দাভোস-এর মাটিতে এই সমস্ত সেলিব্রিটি, হর্তা-কর্তাদের পা পড়া ইস্তক যৌনকর্মী ও প্রাপ্তবয়স্কদের বিনোদনের সঙ্গে জড়িতদের চাহিদা একেবারে আকাশচুম্বী! বিশ্বের ধনী, বিখ্যাত এবং ক্ষমতাশালী এই সমস্ত ব্যক্তিবর্গ, যাঁদের অধিকাংশই স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবার ছাড়াই দাভোস-এ এসেছেন। তাঁদের জন্য ‘বাজার’ এবং ‘পণ্য’ একেবারে তৈরি। সেটা কী? ‘হাই এন্ড এসকর্ট সার্ভিস’ এবং ‘উচ্চাভিলাসী ফ্রিল্যান্সার’রা।
একই বাক্যে বা কোনও রচনায় সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ হলে অর্থাৎ ভাষারীতির ‘অশিষ্ট’ প্রয়োগ হলে তাকে ‘গুরুচণ্ডালী’ দোষ বলে।
আর বিশ্বের ‘গুরুজন’রা যখন ‘লঘু’ আচরণ করেন, তখন?
প্রচুর ঢাকঢোল পিটিয়ে সুইজারল্যান্ডের অ্যালপাইন রিসর্ট শহর দাভোস-এ সদ্য শেষ হল ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম। ১৫ থেকে ১৯ জানুয়ারি বিশ্বের এই বার্ষিক অনুষ্ঠানে তাবড় তাবড় অতিথির ভিড়ে সরগরম ছিল দাভোস। বিশ্ব-নাগরিকদের বিবিধ সমস্যা নিয়ে ‘গুরুগম্ভীর’ আলোচনায় মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন প্রায় ৩০০০ প্রতিনিধি। রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতা, শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ এবং সেলিব্রিটি– বহু ‘প্রথম শ্রেণি’র নাগরিক আলোচনা করেছেন ‘রিবিল্ডিং ট্রাস্ট’ নিয়ে। সূচিতে ছিল কত না জটিল বিষয়! জলবায়ু পরিবর্তন থেকে বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষ-যুদ্ধ, ভাইরাল অতিমারী থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপদ। প্রকাশ্য আলোচনা থেকে শুরু করে রুদ্ধদ্বার বৈঠক। চাপ কম? এত পরিশ্রমের পর একটু আনন্দ-ফুর্তি না হলে চলে!
এই ‘মহাবিশ্বের নিয়ন্তাদের’ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজের ‘চাপ’ কমানোর প্রস্তুতিও ছিল পুরোদমে। তবে মজার কথা, নীতি-নির্ধারকদের আলোচনা নিয়ে যতটা না মানুষের কৌতূহল, তার চেয়েও বেশি হইচই পড়ে গিয়েছে অন্য একটি তথ্যে।
দাভোস-এর মাটিতে এই সমস্ত সেলিব্রিটি, হর্তা-কর্তাদের পা পড়া ইস্তক যৌনকর্মী ও প্রাপ্তবয়স্কদের বিনোদনের সঙ্গে জড়িতদের চাহিদা একেবারে আকাশচুম্বী! বিশ্বের ধনী, বিখ্যাত এবং ক্ষমতাশালী এই সমস্ত ব্যক্তি, যাঁদের অধিকাংশই স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবার ছাড়াই দাভোস-এ এসেছেন। তাঁদের জন্য ‘বাজার’ এবং ‘পণ্য’ একেবারে তৈরি। সেটা কী? ‘হাই এন্ড এসকর্ট সার্ভিস’ এবং ‘উচ্চাভিলাসী ফ্রিল্যান্সার’রা। যাঁরা প্রতি রাতের পরিষেবার জন্য ২৫০০ ডলার পর্যন্ত দর হাঁকেন। এমন সোনার সুযোগ তাঁরা হাতছাড়া করবেনই বা কেন? এবং সাড়াও পাচ্ছেন দারুণ। যে সমস্ত তথ্য সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-এর ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামে অংশ নিতে আসা অতিথিরা এই এসকর্টদের সঙ্গলাভের জন্য অতিশয় উন্মুখ ছিলেন।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
যৌনপেশা ও যৌনাচার সম্পর্কে রক্ষণশীলতা ইউরোপ বহু আগেই ঝেড়ে ফেলেছে। এই সুইজারল্যান্ডেই ১৯৪২ সাল থেকে যৌনপেশা আইনসঙ্গত। এবং সুনির্দিষ্ট আইন মেনে এই পেশা চালিয়ে গেলে আম-নাগরিক থেকে শুরু করে প্রশাসন, কারও কোনও আপত্তি নেই। যদিও এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এসেছেন আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা ও পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলি থেকে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য দাভোস-এ জনপ্রিয় ও স্থানীয় ‘এসকর্ট সার্ভিস’ রয়েছে। নামটাও দারুণ চিত্তাকর্ষক– ‘টিট ফর ট্যাট’। ফরাসি সংবাদমাধ্যম ‘টোয়েন্টি মিনিটস’ খোঁজ নিয়ে দেখেছে, সম্মেলনের পুরো পাঁচদিন তাদের পরিষেবার চাহিদা ছিল তুঙ্গে। বস্তুত, বিশ্বের এই সমস্ত ‘অভিজাত’দের সৌজন্যে গত পাঁচদিন পূর্ব-সুইজারল্যান্ডের গোটা অঞ্চলেই অন্য কেউ এসকর্ট সার্ভিস পায়নি। অতিথিরা যাতে ‘বান্ধবীর অভিজ্ঞতা’ পান, সেজন্য তৈরি করা হয়েছিল অ্যাপ। তার মালিক বি কনরাড বলেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সপ্তাহে স্থানীয় স্তরে পরিষেবা প্রদানকারীরা পুরোপুরি বুক হয়ে গিয়েছিলেন। দাভোস-এ এমন অনেক গ্রাহক এসেছিলেন যাঁদের কাছে অর্থ কোনও বিষয় নয়। তাঁরা আমাদের অ্যাপের গোপনীয়তার প্রশংসা করেছেন।’ আইনি বিতর্কের ভয়ে কোনও এসকর্ট ক্লায়েন্টের সম্পর্কে কিছুই বলেন না। যদিও রাত দুটোয় হোটেলের করিডোরে নিরাপত্তায় মোতায়েন পুলিশ কর্মীদের বন্দুকের নল দেখেও তাঁদের ভয় পাওয়ার কিছু থাকে না। শুধু রেস্তরাঁ থেকে পাওয়া চকলেটের ভাগ দিতে হয় মাঝেমধ্যে। আর ক্লায়েন্ট সম্পর্কে মুচমুচে কিছু রসিকতা।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
যৌনপেশা ও যৌনাচার সম্পর্কে রক্ষণশীলতা ইউরোপ বহু আগেই ঝেড়ে ফেলেছে। এই সুইজারল্যান্ডেই ১৯৪২ সাল থেকে যৌনপেশা আইনসংগত। এবং সুনির্দিষ্ট আইন মেনে এই পেশা চালিয়ে গেলে আম-নাগরিক থেকে শুরু করে প্রশাসন, কারও কোনও আপত্তি নেই। যদিও এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এসেছেন আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা ও পূর্ব-এশিয়ার দেশগুলি থেকে। এবং আইনসংগত এই পরিষেবা নেওয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আগত অতিথিদের কোনও আইনি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না।
কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশ্নটা নৈতিকতার। প্রথমত, সম্মেলনে অংশ নেওয়া কিছু শিল্পপতি, কর্পোরেট কর্তা ছাড়া বাকি প্রায় অধিকাংশ অতিথিই এখানে সরকারি প্রতিনিধি। নিজ নিজ দেশের তরফে এসেছিলেন। ভারত থেকে যেমন গিয়েছিলেন স্মৃতি ইরানি, অশ্বিনী বৈষ্ণো, হরদীপ সিং পুরীর মতো তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। লগ্নি টানতে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে। জনগণের করের টাকায়, সরকারি অর্থে সেখানে গিয়ে যদি এমন কোনও প্রতিনিধি ‘সুখ-বিলাস’ করেন, সেটা কোনও যুক্তিতেই ন্যায়সংগত নয়।
দ্বিতীয়ত, হাজার তিনেক অতিথির জন্য সুইজারল্যান্ড সরকারি ব্যবস্থাপনায় এহেন মনোরঞ্জনের বন্দোবস্ত করবে বলেও মনে হয় না।
তৃতীয়ত, এক্ষেত্রে বিকল্প কোনও ‘স্পনসর’। কিন্তু ‘দেয়া-নেয়া’ ছাড়া এই সুবিধা পাওয়াও সম্ভবপর নয়। তেমন কিছু ঘটলে দেশের স্বার্থ কিন্তু বিপন্ন হতে পারে। অতীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বহু ‘হানি ট্র্যাপ’-এর উদাহরণ রয়েছে। তাই বিশ্ব মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা ‘গুরুজন’রা যাতে ‘লঘু’ ও ‘অশিষ্ট’ আচরণ না করেন, সে ব্যাপারেও সতর্ক হওয়া দরকার।