শুরুতেই পিছিয়ে পড়লাম আমরা। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটা ভালো লাগছিল না আমাদের দু’জনেরই। কে আর মাঠের বাইরে বসে থাকতে চায়! তার ওপর চোখের সামনে যখন নিজের দল হারছে। আসলে কোচ শুরুতে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না আমাদের প্রথম দলে খেলানো নিয়ে। তিনি একটা দল নিয়ে এতদিন খেলেছেন। আমরা নতুন দলে যোগ দিয়েছি। হয়তো চাইছিলেন ধীরে ধীরে ম্যাচে নামিয়ে দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। যাই হোক, শুরুতেই এই পিছিয়ে পড়াটা কিছুতেই মনে নিতে পারছিলেন না সুব্রত। হাফ টাইমে ড্রেসিংরুমে ফেটে পড়লেন তিনি।
৬.
মোহনবাগানে সই করার পর প্রথম ম্যচটাই খেলতে গেলাম সম্ভবত বেঙ্গালুরুতে। ভারতীয় ফুটবলে সেটাই আমার প্রথম ম্যাচ। আমি, ইগর সই করার আগে জাতীয় লিগে খুব একটা ভালো জায়গায় ছিল না মোহনবাগানের। যতদূর মনে পড়ছে, শুরুর পর থেকে পাঁচে চলে গিয়েছে। আর তাই আমাদের নিয়ে আসা। খুব সম্ভবত আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল আইটিআই।
বেঙ্গালুরু পৌঁছে প্রথম টিম মিটিংয়েই যা বুঝলাম, কোচ সুব্রত আমাকে প্রথম দলে রাখলেন না। শুধু আমি নই। ইগরও শুরুতে রিজার্ভ বেঞ্চে। মানে মোহনবাগানে আমার ইনিংস শুরু হয়েছিল রিজার্ভ বেঞ্চে বসে। ডাগ আউটে আমি আর ইগর পাশাপাশি বসে। মাঠে খেলা চলছে। আমাদের চোখের সামনেই মোহনবাগান গোল খেয়ে গেল। শুরুতেই পিছিয়ে পড়লাম আমরা। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটা ভালো লাগছিল না আমাদের দু’জনেরই। কে আর মাঠের বাইরে বসে থাকতে চায়! তার ওপর চোখের সামনে যখন নিজের দল হারছে। আসলে কোচ শুরুতে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না আমাদের প্রথম দলে খেলানো নিয়ে। তিনি একটা দল নিয়ে এতদিন খেলেছেন। আমরা নতুন দলে যোগ দিয়েছি। হয়তো চাইছিলেন ধীরে ধীরে ম্যাচে নামিয়ে দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। যাই হোক, শুরুতেই এই পিছিয়ে পড়াটা কিছুতেই মনে নিতে পারছিলেন না সুব্রত। হাফ টাইমে ড্রেসিংরুমে ফেটে পড়লেন তিনি! আর কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাইলেন না। চাইলেন, দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আইটিআইয়ের ওপরে আক্রমণের রোলার চালাতে। আমাকে আর ইগরকে জানিয়ে দিলেন, দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মাঠে নামতে।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
প্রথম ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলাম। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রাপ্তি হল, সুব্রত বুঝে গেলেন, চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে থাকতে হলে আমাকে আর ইগরকে প্রথম দলে রাখতেই হবে। আমাদের ওপর ভরসা বাড়ল কোচের। এবার আমরা গেলাম জাতীয় লিগের সবচেয়ে কঠিন সফরে। গোয়া পর্ব। একেবারের পর পর চারটে ম্যাচ। এখনকার আইএসএলের মতো নয়। এখন যেমন একটা ম্যাচ খেলতে গিয়ে পরের দিনই চলে এলাম, সেরকম নয়। তখন গোয়ার একাধিক টিম। ডেম্পো, চার্চিল, সালগাঁওকর, ভাস্কো।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
আবারও বলছি, এতদিন আগের ঘটনা। ফলে ঠিকঠাক সব মনে করতে পারছি না। যতদূর মনে হয়, আমাদের গোল শোধটা ইগর করেছিল। আমি আর ইগর মাঠে নামতেই আক্রমণের ঝাঁঝ বেড়ে গেল। আইটিআই-এর বক্সে ঝাঁপিয়ে পড়লাম আমরা। প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরি হল। কিন্তু গোল হল না। অবশেষে সম্ভবত ইগরের গোলে ‘এক’ পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরলাম।
প্রথম ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলাম। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রাপ্তি হল, সুব্রত বুঝে গেলেন, চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে থাকতে হলে আমাকে আর ইগরকে প্রথম দলে রাখতেই হবে। আমাদের ওপর ভরসা বাড়ল কোচের। এবার আমরা গেলাম জাতীয় লিগের সবচেয়ে কঠিন সফরে। গোয়া পর্ব। একেবারের পর পর চারটে ম্যাচ। এখনকার আইএসএলের মতো নয়। এখন যেমন একটা ম্যাচ খেলতে গিয়ে পরের দিনই চলে এলাম, সেরকম নয়। তখন গোয়ার একাধিক টিম। ডেম্পো, চার্চিল, সালগাঁওকর, ভাস্কো। সেই বছর ফ্র্যাঞ্জা ছিল কি না, এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে আমরা চারটে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলার জন্য গোয়া গিয়েছিলাম। সেই সময় বলা হত, জাতীয় লিগ কোন দল পাবে, তা ঠিক হয়ে যেত গোয়া পর্বর পর। এই চারটে ম্যাচ থেকে প্রাপ্ত পয়েন্ট জাতীয় লিগে কোনও ক্লাবের ভাগ্য গড়ে দিত। লিগ টেবিলে চ্যাম্পিয়নশিপ দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে থেকেই আমরা রওনা দিলাম গোয়াতে।
গোয়ায় গিয়ে আমরা আক্রমণের ঝড় তুলে দিলাম। এরপরেও অনেকবার গোয়া খেলতে গিয়েছি। কিন্তু পুরো দলটা গোয়াতে এরকম ফর্মে আগুন ঝাড়ানো ফুটবল খেলেছে কি না, মনে পড়ছে না। আমি, ইগর, স্টিফেন, দুসিত– চারজনই অসাধারণ ফর্মে। চারটে ম্যাচ থেকে আমরা ফিরলাম ১০ পয়েন্ট নিয়ে। মানে তিনটে ম্যাচ জিতলাম। একটা ম্যাচ ড্র। ব্যস, গোয়া পর্বর এই ‘১০ পয়েন্ট’ আমাদের লিগ টেবিলের শীর্ষে নিয়ে চলে গেল। তারপর থেকে জাতীয় লিগ জয় করাটা ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা। মোহনবাগান যেন সেই বছর অশ্বমেধের ঘোড়া। গোয়া পর্বর পর থেকে যাদের সামনে পেয়েছি, গুঁড়িয়ে দিয়েছি। শেষ পরিস্থিতি এমন এল যে, চার ম্যাচ আগে টালিগঞ্জ অগ্রগামীকে হারালেই আমরা জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব। কলকাতায় টালিগঞ্জ আমাদের সামনে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল। এর মাঝে অবশ্য পারিবারিক সমস্যায় দুসিত দেশে ফিরে গিয়েছিল। তাতেও আমাদের অশ্বমেধের ঘোড়ার দৌড়ে কোনও সমস্যা হয়নি। টালিগঞ্জকে হারিয়ে চার ম্যাচ বাকি থাকতেই আমরা জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলাম।
তখনও জাতীয় লিগের চার ম্যাচ বাকি। আমরা চ্যাম্পিয়ন। ফলে শেষ ম্যাচগুলিতে সবাই গা ছাড়া দিয়ে দিল। আর ঠিক এই সময়েই এল ডার্বি। মোহনবাগান জার্সিতে আমরা প্রথম ডার্বি। কিন্তু সামনে কোনও লক্ষ্য না থাকায় ডার্বিতে পুরো দলটাই কেমন দাঁড়িয়ে রইল। আমার প্রথম ডার্বির মুহূর্তটা ভালো হল না। হেরে গেলাম আমরা।
অনুলিখন: দুলাল দে
(চলবে)
…তোতাকাহিনি-র অন্যান্য পর্ব…
পর্ব ৫। আশিয়ানের আগে সুভাষ ভৌমিক প্রায়ই ফোন করত আমাকে, বোঝাত ইস্টবেঙ্গলে সই করার জন্য
পর্ব ৪। আর একটু হলেই সই করে ফেলছিলাম ইস্টবেঙ্গলে!
পর্ব ৩। মোহনবাগানের ট্রায়ালে সুব্রত আমায় রাখত দ্বিতীয় দলে
পর্ব ২। কলকাতায় গিয়েই খেলব ভেবেছিলাম, মোহনবাগানে ট্রায়াল দিতে হবে ভাবিনি
পর্ব ১। ম্যাচের আগে নাইটপার্টি করায় আমাকে আর ডগলাসকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ক্লাব