শিল্পীদের নিজস্ব ভাষা অন্বেষণের ইতিহাস কিংবা তাদের ক্রমবিবর্তনের এই দলিল আগামী দিনের শিক্ষার্থী এবং শিল্পরসিকদের কাছে হিরের খনির সমতুল্য। ‘The First Sketch Book Of Ganesh Pyne 1954-1955’– বইটি সে কারণেই অমূল্য হয়ে উঠেছে।
সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
পাবলো পিকাসোর ‘সাইন্স অ্যান্ড চ্যারিটি’ পেন্টিংটার কথা মনে আছে? একজন মহিলা মৃত্যুশয্যায়, বিছানার ডানপাশে ডাক্তার বসে এবং বাঁদিকে ছিলেন একজন নান– যিনি একটি বাচ্চাকে কোলে ধরে আছেন। এটি তৈলচিত্র, সমস্ত ক্যানভাস জুড়ে একটা বিষাদ ছড়িয়ে দেওয়া আছে যেন। এ ছবি পিকাসো এঁকেছিলেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে। সেটা ১৮৯৭ সালের মাঝামাঝি। পিকাসোর একান্ত নিজের আঙ্গিক বা স্টাইল, সেই বিখ্যাত কিউবিজমের প্রয়োগ কিন্তু এসেছে অনেক পরে। ১৯০৭ সাল নাগাদ। এই দীর্ঘ সময় পিকাসো অন্বেষণ করেছেন নিজের ভাষা, যা ওঁর শিল্পী জীবনের অমোঘ এক অধ্যায়। এমনটা যে পিকাসো বলেই, শুধু তা নয়, প্রত্যেক শিল্পীরই ভাষা অন্বেষণের একটা নিজস্ব প্রয়াস থাকে। তাঁরা গড়ে তোলেন নিজস্ব আঙ্গিক।
গণেশ পাইন
শুধু ছবি আঁকা নয়, সমস্ত শিল্পমাধ্যমেই এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য রচনার একেবারে শুরুর দিকে বিহারীলাল দ্বারা প্রভাবিত। টি. এস. ইলিয়ট-এর সমস্ত চেতনা জুড়ে ছিলেন দান্তে। মান্না দে নিজের গায়কি তৈরির আগে কাকা কৃষ্ণকান্ত দে (কানা কেষ্ট)-কে খানিক নকল করতেন। এমনকী, হালে কবীর সুমনের একেবারে শুরুর দিকের কম্পোজিশন শুনলে সলিল চৌধুরীর সুরেরও আভাস পাওয়া যাবে। শিল্পীদের এই ভাষা অন্বেষণের ইতিহাস কিংবা তাদের ক্রমবিবর্তনের এই দলিল আগামী দিনের শিক্ষার্থী এবং শিল্পরসিকদের কাছে হিরের খনির সমতুল্য। ‘The First Sketch Book Of Ganesh Pyne 1954-1955’– বইটি তেমনই একটি অমূল্য বই, যার জন্য সাধুবাদ জানাতে হয় সম্পাদক অঞ্জন সেনকে।
ছবিটি গণেশ পাইনের স্কেচবুক থেকে গৃহীত
গণেশ পাইন প্রথম জীবনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রেখাচিত্রের প্রয়োগে মজেছিলেন, তারপর একান্ত নিজের ভাষায় নিজের জীবনের অভিঘাত প্রসূত বক্তব্যকে চিত্রায়িত করতে ক্রমশ পাল্টেছেন নিজের আঁকার ধরন, রেখাচিত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আলো এবং বিশেষ করে অন্ধকারের প্রয়োগ। বইটিতে পাওয়া যাবে তাঁর একেবারে শুরুর দিকের স্কেচ, হালকা শেড দেওয়া পোর্ট্রেট এবং মানুষের জীবনের নানা মুহূর্ত, যা খানিক বিমূর্ত হয়ে ফিরে এসেছে তাঁর উত্তরকালের নানা পেইন্টিংয়ে। এ বইয়ে অন্তর্গত ছবিগুলো লক্ষ করলে দেখা যাবে হিউমান ফিগারের নানা ভঙ্গি, বিশ্রামরত অবস্থারই নানা অ্যাঙ্গেল ধরার চেষ্টা করেছেন। সাধারণত ফ্রন্ট পার্সপেক্টিভ ম্যানেজ করা জুনিয়রদের পক্ষে একটু কঠিন হয়, তাই অনেকে এড়িয়ে যান বা করলেও সেগুলো প্রথমদিকে অন্তত ততটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে না– কিন্তু তিনি তো গণেশ পাইন, তাই তাঁর গবেষণা এবং অন্বেষণ যে একটু অন্য মুনশিয়ানার ছাপ রেখে যাবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
এক্ষেত্রে গণেশ পাইনের নিজের বক্তব্য (যা তিনি ১৯৮১ সালে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন)– ‘আমি জানতে চেয়েছিলাম যে আমাদের মধ্যযুগের চিত্রশিল্পীরা কীভাবে রেখাচিত্রকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পমাধ্যম করে তুললেন, যা সারা পৃথিবীর কাছে বরণীয় হয়ে উঠলো।’
অঞ্জন সেন-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শিল্পী বলেছিলেন (যা বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখ করা আছে)– ‘আমি যদি একজন মুচিকেও আঁকতে চাই সেক্ষেত্রে সেই মানুষটার দার্শনিক সত্তাটিই আমার ছবিতে ধরা দেবে।’ এর থেকে গণেশ পাইনের শিল্প দর্শনের একটা আভাস পাঠক পেয়ে যাবেন শুরুতেই।
বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকাশক কাগজের মান এবং বাঁধাইয়ের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি। সব মিলিয়ে এ বই অবশ্য সংগ্রহযোগ্য।
রতন থিয়াম খুবই ভদ্রলোক এবং নাটকের খুঁটিনাটি ব্যাপারে ভয়ানক খুঁতখুঁতে। অভিনেতা কিংবা অভিনেতা নয়– এমন লোকজন দিয়েও তিনি করিয়ে নিতে পারতেন থিয়েটারের আশ্চর্য সব কাণ্ডকারখানা– নাচ, অভিনয়– এবং গোটা থিয়েটারটাকেই খুব জ্যান্ত বলে মনে হত। মনে হত, ‘লার্জার দ্যান লাইফ’।
সমাজবদ্ধ কীটপতঙ্গের জীবন দেখে গোপালচন্দ্রর মনে পড়ছিল পুঁজিবাদী সমাজে মানুষের অবস্থা
একলা মানুষ অপার বিস্ময়ে চলতে চলতে দেখছেন নালসো পিঁপড়েদের জীবনবৃত্তান্ত ও আচার আচরণ। পিঁপড়ে, মৌমাছি, বোলতাদের সমাজবদ্ধ জীবন দেখতে দেখতে তাঁর মনে পড়ছে রাজতন্ত্র, দাসপ্রথা ও পুঁজিবাদী সমাজে মানুষের অবস্থা। বিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের মৃত্যুদিনে রোববারের বিশেষ প্রতিবেদন।
রবীন্দ্রনাথ কখনও গীতাকে যুদ্ধের প্রচারগ্রন্থ হিসেবে বিচার করেননি
কোনও গ্রন্থকে যখন ধর্মীয় দল-বিশেষ বিচার না করে বোধহীন কুক্ষিগত মন্ত্রের অবয়ব বলে প্রচার করতে চায় তখন সেই মন্ত্রতন্ত্রের অচলায়তন ভেঙে ফেলার পক্ষপাতী রবীন্দ্রনাথ।