নৃত্যের অনেক ধ্যানধারণা বদলে দিয়েছিল রঞ্জাবতী সরকার। খুব অল্প বয়সেই সাফল্যকে ছুঁয়ে দেখেছিল। এমনকী, ‘অন্তর্জলী যাত্রা’য় শম্পা ঘোষ যে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তার জন্য ভাবা হয়েছিল রঞ্জাকে। কিন্তু গৌতমদা বলেছিলেন, রঞ্জার মুখটা চরিত্রের তুলনায় একটু বেশিই ম্যাচিওরড। পরে, ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া অমিতাভ চক্রবর্তীর ছবি ‘কাল অভিরতি’তে ও অভিনয়ও করে।
৬.
স্যমন্তকের সঙ্গে গত পর্বেই আপনাদের পরিচয় হয়ে গিয়েছে। এখন পরিচয় করাই রঞ্জার সঙ্গে– রঞ্জাবতী সরকার। রঞ্জার কথাও হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন। তাও খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় রঞ্জা দুর্দান্ত নৃত্যশিল্পী। নৃত্যের অনেক ধ্যানধারণা বদলে দিয়েছিল সে। খুব অল্প বয়সেই সাফল্যকে ছুঁয়ে দেখেছিল রঞ্জা। এমনকী, ‘অন্তর্জলী যাত্রা’য় শম্পা ঘোষ যে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তার জন্য ভাবা হয়েছিল রঞ্জাকেও। কিন্তু গৌতমদা বলেছিলেন, রঞ্জার মুখটা চরিত্রের তুলনায় একটু বেশিই ম্যাচিওরড। পরে, ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া অমিতাভ চক্রবর্তীর ছবি ‘কাল অভিরতি’তে ও অভিনয়ও করে।
রঞ্জা এবং স্যমন্তক– এই দু’জন ওই নয়ের দশকে, শুরু করেছিল প্রেম করতে। যাদবপুরের গেট থেকে বেরিয়ে এই কলকাতার নানা পথে রঞ্জা ও স্যমন্তক তাদের স্মৃতি তৈরি করতে শুরু করেছিল। আমার সঙ্গে শুধু নয়, আমার দাদা সৃঞ্জয়ের সঙ্গেও ঘোর বন্ধুত্ব ছিল ওদের। স্যমন্তক তো ঘরেরই ছেলে, ঠিক থাকত না কে কার বাড়িতে যাচ্ছি, খাওয়া দাওয়া করছি। এমনকী, জামা পাল্টাপাল্টিও হয়েছে বহুদিন। পরে রঞ্জার সঙ্গে আলাপ হতে, ওদের শান্তিনিকেতনের বাড়িতেও একাধিকবার গিয়ে থেকেছি। ওদের দু’জনের সঙ্গেই বন্ধুত্বটা এমনই গভীর ছিল যে, কোনও কোনও দিন বাড়ি ফিরে জানতে পারতাম, ওরা আজ আমাদের বাড়িতেই থাকবে। এমনও হয়েছে যে, টানা অনেকদিন ধরেই থাকল। আমিও যে ওদের বাড়ি গিয়ে থাকতাম না, তা নয়।
আমরা জানতাম, ওরা বিয়ে করবে। একদিন স্যমন্তকই বলল, ওদের বিয়ের কথা চলছে বাড়িতে। দু’বাড়ির লোক কথা-টথা বলছে। কিন্তু ওভাবে বিয়েটা করতে চায় না ওরা। পাঁচ-ছ’শো লোক ঘিরে থাকবে, আর দু’খানা লোক সই করবে– এই ব্যাপারখানা ওদের এক্কেবারে পছন্দ নয়। তাহলে কী করা যায়? অতএব প্রাইভেট সেরিমনি। হাতে-গোনা কাছের লোকজন। সেই সেরিমনিতে বর-কন্যা– দু’পক্ষই জিজ্ঞেস করল যে, তাঁরাও থাকবেন কি না। কিন্তু ওরা রাজি হয় না এই প্রস্তাবে। বলে যে, রিসেপশনের তারিখের আগেই বিয়েটা সেরে নিতে চায়।
স্যমন্তকের বাবার গাড়ি ছিল। সেই গাড়িতে ওইদিন জনা পাঁচেকের ঠাঁই হল। আমি, আমার দাদা, মৈনাক বিশ্বাস এবং বর-কন্যা। বালিগঞ্জের এক রেজিস্ট্রেশন অফিসে পৌঁছলাম। আমি সেদিন সাহস করে, ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিলাম, নতুন রোল ভরে। ততদিনে একটু আত্মবিশ্বাস জমেছে। ক্যামেরা হাতে নিলে বুঝতে পারি, কোথা থেকে ছবি তুললে ছবিটা ভালো আসবে। স্যমন্তক সেদিন পরেছিল পাজামা-পাঞ্জাবি, রঞ্জাবতীর গায়ে ছিল চমৎকার এক শাড়ি।
সইসাবুদ হওয়ার পর লাঞ্চের উদ্দেশে বেরই। আগে থেকেই ঠিক করা ছিল– অ্যাস্টর হোটেল। গাড়ি ছুটল পার্ক স্ট্রিটের দিকে। সদ্য বিবাহিত দম্পতি ও আমরা তিনজন।
অ্যাস্টর হোটেল তো আজকের না, সেই ১৯০৫ সালের। সেদিন নব-বিবাহিত দম্পতিকে দেখে উনিশ শতকের বিবাহিত দম্পতিদের পেইন্টিং করা পোর্ট্রেটের ধাঁচ মনে পড়ে যাচ্ছিল। বিশেষ করে, অ্যাস্টর হোটেলের ওই আবহে। সেকথা বলতেই ওরা হেসে বলল, আমরা এভাবেই তাহলে ছবি তুলব। তারপর ছবিও তোলা হল কিছু।
ছবি পরেও তুলেছি। কিন্তু মজার কথা, সাক্ষী হিসেবে সেই একমাত্র বিয়েতেই আমি সই করেছিলাম। বাকি সময় সাক্ষী থাকল আমার ক্যামেরা। আমি নই।
(চলবে)
…ফ্রেমকাহিনির অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৫। আলো ক্রমে আসিতেছে ও আমার ছবি তোলার শুরু
পর্ব ৪। মুম্বইয়ের অলৌকিক ভোর ও সাদাটে শার্ট পরা হুমা কুরেশির বন্ধুত্ব
পর্ব ৩। রণেন আয়ন দত্তর বাড়ি থেকে রাত দুটোয় ছবি নিয়ে বেপাত্তা হয়েছিলেন বসন্ত চৌধুরী
পর্ব ২। ইশকুল পার হইনি, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত একটা ছোট্ট রামের পেগ তুলে দিয়েছিল হাতে
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved