খেতে খেতে কথা বলতে নেই। একথা স্মরণীয়, তবে তেমন বরণীয় নয়। আমআদমি খেতে খেতে কথা বলে। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়। পাইস হোটেল এমন এক স্থান, যেখানে আমআদমিই যায়। খিদের মুখ নিয়ে, খুশি হয়ে ফিরে আসে। রোববার.ইন-এর ‘পাতপেড়ে’র প্রথম পর্বে রইল চিত্রশিল্পী, অনুবাদক শুভেন্দু সরকার-এর সঙ্গে খাবার টেবিলের আড্ডা। এক পাইস হোটেলেই। কলেজ স্ট্রিট পাড়ার ‘মহল’-এ। ট্যাঁকে খরচ হল ৫০০। কথার দাম উঠল হয়তো তার চেয়েও বেশি, এখনও যা চোকাতে হয়নি। শুভেন্দু সরকার এঁকে দিলেন পাইস হোটেলের ছবি, মহলের টেবিলে বসেই, তা রইল আপনাদের জন্যও।
মহলের ছবি: সায়ন্তন ঘোষ
‘‘তাহলে ঠিক ১২টা, দেখা হচ্ছে ‘মহল’-এ’’– এই ছিল আমাদের ফোন রেখে দেওয়ার আগের কথোপকথন। পৌনে বারোটায় পৌঁছে গিয়েছে সায়ন্তন, আমার সহকর্মী, ফোটোগ্রাফার। তার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা ছিল কফি হাউসেই। কিন্তু সে খানিক আগে সেই মহল-এ পৌঁছে গিয়েছে। ফোন করলাম শুভেন্দুদাকে। কে শুভেন্দুদা? শুভেন্দু সরকার, দুরন্ত শিল্পী, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প-অধ্যাপক, অনুবাদক, খাদ্যরসিকও বটে! কফিহাউসের সামনে দেখা হল তার সঙ্গে। হাঁটা লাগালাম মহলের দিকে। সকাল থেকে রোদটা চেনা চেনা লাগছিল, ঘামও হচ্ছিল। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতেই শুভেন্দুদা এই রোদের যে বিশেষণ দিল, তা একেবারে চিরপুরনো ও চিরনতুন: ‘ঠাকুর-শুকোনো রোদ’। একবার বললেই মনে পড়ে যায়, সার সার প্রতিমা। শুধু কুমোরটুলি না, এপাড়া-বেপাড়ার নানা ঠাকুর তৈরির দৃশ্যই। সেই ঠাকুর শুকোনো রোদের ভেতরই শুরু হল আমাদের কথা। ‘মহল’-এর টেবিলে এসে বসি চলুন। টেবিলে ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে ভাত-মসুর ডাল-পোস্ত বড়া (একপ্লেটে তিনটে) কাতলা কোর্মা এবং শুক্তো। সঙ্গে লেবু-পিঁয়াজ-নুন-লঙ্কা তো রয়েছেই।
শুভেন্দুদা, তুমি শুরুতেই, দেখা হতেই বললে এবং চমৎকার সেই শব্দবন্ধ ‘ঠাকুর শুকোনো রোদ’। তুমি তো শিল্পী, তুমি কখনও ঠাকুর গড়েছ?
আমি আমার মায়ের কাছে শুনেছি, যে আমি অ-আ-ক-খ শেখার আগে থেকেই ছবি আঁকছি। বাচ্চারা তেমন তো আঁকেই, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু আমি আঁকতাম দুর্গাঠাকুর আর কালীঠাকুর। এটা খুব ছোটবেলাকার স্মৃতি। পরবর্তীকালে ঠাকুর তৈরি করতাম, যেহেতু বাড়ির কাছেই কুমোরটুলি।
তোমার বাড়ি এগজ্যাক্টলি কোথায়?
কাশীপুর উদ্যানবাটির ঠিক পাশেই। আমি কুমোরটুলি আসতে খুব ভালোবাসতাম। মা কুমোরটুলি নিয়ে যেতেন। ওই পাঁচ-সাত বছর থেকেই ঘুরে বেড়াই সেখানে। আমার দেশের বাড়ি তমলুকের রাধামণি গ্রামে। সেখানে পারিবারিকভাবেই দুর্গাপুজো হয়। এখনও প্রতি বছর যাই। গরমের ছুটিতে দেখেছি, কাঠামো পড়ে রয়েছে দুর্গাদালানে। পরবর্তীকালে ঠাকুর বানাই। ক্লাস টেন অবধি বানিয়েছি।
পুজোর প্রসাদ খেতে ভালো লাগে?
ওরেব্বাপরে! দারুণ। এক এক দিন, এক এক রকম প্রসাদ। পুজো আর পেটপুজো দুটোই আমার চলে।
তোমার ঠাকুর তৈরির গুরু কে?
গুরু? গুরু কেউ না। আমার দেখাই আমার গুরু। কুমোরটুলির, পারিবারিক ঠাকুর দেখা। পরবর্তীকালে আর্ট কলেজের সিনিয়রদের সঙ্গে গিয়ে শিখেছি।
তুমি তো এতোলবেতোল চড়ে বেড়াও নানা জায়গায়।
একবার আমি আমার সিনিয়র বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিলে শিকারপরবে যাই। বুদ্ধপূর্ণিমার দিন। রাতে চক্রধরপুর ধরে গিয়েছি। নেমেছি ভোরবেলা। বাসে করে তারপর অযোধ্যা। অযোধ্যা পাহাড় এখনকার মতো হোটেলে ভরা ছিল না। ফাঁকা জঙ্গল-টঙ্গল ছিল। একটাই খাবার হোটেল, দরমা দেওয়া। সেখানে দুপুরবেলা খেলাম– ট্যালট্যালে পোস্ত-ডাল-ছ্যাচড়া এবং একটা ছোট্ট ডিম।
ছোট্ট ডিম?
মানে সাইজে খুবই ছোট। এত্তটুকু। তো দুপুরবেলা আমগাছের ছায়ায় শুয়ে আছি আমরা, জলতেষ্টা পেয়েছে। জল তখন আজকের মতো কিনতে পাওয়া যেত না পুরুলিয়াতে। স্থানীয় এক লোককে জিজ্ঞেস করলাম, কুয়ো দেখিয়ে দিল। সেই কুয়োতে উঁকি মেরে দেখি, ব্যাঙেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে! কিন্তু কীই বা করব! জল তুলে গামছায় ছেঁকে খেতে হল। এই নানারকম উপদ্রব করেছি।
খাওয়া নিয়ে তোমার তবে কোনও চাপ নেই?
হ্যাঁ, বিরাট কিছু করতে হবে, তা না। কিন্তু আমি খাদ্যরসিক। পারিবারিকভাবে আমার মায়ের দিকে যারা– বেনেরা– তারাই বন কেটে বসত তৈরি করেছিল কলকাতায়। স্বর্ণবেনে। আদিবাড়ি ছিল হাটগোবিন্দপুর। কলকাতাতে এদের প্রথম বসতি। খাওয়ার ব্যাপারে জাঁক ছিল এদের। ফলে খাওয়ার একটা ঐতিহ্য তো রয়েইছে। আমার বাড়িতে কত রকমের যে মোচার ঘণ্ট তৈরি হয়েছে! আমি খাই অল্প, কিন্তু তরিবত অনেক। আবার বাবার দিকের পূর্বপুরুষরা ছিল খাজাঞ্চি। আমাদের দেশের বাড়ির গেটে লেখা আছে ‘কারকুন’। ফারসি শব্দ, যার মানে ‘খাজাঞ্চি’। ওরা ছিল সিরাজদৌল্লার খাজাঞ্চি। সিরাজদৌল্লার পতনের পর মাইগ্রেট করে ওরা। মহিষাদল রাজারা এদের টেক-ওভার করে।
এ তো দুরন্ত ইতিহাস! তোমার ছোটবেলায় কোন খাবার পছন্দ ছিল?
ছোটবেলায় আমি নিরামিষ খেতে খুব ভালোবাসতাম। মাছ খেতাম। কিন্তু মাংস খেতাম না।
এটা কোন বয়সের কথা বলছ?
সিক্স-সেভেন নাগাদ।
তাহলে একটা গল্প বলি তোমাকে। আমাদের রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে একটি ছেলে ছিল। ঘটি করে জল খেত। একেবারে নিরামিষ, মাছ-মাংস কোনও দিন ছুঁয়ে দেখত না। হোস্টেলের খাবার তেমন স্বাদু ছিল না, ফলে সে খানিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিতই ছিল। একদিন মহারাজের সঙ্গে কথা বলে আমিষে নাম লেখায়। আমরা, যারা আগে থেকেই মাছ-মাংস খেতাম, তাদের পাতের শেষে খানিক হলেও মাংসের হাড়, কিংবা মাছের ছাল পড়ে থাকতে দেখতাম। কিন্তু ওই আমিষে সদ্য দীক্ষাপ্রাপ্ত ছেলেটির পাতে হাড়ের গুঁড়ো এবং ঝকঝকে মাছের কাঁটা দেখতে পেতাম।
ওরেব্বাপ! এত পরিবর্তন! আমি এখন চিকেন ভালোবাসি না। যদি আনা হয়, তবে লেগপিসটুকু আর কচকচি বড়জোর। এইটুকুই খাই। কালিয়া বা ঝোল, যাই হোক না কেন। তবে এখনও আমি মাছের পোকা। যে কোনও রকমের মাছ।
কী কী মাছ? আমোদি খাও?
হ্যাঁ! আমোদি খাব না! আমোদি-পুঁটি-মৌরলা-পাবদা-গুলে-কাঁচকি-পমফ্রেট– সবই। লইট্যা মাছ হলে তো কথাই নেই। মসুরির ডাল দিয়ে দেশি মৌরলা মাছ ভাজা! আহা!
তুমি নিজে বাজার করো?
বাজার করে আমার মা। মা ভয়ংকর বাজার করতে ভালোবাসে। বরানগর বাজারে সমস্ত দোকানদার আমার মাকে চেনে। ছোটবেলা থেকে বাজার করে। মা দারুণ রাঁধেনও।
আচ্ছা, তোমরা কি বরানগরের কোনও পুরনো বাড়িতে থাকো?
পুরনো মানে, আমি থাকি হাউজিংয়ে। যেখানে থাকতেন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। মজার ব্যাপার হল, আমার সমসাময়িক শিল্পীরা, আমার মতো এত সাহিত্যিকদের সঙ্গ করেননি– সে কবি-নাটক-গল্পলেখক– যাই হোক না কেন! আমি ছেলেবেলায়, যখন আর্ট কলেজের থার্ড ইয়ার তখন পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গ করেছি। আমার জীবনের প্রথম চাকরি দিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ‘উৎসব’ পত্রিকাতে আমি কাজ করতাম। সুনীলদা বললেন, ‘আরে, হাতখরচ তো দরকার!’ এছাড়াও, অমিতাভ দাশগুপ্ত। আমার ন্যাশনাল স্কলারশিপের গুরু ছিলেন বিজন চৌধুরী, প্রকাশ কর্মকার। আবার হাওড়ায় অনিতা রায়চৌধুরীও আমাকে ব্যাপক ভালোবাসতেন!
বলো কী! অনিতাদি তো আমাদের পাড়ার লোক!
আমি ওঁর ব্লু-আইড বয় ছিলাম। অনিতাদি আর আমি একসঙ্গে ছবির শো-ও করেছি। প্রচণ্ড খাওয়াতে ভালোবাসতেন। আমি বহু দুপুরে অনিতাদির বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করেছি। আড্ডা মেরেছি।
কী খাওয়াতেন অনিতাদি?
সে একটা পর্ব! বড় মাছের পিস। ভাত-শুক্তো-ডাল-ভাজা-আলুপোস্ত, কোনও কোনও দিন কাচকি মাছের বড়া। শেষে দই– টক দই অবশ্যই থাকত। লুচি যেদিন খাওয়াতেন, সেদিন মিষ্টি দই। আমাকে অনেক দিনই জিজ্ঞেস করতেন, ভাত খাবি না লুচি খাবি?
আর আড্ডা মারতেন কীরকম?
অনিতা রায়চৌধুরী, সুনীল দাস এবং যোগেন চৌধুরী– এঁরা এক ব্যাচমেট। ছাত্র ছিলেন সত্যেন ঘোষাল-গোপাল ঘোষদের। ফলে গল্পের কোনও অভাব হত না। তুষার রায়, আমাদের বরানগরেরই, কবিতা লিখেছিলেন অনিতাদিকে নিয়ে। প্রায়শই সকালবেলা তুষার রায় রতনবাবু রোড থেকে শিবপুর মন্দিরতলায় অনিতাদির সঙ্গে চা খেতে চলে আসতেন। তাছাড়া, গান গাইতেন দারুণ। প্রসাদ সেনের ছাত্র। আর প্রচুর ছবি আঁকতেন। দেখাতেন।
তুষার রায়ের লাইনটা মনে আছে?
আছে। অনিতাদিই দেখিয়েছিলেন লেখাটা: ‘তুমি মানে ফুলের ভেতর জমে ওঠা গাঢ় মধু’।
তুমি মহল-এ আগে খেয়েছ?
না খাইনি। আমি যেখানে খেতে ভালোবাসি, তা হল ‘স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল’। খুব ভালো খাওয়া। মহল তো চোখের সামনে তৈরি হতে দেখলাম। আমি আড্ডা মারতাম সামনে চায়ের দোকানে।
রান্না করতে পারো?
হ্যাঁ, পারি। ডাল-ভাত-চিকেন। নানারকম সবজি ভাজা। মানে একা থাকলে চালিয়ে নিতে পারব। এবং খুব খারাপ খেতে লাগবে না।
ধরো, খুব তাড়াহুড়োয় বেরচ্ছ। রোজের বেরনো। কী খেয়ে বেরও তখন?
ভাত। গরম ভাত। একটু ভালো ঘি। ঘি আমাদের বাড়িতে একজন নিয়ে আসে। আলুভাতে। একটু মসুর ডাল। কোনও কোনও দিন কাঁচা পোস্ত বেটে দিল। সরষের তেল, লঙ্কা আর পিঁয়াজ তো বটেই। পিঁয়াজ ছাড়া কাঁচা পোস্তটা একেবারেই জমে না। পোস্তবড়া এমন একটা আইটেম, আমি একেবারেই লোভ সামলাতে পারি না। বাইরে কাজে গেলে, বিশেষ করে উত্তর ভারতে, বাড়িতে বলা থাকে, বিউলির ডাল, পোস্তর বড়া মাস্ট! বিউলির বদলে অড়হড় ডালও হতে পারে। আমার মাছ-মাংসর দরকার নেই।
যা বুঝলাম, পোস্ত আর তোমার খুবই গভীর প্রেম।
হ্যাঁ! প্রিয়তম জিনিস! আর একটা ব্যাপার হল জল। বিভিন্ন জায়গার জলের ওপর কিন্তু রান্নাটা নির্ভর করে। বর্ধমানের মোটামুটি ভালো হোটেলে যদি বিউলির ডাল আর আলুপোস্ত কেউ খায়, মুখে লেগে থাকবে! ওটা জলের গুণ। বাঁকুড়া তো পোস্তভক্ত। কিন্তু ওদের পোস্তটা একটু জলজলে। বর্ধমানের পোস্তটা শুকনো। অনেকটা নেড়ে রান্না করা। পোস্তটা হবে এমনভাবেই যে, আলুর গায়ে লেগে থাকবে।
তুমি কোনটা ভালোবাসো? এই কাদা-কাদা পোস্ত, না শুকনো?
আমার পোস্ত দেওয়া যে কোনও আইটেম!
এই যে আজ পোস্তর বড়া খাচ্ছ মহলে, কেমন এটা?
হয়নি, একেবারেই হয়নি! রাস্তাঘাটে খাচ্ছি ঠিক আছে। কিন্তু পোস্তবড়াতে পিঁয়াজ না পড়লে কীসের পোস্তবড়া! আর মিহি করা লঙ্কাটা থাকবে। একটু ঝাল ঝাল লাগবে, সেই ঝালের মুখে পিঁয়াজটা গিয়ে কচকচ করে মুখে জিরোবে– তবে তো জমবে খাওয়াটা!
আচ্ছা, তুমি তখন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা বলছিলে, প্রথম দেখাটা মনে আছে?
আমি তো বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়তাম। ইশকুলের কাছে একটা মুদির দোকান ছিল, নিতাইবাবুর। আমি ওঁকে প্রথম দেখেছিলাম ওই নিতাইবাবুর দোকানে বসে, সিল্কের পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি পরে। স্থানীয় রিকশাওয়ালা ও নানা লোকের সঙ্গে বসে, গুছিয়ে আড্ডা মারছেন। খৈনি খাচ্ছেন। আমি জানতাম না উনিই শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। বাবা চিনিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের ওই অঞ্চলে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় বহু লোককে চাকরি-বাকরি দিয়েছেন। লোককে বিরাট ভালোবাসতেন, মানুষজনও শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়কে একইরকম ভালোবাসত!
তোমার পেটপুজো চলতে থাকুক। পোস্তপ্রেম বজায় থাক। কিন্তু বলো, মহলকে কত দেবে?
ওই ৬ মতো দেব। মানে ফার্স্ট ডিভিশন। মুগের ডালটা ভালো হয়েছিল। শুক্তোটা চলেবল। মাছটাও ভালো। পোস্তটা কুৎসিত– হয়নি।
তাহলে দুটো জিনিস ঠিক করতে হবে? তাই তো? একটা পোস্তর বড়া, আরেকটা ভুল বানান?
হা হা! একেবারেই। বানান ভুলটা কিন্তু ডেঞ্জারাস!