মানবদা ছিলেন খাঁটি সিলেটি। আমাকে অনেকবার বলেছেন তাঁর আর সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম একই জায়গায়– করিমগঞ্জে। পরে পঞ্চাশের দশকে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় থেকেই লেখালিখি শুরু। ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অভ্যুদয় প্রকাশ মন্দির-এর কর্ণধার অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে। অমিয়বাবু মানবদাকে দিয়ে কিছু জুল ভের্ন-এর বই অনুবাদ করিয়েছিলেন। সেগুলো ঠিক সম্পূর্ণ বই নয়, মূল বইটা পড়ে তাকে দেড়শো পাতার নিচে, সাত-আট ফর্মায় অনুবাদ করা। মানবদা অবশ্য পরে অনুবাদ শব্দটা আর ব্যবহার করতে চাইতেন না। তাঁর পছন্দ ছিল– ‘তরজমা’।
৬.
অপুর কাছে নতুন-নতুন অনেক বই আসে। সন্ধের পর ফাঁকা পেলে মাঝে-মাঝে ওর টেবিলে গিয়ে বসি। নানারকম বই-পত্রপত্রিকা উলটে যাই। আজকাল বিভিন্ন পত্রিকায় দেখি অপু-র লেখা ছাপা হয়– কখনও অপু দে নামে, আবার কখনও শুভঙ্কর দে নামে। সেদিন টেবিলে দেখি ক্রাউন সাইজের একটা বইয়ের মলাটে মানবদার ছবি। মানবদা মানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের ডাকসাইটে অধ্যাপক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। যে-বইটা সেদিন হাতে এল তাতে আবার তুলনামূলক বিভাগেরই নামজাদা অধ্যাপক শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা লেখা ছাপা হয়েছে। মানবদা যেমন বুদ্ধদেব বসুর ছাত্র, শিবাজীবাবু তেমনি মানবদার। যাই হোক, শিবাজীবাবুর লেখায় দেখি একটা উদ্ভট ছড়া। আমি বেশ কয়েকবার ছড়াটা পড়ে নিজের মনেই হেসে উঠলাম।
মানবদার বইপত্র আমি কম ছাপিনি। তাঁর সঙ্গে আলাপও বহুদিনের। কার্তিকদা নিয়ে যেতেন যাদবপুরে। বুদ্ধদেব বসুর বাড়িতে দীর্ঘদিন থাকায় যাদবপুরের সেসময়ের লেখক-অধ্যাপকদের প্রায় সবাইকেই তিনি চিনতেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই মানবদা, যশোধরাদি (যশোধরা বাগচী), অমিয়দা (অমিয় দেব), নবনীতাদি (নবনীতা দেবসেন), সৌরীনদা (সৌরীন ভট্টাচার্য), মালিনীদি (মালিনী ভট্টাচার্য)– এঁদের সঙ্গে আলাপ। সুবীরদার (সুবীর রায়চৌধুরী) সঙ্গে যাদবপুরেই পরিচয় হয়েছিল, নাকি আগেই কলেজ স্ট্রিটে আলাপ হয়েছিল, তা আজ আর মনে নেই। শঙ্খদার কাছে যে প্রথম স্বপনদা (স্বপন মজুমদার) নিয়ে গিয়েছিলেন সেটা মনে আছে। তখন শঙ্খদা থাকতেন শ্যামবাজারের বাড়িতে।
কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল, জিনসের প্যান্ট আর রংচঙে চাইনিজ কাট শার্ট পরা মানবদাকে দেখেই আর পাঁচজনের চেয়ে অন্যরকম লাগত। তাঁর সঙ্গে যেমন যাদবপুর ক্যাম্পাসে দেখা করেছি, তেমনই পরে অনেকবার গিয়েছি যাদবপুর এইট-বি বাস স্ট্যান্ডের পিছনে তাঁদের ইব্রাহিমপুর রোডের বাড়িতে। পরে টালিগঞ্জের ৬০/১৪০ হরিপদ দত্ত লেনের বাসাতেও। হরিপদ দত্ত লেনে নাগ হোমিও ক্লিনিকের বাড়ি বললে সবাই চিনিয়ে দিত, ইন্ডিয়ান পেইন্টস নামে একটা দোকানের কাছেই ছিল বাড়িটা। আনোয়ার শাহ রোড থেকে লেক গার্ডেন্স ফ্লাইওভারে ওঠার যে-সিগন্যাল, ঠিক সেইখানে, রাজ্য সংগীত আকাদেমির বাড়িটার উলটো দিকে যাদবপুর থানার দিকে যেতে রাস্তার ডান হাতে হরিপদ দত্ত লেন। ফ্লাইওভার হওয়ার আগে ওই বাসস্টপটার নাম ছিল ‘মান্নার খাবার’। এখনও বাসস্টপটার একই নাম আছে কি না জানি না। উড়ালপুল হয়ে এলাকাটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ‘মান্নার খাবার’ দোকানটাও মনে হয় বন্ধ হয়ে গেছে।
যাদবপুর যাওয়াটা সহজ ছিল, কিন্তু হরিপদ দত্ত লেন যাওয়া ছিল বেশ ঝক্কির ব্যাপার। আমি অনেক সময় গড়িয়াহাট বা রাসবিহারী মোড় থেকে টালিগঞ্জের ট্রাম ধরে আনোয়ার শাহ রোডের মুখে টিপু সুলতান মসজিদের কাছে নেমে বাস ধরতাম, কখনও হাতে সময় থাকলে হেঁটেই চলে যেতাম। দক্ষিণের দিকে ট্রাম লাইন আবার রাস্তার মাঝখানে ঘাসজমির ওপর দিয়ে যেত। ফেরার সময়ও একইভাবে, হেঁটে বা বাসে করে আনোয়ার শাহ রোডের মুখে এসে ট্রাম ধরতাম।
মানবদা ছিলেন খাঁটি সিলেটি। আমাকে অনেকবার বলেছেন তাঁর আর সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম একই জায়গায়– করিমগঞ্জে। পরে পাঁচের দশকে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় থেকেই লেখালিখি শুরু। ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল অভ্যুদয় প্রকাশ মন্দির-এর কর্ণধার অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটের যে-অংশটা কলেজ স্কোয়ারের পূর্বদিকে– সেখানে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হল, কল্পতরু-র পানের দোকান পেরিয়ে বাঁ-দিকে একটা দরজা দিয়ে ঢুকে অনেকগুলো বইয়ের দোকান ছিল একসময়। সেখানেই ছিল অভ্যুদয় প্রকাশ মন্দির। অমিয়বাবু মানবদাকে দিয়ে কিছু জুল ভের্ন-এর বই অনুবাদ করিয়েছিলেন। সেগুলো ঠিক সম্পূর্ণ বই নয়, মূল বইটা পড়ে তাকে দেড়শো পাতার নিচে, সাত-আট ফর্মায় অনুবাদ করা। মানবদা অবশ্য পরে অনুবাদ শব্দটা আর ব্যবহার করতে চাইতেন না। তাঁর পছন্দ ছিল– ‘তরজমা’।
আমি তাঁর বই প্রথম করেছিলাম ১৯৭৬ সালে। একসঙ্গে দুটো বই। প্রথমটা জুল ভের্ন-এর শ্রেষ্ঠ গল্প। তখনও তিনি অনুবাদই লিখতেন। এই বই ছাপার সময় দেখলাম বুদ্ধদেব বসুর ছাত্র আবার তাঁরও ওপর দিয়ে যান। জুল ভের্ন লিখতে গিয়ে তিনি ‘জ’ তলায় দুটো করে ডট ব্যবহার করা শুরু করলেন। সেই জোড়া ডট দিয়েই ‘জুল ভের্ন শ্রেষ্ঠ গল্প’ বইটার প্রচ্ছদও হল। অন্য বইটা জুল ভের্ন-এরই ‘যত ঝক্কি যত ঝামেলা’। মানবদার যেকোনও বইয়ের প্রিন্টার্স লাইনে স্বত্বের জায়গায় লেখা থাকে– কৌশল্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৌশল্যা মানবদা-হিমানীদির মেয়ে। কিন্তু আমি যে-সময়ের কথা লিখছি কৌশল্যা তখন বেশ ছোটো, তাই প্রথম দিকের বইতে দেখছি স্বত্বের জায়গায় উনি তার ডাকনাম লিখতেন– তিন্নি বন্দ্যোপাধ্যায়। দুটো বইয়ের মধ্যে প্রথমটা ছেপেছিলাম শিবু বিশ্বাস লেনে গোপাল চন্দ্র রায়ের লক্ষ্মীনারায়ণ প্রেস থেকে। আর দ্বিতীয়টি বিধান সরণিতে নিশিকান্ত হাটই-এর তুষার প্রিন্টিং ওয়ার্কস থেকে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছিল, তাই এবার দুই প্রেসেই জানিয়ে রেখেছিলাম আমাদের ‘জ’-এর নিচে জোড়া ডট দেওয়া হরফ লাগবে। ওঁরা সেটা তৈরিও করে এনেছিলেন। তবে মানবদা প্রুফ দেখা নিয়ে খুব একটা খুঁতখুঁত করতেন না। তাঁর কয়েকটা বিশেষ নির্দেশ পালন করা হলেই খুশি হতেন।
জুল ভের্ন-এর বই দুটো প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর মানবদা একদিন এসে বললেন, ‘দেশবিদেশের শিশুসাহিত্য’ নামে তিনি একগুচ্ছ অনুবাদ-বই প্রকাশ করতে চান। সেই সিরিজে তিনি নিজেও যেমন অনুবাদ করবেন তেমনই অন্যদের দিয়েও করাবেন। তাই সিরিজ এডিটর হিসেবে প্রতিটি বইতে ‘সাধারণ সম্পাদক: মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়’ ছাপা হবে। আমার ধারণা এই সময় থেকেই মানবদা অনুবাদ ব্যাপারটাকে আর শুধু নিজের একার কাজ হিসেবে না রেখে, বন্ধু-বান্ধব-ছাত্র-পরিচিত সবাইকে জড়িয়ে নিতে শুরু করেন। পরে এইভাবে তিনি বেশ কয়েকটি বড় সংকলনও প্রকাশ করেন। তার মধ্যে কিছু সংকলন আমিও প্রকাশ করেছি।
যাই হোক, ১৯৭৯ সালে পুজোর আগে সিরিজের প্রথম বই প্রকাশিত হল– পোল্যান্ডের লেখক স্তানিসোয়াভ লেম-এর “পৃথিবী কী ক’রে বাঁচলো”। যতদূর মনে পড়ে বইটা ছিল দুই রোবটের গল্প। এ-বইটাও নিশিকান্ত হাটই-এর তুষার প্রিন্টিং ওয়ার্কস থেকে ছেপেছিলাম। সম্ভবত কোনও এক বিদেশি শিল্পীর ছবি অবলম্বনে মলাট এঁকেছিলেন নিতাই মল্লিক। মজাটা শুরু হল ‘দেশবিদেশের শিশুসাহিত্য’ সিরিজের দ্বিতীয় বই থেকে। পাণ্ডুলিপি দেওয়ার আগে পর্যন্ত জানতাম এবার কানাডার কোনও এক লেখকের বই আসছে। পুজোর সময় দেশের বাড়িতে বেশ কয়েকটা দিন ছুটি কাটিয়ে কলকাতায় ফেরার মাসখানেক পর তাঁর ডাক পেয়ে হাজির হলাম। তিনি আমার হাতে যে-পাণ্ডুলিপি দিলেন, তার ওপরের পাতায় লেখার নাম দেখে আমার তো চক্ষুস্থির! নতুন বইয়ের নাম নাকি ‘জেকব দুই দুই আর ফণাধর দন্তপাটি মুখোমুখি’! আমি নাম দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বলে ফেলেছিলাম– ‘নামটা একটু ছোটো করা যায় না, দাদা? এ যে গোটা মলাট জুড়ে শুধু নামই লিখতে হবে’। অনুবাদক গম্ভীর হয়ে বললেন, নাম বদলের প্রশ্নই ওঠে না।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে পাণ্ডুলিপি নিয়ে চলে এলাম। প্রবীর সেন কিন্তু সে-বইয়ের দুর্দান্ত মলাট এঁকেছিলেন। সিরিজের চার নম্বর বইটা ছিল হান্স আন্ডেরসেনের ছেলেবেলা নিয়ে লেখা ছোটদের উপন্যাস ‘ঘণ্টা বাজে দূরে’। এই অনুবাদ বই হওয়ার আগে ‘বসুমতী’ পত্রিকায় কিছুদিন বেরিয়েছিল। পরে তিনি আন্ডেরসেনের অন্য বইও অনুবাদ করেছেন। ‘ঘণ্টা বাজে দূরে’ বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন মানবদার বন্ধু অজয় গুপ্ত। অজয়দাকে নিয়ে আমার অনেক কথা বলার আছে। পরে তাঁকে নিয়ে লিখব। এখন শুধু এটুকু বলে রাখি, অজয়দা আমার কাছে শুধু একজন লেখক, সম্পাদক বা প্রচ্ছদ শিল্পী নন, তিনি আমার পরিবারের অভিভাবক। ‘ঘণ্টা বাজে দূরে’ ছেপেছিলাম রামদুলাল সরকার স্ট্রিটের শিবদুর্গা প্রিন্টার্স থেকে। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয় এই সিরিজের সপ্তম বই– র্যান্ডল্ফ স্টো-র ‘মিডনাইট’। তার ছ’-বছর পর ওই সিরিজেই প্রকাশিত হয়েছিল সুবীরদার (সুবীর রায়চৌধুরী) অনুবাদে রনাল্ড সেগালের ‘টোকোলোশ’– ‘দেশবিদেশের শিশুসাহিত্য’ সিরিজের অষ্টম বই।
মানবদার লম্বা নামের বইগুলোর কথা মাঝে-মাঝেই মনে পড়ে। যেমন একটা বইয়ের নাম ছিল– ‘এক পাখি দোয়েলা এক বেড়াল হুলো’, আরেকটি বইয়ের নাম ছিল– ‘হাতি ইঁদুর প্যাঁচার ছানা তাদের আজব কাণ্ড নানা’। দ্বিতীয় বইটির লেখক জাঁ দ্য লা ফঁতেন, আর প্রথম বইটির লেখক জোর্জে আমাদু। লেখকের নামগুলো শুনে আমি তখন মনে মনে হাসতাম, কস্মিনকালেও এঁদের নাম শুনিনি। তারপর অনুবাদ করলেন ‘চেসোয়াভ মিউশ: শ্রেষ্ঠ কবিতা’ আর ‘মিরোস্লাভব হোলুবের শ্রেষ্ঠ কবিতা’। প্রথমটা ১৯৮২ সালে, দ্বিতীয়টা ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত। চেসোয়াভ মিউশের বইটির প্রচ্ছদ করেছিলেন সেসময়ের তরুণ শিল্পী দেবব্রত ঘোষ, আর মিরোস্লাভ হোলুবের অসামান্য মলাট এঁকে দিয়েছিলেন অজয়দা– অজয় গুপ্ত। মিউশের বইটা আবার অজয়দাকেই উৎসর্গ করা।
বই তো একের পর এক প্রকাশ করে চলেছি, আর পাঠকের সাড়াও পাচ্ছি বেশ। কিন্তু প্রকাশক এইসব বিচিত্র নামের লেখকের ততোধিক বিচিত্র সব বইয়ের কোনও হদিশই আগে থেকে জানতে পারত না। মানবদা একটা করে বইয়ের কথা বলতেন আর আমি হাসতাম, ফের নতুন কোনও আশ্চর্য নামের লেখকের বই হবে নিশ্চয়। এই লেখার শুরুতে শিবাজীবাবুর যে-ছড়াটার কথা বলছিলাম, সেটাও এই একই বিষয় নিয়ে– মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কত অসংখ্য অজানা নামের লেখকের লেখা অনুবাদ করেছেন। শিবাজীবাবুর ছড়াটা এই রকম:
এই লেখক-কবিরা কারা কোন দেশের, আমি এখনও সবটা জানি না। তবে বিদেশি এইসব কবি-লেখকদের অনেকেরই অনুবাদ আমি প্রকাশ করেছি। কারওর হয়তো আস্ত বই করিনি, তবে সংকলনে তাঁরা আছেন। ছড়ায় উল্লিখিত অনেককেই যেমন আমার প্রকাশ করা ‘এই স্বপ্ন! এই গন্তব্য ! লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ বিদ্রোহী কবিতা’ বইয়ের সূচিতে পাচ্ছি। বইটা হাতে নিয়ে দেখছি অজয়দা এই বইয়ের মলাটেও জড়িয়ে আছেন। তবে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে লিখেছেন, ‘প্রচ্ছদ পরিকল্পনা : অজয় গুপ্ত’। কেননা, সামনের মলাটের ছবিটা না কি হোসে ক্লেমেন্তে ওরোস্কো বলে কারুর আঁকা, আর পিছনের মলাটের ছবি ভিভান সুন্দরম-এর। সত্যি বলতে কি, ভিভান সুন্দরমের নাম খবরের কাগজে বা পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু হোসে ক্লেমেন্তে ওরোস্কো সম্পর্কে আমি আজও অন্ধকারে। অজয়দা হয়তো কিছুটা আলোকপাত করতে পারবেন!
………………………………………………………..
১৯৮৬ সাল থেকেই মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় একটা গুরুত্বপূর্ণ সংকলনের কাজ শুরু করেছিলেন। আমাকে বলে রেখেছিলেন ১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ নিয়ে একটা সংকলন করবেন। সেই কাজ করতে করতে প্রায় দু’-বছর দেরি হল। পাবলো পিকাসোর বিখ্যাত ‘গ্যের্নিকা’ ছবি অবলম্বনে অজয়দাই সেই বইয়ের মলাট এঁকেছিলেন। পাঁচশো পাতার ওপরে বই। ছেপেছিলাম অরিজিৎ কুমারের টেকনোপ্রিন্ট থেকে। কিন্তু এই বইটার একটা বিশেষ স্মৃতি এখনও মনে আছে। বইয়ের একেবারে শুরুর লেখাটি ছিল তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু-র।
………………………………………………………..
‘এই স্বপ্ন! এই গন্তব্য! লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ বিদ্রোহী কবিতা’ বইটা করার সময় অনুবাদক তথা সম্পাদক (দুই ভূমিকাতেই ছিলেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়) অবশ্য আমার প্রতি খানিকটা দুর্বলতা দেখিয়েছিলেন! প্রথমে বইটার নাম ঠিক করেছিলেন– ‘লাতিন আমেরিকার বিদ্রোহী কবিতা’। আমি গিয়ে বললাম– আমাদের একটা শ্রেষ্ঠ কবিতা সিরিজ আছে, আর আপনি তো লাতিন আমেরিকার কবিতা থেকে বাছাই করেই দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে ‘শ্রেষ্ঠ’ কথাটা কি ব্যবহার করা যায় না? কিছুক্ষণ ভেবে মানবদা ‘শ্রেষ্ঠ’ লিখতে রাজি হলেন। তবে সামনে জুড়ে দিলেন– ‘এই স্বপ্ন! এই গন্তব্য!’। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৭ সালের পয়লা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে। শ্রেষ্ঠ অনুবাদ কবিতা সিরিজে এর আগে-পরে ভাস্কো পোপা (১৯৮৬) এবং নিকানোর পাররা-র (১৯৯২) কবিতার অনুবাদও ছেপেছি।
মানবদার লেখা চিঠি পড়তে গিয়ে একটা চিঠি পেলাম ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫ সালে লেখা। চিঠিতে তিনি যে-বইটার প্রসঙ্গে লিখেছেন সেটা ঠিক কোন বই, তা আজ আর মনে পড়ছে না। কিন্তু প্রফুল্ল রায়ের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের একটা ইশারা এখানে আছে। প্রফুল্লদা তখন ‘যুগান্তর’-এ। মানবদা লিখেছেন, ‘… আরেকটা গল্প যাবে– সব শেষে, অর্থাৎ ৯৩ পাতা থেকে সম্ভবত। গল্পটা বেরিয়েছিল যুগান্তর পত্রিকায়, রবিবার ২৪ মার্চ ১৯৮৫। প্রফুল্ল রায়কে বললেই পাওয়া যাবে। হয়তো এর মধ্যে জোগাড়ও হয়ে গেছে।’ এই সময় মানবদা আর প্রফুল্লদার ঘনিষ্ঠতার শুরু বলেই মনে হয়।
১৯৮৬ সাল থেকেই মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় একটা গুরুত্বপূর্ণ সংকলনের কাজ শুরু করেছিলেন। আমাকে বলে রেখেছিলেন ১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ নিয়ে একটা সংকলন করবেন। সেই কাজ করতে করতে প্রায় দু’-বছর দেরি হল। পাবলো পিকাসোর বিখ্যাত ‘গ্যের্নিকা’ ছবি অবলম্বনে অজয়দাই সেই বইয়ের মলাট এঁকেছিলেন। পাঁচশো পাতার ওপরে বই। ছেপেছিলাম অরিজিৎ কুমারের টেকনোপ্রিন্ট থেকে। কিন্তু এই বইটার একটা বিশেষ স্মৃতি এখনও মনে আছে। বইয়ের একেবারে শুরুর লেখাটি ছিল তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু-র। সেই লেখার প্রুফ নিয়ে আমাকে কয়েকবার মানবদার নির্দেশে যেতে হয়েছিল রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। তখন মুখ্যসচিব ছিলেন রথীন সেনগুপ্ত। তিনি কোনও কারণে আমাকে স্নেহের চোখে দেখতেন। আমি প্রথম দিন তাঁর কাছে গিয়ে বললাম জ্যোতিবাবুকে প্রুফ দিতে এসেছি। তিনি বললেন– ‘ওভাবে তো হবে না। দাঁড়াও আমি মুখ্যমন্ত্রীর আপ্তসহায়ক সুজিত পোদ্দারকে বলে দিচ্ছি’। রথীনদা বলে দেওয়ার পর সুজিতবাবুর কাছে যেতেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে নিয়ে গেলেন। এভাবে বার দুই-তিন জ্যোতিবাবুর ঘরে গিয়েছিলাম প্রুফ দেওয়া-নেওয়া করতে। প্রুফে উনি সামান্য কিছু সংশোধন করেছিলেন, দু-এক লাইন যোগও করেছিলেন। এমনিতে উনি খুবই কম কথার মানুষ ছিলেন। আমাকে শেষবার প্রুফ দেখে দিয়ে বলেছিলেন, ‘মানববাবুকে বলবেন একবার দেখে নিতে’। আমি সম্মতি জানিয়ে চলে আসি। ১৯৮৮ সালের ১৮ জুলাই বইটা প্রকাশিত হয়। ততদিনে পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেছে বলে বইয়ের নাম হল– ‘স্পেনের গৃহযুদ্ধ : পঞ্চাশ বছর পরে’।
বই বেরুনোর পরে আমি ফের রথীনদার কাছে গেলাম। তাঁর হাতে আগে একটা বই দিলাম। তিনি বেশ খুশি হয়ে বললেন– ‘মুখ্যমন্ত্রীকে বই দেবে ছবি তুলবে না? দাঁড়াও, ছবি তুলিয়ে দিচ্ছি।’ রাইটার্সে কোনও সংবাদমাধ্যমের ফোটোগ্রাফারকে ডেকে, মুখ্যমন্ত্রীর হাতে আমি বই তুলে দিচ্ছি, এরকম একটা ছবি তুলিয়ে দিলেন। সে-ছবি আজও আমার কাছে আছে। সেদিন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতেও বই দিয়ে এসেছিলাম, তিনি তখন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী।
‘স্পেনের গৃহযুদ্ধ’ প্রকাশের পর ২৯ অগাস্ট মানবদা একটা চিঠি লিখেছিলেন। মূল কথা ছিল এই বইয়ের জন্য কাকে-কাকে কত সম্মানদক্ষিণা এবং বইয়ের কপি পাঠাতে হবে। চিঠির শেষে লিখেছেন, ‘একেই বই বেরুতে নানা কারণে দেরি হ’য়ে গেল, তার ওপর আমার লেখকতালিকায় অনেকেই বৃদ্ধ ও অসুস্থ। সুতরাং তাঁদের কাছে তাড়াতাড়ি বই ও সাম্মানিক পৌঁছে দেয়াই কর্তব্য।’ আমার মনে আছে চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন জ্যোতি বসুকে লেখার জন্য ২০০ টাকা সাম্মানিক চেক সুজিত পোদ্দারের হাতে দিয়ে আসতে হবে। আমি অবশ্য আগেই বইয়ের সঙ্গে সেই চেকও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে দিয়ে এসেছিলাম।
১৯৮৮ সালের ৪ ডিসেম্বর লেখা আরেকটা চিঠিতে তিনি লিখছেন–
‘প্রিয় সুধাংশু,
আমার যে-পাণ্ডুলিপি অরিজিতদের প্রেসে দেয়া আছে, সেটা এখনই ছাপা
হওয়া বাঞ্ছনীয় : কেননা জানুয়ারিতে কিউবার স্বাধীনতার ৩০ বছর হবে।
অশোকদারও ইচ্ছে বইটা এখনি বার হোক। এ-বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিলে
আমাকে তাড়াতাড়ি জানিও। আমি 16 তারিখে দিল্লি যাবো। তখন স্পেনের
অ্যামবাসাডরকে স্পেনের গৃহযুদ্ধ দিতে হবে। আমাকে 2 কপি স্পেনের
গৃহযুদ্ধ ও লাতিন আমেরিকার বিদ্রোহী কবিতা 1 কপি পাঠিয়ে দিয়ো। আমি
দিল্লিতে নিজের হাতেই পৌঁছে দেবো।’
অরিজিৎ কুমারের কাছে কোন বই কম্পোজ করতে দিয়েছিলাম আজ আর মনে পড়ছে না। ‘গুয়ানতানামেরা কবিতা কুবানা’ কি ? বইয়ের প্রকাশ সাল অবশ্য মিলছে না। সে-বই প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল অনেক পরে ২০০৩ সালে। আর প্রথম দে’জ সংস্করণ ২০১৭ সালে। অন্য কোনও বইও হতে পারে। কিউবার আলেহো কার্পেন্তিয়ের-এর ‘রচনাসংগ্রহ’ হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। বইটি অবশ্য আমরা ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলাম। আর, অশোকদা মানে নিশ্চয়ই তখন সদ্য-প্রাক্তন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ও বিশিষ্ট লেখক অশোক মিত্র। তাঁর সঙ্গে মানবদার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। যদি খুব ভুল না করি, ‘স্পেনের গৃহযুদ্ধ’-এ তাঁর দুটো লেখা ছিল।
মানবদার আবার খেলা নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, তাঁর ছোটভাই হলেন বিখ্যাত ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটেই মানবদার রুচি ছিল বেশি। আমি ১৯৮৭-তে পুর্ণেন্দু পত্রীর প্রচ্ছদে তাঁর ‘ওভারবাউন্ডারি’ প্রকাশ করি। সম্ভবত ১৯৯৬ সালে বইমেলার আগে দু’-খণ্ডে প্রকাশ করেছিলাম ‘খেলা অমনিবাস’। বই দুটির প্রথম খণ্ড তিনি উৎসর্গ করেছেন ‘আজকাল’ পত্রিকার সম্পাদক অশোক দাশগুপ্তকে। আর দ্বিতীয় খণ্ড আমাদের সকলেরই স্নেহভাজন মিলিন্দ মজুমদারকে। মিলিন্দ হল স্বপনদার ছেলে। এখন সে অশোকনগর নেতাজি সুভাষ শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এই বই দুটির প্রচ্ছদ করেছিলেন দেবব্রত ঘোষ।
১৯৯২ সালে মানবদা দু’-খণ্ডে সম্পাদনা করলেন ‘ভেদ-বিভেদ’– ‘দাঙ্গা, দেশভাগ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সর্বভারতীয় গল্প-সংকলন’। প্রথম খণ্ডটা বের হল বইমেলার সময় আর দ্বিতীয় খণ্ড সেই বছরই পয়লা বৈশাখের সময়। ১৯৯২ সাল ভারতের ইতিহাসে একটা সংকটের সময়। সে-বছর ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। তার আগে থেকেই দেশের অসাম্প্রদায়িক চেহারা নষ্ট করার একটা চেষ্টা চলছিল। সম্ভবত মানবদা তা আন্দাজ করেই সময়োপযোগী এই সংকলনটি তৈরি করেছিলেন। যদিও একটা বই হয়তো দাঙ্গা থামাতে পারে না। কিন্তু ছাপার হরফে ভারতের বৈচিত্র্যময় একতার চেহারা তুলে ধরাটা মানবদার মতো আধুনিক মনের মানুষের কাছে জরুরি ছিল। আমরাও বইটি ছাপতে পেরে আজও গর্ব অনুভব করি। দু’-খণ্ডের প্রথমটিতে আছে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে ত্রিদিব সেনগুপ্ত পর্যন্ত ৫১টি বাংলা গল্প। আর দ্বিতীয় খণ্ডে অসমিয়া, ইংরেজি, উর্দু, ওড়িয়া, ডোগরি, পঞ্জাবি, মরাঠি, মলয়ালম, সিন্ধি ও হিন্দি ভাষার মোট ৬২টি গল্প।
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি অতুলনীয় কাজ আমরা ছাপতে পেরেছিলাম– ‘হরবোলা’। সম্ভবত এই নামে মানবদা একটি পত্রিকা শুরু করেছিলেন। সেই পত্রিকার নির্বাচিত রচনা ছাপা হয়েছিল এই সংকলনে। মানবদার সম্পাদিত ‘হরবোলা’ বইয়ের পরিচিতিতে লেখা হয়েছে– ‘কিশোরদের জন্য তৃতীয় বিশ্বের ছোটগল্পের সংকলন’। কাকে দিয়ে লেখাননি এই সংকলনে! বিভিন্ন বয়সের নানা লেখকের লেখা আছে এই বইতে। ১৯৯৮ সালে এই বইটা আমরা প্রকাশ করেছিলাম। প্রচ্ছদ ও অলংকরণের কাজ করেছিলেন প্রণবেশ মাইতি।
‘ভেদ-বিভেদ’ আর ‘হরবোলা’ বাংলা সাহিত্যের বড় সম্পদ বলেই বিবেচিত হয়।
৬ নভেম্বর ২০০০ সালে লেখা মানবদার আরেকটি চিঠি পেলাম, তিনি লিখছেন–
প্রিয় সুধাংশু,
আশা করি ভালো আছো এবং মানসিক বিপর্যয় সামলে উঠেছো।
রহস্যময় রোমাঞ্চকর এই নামে কতগুলি উপন্যাস ও গল্প
নিয়ে একটি বই তৈরি করেছি : পাণ্ডুলিপি পাঠালাম। অরিজিৎকে দিয়ে দিলে
প্রুফ ইত্যাদি দেখবার কাজে সুবিধে হবে। রহস্য ও রোমাঞ্চ নিয়ে আশা করি
এইরকম সংকলন জনপ্রিয় হবে– অবশ্য বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
২০০০ সালের জানুয়ারিতে আমাদের মাতৃবিয়োগ হয়। তাই হয়তো আমার মানসিক বিপর্যয়ের কথা লিখেছেন। ২০০১-এ পুজোর আগে ‘রহস্যময় রোমাঞ্চকর’ প্রকাশ করেছিলাম।
অনেক লেখকের মতোই মানবদারও মাঝে মাঝে মনে হত তাঁর বই যথেষ্ট বিজ্ঞাপিত হচ্ছে না। তাই ১৯৯৯-এ বইমেলার আগে তিনি নিজে হাতে আমাকে একটা বিজ্ঞাপনের কপি লিখে দিয়েছিলেন দেখতে পাচ্ছি। তাতে ‘দেশ’ পত্রিকায় কতটা জায়গা জুড়ে আর ‘গণশক্তি’-তে কতটা জায়গা জুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া দরকার তার উল্লেখও ছিল। আমরা সে-বিজ্ঞাপন করেওছিলাম। সারা বছরই আমাদের বিজ্ঞাপন বের হত নানা পত্রপত্রিকায়, তাঁর বইয়ের বিজ্ঞাপনও থাকত। তা সত্ত্বেও বইমেলার আগে আমরা তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী সে-বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিলাম।
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বিপুল অনুবাদ দেখে শিশির দাশ তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘অনুবাদেন্দ্র’– এই নামটা আমার খুব মনে ধরেছিল। আবার আমার অত্যন্ত নিকটজন, যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক অভীক মজুমদার তাঁর সম্পর্কে বলেন– ‘মানুষটা আস্ত একটা জানলা’– এটাও নির্জলা সত্যি কথা। তবে মানবদার নিজের লেখালিখি পরিমাণ কিন্তু কম নয়। আমরা তাঁর ‘কবিতাসংগ্রহ’ও প্রকাশ করেছি। সেই সঙ্গে বেশ গল্প-উপন্যাসের মৌলিক বইও করেছি।
…………………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………………………
শেষের দিকে তিলজলার পূর্বা আবাসনের ফ্ল্যাটে চলে যাওয়ার পর অপু-ই মানবদার সঙ্গে বেশি দেখা করতে যেত। তবে যতদিন সুস্থ ছিলেন নববর্ষের দিনে ধুতি-পাঞ্জাবি বা লম্বা ঘেরের পাজামা-পাঞ্জাবি পরে আমাদের দপ্তরে আসতেন। নববর্ষের খাতায় সংক্ষেপে প্রীতি-শুভেচ্ছা জানিয়ে এক লাইন লিখতেন। মানবদা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন কোভিডের সময়। সে এমন এক বিভীষিকাময় সময় ছিল, আমরা একবার গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়াতে পারিনি, এ-কষ্টটা যাওয়ার নয়।
লিখন: শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
……………………………… ইতি কলেজ স্ট্রিট-এর অন্যান্য পর্ব …………………………
পর্ব ৫: সাতবার প্রুফ দেখার পর বুদ্ধদেব বসু রাজি হয়েছিলেন বই ছাপানোয়!
পর্ব ৪: লেখকদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুই লিখতে হয়, প্রফুল্ল রায়কে বলেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র
পর্ব ৩: পয়লা বৈশাখের খাতায় শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় মজাচ্ছলে লিখেছিলেন, ‘সুধাংশুরা রাজা হোক’
পর্ব ২: বাংলা মাসের সাত তারিখকে বলা হত ‘গ্রন্থতিথি’, বিজ্ঞাপনেও বিখ্যাত ছিল ‘৭-ই’
পর্ব ১: সত্তরের উথাল-পাথাল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় আমি প্রকাশনার স্বপ্ন দেখছিলাম