু’জন তোফা আছি’’ দেখানোও চলে। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় পুরনো প্রেয়সীর বাঁ-হাত যখন ধরে আর একজন, হৃদয়ের বালিয়াড়ি দিয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস বয়ে যায় নাকি? সঙ্গীকে ‘কী একটা পড়ল’ বলে চোখ চুলকনোর ছলে ছলছল চোখ মুছে নিতে ইচ্ছে করে না? বিছানায় শুয়ে সেপিয়া রঙা পুরনো ছবি-সার অসাড় করে দেয় না শরীর?
না দিলে আর টান কীসের? না দিলে আর প্রেম কীসের? ‘প্রাক্তন’ শব্দটার এক বিশেষ সম্পদ আছে। মায়া। প্রাক্তন সেই নিষিদ্ধ বস্তু, সময়ের নিয়মে যার উপর অধিকার থেকেও থাকে না। চাইলেও আর ছুঁয়ে ফেলা যায় না যাকে। তা থাক না সে তেমন, ইডেনের নিষিদ্ধ ফল হয়ে। ছুতো-নাতায়, অছিলায় তাকে বর্তমানে টেনে আনার প্রয়োজন কী? প্রাক্তন কষ্টেই ভালো। আদিখ্যেতায় নয়। প্রাক্তন নিয়ে আফশোস-ফোঁসফোঁস আছে বলে না প্রেম আজও এত সুন্দর। ও সব সিনেমাওয়ালা, ‘খান’দানি কারবার বাদ দিন। বাদ দিন সেই সমস্ত ‘ভীষ্মলোচন শর্মা’-দের, যাঁরা প্রাক্তনের বিয়ের দিন বাজারে গান ছেড়ে ফোকটে সোশ্যাল মিডিয়া ভিউয়ারশিপ বাড়িয়ে নেন। আপনার-আমার জীবনে প্রাক্তন না হয় নিজের মতোই থাক। মনের দেওয়ালে, ক্ষয়াটে ক্যালেন্ডার সেজে।
হুইস্কির গ্লাস আর ভিজে বালিশে!