এখনই কোনও অ্যাকশন নয়। ফোনে ওরা আরও কথা বলুক। কেউ যেন সতর্ক হয়ে না যায়। বাঁশরীলাল আর বিদ্যুতের উপর ওরা কী ধরনের আক্রমণ করবে, জানতে হবে। পুরোটা জানার পর শেষ মুহূর্তে মাধাই আর গোটা টিমটাকে তুলতে হবে।
১১.
রাহুল জানত ত্রিপাঠীসাহেব কী বলবেন। এতদিনে সিনিয়র অফিসারদের কার কী স্টাইল, কার ডিকশনারি কী বলে, এসব মুখস্থ হয়ে গিয়েছে।
রাহুলের প্রথমেই ইচ্ছে হল মাধাইকে তুলে আনার। একইসঙ্গে জেলে বন্দি দুঁদে মাওবাদী নেতাকে নতুন কেস দিয়ে তুলে জেরা করার। তাহলে ওদের একটা বড় নেটওয়ার্ক, এমনকী, পুলিশ বা জেলে কে কে জড়িত, তাদের সন্ধান মিলবে।
রাহুল গোটা বিষয়টাই ত্রিপাঠী সাহেবকে জানিয়েছে। রঞ্জন সেন আর লিপিকা ধরও কনফারেন্স লাইনে ছিল। তাঁরা দু’জন ছদ্মপরিচয়ে কুসুমডিহাতে ঢুকে গিয়েছেন।
ত্রিপাঠী স্যরের নির্দেশ, ‘এখনই কোনও অ্যাকশন নয়। ফোনে ওরা আরও কথা বলুক। কেউ যেন সতর্ক হয়ে না যায়। বাঁশরীলাল আর বিদ্যুতের উপর ওরা কী ধরনের আক্রমণ করবে, জানতে হবে। পুরোটা জানার পর শেষ মুহূর্তে মাধাই আর গোটা টিমটাকে তুলতে হবে। ওদিকে জেলের ফোনে নজর রাখতে হবে। আর কোথায় কোথায় ফোন যাচ্ছে। ওখানে ধরপাকড় করলে ইনফরমেশন আসা বন্ধ হয়ে যাবে। আপাতত কাজ হল সেফলি বাঁশরীলালদের কুসুমডিহার বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে।’
রাহুল বুঝে নিয়েছে কাজ। সেইমতো সাজাচ্ছে। লোকাল থানার বড়বাবুকে মন্দ লাগছে না। তবে থানা সম্পর্কে আর যা যা খবর পেয়েছে, তাতে বেশি তথ্য শেয়ার করা যাবে না, লিক করবে।
রাহুল এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে টুকটাক লোকের সঙ্গে আলাপ আরম্ভ করে দিয়েছে। এখানেই কোথাও আছে বিষ্ণু আর সুনেত্রা। আগেরবার অল্পের জন্য তার হাত ফসকে পালিয়েছিল ওরা। উল্টে তার গলায় গভীর ক্ষত এঁকে দিয়ে গিয়েছিল, আজও যা বয়ে বেড়াচ্ছে রাহুল। এটা ভাবলেই একটা অস্থিরতা আসে শরীরে, একটা ব্যক্তিগত পরাজয়ের তেতো ভাব অনুভূত হয়। এই মাধাই লোকটা মাওবাদীদের সঙ্গে ডালপালায় যুক্ত। এরা সব প্রকাশ্য গণসংগঠন করে। আড়ালে থাকে আসল মুখগুলো। আচ্ছা, বিষ্ণু আর সুনেত্রা কি রাহুলকে দেখতে পেয়েছে? কিংবা জানতে পেরেছে রাহুল এখানে এসেছে! তাহলে তো সাবধান হয়ে যাবে।
থানার বড়বাবু অসীম অধিকারীর সঙ্গে বসে রাহুল ফোর্সের বিষয়ে জেনে নিল। আচমকা কেন দরকার হল ক’জন সেপাই, অস্ত্র! তার সঙ্গেই জানতে চাইল বহিরাগত ক’জন এসেছে, মূলত কোন কোন এলাকায় তারা থাকে। বাড়িগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব কি না।
পড়ুন কুসুমডিহার কাব্য-এর আগের পর্ব: শান্ত কুসুমডিহা এখন হিংস্র হয়ে ফুঁসছে
সেদিন রাতে রাহুল এলোমেলো ঘুরছিল। প্রথম দেখল মাধাই আর একটা ছেলে আসছে।
–কী ব্যাপার? এত রাতে?
–কেন? রাতে হাঁটা কি বারণ? আমার বাপ-ঠাকুরদার গ্রামে ঘড়ি দেখে হাঁটতে হবে নাকি!
রাহুলের ইচ্ছে হল ঠাস করে একটা চড় কসায়। মুখে বলল, ‘হাঁটায় বারণ নেই। আইনের বাইরে যেন কোনও কাজকর্ম না হয়, তাতে বারণ আছে।’
পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেল মাধাই।
এরপর রাহুল দেখল রেশমী আর একটি মেয়েকে।
–আপনারা? এত রাতে?
–আমি রেশমী। স্কুলে পড়াই। এক পরিচিতের বাড়ি গিয়েছিলাম।
–এত রাতে ঘুরবেন না। বাড়ি যান।
শেষমেষ রাহুল দেখল এক যুবককে। একাই আসছে। যেন কোনও তাড়া নেই। গুনগুনিয়ে গানও ভেসে আসছে।
–এত রাতে কে ঘুরছেন?
–আজ্ঞে আমি সুমিত, এখানকার পোস্ট মাস্টার।
–নমস্কার। আমি পুলিশের ইন্সপেক্টর রাহুল। তা এত রাতে কোত্থেকে?
–সময় কাটে না। ছেলে পড়িয়ে বেড়াই। গরিব ঘর সব এখানে। যদি ক’টাকে মানুষ করা যায়।
–তা ভালো, একদিন আপনার পোস্ট অফিসে চলে আসব। ভালো করে আলাপ হবে। আমার মনে হয় আপনি ইচ্ছে করলে আমার কাজে সাহায্যও করতে পারেন।
–নিশ্চয়ই। আমাকে দিয়ে কোনও উপকার হলে আমি একশোবার আছি।
ফেরার পথে নিঝুম কুসুমডিহার রাস্তা থেকে রাহুলের মনে হল সাগরটিলার ঢাল বেয়ে একটা ছোট্ট আলোকবিন্দু যেন উঠছে।
(চলবে)
জাতি হিসেবে বাঙালি নির্বাক ছিল না কখনও, তার শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির দিকচিহ্নগুলিকে আবারও নতুন করে ফিরে দেখা সম্ভব হবে, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। পৃথিবীর তাবৎ সংস্কৃতি গবেষণার চিন্তন-ভূগোলে বাংলা ভাষা এবং বাঙালি সাংস্কৃতিক নতুনতর মাত্রা যোগ করবে– এ দাবি অহেতুক নয়।
মজার বিষয়, শ্যাম বেনেগাল যখন হঠাৎই 'বোস: দ্য ফরগটেন হিরো' বানাচ্ছেন, এনডিএ আমলের শেষ ও ইউপিএ আমলের শুরুর আবহে, তার আশপাশে ভগৎ সিংয়ের গোটা দুই বায়োপিক মুক্তি পেয়ে গেছে, একটিতে নায়ক অজয় দেবগণ, অন্যটিতে সানি দেওল। অজয় দেবগণ অভিনীত বায়োপিকটিই বেশি স্মর্তব্য হয়ে রইল, সানি দেওলের 'ঢাই কিলো কা হাত' এক্ষেত্রে অকেজো হয়ে গেল।