রবীন্দ্রনাথ এবং শঙ্খ ঘোষ– এই কম্বিনেশন মোটেই সহজ কথা নয়। এমনকী, যেসব তথ্য আগেই প্রকাশিত, দেখতাম তিনি অপার ধৈর্যে সেগুলিকেও যাচাই করছেন মাঝে মাঝে। তাঁর নিজস্ব একটি বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র-রচনাবলী ছিল, যার রচনাতথ্যে অজস্র দাগ এবং মন্তব্য ছিল। কবে থেকে তিনি এইসব সংশোধনী/প্রশ্ন/সংশয় তৈরি করছেন, সে বিষয়ে আমার প্রশ্ন করার সাহস হয়নি। কখনও-কখনও কাজ দেওয়ার সময় তিনি ওই খণ্ডগুলি বের করে নির্দেশ দিতেন। সেসময় তাঁর নিজস্ব ঘরের চেহারা ছিল হতভম্ব করে দেওয়ার মতো।
দ্বিতীয় পর্ব
কাজ শুরু করার পর ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম, যতটা শক্ত ভাবছিলাম, কাজ তার চেয়েও জটিল। শঙ্খবাবুর সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠক করে প্রতি সপ্তাহে কাজ বুঝে নিতে হত। কখনও উল্টোডাঙার ঈশ্বরচন্দ্র নিবাসে, কখনও উডবার্ন পার্কে নেতাজি ইনস্টিটিউটে এই মিটিং হত। ক্রমে একথাও বুঝতে পারছিলাম যে, শুধু ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগার’ই নয়, আমাকে যেতে হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার এবং চৈতন্য লাইব্রেরিতে। দু’বার যেতে হয়েছিল বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন। সেইসব দিনরাত্রি এবং নানা খুঁটিনাটি তথ্য লিপিবদ্ধ করার আনন্দ, উত্তেজনা, কখনও খুঁজে না পাওয়ার দীর্ঘশ্বাস– এখনও মনে পড়ে।
রবীন্দ্রনাথ এবং শঙ্খ ঘোষ– এই কম্বিনেশন মোটেই সহজ কথা নয়। এমনকী, যেসব তথ্য আগেই প্রকাশিত, দেখতাম তিনি অপার ধৈর্যে সেগুলিকেও যাচাই করছেন মাঝে মাঝে। তাঁর নিজস্ব একটি বিশ্বভারতী-র রবীন্দ্র-রচনাবলি ছিল, যার রচনাতথ্যে অজস্র দাগ এবং মন্তব্য ছিল। কবে থেকে তিনি এইসব সংশোধনী/প্রশ্ন/সংশয় তৈরি করছেন, সে বিষয়ে আমার প্রশ্ন করার সাহস হয়নি। কখনও-কখনও কাজ দেওয়ার সময় তিনি ওই খণ্ডগুলি বের করে নির্দেশ দিতেন। সেসময় তাঁর নিজস্ব ঘরের চেহারা ছিল হতভম্ব করে দেওয়ার মতো! সে যুগে এত মোবাইলের চল ছিল না, ক্যামেরা সহজলভ্য নয়, ফলে কোনও ছবি তুলে রাখিনি। এখন আফসোস হয়। লক্ষ করতাম, নানা সংস্করণের রবীন্দ্রনাথের বই, পুলিনবিহারী সেনের ‘রবীন্দ্র গ্রন্থপঞ্জী’, আরও নানা পুরনো-নতুন আকরগ্রন্থ, রচনাবলির বিভিন্ন সংস্করণ, রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্রের বেশ কয়েকটি খণ্ড, পান্ডুলিপির ফোটোকপি, পুরনো বহু চিঠিপত্র, নিজের ডায়েরি, হলদেটে কাগজওলা খাতাপত্র, আতশকাচ, প্রুফ– সে এক বিচিত্র মহোৎসব, যার কেন্দ্রে আছেন রবীন্দ্রনাথ। আরও লক্ষ করতাম, এই তথ্যমূলক তথাকথিত নীরস কাজে তাঁর ফুর্তির অন্ত নেই। প্রতিটি মুহূর্ত তিনি উপভোগ করতেন। আমি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নানা বোকা প্রশ্ন করতাম। তিনি সেগুলি যত্ন করে বুঝিয়ে দিতেন। এমনকী, আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন বলে এঘর-ওঘর ওপরের তাক-নিচের তাক বিভিন্ন আকরগ্রন্থ নিয়ে এসে প্রাসঙ্গিক পৃষ্ঠা খুলে ভ্রম বা প্রশ্নের নিরসন করতেন। কোনও আলস্য অথবা গা-ছাড়া উত্তর দিতে কদাপি দেখিনি। নানা গল্প-গুজব হত। একদিন বলেছিলেন তাঁর মাস্টারমশাই প্রমথনাথ বিশী-র মন্তব্য। অধ্যাপক বিশী তাঁর ছাত্রকে বলেছিলেন ‘তথ্যের দাস না হয়ে তথ্যকে দাস বানাও।’
২.
আগেই বলেছি, ষোড়শ খণ্ড ‘গ্রন্থ পরিচয়’-এর শেষাংশে আছে একটি দীর্ঘ তালিকা। এগুলি হল সহায়ক এবং অনুষঙ্গ সমন্বিত ব্যবহৃত বইয়ের তালিকা। একদিকে লেখক নাম আর অন্যদিকে প্রকাশক এবং প্রথম সংস্করণের বছর। সেখানে দেশি-বিলিতি বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় দেড়শো বইয়ের তালিকা। ষোড়শ খণ্ড বিষয়ে এত বিশদ অনুপুঙ্খ কথা বলছি, তার কারণ বইটি এখন ‘দুষ্প্রাপ্য’ বললে কম বলা হয়। পাওয়াই যায় না! এই বইটির বিতরণও হয়েছিল খুব সীমিত পরিসরে। এই বিপুল কর্মযজ্ঞ নিয়ে স্বীকৃতি-আলোচনাও খুব চোখে পড়েনি। অবিশ্বাস্য কম দামে কিছু ছেঁড়া-ফাটা কপি বছর দশেক আগেও পাওয়া যেত।
এই গ্রন্থপরিচয় খণ্ডে মূলত পত্রিকা প্রকাশের তথ্যগুলি তন্নতন্ন করে মূল মুদ্রণ থেকে মিলিয়ে দেখতে হত। অন্যদিকে, সেই বিশেষ গ্রন্থ কেন্দ্র করে সে সময়ে কোনও বিতর্ক বা উল্লেখযোগ্য সমালোচনা প্রকাশিত হলে পত্রিকা থেকে টুকে আনতে হত। কখনও কখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কালিদাস নাগ, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখের পত্রিকায় প্রকাশিত কোনও রচনা, ‘পরিচয়’, ‘সবুজপত্র’ বা ‘প্রবাসী’-র পদটীকা সমস্তই পুঙ্খানুপুঙ্খ মিলিয়ে লিখে আনতে হত। আর একটি গ্রন্থাগারের কথা বলতেই হবে। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-র নিজস্ব লাইব্রেরি। সেখানে পরিচয় হয় দক্ষ গ্রন্থাগারিক শক্তিদাস রায়ের সঙ্গে।
অন্যদিকে, রবীন্দ্ররচনার সংস্করণভেদ, পত্রিকাপাঠে পরিবর্তন তো বটেই, বিভিন্ন রচনার পারস্পরিক সম্পর্কচিহ্নগুলি মিলিয়ে দেখে কপি করতে হত। ধরা যাক, ‘প্রজাপতির নির্বন্ধ’ এবং ‘চিরকুমার সভা’ কিংবা ‘চণ্ডালিকা’ এবং ‘নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা’।
৩.
এতক্ষণ একধরনের বাইরের বিশ্লেষণ করছিলাম। এবার আসা যাক কয়েকটি নির্দিষ্ট দৃষ্টান্তে। প্রায় দু’-আড়াই বছর এবং পরে এরই সংশ্লিষ্ট কাজে। পঞ্চদশ ‘ক’ এবং ‘খ’ খণ্ড। সেকথায় পরে আসব। ষোড়শ খণ্ডের কাজের বিচিত্র অভিজ্ঞতার দু’টি-একটি জানাই।
(ক) স্পষ্ট মনে আছে, ‘গোরা’ উপন্যাসের সূত্রে পত্রিকাপাঠের খুঁটিনাটি মেলানোর কথা। একটা আশ্চর্য কথা দেখে খুব উত্তেজিত হয়েছিলাম। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ‘গোরা’ উপন্যাসটি ছাপা হয়েছিল, এ-কথা সকলেই জানেন। মজার কথা হল, ৩১ সংখ্যাটি এবং ৪৭ সংখ্যাটি শিরোনামে দু’বার ব্যবহৃত হয়েছিল! ৩১ মুদ্রিত হয়েছিল পরপর দু’-মাসে। ১৩১৫ ভাদ্র এবং ১৩১৫ আশ্বিনে। অন্যদিকে, ৪৭ সংখ্যাটিও পরপর দু’-মাসে ১৩১৬ বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ কিস্তিতে। অন্যদিকে ৬৩ সংখ্যাটি কোথাও উপন্যাসের কিস্তি হিসেবে ব্যবহৃতই হয়নি।
এ নিয়ে স্যরের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছিল অনেকক্ষণ। মুচকি হেসে বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ, রামানন্দ নজর করলেন না, আবার কোনও পাঠকের চোখেও পড়ল না, এটা আশ্চর্য!
‘গোরা’ উপন্যাসের পত্রিকাপাঠ আর গ্রন্থপাঠে ছিল বিস্তর ফারাক। সেসব সারণী আকারে সাজাতে এবং ছোট-ছোট নানা পরিবর্তন নথিবদ্ধ করতে হিমশিম খেয়েছিলাম। স্যরের কাছে ‘গোরা’ বিষয়ে সজনীকান্ত দাসের চিঠি এবং রবীন্দ্রনাথের ‘ভুল’ সংশোধনের কাহিনি তথ্য-সহ শুনেছিলাম। সজনীকান্ত স্কুলের ছাত্র তখন। ‘গোরা’ উপন্যাসের একটি পঙক্তি বিষয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখে জানান যে, রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ ভুল একটি কথা লিখেছেন। ‘গোরা’ উপন্যাসের সেই পঙক্তিটি উদ্ধৃত করেন বালক সজনীকান্ত– ‘ক্ষণকালের জন্য রমাপতি চাহিয়া দেখিল, গোরার সুদীর্ঘ দেহ একটি দীর্ঘতর ছায়া ফেলিয়া মধ্যাহ্নের খর রৌদ্রে জনশূন্য তপ্ত বালুকার মধ্য দিয়া একাকী ফিরিয়া চলিয়াছে।’ সংগতভাবেই প্রশ্ন তোলেন স্কুল পড়ুয়া সজনীকান্ত দাস– ‘‘মধ্যাহ্নের খররোদ্রে’ ছায়া ‘দীর্ঘতর’ হইতে পারে না…।’’ ২৬ সংখ্যক অধ্যায়ের এই বাক্যটি পরবর্তী সংস্করণে পরিবর্তন করেন রবীন্দ্রনাথ। ‘দীর্ঘতর’ লুপ্ত হয়ে ‘খর্ব’ হয়ে যায়। ষোড়শ খণ্ডের সম্পাদক গ্রন্থে এই চিঠিপত্র নথি সমেত তথ্য সমেত পুরোটিই প্রকাশ করেছেন।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
একথাও মনে রাখতে হবে, ‘গোরা’ একটি তত্ত্বমূলক, ভারতবর্ষের স্বরূপসন্ধানী মহা-উপন্যাস। আজকের বদ্ধদৃষ্টি সংকীর্ণমনা ধর্মান্ধ কেন্দ্রীয় শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গোরা’ উপন্যাসের প্রাসঙ্গিকতা দিন-দিন বেড়েই চলেছে। সেই উপন্যাসের অর্ন্তবস্তুতে এমন আপাততুচ্ছ ভ্রমটি এবং পরিবর্তনটিও প্রাণিধানযোগ্য। সম্পাদনার পরিসরে প্রসঙ্গটি স্মরণযোগ্য।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
(খ) গ্রন্থপরিচয়ের এই খণ্ডে মূল গ্রন্থের পরিপূরক বহু তথ্য সংযোজন করা হয়েছিল। যেমন ধরা যাক, ‘বনবাণী’ কাব্যগ্রন্থ প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল আরও নানা বিস্তৃত আলোচনার সমান্তরালে– ‘বৃক্ষরোপণ অংশের কবিতা বা গানগুলির রচনাকাল গ্রন্থ মধ্যে দেওয়া নেই বলে উল্লেখ করা হল…’ ইত্যাদি। সেখানে ৮টি গানের রচনা সময় উল্লেখ করা আছে।
(ক) এবং (খ) অংশ নমুনামাত্র। এই দুই দৃষ্টান্ত আসলে এক ধরনের সম্পাদনা কর্মের সারস্বতসূচক। সম্পাদনা কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের অথবা তরুণ সম্পাদকদের কাছে অঙ্গুলিনির্দেশক যেন। এই পঙক্তিটি রবীন্দ্রনাথ পরিবর্তন করেন সজনীকান্তের পত্রাঘাতের পর। যদি কোনও পাঠক দৈবাৎ পুরনো সংস্করণটি পড়তে গিয়ে থমকে যান, এবং ভাবেন কেন এই পরিবর্তন– সেক্ষেত্রে গ্রন্থপরিচয়খণ্ড থেকে সম্পূর্ণ তথ্য এবং ইতিহাসটি তিনি জানতে পারবেন। ‘গোরা’ উপন্যাসের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনটি বেশ চাঞ্চল্যকর। বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর তীক্ষ্ণ চোখে প্রকৃতির বিশেষ ছায়াবিজ্ঞান ধরা পড়েছে, অন্যান্য বয়স্ক তথা বিদগ্ধ পাঠক সেই ভ্রম লক্ষ করেননি। একথাও মনে রাখতে হবে, ‘গোরা’ একটি তত্ত্বমূলক, ভারতবর্ষের স্বরূপসন্ধানী মহা-উপন্যাস। আজকের বদ্ধদৃষ্টি সংকীর্ণমনা ধর্মান্ধ কেন্দ্রীয় শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গোরা’ উপন্যাসের প্রাসঙ্গিকতা দিন-দিন বেড়েই চলেছে। সেই উপন্যাসের অর্ন্তবস্তুতে এমন আপাততুচ্ছ ভ্রমটি এবং পরিবর্তনটিও প্রাণিধানযোগ্য। সম্পাদনার পরিসরে প্রসঙ্গটি স্মরণযোগ্য।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রেও, প্রধান বিষয় হল পর্যবেক্ষণ। সম্পাদককে সর্বদা চেষ্টা করতে হয়, মূল গ্রন্থের সঙ্গে পাঠকের একধরনের সামগ্রিক পরিচয় ঘটানোর। ফলে মূল গ্রন্থ, তার তথ্যাদি, পাদটীকা বা পরিশিষ্ট এবং যদি কোনও গ্রন্থপ্রসঙ্গ থাকে, তাকে বারবার বিচার-বিশ্লেষণ করতে হয়। কোনও কোনও অংশে সেখানে তথ্য সংযোজন প্রয়োজন তার সমীক্ষা সম্পাদককেই করতে হয়। দ্বিতীয় স্তরে, সেই অপূর্ণ অংশ কীভাবে সম্পূর্ণ করা যাবে, তার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এই দৃষ্টান্তে যেমন ৮টি গানের রচনাকাল সংযোজন করা হয়েছে। পাঠককেও তথ্যসংযোজনার এই নকশাকে বুঝতে হবে সম্পাদনার প্রেক্ষিতে।
৪.
এতক্ষণ সম্পাদনার যে সমস্যা এবং কর্মপদ্ধতির কথা বললাম, তাকে মোটামুটিভাবে বলা চলে তথ্য সংক্রান্ত সম্পাদনার রূপরেখা। পুরো রূপরেখা নয়, রূপরেখার সামান্য একটা নমুনা বা আন্দাজ। কিন্তু শঙ্খ ঘোষ আরও বেশ কিছু সম্পাদনা কর্মে ব্যাপৃত ছিলেন, যেখানে শুধু তথ্য নিয়েই সম্পাদনা সম্পূর্ণ হয় না, যেখানে সাহিত্যরুচি এবং সাহিত্যবোধের প্রসঙ্গও জড়িত। এ নিয়ে অনেক কথাই বলা যেতে পারে। আপাতত, আমি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখব শঙ্খ ঘোষ সম্পাদিত গ্রন্থ ‘সূর্যাবর্ত’-এর দিকে। লেখা বাহুল্য, এটি রবীন্দ্র কবিতার একটি সংকলন। বিশ্বভারতী গ্রন্থ বিভাগ থেকে এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। বইটির সংকলক এবং সম্পাদক ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। এই কাজের সমস্যা অনেক। প্রায় এক অনতিক্রম্য বাধা খাড়া হয়ে আছে সামনে। সেই বাধার নাম ‘সঞ্চয়িতা’ (১৩৩৮) যে সংকলন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের হাতে তৈরি। ফলে, প্রতি মুহূর্তে একধরনের তুলনা এবং কবিতার বিকল্প বাছাই বা উপস্থিতি অনুপস্থিতি থেকে তৈরি হয় বিরূপ সমালোচনা। মনে রাখতে হবে, সম্পাদক শঙ্খ ঘোষ, কবি শঙ্খ ঘোষ এবং কাব্যবিচারে নির্ভরযোগ্য শঙ্খ ঘোষ– এই তিন চরিত্রের মিলন ঘটেছে এ বই নির্মাণে।
৫. ‘সূর্যাবর্ত’ বইটির বেশ কয়েক বছর পর শঙ্খ ঘোষ একক হাতে সম্পাদনা করেছিলেন, আগেই বলেছি, পঞ্চদশ ‘ক’ এবং পঞ্চদশ ‘খ’ খণ্ড। সেখানেও ছিল রবীন্দ্ররচনার সংকলন এবং সম্পাদনার অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তবে, সেগুলি রবীন্দ্রনাথের অগ্রন্থিত এবং অসংকলিত রচনার সঞ্চয়ন। সেখানে রবীন্দ্রনাথেরই হাতে তৈরি কোনও ‘সঞ্চয়িতা’-র পূর্ব অস্তিত্ব তথা বাধা ছিল না। সেই কাজের অভিজ্ঞতাও ছিল অনন্য। তার আগে ফিরে যাই ‘সূর্যাবর্ত’ গ্রন্থটির কাছে।
(চলবে)
ভাষ্য শব্দের তর্জনী-র প্রথম পর্ব। কত কম বলতে হবে, মুখের কথায়, সভায়, কবিতায় কিংবা ক্রোধে– সে এক সম্পাদনারই ভাষ্য