সদ্য স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে এসেছি আমরা। অর্থাৎ দেশভাগেরও বারো আনা শতক পার। কিন্তু এখনও শুকোয়নি সেই ক্ষত। দেশভাগ নিয়ে বাংলা ভাষায় নন ফিকশনের পাশাপাশি লেখা হয়েছে বহু গল্প-উপন্যাস। তানিয়ার উপন্যাস সেই তালিকার নবতম সংযোজন।
‘দেশ’ মানে আসলে কী?
তা কি কেবলই সীমানায় ঘেরা এক ভূখণ্ড মাত্র! না কি ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে হৃদয়ের ছোঁয়ায় আদিগন্ত রঙিন এক আপনভূমি? রাজনীতির ডামাডোলে সেই দেশ যদি হারিয়ে যায়, মানুষ কি মেনে নিতে পারে? না কি আজীবন মনে মনে ফেলে আসা দেশ, হারিয়ে যাওয়া বাড়ি তার মনের ভিতরে জেগে থাকে ভোরের শুকতারার মতো উজ্জ্বল? কলকাতা বইমেলায় হাতে এল এক উপন্যাস ‘ভিটা মাটির উঠান’। লেখিকা তানিয়া। সদ্য-প্রকাশিত এই আখ্যান দেশহারানো মানুষের চিরবিষণ্ণতার কথাই বলে। তুলে আনে সেইসব প্রশ্ন, যা লেখার শুরুতেই উচ্চারিত হল।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
গল্পের মাধ্যমে ধরা দেয় এক ইতিহাস। কেবল রাজনৈতিক ইতিহাস নয়, এ যেন ব্যক্তিমানুষের ইতিহাস। যা ব্যক্তিগত স্মৃতি থেকে হয়ে উঠতে থাকে সর্বজনীন। একসময় অসংখ্য পরিবারের মতো রাতারাতি স্বদেশ হয়ে যায় বিদেশ। পাড়ি দিতে হয় ভারতবর্ষের দিকে। দু’-প্রজন্ম আগের মানুষদের যন্ত্রণা কালের গণ্ডি ছাপিয়ে যায়। শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে থাকে কাহিনি।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
সদ্য স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে এসেছি আমরা। অর্থাৎ দেশভাগেরও বারো আনা শতক পার। কিন্তু এখনও শুকোয়নি সেই ক্ষত। দেশভাগ নিয়ে বাংলা ভাষায় নন ফিকশনের পাশাপাশি লেখা হয়েছে বহু গল্প-উপন্যাস। তানিয়ার উপন্যাস সেই তালিকার নবতম সংযোজন। যে কাহিনি শুরু হয় উমার মেয়ে সুমনা ও নাতনি মিতিনের কথোপকথন দিয়ে। তারা এসেছে বরিশালের বামরাইল গ্রামে। যেখানে কেটেছে অশীতিপর উমার জীবনের প্রথম ১৬ বছর। তার পর কেটে গিয়েছে ৭০ বছর। কিন্তু সাত দশকের ওপারে রেখে আসা ‘দেশের বাড়ি’ এখনও জীবন্ত উমার মনের ভিতরে। তাই বরিশাল থেকে মেয়ের ফোন পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে সে। বলে ওঠে, ‘আমাগো তো আর ফেরা হইল না বরিশাল, একবার যাওনের বড় ইচ্ছা ছিল।’
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পাতাবাহার : শিল্পীর জীবন দর্শনের ক্যানভাস
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
এইভাবেই শুরু হয়ে নিজের গতিতে এগিয়ে চলে কাহিনি। পূর্ব-বাংলায় জন্মানো এক স্বামী-স্ত্রী তাদের শৈশব-কৈশোরের কথা বলছে। আর শ্রোতা স্বাধীন ভারতবর্ষে জন্ম নেওয়া তাদের মেয়ে ও নাতনি। গল্পে উঠে আসে বিয়াল্লিশের মন্বন্তর, স্বাধীনতা আন্দোলনের কথা। তুমুল দারিদ্র, পরিবারের দুঃসময়ের স্মৃতিও নতুন করে ফুটে ওঠে। কাজের খোঁজে শহরে আসে গ্রামের মানুষ। গল্পের মাধ্যমে ধরা দেয় এক ইতিহাস। কেবল রাজনৈতিক ইতিহাস নয়, এ যেন ব্যক্তিমানুষের ইতিহাস। যা ব্যক্তিগত স্মৃতি থেকে হয়ে উঠতে থাকে সর্বজনীন। একসময় অসংখ্য পরিবারের মতো রাতারাতি স্বদেশ হয়ে যায় বিদেশ। পাড়ি দিতে হয় ভারতবর্ষের দিকে। দু’-প্রজন্ম আগের মানুষদের যন্ত্রণা কালের গণ্ডি ছাপিয়ে যায়। শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে থাকে কাহিনি।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পাতাবাহার: শান্তিনিকেতন প্রেস প্রতিষ্ঠার সময়ে বইয়ের নিখুঁত নির্মাণকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
তানিয়ার ভাষা প্রাঞ্জল। সংলাপের মধ্যে দিয়ে ছবি আঁকতে সিদ্ধহস্ত তাঁর কলম। একের পর এক ছবি জুড়ে জুড়ে যে আখ্যান তিনি লিখেছেন, তার মধ্য দিয়ে আসলে দেশকালের গণ্ডিকেই ভেঙেছেন। ১৯৫০-এ চিরকালের জন্য ছেড়ে আসা কীর্তিপাশা এখনও যেন সেই মানুষগুলোর কাছে তাঁদের নিজেদের গ্রাম। নিজেরই দেশ। একবার ঘরছাড়া হলে সেই ঘরই বুঝি চিরকালের জন্য সেঁধিয়ে যায় হৃদয়ে। হৃদয়ের গভীরে জেগে থাকা দেশ ও মানুষের আকুলতার মমতা মাখানো এই উপন্য়াস শুরু করলে শেষ না করে উপায় থাকে না!