Robbar

চৌকাঠ পেরিয়ে

চাকরিরতা মায়েদের সুবিধার্থে তৈরি সন্তান পরিচর্যার ক্রেশ কলকাতায় বন্ধ হয়েছে বারবারই

দোলনা শুরু হওয়ার প্রায় বছর ১৫ আগে লীলা মজুমদার আশা করেছিলেন সমাজে এরকম ব্যবস্থা হবে যেখানে মায়েরা বাচ্চাদের রেখে চাকরি করতে যেতে পারবেন নিশ্চিন্তে। দোলনার ক্রেশের ৫০-এর বেশি বছর কেটে গিয়েছে। তবে কলকাতা শহরে এরকম ব্যবস্থা এখনও বিশেষ নেই।

→

‘কে তুমি নন্দিনী’র মধ্যে কি লুকিয়েছিল চাকরিরতা মেয়েদের প্রতি সস্তা রসিকতা?

অলি-গলি দিয়ে নেচে-গেয়ে, বাজনা বাজিয়ে, বিজয়-মিছিল এগিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাচক্রে সেই মিছিলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে একটি মেয়ে, সম্ভবত কাজ থেকে ফিরছে। তাকে টিটকিরি দিয়ে, উত্যক্ত করে আনন্দের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে সবার। এই দৃশ্য ‘তিন ভুবনের পারে’ সিনেমার। এই বিখ্যাত দৃশ্য দেখায় কলকাতার পাড়া মূলত পুরুষের পরিসর।

→

প্রথম যুগের মেয়েরা কি আদৌ চাকরিতে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন?

প্রথম যুগের চাকুরিরতারা চিরাচরিত সাংসারিক নিয়ম নীতিকে প্রশ্ন করেছিলেন, ছক ভেঙেছিলেন, একটু হলেও বাড়তি গুরুত্ব আদায় করেছিলেন ঘরে বাইরে। উত্তরকন্যাদের চৌকাঠ পেরনো মসৃণ হয়েছিল তাঁদের মা, দিদিমা, ঠাকুমাদের জন্য।

→

উদ্বাস্তু, শিক্ষক বা খাদ্য আন্দোলনে চাকুরিরতা মেয়েদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো

১৯২০-র দশক থেকে গান্ধিবাদী রাজনীতি ও বিশ্বযুদ্ধ-দুর্ভিক্ষ-দাঙ্গা বিদ্ধস্ত সময়ে বামপন্থী রাজনীতিতে মেয়েদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে চাকরিজীবী মেয়েদের রাজনীতিতে তাঁদের ‘মহিলা’ ও ‘চাকুরিরতা’ এই দুই সত্তার কতটা মেলবন্ধন হয়েছিল সে প্রশ্ন রয়ে যায়।

→

অদক্ষ হলেও চলবে, কিন্তু মেয়েলি বৈশিষ্ট্য না থাকলে চাকরি পাওয়া ছিল দুষ্কর!

টাইপিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের  একচেটিয়া ছিল টেলিফোন অপারেটরের কাজ। শুধু কলকাতা শহরে নয়, বিশ্ব জুড়েই এই কাজের জন্য মেয়েদের বিশেষ ভাবে উপযোগী মনে করা হত। এর নেপথ্যেও ওই একই যুক্তি– মেয়েদের গলার স্বর, কথা বলার ভঙ্গি ইত্যাদি।

→

শৌচাগার নেই, এই অজুহাতে মেয়েদের চাকরি দেয়নি বহু সংস্থা

আনন্দবাজারে শিক্ষানবিশ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু আনন্দবাজারের তৎকালীন সম্পাদক সন্তোষ কুমার ঘোষ একরকম রুক্ষ ব্যবহারই করেন আলপনার সঙ্গে। বলেন কাগজের দপ্তরে মেয়েদের বাথরুম নেই, তাই মেয়েদের নেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে পরিকাঠামো বানিয়ে নিতে হবে এই স্বাভাবিক কথাটা তাঁর মনে হয়নি, কারণ তাঁর তীব্র পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব।

→

অফিসে মেয়েদের সখ্যকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নিছক পরনিন্দা-পরচর্চার ক্ষেত্র মনে করেছিল

দেশভাগে বিধ্বস্ত এই মেয়েরা সংসারের নানা টানাপোড়েন সামলে যখন ‘স্ত্রীভূমিকাবর্জিত’ কর্মক্ষেত্রে প্রথম ঢুকলেন, তখন তাঁদের নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বই হয়ে উঠল বিরাট ভরসার জায়গা।

→

পুরুষ সহকর্মীদের ‘বন্ধু’ ভাবতে অস্বস্তি হত পাঁচ ও ছয়ের দশকের চাকুরিরতাদের

‘আগলে রাখা’, ‘স্নেহ করা’, ‘ভাই-বোনের মতো’, এই শব্দবন্ধগুলো বারবার উঠে এসেছে সে যুগের চাকুরিরতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায়। সমানে-সমানে নিছক বন্ধুত্ব বোধহয় ভাবতে বা বলতে অস্বস্তি হত অনেক মেয়েরই। পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে নারী-পুরুষ সম্পর্ককে ফেলতে পারলে স্বস্তি পেতেন তাঁরা।

→

ট্রামের স্বস্তি না বাসের গতি, মেয়েদের কোন যান ছিল পছন্দসই?

ট্রামের স্বস্তি বনাম বাসের গতি– একেকজন মহিলার কাছে স্বভাবতই একেকদিকের পাল্লা ভারী ছিল।  কে কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছেন, কখন যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন– এসবও ঠিক করে দিত তাঁরা ট্রামে যাবেন না বাসে

→

অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শই শুধু নয়, চৌকাঠ পেরনো মেয়েরা পেয়েছিল বন্ধুত্বের আশাতীত নৈকট্যও

মনে পড়ে যায়, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘কাঠগোলাপ’ গল্পের অণিমাকে। পূর্ব বাংলার গ্রাম থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা অণিমার কলকাতা দেখে অপার বিস্ময়। আর ট্রাম-বাসে চড়া তাঁর কাছে কলকাতাকে উপভোগ করা। স্বামী যখন এই শখকে পয়সা নষ্ট বলে, অণিমা জবাব দেয়– “মাঝে মাঝে ট্রাম-বাসে না উঠলে শহরে আছি বলে মনেই হয় না।“

→