আজ সরস্বতী পুজো। কাল, সন্ধ্যাদির মৃত্যুবার্ষিকী। কী আশ্চর্য সমাপতন! এই যে আমরা বলি না, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সরস্বতীর বরপুত্রী, ঠিক একই কথা বলে থাকি লতা মঙ্গেশকরের ক্ষেত্রেও। তিনিও তো সরস্বতীর সাক্ষাৎ বরপুত্রী। লতা এবং সন্ধ্যা– ভারতীয় সংগীতের দুই নক্ষত্রের চিরবিদায়েও কতই না মিল! মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই কিংবদন্তির মহাপ্রস্থান। যেন এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে কাছে ডেকে নিলেন। প্রচ্ছদ শিল্পী: শান্তনু দে।
কোনও মহাজীবনকে শব্দের শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলা খুব কঠিন কাজ। আর সেই মহাজীবন যদি হয় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নামক এক সংগীত সাধিকার, যাঁর গলায় স্বয়ং সরস্বতীর অধিষ্ঠান, তাহলে কাজটা আরও দুরূহ। বাংলা গানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন অপার বিস্ময়। খ্যাতির শীর্ষে থেকেও কীভাবে নির্লিপ্ত থাকা যায়, কীভাবে একনিষ্ঠ ভালোবাসায় গানকে করে তুলতে হয় কালজয়ী– তা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে শিক্ষণীয়। সিনেমায় প্লেব্যাক থেকে উচ্চাঙ্গ সংগীতে দখল, রবীন্দ্র সংগীত থেকে নজরুলগীতি– সংগীতের সর্বস্তরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অবাধ বিচরণ ছিল। আমি বলতাম, মহাগায়িকা। মহানায়িকা যেমন, তেমন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় হলেন মহাগায়িকা। শুনে কেবল হাসতেন। সেই অমলিন হাসি চিরকালের, চিরদিনের– ঠিক তাঁর গানের মতো।
এত বড় গায়িকা, অথচ তাঁর মধ্যে অহংকারের লেশমাত্র ছিল না। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিজেকে সংগীতের একজন শিক্ষার্থী বলে মনে করতেন। নিজের গাওয়া গানের ভুলচুক ধরতেন, কোনও আত্মম্ভরিতা ছিল না। এমনকী, শেষ বয়সেও নিয়মিত রেওয়াজ করতেন তবলচির সঙ্গে। ঘণ্টাখানেক চলত সেই গানের অনুশীলন। সংগীতের প্রতি কতটা নিবেদিত প্রাণ হলে জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছেও নিজেকে গানের সঙ্গে এভাবে জড়িয়ে রাখা যায়। সত্যি তা অনুসরণযোগ্য। জানি না, কতজন সেটা অনুসরণ করেন।
বড়ে গুলাম আলি খাঁ-এর কাছে নাড়া বেঁধেছিলেন। পাতিয়ালা ঘরানার উস্তাদ ছিলেন তিনি। গুরুর কাছে বিশেষ তালিম নিয়েছিলেন গানের। বোম্বের এক গানের আসরে বড়ে গুলাম আলি খাঁ শিষ্যার পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ইয়ে মেরা সাগির্দ হ্যায়।’ ‘সাগির্দ’ মানে গানের সঙ্গী। এত বড় সম্মান! জীবনে অনেক সম্মান পেয়েছেন, কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মুখেই শোনা। বলেছিলেন, গুরুর ওই স্বীকৃতি জীবনের সেরা পুরস্কার।
আমার কাছে তিনি ছিলেন সন্ধ্যাদি। মায়ের মতো ভালবাসতেন। আমার যখন দু’-আড়াই বছর তখন মা মারা যান। তা জানতেন সন্ধ্যাদি। তাঁর স্বামী বিখ্যাত গীতিকার শ্যামল গুপ্তও ছোটবেলায় হারিয়েছেন মা-কে। কে জানে, তাই হয়তো দু’জনের কাছে এতটা স্নেহাস্পদ হয়ে উঠেছিলাম অচিরেই।
দেখতে দেখতে দু’বছর হয়ে গেল, সন্ধ্যাদি নেই। আজ সরস্বতী পুজো। কাল, সন্ধ্যাদির মৃত্যুবার্ষিকী। কী আশ্চর্য সমাপতন! এই যে আমরা বলি না, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সরস্বতীর বরপুত্রী, ঠিক একই কথা বলে থাকি লতা মঙ্গেশকরের ক্ষেত্রেও। তিনিও তো সরস্বতীর সাক্ষাৎ বরপুত্রী। লতা এবং সন্ধ্যা– ভারতীয় সংগীতের দুই নক্ষত্রের চিরবিদায়েও কতই না মিল! মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই কিংবদন্তির মহাপ্রস্থান। যেন এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে কাছে ডেকে নিলেন। আজ হয়তো সবার অলক্ষ্যে সংগীতের সাধনায় মেতে আছেন সরস্বতীর দুই শ্রেষ্ঠ সন্তান।
দু’জনের মধ্যে এত মিল অথচ যখন তাঁরা বেঁচে ছিলেন, তখন অনেকের মুখে শুনতাম– সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর লতা মঙ্গেশকরের মধ্যে নাকি আদায়-কাঁচকলার সম্পর্ক। লতা মঙ্গেশকরের জন্য নাকি সন্ধ্যা বোম্বেতে (মুম্বই) টিকতে পারলেন না! বাস্তব হল, দু’জনের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব ছিল। হিন্দি ছবিতে গান গাইতে শচীন দেব বর্মণের ডাকে ১৯৫০-এ বোম্বে গিয়েছিলেন সন্ধ্যাদি। উঠেছিলেন খারের এভারগ্রিন হোটেলে। সেখানেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম আলাপ লতা মঙ্গেশকরের। এসডি বর্মণের ডাকে বোম্বে গেলেও সন্ধ্যাদির প্রথম হিন্দি প্লেব্যাক কিন্তু অনিল বিশ্বাসের ‘তারানা’ ছবিতে। সেই ফিল্মেই লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে প্রথম ডুয়েট গাইলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গান ‘বোল পাপিহে বোল রে’। মধুবালার গলায় লতার গান, শ্যামার কণ্ঠে সন্ধ্যাদির। প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন লতা মঙ্গেশকর। দু’কামরার ভাড়া বাড়ি। সেখানে মা, ভাই-বোনদের নিয়ে তাঁর কষ্টের সংসার। সেই সংগ্রামের দিনে অবসরে সন্ধ্যাদির সঙ্গে আড্ডা দিতে প্রায়শই হোটেলে চলে আসতেন লতা মঙ্গেশকর। সন্ধ্যাদিও যেতেন। নিজের হাতে কফি বানিয়ে তাঁকে খাওয়াতেন লতা মঙ্গেশকর।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন সন্ধ্যাদির কাছে দাদার মতো। ‘সপ্তপদী’ সিনেমার সেই বিখ্যাত গান ‘এই পথ যদি শেষ না হয়’– আজও লোকের মুখেমুখে ঘোরে। সেই গানের রেকর্ড হয়েছিল কোনও রিহার্সল ছাড়াই। আসলে সুপ্রভা সরকার প্রথমে তা গাইলেও সেই গান হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পছন্দ হয়নি। নিজের গাড়ি পাঠিয়ে ঢাকুরিয়ার বাড়ি থেকে আচমকা সন্ধ্যাদিকে ডেকে পাঠান তিনি। বাকিটা ইতিহাস।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
বছর দুয়েকের মাথায় সন্ধ্যাদি কলকাতা চলে আসেন পাকাপাকিভাবে। অনেকে তখন রটিয়ে দিল, লতা মঙ্গেশকরের কারণেই নাকি তাঁকে ফিরে আসতে হল কলকাতায়। আসলে কলকাতায় তখন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অনেক অ্যাসাইনমেন্ট। বোম্বেতে পড়ে থাকলে সে-কাজগুলো হচ্ছিল না। বোম্বে-কলকাতা, এই দোলাচলতা নিতে পারছিলেন না সন্ধ্যাদি নিজেও। সেই অল্প সময়ে ১৭টি হিন্দি ছবিতে গান গেয়ে ফেলেছেন। গান গেয়েছেন মদনমোহন, শচীন দেববর্মনের হয়ে। সাফল্য অর্জন করেও কার্যত গোপনে বোম্বে ছেড়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। এমনকী যাঁর ডাকে গিয়েছিলেন, সেই এসডি দেববর্মনকেও কিছু জানাননি। যেকারণে সন্ধ্যাদির ওপর খুব অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন ‘শচীন কত্তা’।
তারপর লতা-সন্ধ্যার দীর্ঘসময় আর দেখা হয়নি। এমনকী লতা মঙ্গেশকর কলকাতায় এলেও না। সিনেমায় গান, রেকর্ডিং, জলসা, গীতিনাট্য, অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে তখন ব্যস্ত সন্ধ্যাদিও। ফোনে টুকটাক কথা হলেও তা নিয়মিত নয়। অনেকদিন পর, ২০১০-এ একদিন ফোন লতা মঙ্গেশকরের। নানা কথার ফাঁকেই লতা মঙ্গেশকরের কাছে আবদার করলেন সন্ধ্যাদি– ‘আকাশপ্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে’ গানটা একবার শোনাতে। রাজি সুরসম্রাজ্ঞী। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে সেই বিখ্যাত গান দু’কলি শোনালেন তিনি। এবার সন্ধ্যাদির পালা। লতা মঙ্গেশকরের জন্য সন্ধ্যাদি গাইলেন ভজন। সন্ধ্যাদির গলায় সেই ভজন শুনতে পছন্দ করতেন ইন্দরা গান্ধীও। আসলে মাটির মানুষ ছিলেন সন্ধ্যাদি। শুনলে আশ্চর্য লাগবে, সরস্বতীর দুই বরপুত্রী– লতা ও সন্ধ্যা, দু’জনে তাঁদের দু’কানে শুনতে পেতেন না ছোটবেলা থেকে। ছোটবেলায় মাম্পসের কারণে ডানকানে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। লতা মঙ্গেশকর আবার শুটিং-ফ্লোরে এক কো-অ্যাক্টরের ‘ভুলে’ হারিয়েছিলেন বাঁ-কানের শ্রবণশক্তি। গান তো শুধু গাওয়ার নয়, শোনারও। অথচ সেই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তাঁরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
কণ্ঠে যাঁর এত সুর, এত লাবণ্য, সেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের হয়তো গান গাওয়াই হত না! শৈশবে মেঝে থেকে কুড়িয়ে খেয়ে ফেলেছিলেন টিনের টুকরো! গলায় আটকে তা রক্তারক্তি ব্যাপার, হুলুস্থূল কাণ্ড। শেষমেশ এক পড়শি কাকিমা, গলায় হাত দিয়ে টিনের টুকরো বার করেন। সে যাত্রায় রক্ষা না পেলে ঐশ্বরিক কণ্ঠ শোনা থেকে বঞ্চিত হত বাংলা, তথা গোটা দেশ। একবার ছাদ থেকে মাথায় থান ইট পড়ে তাঁর প্রাণ সংশয় হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। তড়িঘড়ি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
সন্ধ্যাদির ডাকনাম ছিল দুলদুল। তাঁর ন-কাকার মেয়ে অপর্ণা, তিনি নাম দেন সন্ধ্যা। রেডিও-তে ‘গল্পদাদুর আসর’-এ প্রথম গান ১২ বছর বয়সে। গানটা ছিল, ‘যদি বা ফুরাল গান, ঝরিল দুয়ারে লতা, নয়নে আছে গো জল’। রেডিও-তে গান করে প্রথম পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন পাঁচ টাকা। ১৩ বছর বয়সে এইচএমভি থেকে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম রেকর্ড বের হল, ১৯৪৫-এর আগস্টে। ভাবা যায়! পরের বছর গীতশ্রী পরীক্ষায় প্রথম হলেন। তাঁর গায়িকা হয়ে ওঠার নেপথ্যে বিশাল অবদান দাদা রবিন মুখোপাধ্যায়েরও। শ্যামল গুপ্তের সঙ্গে বিয়ের পর লেক গার্ডেন্সে থাকতেন। বাড়িতে অতিথি আসলে কাজের লোকদের দিয়ে খাবার পরিবেশন নয়, নিজের হাতে তা বেড়ে দিতেন তিনি। এঁটো কাপডিশ নিজের হাতে তুলতেন। এতটাই সহজ সরল জীবনযাপন ছিল সন্ধ্যাদির।
বাদামভাজা আর গরম ছোলাভাজা খেতে খুব পছন্দ করতেন। দেখা করতে গেলে নিয়ে যেতাম। মজা করে বলতাম– ‘এই নিন দিদি, আপনার ট্যাক্স। নয়তো বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না কি-না।’ শুনে হাসতেন। সন্ধ্যাদিদের বাড়িতে সরস্বতী পুজো হত। উপোস করতেন। তবে ধুমধাম করে হত জন্মাষ্টমী। প্রচুর মানুষ আসতেন। কৃষ্ণভক্ত মানুষ ছিলেন। শ্বেতপাথরে বাঁধানো তাঁর ঠাকুরঘরে দেখেছি, একশো বছরের বেশি পুরনো কৃষ্ণের ছবি। সবুজের পূজারী ছিলেন। ছাদ-বাগান করেছিলেন, সেটাও দেখার মতো।
সিনেমায় যেমন উত্তম-সুচিত্রা, গানে তেমন হেমন্ত-সন্ধ্যা। সুচিত্রা সেনের লিপে সন্ধ্যাদির গান কালজয়ী। মহানায়িকা জানতেন, সন্ধ্যাদি মা সারদার ভক্ত। তিনিই প্রথম সন্ধ্যাদিকে বেলুড় মঠে নিয়ে যান। তাঁর সূত্রেই ভরত মহারাজের সঙ্গে সন্ধ্যাদির আলাপ। মহারাজকে একটা গ্রামোফোন উপহার দিয়েছিলেন তিনি। সুচিত্রা সেনের লিপে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম রবীন্দ্র সংগীত ‘ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে শুনি অতল জলের আহ্বান’। ১৯৬৮ সালে তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের লং-প্লেয়িং রেকর্ড ‘টুয়েলভ জেমস ফ্রম টেগোর’ প্রকাশিত হয়। শুনলে আশ্চর্য হতে হয়, সেই মানুষটাই জীবনে কখনও শান্তিনিকেতন যাননি। তা নিয়ে আফসোসও ছিল সন্ধ্যাদির। যেমন আক্ষেপ করতেন, ছোটবেলায় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসকে চোখের সামনে দেখার সুযোগ হাতছাড়া হওয়া নিয়ে।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
আরও পড়ুন: গানে রবীন্দ্রনাথের ঋণ, তাই সাহিত্যচর্চায় নিজস্ব পথ তৈরি করতে চেয়েছিলেন সুচিত্রা মিত্র
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছিলেন সন্ধ্যাদির কাছে দাদার মতো। ‘সপ্তপদী’ সিনেমার সেই বিখ্যাত গান ‘এই পথ যদি শেষ না হয়’– আজও লোকের মুখেমুখে ঘোরে। সেই গানের রেকর্ড হয়েছিল কোনও রিহার্সল ছাড়াই। আসলে সুপ্রভা সরকার প্রথমে তা গাইলেও সেই গান হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পছন্দ হয়নি। নিজের গাড়ি পাঠিয়ে ঢাকুরিয়ার বাড়ি থেকে আচমকা সন্ধ্যাদিকে ডেকে পাঠান তিনি। বাকিটা ইতিহাস। যেমন কালজয়ী তাঁর আরেক পছন্দের গান– ‘এ শুধু গানের দিন, এ লগনও গান শোনাবার’। জ্যোৎস্নারাতে দক্ষিণেশ্বরের নাটমন্দিরে বসে উদাত্তকণ্ঠে গানটা গেয়েছিলেন সন্ধ্যাদি। মুগ্ধশ্রোতা ছিলেন নচিকেতা ঘোষ, গৌরপ্রসন্ন মজুমদারের মতো সংগীতব্যক্তিত্ব, ছিলেন সন্ধ্যাদির দাদা রবিন মুখোপাধ্যায়ও। আরেক গুণী-শিল্পী মান্না দের সঙ্গে তাঁর প্রথম ডুয়েট ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ সিনেমায়। মান্না দে বয়সে বড় হওয়া সত্ত্বেও তঁকে ‘সন্ধ্যাদি’ বলে ডাকতেন।
এতকিছুর পরেও, ‘আমি এত গান গেয়েছি। তবু আমার এখনও অনেক শেখা বাকি।’– এই ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জীবনবোধ। সেই মানুষটাই জীবন সায়াহ্নে কেন্দ্র সরকারের পদ্মশ্রী দেওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। এখানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দারুণ মিল সন্ধ্যাদির। তিনিও পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সন্ধ্যাদিকেও যখন পদ্মশ্রী দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হল, আমি ফোন করেছিলাম। তখন উনি বেশ অসুস্থ। ক্লান্ত স্বরে বলেছিলেন, ‘আমি এই ধরনের পুরস্কারে বিশ্বাস করি না। জনসাধারণের ভালোবাসা আমার সবচেয়ে বড় পুরস্কার। সারাজীবন ধরে বহু গুণী ও ব্যতিক্রমী সুরকার ও গীতিকারের সান্নিধ্য পেয়েছি। উচ্চাঙ্গ সংগীত থেকে বিভিন্ন ধারার অজস্র গান গেয়েছি, শ্রোতারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছে। এজন্য সংগীতপ্রিয় অজস্র মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি এটাকেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলে মনে করি।’ বলছিলেন, একদিন এসো। অনেকদিন দেখা হয় না। সে-দেখা আর হয়নি। পরিশেষে এটাই বলার, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বাংলা তথা ভারতীয় গানের ইন্দ্রধনু। ভোরের মধুমালতি। বাংলা গানের ‘সোনাঝরা সন্ধ্যা’।