দোকানের বাক্সে শুধু নাম নয়, ভিন্টেজ অরিজিনালের ব্যাপারটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। অসামান্য ট্যাগলাইনও চোখে পড়ে। ‘একশো বছর ধরে বাঙালির মুখরক্ষা করে আসা ঐতিহ্যময় প্রতিষ্ঠান’। কিংবা ‘রহস্য ফেলুদার জন্য, বাক্স আপনার’। ইংরিজিও আছে। ‘উই মে নট বি দ্য সুইটেস্ট, বাট শাটল ফর শিওর’। সেলিব্রিটিদের সুপারিশের অভাব নেই। বাক্সে, বিজ্ঞাপনে, ফলকে এর নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। রবীন্দ্রনাথ জলযোগের প্রশংসা করেছিলেন। ল্যাংচায় উত্তম প্রসেনজিতের ছড়াছড়ি। মিষ্টির সঙ্গে যথেষ্ট মাখামাখি, তাই এই উক্তিটুকুও থাক। ‘একটাই শ্রী, বাকি সব বিশ্রী’ (শ্রী ঘৃত সম্পর্কে)।
চিত্রঋণ: তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়
হাতছাড়া হতে হতেও হয়নি। আমরা বেঁচে গেছি। আমরা বলতে পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিরা। দেশের কত কী চুরি হয়ে গেছে। আলোকপ্রাপ্ত পশ্চিমের সংগ্রহশালায় সদর্পে প্রদর্শিত এমন মূল্যবান জিনিসপত্রের অভাব নেই। সাধারণ সোনাদানা, হিরে-মোতির কথা ছেড়েই দিলাম। ফোন, বাইক, নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড, নোবেল, আইডেন্টিটি, পাসওয়ার্ড– সব চুরি যায়। ওসবে আমরা মাথা ঘামাই না। এখন কিছু নেই আমাদের। কিন্তু ছিল তো। গর্বের ইতিহাস। সেটি চুরির চেষ্টা হলে নড়েচড়ে বসতেই হয়। কিছুদিন আগে রসগোল্লার উৎপত্তিস্থলের তথ্যটি নাকি দখল হয়ে যাচ্ছিল। কীসব মামলা-মোকদ্দমা-ডিবেট করে আপাতত তা বাংলাতেই রয়ে গেছে। আমরা বেজায় খুশি। নিশ্চিন্ত। বাঙালির উদ্ভাবিত নিজস্ব, অরিজিনাল হেরিটেজ বলে কথা। ‘যা গ্যাছে তা যাক’ তা বলিনি কিন্তু। দ্য সুইটেস্ট পার্ট, রসগোল্লার অরিজিন রাইট ক্লেম করা ওড়িশার মানুষের প্রতি আমাদের প্রীতি বিন্দুমাত্র টসকায়নি। জগন্নাথের মিষ্টি প্রসাদ, পুরী তো আমাদেরও।
বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে নানাবিধ অনিশ্চয়তা, অবিশ্বাস, ক্রমবর্ধমান তিক্ততার মধ্যেও মিষ্টি নিয়ে একটু টাইমপাস আদিখ্যেতা করি বরং। শুধুমাত্র স্বাদ-ফুর্তি নয়, অনেক আবেগ এর সঙ্গে জড়িত। রসগোল্লার রস চেপে বেরসিক দ্রব্যে পরিণত করে খেলেও তা শেষ পর্যন্ত রসগোল্লাই। সন্দেশে এমন করা অসম্ভব। সীতাভোগ, মিহিদানাতেও নয়। সোজা কথা, বাংলার অধিকাংশ মিষ্টি অপরিবর্তিত অবস্থায়, স্বমহিমায় বিরাজ করছে। করবেও। চকোলেটকে কিছুদিন ধরে বহিঃশত্রু হিসেবে দেখা হচ্ছে। মিষ্টি শুধু নয়, মোমোতেও এর আগ্রাসন নজরে এসেছে। কেউ খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে বলে মনে হয় না। ‘তোমায় নতুন করে পাবো বলে’ গুনগুন করে হয়তো একটু নির্দোষ কামড় দিয়েছে।
………………………..
মিষ্টির বাক্সের দেহ-সৌন্দর্য, টেনসাইল স্ট্রেন্থ স্টাডি করলে অনেক বিষয়ে উপনীত হওয়া যায়। অতি জনপ্রিয়, দামি মিষ্টির দোকান, অনেকেই এখন ম্যাকডোনাল্ডসের মতো শৃঙ্খল যুক্ত ইন্ডাস্ট্রি। তাদের দাপুটে আধারে আভিজাত্যের পরিচয়। পরিবেশবান্ধব ঝোলার মধ্যে সুরক্ষিত অবস্থায় সেটি যাতায়াত করে। লুকস, ব্র্যান্ড ম্যাটার। সিরিয়াস মিষ্টিমোদীদের ব্যাপার আলাদা। কলকাতার উত্তরাঞ্চল, শহর ছাড়িয়ে চন্দননগর, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, জনাই, শক্তিগড়, কৃষ্ণনগর মিষ্টিমস্তানির জন্য পরিচিত। ডাক্তারদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ওখানকার লোক বাক্সভর্তি ঐতিহ্যপূর্ণ, আল্টিমেট উৎকর্ষের মিষ্টি এনে নিমন্ত্রকের হাতে ধরিয়ে যে গর্বের হাসিটি হাসেন, সেটি লেজিটিমেট।
……………………….
বিয়ের বেনারসি, চায়ের ভাঁড়, চায়ের কেটলি, দ্বিতীয় শব্দগুলো নজরে আনা যাক। কন্টেন্ট শুধু নয়, জরুরি তার কন্টেনার-ও। এই যেমন, ঘন মিষ্টি দই, রাবড়ি, রসমালাই, বিভিন্ন মিষ্টির তরল রসকে বশে রাখতে ভাঁড়ের, হাঁড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। কালের থাবা পড়েছে ভাঁড়ে। ঘোলাটে সাদা প্লাস্টিকের কৌটো এর দখল নিয়েছে। ভারাক্রান্ত হয়ে পড়লেও করার বিশেষ কিছু নেই। শুনেছি, রানাঘাট থেকে গাড়িতে ফিরছিলেন কলকাতার এক বাবু। রাস্তায় অনেক গাড়ি পিছন থেকে বার বার হর্ন বাজাচ্ছিল। ওভারটেক করার সময় উত্তেজিতভাবে হাত নেড়ে কিছু বলেও যাচ্ছিল। গাড়ি থামিয়ে চোখে পড়েছিল তেল লিক করছে। এদিকে নদীয়া জেলার বিস্তীর্ণ আখের খেত ছেড়ে কোটি কোটি পিঁপড়ে ধেয়ে আসছে গাড়ির দিকে। অচিরেই আবিষ্কার হল, তেল নয়, রস। ডিকি ভর্তি পান্তুয়া নিয়ে আসছিলেন উনি। এনএইচথার্টিটু-র কুখ্যাত পট হোলের আঘাতে সব হাঁড়ি আক্রান্ত। রসময় অ্যাম্বাসাডরটির এরপর কী হল, তা জানা যায়নি। যাই হোক, এখন বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রত্যেক দিন সিল করা টিনের কৌটোয় টন টন রসের মিষ্টি ইমিগ্রেশন পেরচ্ছে নিশ্চিন্তে। শুকনো মিষ্টির ক্ষেত্রে সাদা বাক্স। কেন জানি না, বাঙালিদের মধ্যে বাক্সকে ‘প্যাকেট’ বলার অভ্যেস নজরে আসছে। ঠিক যেমন, বাড়িকে ‘বিল্ডিং’। ঘরকে ‘রুম’।
মিষ্টির বাক্সের দেহ-সৌন্দর্য, টেনসাইল স্ট্রেন্থ স্টাডি করলে অনেক বিষয়ে উপনীত হওয়া যায়। অতি জনপ্রিয়, দামি মিষ্টির দোকান, অনেকেই এখন ম্যাকডোনাল্ডসের মতো শৃঙ্খল যুক্ত ইন্ডাস্ট্রি। তাদের দাপুটে আধারে আভিজাত্যের পরিচয়। পরিবেশবান্ধব ঝোলার মধ্যে সুরক্ষিত অবস্থায় সেটি যাতায়াত করে। লুকস, ব্র্যান্ড ম্যাটার। সিরিয়াস মিষ্টিমোদীদের ব্যাপার আলাদা। কলকাতার উত্তরাঞ্চল, শহর ছাড়িয়ে চন্দননগর, শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়া, জনাই, শক্তিগড়, কৃষ্ণনগর মিষ্টিমস্তানির জন্য পরিচিত। ডাক্তারদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ওখানকার লোক বাক্সভর্তি ঐতিহ্যপূর্ণ, আল্টিমেট উৎকর্ষের মিষ্টি এনে নিমন্ত্রকের হাতে ধরিয়ে যে গর্বের হাসিটি হাসেন, সেটি লেজিটিমেট। এঁদের বাক্সে কর্পোরেট ফ্লেভার নেই।
এরপর মাঝারি খ্যাতির দোকান। তার মানেই মাঝারি মান, তা নাও হতে পারে। এমন দোকানের বাক্সে শুধু নাম নয়, ভিন্টেজ অরিজিনালের ব্যাপারটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। অসামান্য ট্যাগলাইনও চোখে পড়ে। ‘একশো বছর ধরে বাঙালির মুখরক্ষা করে আসা ঐতিহ্যময় প্রতিষ্ঠান’। কিংবা ‘রহস্য ফেলুদার জন্য, বাক্স আপনার’। ইংরিজিও আছে। ‘উই মে নট বি দ্য সুইটেস্ট, বাট শাটল ফর শিওর’। সেলিব্রিটিদের সুপারিশের অভাব নেই। বাক্সে, বিজ্ঞাপনে, ফলকে এর নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। রবীন্দ্রনাথ জলযোগের প্রশংসা করেছিলেন। ল্যাংচায় উত্তম প্রসেনজিতের ছড়াছড়ি। মিষ্টির সঙ্গে যথেষ্ট মাখামাখি, তাই এই উক্তিটুকুও থাক। ‘একটাই শ্রী, বাকি সব বিশ্রী’ (শ্রী ঘৃত সম্পর্কে)। অবিস্মরণীয় এক স্টেটমেন্ট: ‘চুমু যে খায়, সে আবার খাওয়ায়ও। সন্দেশের মতো মধুর হলেও, চুমুতে আর সন্দেশে তফাত আছে। ও-জিনিস একলা খাবার না। একা একা খাওয়া যায় না, অপরকে খাইয়ে খেতে হয়’ (শিব্রাম)। আরও আছে, এখন থাক।
বাক্সের কথা হচ্ছিল। সুভদ্র দোকানের বাক্সের চেহারা যাই হোক, ভিতরে একজোড়া যত্নপত্র থাকবেই। অয়েল পেপার, একটি নিচে, অনেকসময় অন্যটি মিষ্টির উপরে। মিষ্টিঘরে এমন একটি আসন, মন্দাকিনী-সম আবরণ থাকলে বিষয়টা নিবিড় হয়ে ওঠে। এরপর তৃতীয় গোত্র। ছোট, একটু মিনমিনে, টিকে আছে এখনও, গ্ল্যামারের ‘গ’ নেই, দাম কম। বেসিক মিষ্টিগুলো এরা ভালোই করে। নিজেরা বানায়। বাকি সব চালানি জিনিস। ভালো নয় তেমন। প্রায় কেউই খায় না, ঠাকুরকে উৎসর্গ করে। এই দোকানগুলোতে এখনও পাওয়া যায় গুজিয়া। শিঙাড়ায় বাদাম, ফুলকপি। এদের বাক্সের চারদিকে চারটি জেনেরিক মিষ্টির নাম ছাপা থাকে। ওপরে দোকানের নাম থাকে না। আলাদা করে ছাপানোর খরচ করতে পারে না বোধহয়। এক রঙা ব্লক ছাপা ‘প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান’ কথাটি চোখে পড়তে পারে। ওপরে পৌরাণিক চরিত্র, যেমন রাধাকৃষ্ণের ছবি দেওয়া, অতি আলঙ্কারিক সোনালি ডিজাইনের দাপুটে কার্ডবোর্ডের বক্স দেখলে বুঝতে হবে তাতে আছে কাজু বরফি, শোনপাপড়ি, লাড্ডু, খোয়া ক্ষীরের পুর-ভরা মিষ্টি পটল, একটু কম রসসিক্ত গুলাবজামুন জাতীয় অবাঙালি মিষ্টি। বাঙালি সবকিছুরই কদর করতে জানে। কিন্তু বাংলা নববর্ষে এসব একেবারেই নো নো।
নববর্ষে আসি। সকাল থেকেই ওই দিনের স্পটলাইট কালীঘাটের দিকে। ব্যবসায়ীরা আসতে থাকেন ভোর থেকে। বারোটার দাগ-ছোঁয়া ব্যবসার কাঁটাকে মাথায় হাত বুলিয়ে থামিয়ে রাখতে কালীশক্তির সাপোর্ট চাইতে হয়। ডালা-ভর্তি পুজোর উপকরণ নিয়ে ওঁরা পুজোয় বসে যান কালীঘাট চত্বরে। বাজখাঁই রোদে দাপায় লাল জবার মালা। ডালার মধ্যে সিদ্ধিদাতার পাশে হাজির থাকে লাল কাপড়ে বাঁধানো হালখাতা। এটির সঙ্গে ব্যবসাবিমুখ, কালচার সচেতন কিছু বাঙালির পরিচয় আছে। এর জাম্বো এডিশনটি আমরা দেখেছি সত্যজিতের হাতে। জমা-খরচ, কী পাইনি তার হিসাব মেলাতে নয়, কী পেতে চাই তার স্ক্রিপ্ট, স্কেচ, নোটস ভর্তি অমূল্য সাংস্কৃতিক সম্পদ ওই খেরোর খাতা। আরও অনেক পুজোর উপকরণের মধ্যে উঁকি মারে ছোট একটি মিষ্টির বাক্স। এর কন্টেন্টে শুধু চেনা মিষ্টি নয়, থাকে আপাত অবাঙালি আর একটি মিষ্টি। পেঁড়া। একমাত্র ধর্মীয় মিষ্টান্ন।
কলকাতার প্রাচীনতম, তদুপরি বাঙালি অধ্যুষিত এই অঞ্চলে কীভাবে পেঁড়া-শিল্প গড়ে উঠল জানা নেই। একটু পুরনো হয়ে যাওয়া ইরেজারের মতো গোলচে, অসমান ক্যারম ঘুঁটির মতো চেহারা, মাঝখানটি কিঞ্চিৎ দাবানো। আমি দেখিনি, তবে আন্দাজ করতে পারি তার গায়ের রং সোফিয়া লোরেনের মতো। কপাল ভালো থাকলে প্রসাদী পেঁড়াটির নরম ক্ষীরের মৃদু সমর্পণের পরমুহূর্তে, দ্বিতীয় কামড়েই পাওয়া যাবে মিছরির দানা। কট করে ভাঙবে দাঁতে। সস্তার পেঁড়া আবার অন্যরকম। খেতে গেলে খলনুড়ির প্রয়োজন হতে পারে। (আশ্চর্য, বারবার খলনারী টাইপ হয়ে যাচ্ছিল) না খেলে ক্ষতি নেই। অ্যাজ ইউজুয়াল, যাবে সুপার উওম্যান ঠাকুরের ভোগে। এখানেই ব্যাপারটা শেষ হচ্ছে না। মিষ্টি দিয়ে বাঙালি মিষ্টি খায় না। নোনতা কিছু লাগে। বাক্সের কোণে ঠাসা নিদেনপক্ষে দু’টি লুচি, একধারে ঝোলের স্ট্যাম্প, ভাগ্য ভালো থাকলে আলুর খণ্ডও (আদতে যা পেরু থেকে উদ্ভূত সবজি) পাওয়া যেতে পারে। পয়লা বৈশাখের সূর্যের অন্তর্ভেদী লেজার ক্ষীণ কার্ডবোর্ডের বাক্সকে নাস্তানাবুদ করে চলে ক্রমাগত। বাক্সের সবকিছু গরম থাকে শেষপর্যন্ত। দেখি, ভাবি আর অবাক হই। এই যে পৃথিবী পুড়ছে। আমরাও পুড়ছি। আমাদের ওই বাক্স-সম সহনশীলতার কথা সুকুমার সেন লেখেননি। রায় বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই লিখতেন ‘অমৃত বাক্সের সন্ধানে’।
পেরুর আলু, যাবতীয় ছানার মিষ্টির পর্তুগিজ অরিজিন, জবার মরিশাস ম্যাডাগাস্কার কানেকশন– আন্তর্জাতিক রেফারেন্সের শেষ নেই। দুনিয়ার অজস্র ম্যাজিক এলিমেন্টস দিয়ে অত্যাশ্চর্য মিষ্টি বানিয়ে, খেয়ে, খাইয়ে চলেছি আমরা। শুভদিনে, শুভকাজে, আসন্ন শুভমুহূর্তের ওপর অগাধ বিশ্বাসে ছোট-বড় মিষ্টির বাক্স নিয়ে হাজির হচ্ছি অন্যের দরজায়, প্রতিনিয়ত। ভালোবাসার (মিষ্টির প্রতি) পুরনো অভ্যাসে।
নিজেদের সম্পদ শুধু নয়, জিলাবি থেকে মাইসোর পাক, কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, বাকলাভা, চিজকেক, টিরামিসু, পাই, মোচি– সব চাই, সব খাই আমরা। একদা শত্রু মোগল, ব্রিটিশদের ভালোগুলো যথেষ্টই নিয়েছি। নিজেদের মধ্যে একটু গুজগুজ করলেও আমরা দুনিয়াকে শ্রদ্ধা করতে জানি। অথচ এরপরেও আমাদের কোনও অহংকার নেই। অভিমান আছে কিছু। থাকবে নাই বা কেন? অবাঙালিরা বুঝলই না যে আমরা শুধু নিজের নয়, পরের শ্রীর প্রতি কাতর হতেও উৎসাহী। মিঠে শব্দ, মিষ্টি মিউজিক, আলস্যের জয়গান গাওয়া, মিষ্টিমাখা জীবনের মাধুর্য নিয়ে আমাদের দিনযাপন। ভুঁড়ির ডায়ামিটার, ডায়াবিটিসের অস্বস্তি নেহাতই গুরুত্বহীন জৈবিক বিষয় মাত্র। ভারী শিল্পে আমরা ব্যর্থ। তাই পলিউশনের প্রশ্ন ওঠে না। আমাদের মানসিক ক্লাইমেট বদলায়নি। ওজন বেড়েছে, আবেগ ফুটো হয়নি। হাঁড়ি ফুটো হলেও জীবনের আসল রসগুলো ইনট্যাক্ট আছে বলেই আমার বিশ্বাস। বেশ আছি, উপলব্ধি-জনিত অফুরন্ত প্রাপ্তি নিয়ে। শ্রী-ম কথিত অপ্রকাশিত রামকৃষ্ণে আছে, জলভরা তালশাঁস সন্দেশ হল মরুদ্যানের প্রতীক। চিনির কোটিং দেওয়া মিষ্টির মরীচিকায় পা বাড়ালেই বিপদ। মালপোয়া আসলে মিষ্টিপ্রিয় জীবনের ম্যাজিক কার্পেট। শয়নে, লেহনে সমান শান্তিময়। বিশ্ব যখন নিদ্রামগন, তখন আমরা অনেকেই যাই গোপন অভিসারে। নিঃশব্দ চরণে। হিমশীতল রেফ্রিজারেটরের দিকে, মিষ্টির মরমি বাক্সের কাছে, একটু উষ্ণতার জন্য।
মজার বিষয়, শ্যাম বেনেগাল যখন হঠাৎই 'বোস: দ্য ফরগটেন হিরো' বানাচ্ছেন, এনডিএ আমলের শেষ ও ইউপিএ আমলের শুরুর আবহে, তার আশপাশে ভগৎ সিংয়ের গোটা দুই বায়োপিক মুক্তি পেয়ে গেছে, একটিতে নায়ক অজয় দেবগণ, অন্যটিতে সানি দেওল। অজয় দেবগণ অভিনীত বায়োপিকটিই বেশি স্মর্তব্য হয়ে রইল, সানি দেওলের 'ঢাই কিলো কা হাত' এক্ষেত্রে অকেজো হয়ে গেল।