সেটা ছিল এক অস্থির সময়, অস্থিরতার কাল, সেই সঙ্গে কবির নিজের অস্থির প্রকৃতি– সব মিলিয়ে দেখতে পাচ্ছি সমর সেনকে আস্তে আস্তে সরে আসতে হচ্ছে কবিতার জগৎ থেকে। চাকরির সন্ধান, দেশজোড়া গভীর অর্থনৈতিক মন্দা, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের হুংকার, আজাদির লড়াই, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, দাঙ্গা– এরই মধ্যে কমিউনিজমের প্রসার, গণআন্দোলন, গণনাট্য সংঘ, ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম– কবিকে ভসিয়ে নিয়ে গেল হালভাঙা নাবিকের মতো, অনেক অনেক দূরে পড়ে রইল তাঁর সেই ‘মেঘমদির মহুয়ার দেশ’।
১০.
‘প্রগতি’র পথে যাত্রা
আমি প্রথম মস্কোয় গিয়েছিলাম ১৯৬৫ সালে, এক বছরের জন্য মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ ভাষা ও সাহিত্যচর্চার একটি ফেলোশিপ নিয়ে। ১৯৭৪ সালে আমি যখন অনুবাদকের কাজ নিয়ে মস্কোয় যাই, তার এক দশক আগে খ্রুশশ্যোভ জমানা শেষ হয়ে গেছে– শুরু হয়েছে ব্রেজনেভের সময়। সেটা ছিল উদারীকরণের সময়– অনেকের মতে স্থিতাবস্থার, আবার কারও কারও মতে, অচলাবস্থার কাল, ঠান্ডা লড়াই অবশ্য পূর্ববৎ অব্যাহত ছিল।
ইতিমধ্যে ছয়ের দশকের গোড়াতেই অনুবাদ সংস্থাটির নাম বদল হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকে তার নাম ‘প্রগতি প্রকাশন’। এই নামটাই আমাদের দেশে বেশি প্রচলিত। সমর সেন দেশে ফিরে আসার পরও তাঁর যে সমস্ত অনুবাদ তখনও সেদেশে প্রকাশিত হয়নি, সেগুলিও পরবর্তীকালে ‘প্রগতি প্রকাশন’-এর নামে প্রকাশিত হতে থাকে।
আমরা নতুন যুগের সাহিত্যের অনুবাদক হিসেবে চিনতাম বিশেষ করে সমর সেন আর ননী ভৌমিককে। তাঁদের অনুবাদগুলি আমাদের যেন বেশি প্রামাণ্য বলে মনে হত, যেহেতু সেগুলি আসত খোদ সোভিয়েত দেশ থেকে, সেখানকার প্রকাশনা ভবন থেকে। সেগুলো আমাদের সাধ্য বা নাগালের মধ্যেও বটে। আর তাদের অঙ্গসজ্জা, অলংকরণ আর মুদ্রণ পারিপাট্যেরও কোনও তুলনাই হয় না। সব মিলিয়ে এসব প্রকাশনার মেজাজই ছিল আলাদা, বিশেষত শিশু ও কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের মন মাতিয়ে রাখার পক্ষে যথেষ্ট।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
অনুবাদক হয়ে সমর সেনের মস্কো যাওয়াটা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়, হয়তো এটাই ছিল তাঁর সাধের সাধনা– এতদিন আমাদের নজরে পড়েনি, হঠাৎ পড়ে যেতে আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি। এর পিছনে তাঁর দীর্ঘকালের মানসিক প্রস্তুতি ছিল, ঠিক যেমনটি হয়েছিল কথাসাহিত্যিক ননী ভৌমিকের ক্ষেত্রে, যিনি প্রায় ওই একই সময় মস্কোয় অনুবাদকের চাকুরিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
কবি সমর সেন যে কবিতাকে বিদায় দিয়ে অনুবাদ ও সাংবাদিকতার জগতে প্রবেশ করলেন, তাঁর সেই গোত্রান্তর খুব একটা অস্বাভাবিক ছিল না। এক সময় কবিতাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। বুদ্ধদেব বসুকে লেখা (১৯.৫.৩৮) তাঁর একটা চিঠিতে আমরা জানতে পাই: এক সময়, সেই ছাত্রজীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই, এক লাইন কবিতা মগজে আনার সাধনায় মহুয়া গাছের নীচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন।
সেটা ছিল এক অস্থির সময়, অস্থিরতার কাল, সেই সঙ্গে কবির নিজের অস্থির প্রকৃতি– সব মিলিয়ে দেখতে পাচ্ছি তাঁকে আস্তে আস্তে সরে আসতে হচ্ছে কবিতার জগৎ থেকে। চাকরির সন্ধান, দেশজোড়া গভীর অর্থনৈতিক মন্দা, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের হুংকার, আজাদির লড়াই, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, দাঙ্গা– এরই মধ্যে কমিউনিজমের প্রসার, গণআন্দোলন, গণনাট্য সংঘ, ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম– কবিকে ভসিয়ে নিয়ে গেল হালভাঙা নাবিকের মতো, অনেক অনেক দূরে পড়ে রইল তাঁর সেই ‘মেঘমদির মহুয়ার দেশ’।
অনুবাদের দিকে তাঁর ঝোঁক বরাবরই ছিল। যখন কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন তারও আগে থাকতে তাঁর অনুবাদচর্চা, কলেজের ছাত্র অবস্থায় ইংরেজিতে অনুবাদ করছিলেন বুদ্ধদেব বসু-র ‘শাপভ্রষ্ট’ কবিতা। ‘The Fallen Angel’ নামে সে অনুবাদ ১৯৩৫ সালের ‘Scottish Church College’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪২ সালে ‘Hindustan Standard’-এর জন্য সুবোধ ঘোষের ‘কর্ণফুলির ডাক’ গল্প অনুবাদ করেছেন। এই সময় থেকে নিজেরও বেশ কিছু কবিতা অনুবাদ করে দিয়েছেন ‘কবিতা’ পত্রিকার জন্য। এই পর্বে নিজের কবিতা, অন্যদের কবিতা এবং আরও অনেক লেখা, গদ্যের অনুবাদ করা ছাড়াও ‘চতুরঙ্গ’, ‘পরিচয়’ ইত্যাদি পত্রপত্রিকার জন্য গ্রন্থ সমালোচনাও লিখেছেন।
বিপ্লবের দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ তো ছিলই, তার সঙ্গে যুক্ত হল অনুবাদের প্রতি কবির ঝোঁক– দুয়ে মিলে তাঁকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেল মস্কোয়, অনুবাদের কাজে। এর চেয়ে উপযুক্ত জায়গা আর কোথায় হতে পারে।
অনুবাদক হয়ে সমর সেনের মস্কো যাওয়াটা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়, হয়তো এটাই ছিল তাঁর সাধের সাধনা– এতদিন আমাদের নজরে পড়েনি, হঠাৎ পড়ে যেতে আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি। এর পিছনে তাঁর দীর্ঘকালের মানসিক প্রস্তুতি ছিল, ঠিক যেমনটি হয়েছিল কথাসাহিত্যিক ননী ভৌমিকের ক্ষেত্রে, যিনি প্রায় ওই একই সময় মস্কোয় অনুবাদকের চাকুরিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। ১৩৬২-র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যার ‘পরিচয়’-এ ‘কালান্তরের ক্লাসিক’ শিরোনামে মাক্সিম গোর্কির রচনার চারটি অনুবাদ গ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছিলেন, সেগুলির মধ্যে ‘গর্কির বদলে খণ্ডিত গর্কি কিংবা ছায়া-গর্কি পরিবেশনের গোপন লজ্জা নেই’ বলে আনন্দ প্রকাশ করলেও ‘কিছু আক্ষেপের কথা’ও জানিয়েছিলেন। আলোচনার উপসংহারে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘মূল রুশের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা অনুবাদের সময় কি আসেনি? অদূর ভবিষ্যতে যেন তা আসে, পাঠক হিসেবে এই আশা জানিয়ে রাখি।’ এই লেখার বছর দেড়েকের মাথায় তিনি নিজেই অনুবাদকের কাজ নিয়ে মস্কোয় চলে গেলেন।
কবি সমর সেন, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় অথবা ননী ভৌমিকের মতো সাহিত্যিকরা সোভিয়েত প্রকাশালয়ে কী ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেটা বুঝতে গেলে সেখানকার কাজের ধারাটা জানা দরকার।
অনুবাদক নিয়োগ প্রসঙ্গে সমর সেন লিখেছেন, ‘Some translators were recruited direct by the Soviet Embassy in Delhi. But from late 1956 the translators were selected by a board of the External Affairs Ministry of the Government of India and sent after usual investigation by the Intelligence Branch.’ (অপ্রকাশিত অগ্রন্থিত সমর সেন, ২ পৃ. ৮৬) আমাদের সময়, সাতের দশকে ওসব কড়াকড়ি ছিল না, দূতাবাস বা স্থানীয় দূতস্থান স্বাধীনভাবে অনুবাদক নির্বাচন করতে পারত। ভারত সরকারের সেখানে কোনও হাত ছিল না।
অনুবাদক নিযুক্ত হতেন চুক্তির ভিত্তিতে। প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর চুক্তি নবীকরণ হত। কাজে বড় রকমের গাফিলতি না হলে স্বাভাবিক নিয়মে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো যেত। মেয়াদ শেষ হলে প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ে দেশে গিয়ে মাস দুয়েকের ছুটি উপভোগ করা যেত। বাংলা বিভাগে এইভাবে চুক্তি নবীকরণ করে পেনশন ভোগের আগে পর্যন্ত কাজ করে গেছেন একমাত্র একজনই, ননী ভৌমিক। অনেককেই অসুস্থতা অথবা পারিবারিক বা অন্য নানা কারণে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই দেশে ফিরে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ চুক্তি আর নবীকরণ করেননি। সমর সেন তাঁর চুক্তি শেষ হতে ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলেন, ইতিমধ্যে দ্বিতীয় বারের জন্য প্রকাশালয়ের সঙ্গে নতুন করে চুক্তিবদ্ধও হয়েছিলেন। তাঁর নিজের কথায়– ‘‘১৯৬১-তে দুই মেয়েকে নিয়ে আবার ফিরে যাই মস্কোয়, ভেবেছিলাম কয়েক বছর থেকে যাবো। কিন্তু বড়ো মেয়েকে লুমুম্বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে পারলাম না– ‘লাল ফিতে’র জন্য। কলকাতায় থাকতে শুনেছিলাম বয়স বাড়ছে, দেশে গিয়ে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে। ভেবেচিন্তে ছ’মাস পরে পাততাড়ি গুটোলাম…।” (বাবুবৃত্তান্ত, পৃ. ৬৪)
কাজটা যেহেতু ছিল মস্কোর বাংলা অনুবাদক মহলে প্রচলিত ভাষায় ‘ফুরনের কাজ’, অর্থাৎ কাজের পরিমাণ অনুযায়ী পারিশ্রমিক, তাই রোজগারের সুযোগও ছিল অঢেল। একে তো প্রকাশনালয়ের বাঁধাধরা অনুবাদের কাজ, তার ওপর ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ ও ‘সোভিয়েত নারী’-র মতো পত্রপত্রিকার অনুবাদ ও সম্পাদনার কাজও, যেহেতু ওই সব সংস্থায় আলাদা ভাবে অনুবাদক নিয়োগের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। অনুবাদকদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ‘মস্কো রেডিয়ো’-তে কর্মচারী ঘাটতির সুবাদে সেখানেও অনুবাদক বা ঘোষক হিসেবে বাড়তি কাজ পেয়ে যেতেন।
অনুবাদকের কাজের সুবিধা এটাই ছিল যে নিয়মিতভাবে ঘড়ি-ঘণ্টা ধরে তাদের হাজিরা দিতে হত না। এমনকী, কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিশেষ বার্তাবহের সাহায্যে কাজ দেওয়া-নেওয়াও করা যেত। বাড়িতে বসে নিজের সুবিধামতো সময়ে কাজ করা যেত; তবে কাজ যেহেতু পরিকল্পনামাফিক, তাই যথাসময়ে তা জমা দিলেই হত। তাছাড়া কাজ না করলে তো পারিশ্রমিকও নেই।
আমাদের অনুবাদকদের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে সমর সেনের নিজের বয়ানেই শোনা যাক– ‘ভারতীয় অনুবাদকদের নিয়ে একটা সভার কথা মনে আছে– সভার আলোচনার বিষয় ছিল আমাদের দ্রুত অনুবাদশক্তির ফলে বিশৃঙ্খলা। বিদেশি ভাষায় সাহিত্য প্রকাশালয়ের বিভিন্ন ভাষা বিভাগে কত বই বেরোবে তার একটা টার্গেট আছে– কিন্তু আমাদের অনুবাদের হার এত জোর চলতে থাকে যে বিভাগটির দমবন্ধ হওয়ার উপক্রম। আমাদের অনুবাদের রেট এত দ্রুত হওয়ার কারণ– এখানে কাজের মাত্রা হিসেবে পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা, যাকে বলে piece rate system। ভারতীয় বিভাগের প্রধান কড়া বক্তৃতা দিলেন, অনেকের নাম উল্লেখ করে বললেন যে তাঁরা কোয়ালিটির দিকে নজর দেন না মোটে, অনুবাদে হাস্যকর ভুল থাকে, শুধু পাতার সংখ্যা বাড়ালে চলবে না ইত্যাদি…’। প্রসঙ্গত, এই ‘পাতার সংখ্যা বাড়ানো’ কথাটাও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ রাশিয়ায় আবহমানকাল ধরে প্রচলিত নিয়ম অনুসারে যে কোনও রচনার পারিশ্রমিক তার পাতার সংখ্যা ধরে নির্ধারণ করা হয়।
সমর সেন নিজে মাত্র বছর পাঁচেকের মেয়াদে, এত অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের অন্তত গোটা বিশেক বই অনুবাদ করেছেন, আবার ওই পরিমাণ বইয়ের অন্যদের করা অনুবাদের রচনাশৈলীর সম্পাদনাও করেছেন।
অনুবাদকদের ভাষা শিক্ষার জন্য প্রকাশভবন থেকে শিক্ষক নিয়োগ করা হত ঠিকই, কেউ কেউ প্রথম প্রথম ভাষা শিক্ষার জন্য উঠে পড়ে লাগতেনও, কিন্তু কাজের চাপে শেষপর্যন্ত সে উৎসাহে ভাটা পড়ে যেত। ফলে ইংরেজিই সম্বল। তাছাড়া রোজগারপাতি করার ফাঁকে ফাঁকে রুশ ভাষা শিখে দু’-চার বছরের মধ্যে সরাসরি রুশভাষা থেকে অন্তত সাহিত্যের অনুবাদ করা কোনওমতেই সম্ভব নয়। সমর সেন নিজেও প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন, “…a Russophile just back from Moscow said ‘entry into soviet life’ would be difficult, the language barrier was there as others snags.”
(চলবে)
…পড়ুন রুশকথার অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৯। মস্কোয় অনুবাদচর্চার যখন রমরমা, ঠিক তখনই ঘটে গেল আকস্মিক অঘটন
পর্ব ৮: একজন কথা রেখেছিলেন, কিন্তু অনেকেই রাখেননি
পর্ব ৭: লেনিনকে তাঁর নিজের দেশের অনেকে ‘জার্মান চর’ বলেও অভিহিত করত
পর্ব ৬: যে-পতাকা বিজয়গর্বে রাইখস্টাগের মাথায় উড়েছিল, তা আজ ক্রেমলিনের মাথা থেকে নামানো হবে
পর্ব ৫: কোনটা বিপ্লব, কোনটা অভ্যুত্থান– দেশের মানুষ আজও তা স্থির করতে পারছে না
পর্ব ৪: আমার সাদা-কালোর স্বপ্নের মধ্যে ছিল সোভিয়েত দেশ
পর্ব ৩: ক্রেমলিনে যে বছর লেনিনের মূর্তি স্থাপিত হয়, সে বছরই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সূচনাকাল
পর্ব ২: যে দেশে সূর্য অস্ত যায় না– আজও যায় না
পর্ব ১: এক প্রত্যক্ষদর্শীর চোখে রাশিয়ার খণ্ডচিত্র ও অতীতে উঁকিঝুঁকি