বিপক্ষ জালে বল জড়িয়ে চকিতে সেই দৌড়, কর্নার ফ্ল্যাগের নিকটবর্তী হয়ে শরীরটাকে শূন্যে ছুড়ে দেওয়া। বলিষ্ঠ দু’হাত আড়াআড়ি নেমে এসে তৈরি করে এক অদ্ভুত বিভঙ্গ। মাটিতে গেঁথে থাকা পায়ে এক দীপ্ত আত্মবিশ্বাস। ঠিক যেন বহুযুদ্ধে রক্তঘাম ঝরানো কোনও এক সামুরাই। জয় ছাড়া যার অন্য কোনও লক্ষ্য নেই, স্বপ্ন নেই। একটা শব্দ দিয়েই তাঁর ব্যাখ্যা চলে– ‘ইমমর্টাল’!
‘ন হন্যতে’। অর্থাৎ, যার বিনাশ নেই, মৃত্যু নেই। এককথায় অবিনশ্বর। এই মহাবিশ্বে সমস্ত কিছুর লয়-ক্ষয় সুনিশ্চিত। চিরস্থায়ী বলে কিছুই হয় না। তবু প্রকৃতির সেই অমোঘ নিয়মের ব্যতিক্রম কি ঘটে না? আলবাত ঘটে। চোখের সামনে ওই যে তাজমহল আছে, ওই যে চিনের প্রাচীর আছে। রয়েছে ক্রাইস্ট দ্য রিডিমারের দু’হাত প্রসারিত মূর্তি। আছে আরও কত কী! অমরত্বের ডালি নিয়ে তারা বিদ্যমান, কাল থেকে কালান্তরে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো? তিনিও তো সেই অমরত্বের বেদিতে বিরাজমান! হোক না যতই তিনি রক্তমাংসের মানুষ। জানুয়ারির রবিবাসরীয় রাত দেখিয়েছে, রোনাল্ডো নিছকই সময়ের দান নয়, তিনি চিরকালের। শাশ্বত। যেমন তাঁর সেলিব্রেশন।
বিপক্ষ জালে বল জড়িয়ে চকিতে সেই দৌড়, কর্নার ফ্ল্যাগের নিকটবর্তী হয়ে শরীরটাকে শূন্যে ছুড়ে দেওয়া। বলিষ্ঠ দু’হাত আড়াআড়ি নেমে এসে তৈরি করে এক অদ্ভুত বিভঙ্গ। মাটিতে গেঁথে থাকা পায়ে এক দীপ্ত আত্মবিশ্বাস। ঠিক যেন বহুযুদ্ধে রক্তঘাম ঝরানো কোনও এক সামুরাই। জয় ছাড়া যার অন্য কোনও লক্ষ্য নেই, স্বপ্ন নেই। একটা শব্দ দিয়েই তাঁর ব্যাখ্যা চলে– ‘ইমমর্টাল!’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
রবিবার ফিরল সেই দৃশ্য। স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে ফিরল সেই সাত নম্বর জার্সির মাধুর্য, সেই ম্যাজিক। সেই ‘সিইউ সেলিব্রেশন’। ফেরালেন ভিনিসিয়াস। রোনাল্ডো দেখলেন দর্শকাসনে বসে। অতীতকে মনে করাল বর্তমান। কী আশ্চর্য সমাপতন! ম্যাচের বয়সও যে তখন ছিল সাত মিনিট!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
‘সিইউ সেলিব্রেশন’ দেখতে এভাবেই তো আমরা অভ্যস্ত হয়েছি। আমাদের চোখ সেই অভ্যাস করে নিয়েছে, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। সিআর সেভেন আসলে ফুটবলবিশ্বে অবিনশ্বর-চেতনার জীবন্ত বিগ্রহ। রক্তমাংসের পৃথিবীতে এক চিরঞ্জীবী। রোনাল্ডোর সেই অমরত্বকে মনে করিয়ে দিলেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রিয়াল মাদ্রিদের নতুন ‘নাম্বার সেভেন’।
কোথায়? কোথায় আবার, রিয়াধ। সৌদি আরবের আল আওয়াল স্টেডিয়াম। আল নাসেরের দুর্গ হিসেবে খ্যাত যে মাঠ। আর? সিআর সেভেনের বর্তমান বিচরণক্ষেত্র। কাতার বিশ্বকাপ পরবর্তী যুগে যেখানে ফুটবলের সবুজ গালিচায় গোলের ক্যানভাস আঁকেন ৩৮-এর পর্তুগিজ তারকা।
রবিবার ফিরল সেই দৃশ্য। স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে ফিরল সেই সাত নম্বর জার্সির মাধুর্য, সেই ম্যাজিক। সেই ‘সিইউ সেলিব্রেশন’। ফেরালেন ভিনিসিয়াস। রোনাল্ডো দেখলেন দর্শকাসনে বসে। অতীতকে মনে করাল বর্তমান। কী আশ্চর্য সমাপতন! ম্যাচের বয়সও যে তখন ছিল সাত মিনিট!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজোর ফুল-পাতা যেরকম বইয়ের মধ্যে রাখা হত, আমরা রাখতাম চুনী গোস্বামীর ছবি
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
রোনাল্ডো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন সেই কবে। রিয়ালে সোনালি অধ্যায়ের পাট চুকিয়ে জুভেন্তাস, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড হয়ে তিনি এখন আল নাসেরের সেই ফুটবল যোদ্ধা, যার পায়ে নতুন আরব্য রজনী দেখতে ভিড় জমে স্টেডিয়ামের আনাচে-কানাচে। কিন্তু ‘সিইউ সেলিব্রেশন’! সিআরের সেই গোল-উদযাপনের সমার্থক তো ও সাত নম্বর লেখা রিয়াল জার্সিটাও। যার সুখস্মৃতি বয়ে নিয়ে চলে ফুটবল দুনিয়ার কতই না প্রজন্মের পর প্রজন্ম। তারা কৃতজ্ঞ ব্রাজিলের ঘিঞ্জি মেট্রোপলিটান– সান গনসালো থেকে উঠে আসা ওই বছর ২৩-এর জোগো বোনিতোর সাধকের কাছে। ভিনিসিয়াস শুধু ‘সিইউ সেলিব্রেশন’-এ আরাধ্যকে অর্ঘ্য নিবেদনই করলেন না, জাতিস্মর হয়ে স্বপ্নমাখা অগণিত চোখকে ফিরিয়ে দিলেন সোনালি অতীত, একটুকরো ফ্ল্যাশব্যাক– যেখানে বল পায়ে আগুন ঝরাতেন রোনাল্ডো। দ্বৈরথের রূপকথা রচনা করতেন লিওনেল মেসি নামক ঐশ্বরিক প্রতিভার চোখে চোখ রেখে।
রবিবার প্রতিপক্ষ বার্সেলোনাকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছেন ভিনিসিয়াস। করেছেন হ্যাটট্রিক। ভিনি-শিখায় (বহ্নিশিখাও বটে) ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে রবার্ট লেয়নডস্কিদের স্বপ্ন। প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে বার্সা কোচ জাভির ভবিষ্যৎ। কিন্তু এসব ‘এহ বাহ্য’। আসল হল, ভিনিসিয়াসের ওই সিআর-স্বরূপ ‘সিইউ সেলিব্রেশন’। ওটাই শাশ্বত, অবিনশ্বর। যার মৃত্যু নেই, বিনাশ নেই– ‘ন হন্যতে’।