মৃত্যুতেই রবার্ট ক্লাইভদের শেষ হয় না। সময়ের প্রয়োজন তাঁদের আবার খুঁজে বের করে। মৃত্যুর আগে চরম সমালোচিত মানুষটি আবার নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এলেন বিশ শতকের গোড়ায়। ভারতে প্রবল জাতীয় আন্দোলনের চাপে ক্লাইভের মধ্যে এক ব্রিটিশ নায়ককে পুনরাবিষ্কার করলেন লর্ড কার্জন। ভারত ও ব্রিটেনে ক্লাইভের মূর্তি বসানোর উদ্যোগে উৎসাহ দিলেন কার্জন। কিন্তু ভারতে এমন উদ্যোগ জাতীয়তাবাদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলবে মনে করে বড়লাট লর্ড মিন্টো সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। তবে এই উদ্যোগেই লন্ডনে প্রথম সর্বজনীন জায়গায় ক্লাইভের মূর্তি উন্মোচিত হয় ১৯১২ সালে, অর্থাৎ, তাঁর মৃত্যুর ১৩৮ বছর পর!
বিলেতের নভেম্বরের একটা দিন। জানলার শার্সির বাইরে মেঘ আর ঝিরঝিরে বৃষ্টির দিকে চেয়ে আছেন মানুষটি। যেন তাঁর ওপর ঝরে পড়া অনন্ত শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মতো ঝিরিঝির করে পড়ে চলেছে বৃষ্টি। আফিমের মাত্রা বাড়িয়েও ঘুম আসে না। ক’দিন আগেই এক বন্ধুকে লিখেছেন যে, অসুখের সামনে তাঁর জীবনীশক্তি অসহায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু ডাক্তারদের মতে, সেই জন্য তাঁর আয়ু একঘণ্টাও কমবে না। কয়েকজন তাস খেলার বন্ধু এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর অবস্থা দেখে নিঃশব্দে বিদায় নিয়েছেন। বাইরের দুনিয়ার কাছে শত্রুদের হেলায় সরিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ইউনিয়ন জ্যাক উড়িয়ে ফেরা ‘ক্লাইভ অফ ইন্ডিয়া’ নিজের দুই চোখের পাতা এক করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন!
তাঁর চোখে ভেসে ওঠে আড়াই বছরের একটি শিশুর ছবি। বড় পরিবারের বোঝা খানিক কমাতে তাঁকে নিজেদের কাছে রেখে বড় করার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন এক নিঃসন্তান মাসি ও মেসোমশাই। কিন্তু কয়েক বছর পরেই তাঁরা বুঝলেন যে, ছেলেটিকে ‘মানুষ’ করা মুখের কথা নয়। উদ্ধত মেজাজ আর লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ার দুর্নিবার আসক্তির জন্য তাঁকে শাসন করা ছিল দুঃসাধ্য! তার সঙ্গে যে কোনও মূল্যে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করানোর অদম্য জেদের কাছে বয়স্ক দম্পতি প্রায় পণবন্দি হয়ে গেলেন!
এই দুর্ধর্ষ স্বভাবের জন্য একের পর এক স্কুলের খাতা থেকে নাম কাটা গেল ছেলেটির। সঠিক পথে আনার শেষ চেষ্টা হিসাবে ব্যবহারজীবী রিচার্ড ক্লাইভ নিজের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে তাঁকে ভারতগামী এক জাহাজে তুলে দিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্ষিক পাঁচ পাউন্ড মাইনের জুনিয়র রাইটার হিসাবে প্রথমবার ভারতে এলেন ক্লাইভ। সময়টা ১৭৪৪ সাল। সে সময় মাদ্রাজের অসহ্য পরিবেশে নিয়ে ক্লাইভ তাঁর ক্ষোভ আর দ্রুত বাংলায় বদলির আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন বাবাকে। জীবনযাপনের খরচ কম হওয়া ছাড়াও স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার সুযোগও কলকাতায় অনেক বেশি। তবে চাইলেই তো আর সব পাওয়া যায় না! তাই প্রায় পাঁচ বছর মাদ্রাজে লেজার আর ডেসপ্যাচ লেখার কাজে পড়ে রইলেন রবার্ট।
অবস্থা প্রতিকূল, তবু ক্লাইভের মেজাজের কোনও পরিবর্তন হল না। একবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার ফলে গভর্নর ক্লাইভকে সিনিয়রের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আদেশ দেন। বাধ্য হয়ে ক্লাইভ ক্ষমা চাইলেন। তবে সেই অফিসার বিষয়টিকে পাকাপাকিভাবে মিটিয়ে ফেলার উদ্দেশ্যে ক্লাইভকে ডিনারে নিমন্ত্রণ করেন। ক্ষমা চাইলেও তাঁর ক্ষোভ যে কমেনি, যেটা বোঝাতে ক্লাইভ সেই প্রস্তাব নাকচ করে সরাসরি জানিয়ে দেন যে, গভর্নরের আদেশ মানতে তিনি ক্ষমাটুকুই চেয়েছেন। গভর্নর তাঁকে নিমন্ত্রণ গ্রহণের আদেশ দেননি। সুতরাং…। এমন আচরণের জন্য স্বাভাবিক কারণেই ক্লাইভ সহকর্মীদের মধ্যে মোটেও জনপ্রিয় ছিলেন না।
খানিকটা সেই মারকুটে মেজাজের জন্যই কর্মক্ষেত্রে এই দিনগত পাপক্ষয় থেকে মুক্তির পথ হঠাৎ খুলে যায় ক্লাইভের সামনে। ১৭৪৬ সালে মাদ্রাজের ব্রিটিশ উপনিবেশ দখল করে নেয় ফরাসিরা। ফরাসিদের বোকা বানিয়ে ক্লাইভ পালিয়ে যান এক নেটিভ ভৃত্যের ছদ্মবেশে। কলম ছেড়ে তরোয়াল ধরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। পরবর্তী লড়াইগুলিতে নিজেকে এতটাই দক্ষ প্রমাণ করেন যে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে লন্ডনে পাঠান। নোটে লেখেন– মি. রবার্ট ক্লাইভ নামে সামরিক দক্ষতা সম্পন্ন কোম্পানির এক রাইটারকে তার কাজের স্বীকৃতিতে সামরিক পদ দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তী বছরগুলিতে ক্লাইভের মাইনে বেড়ে দাঁড়ায় বার্ষিক ৩০ পাউন্ড। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা, তাঁর হাতে আসে সেই অনুমতি, যার আশায় সাত সমুদ্র পাড়ি দিতেন ব্রিটিশ যুবারা। সেই ব্যক্তিগত স্তরে ব্যবসা করার অনুমতি পেলেন ক্লাইভ। ফুলে-ফেঁপে উঠতে লাগল তাঁর আয় ও সঞ্চয়। এর মধ্যে দাক্ষিণাত্যের রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়লেন। সামরিক ক্ষেত্রে সেখানে বেশ কিছু সংস্কার করলেন। সব থেকে বড় কথা, উপমহাদেশের মাটিতে অনেকটাই রুখে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসিদের অগ্রগতি।
১৭৫৩ সালে বিজয়ী বীরের সম্মান আর নবপরিণীতা বধূকে নিয়ে দেশে ফেরার জাহাজ ধরেন ক্লাইভ। সঙ্গে ৫০ হাজার পাউন্ড সঞ্চয়। ইউরোপের রণাঙ্গনে ফ্রান্সের সামনে বেশ বেকায়দায় থাকা ব্রিটিশ জনগণের দেশাত্মবোধ ফুলে উঠল তাঁকে দেখে। তবে সরকারি তরফে কোনও উচ্ছ্বাস না দেখে বেশ হতাশ হন ক্লাইভ। তবে হতাশ না হয়ে সামাজিক প্রতিপত্তি আয়ত্ত করার উদ্দেশ্যে পার্লামেন্টের একটি আসন পাওয়ার দিকে নজর দিলেন তিনি। ব্রিটিশ রাজনীতির জটিল গোলকধাঁধায় তাঁর প্রায় সমস্ত সঞ্চয় ব্যয় হয়ে গেল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সংসদের আসন ধরে তিনি রাখতে পারলেন না।
অর্থনৈতিক প্রয়োজনের সঙ্গে উপমহাদেশে ফরাসিদের সম্পূর্ণ পরাজিত করে ব্রিটিশ ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করায় লক্ষ্যে দ্বিতীয়বার ভারতে ফিরলেন ক্লাইভ ১৭৫৫ সালে। এই পর্যায়ে তাঁর প্রথম বড় সাফল্য ঘেরিয়া দুর্গ বিজয়। কিন্তু তাঁর থেকেও বড় সাফল্য কলকাতা পুনরুদ্ধার। ১৭৫৬ সালের জুন মাসে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ব্রিটিশ উপনিবেশ কলকাতা দখল করে ফোর্ট উইলিয়াম ধ্বংস করেন। মাদ্রাজ থেকে ক্লাইভের সঙ্গে কর্নেল অ্যাল্ডারক্রন-কে কলকাতা পুনরুদ্ধারের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সঙ্গে থাকে অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের নৌবহর। কিন্তু রাজকীয় বাহিনীর আধিকারিক হিসাবে ক্লাইভের নেতৃত্বে লড়াই করতে অস্বীকার করেন অ্যাল্ডারক্রন। এই সমস্যা মেটাতে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় যে, অ্যাল্ডারক্রনকে ছাড়াই এগিয়ে যাবে অভিযান। আর তাঁর অধীনে সেনারা নৌসেনা হিসাবে বিবেচিত হয়ে লড়বেন ওয়াটসনের নেতৃত্বে। কলকাতা আবার ব্রিটিশ দখলে আসে ১৭৫৭ সালের ২ জানুয়ারি। কিন্তু ক্লাইভের পরিবর্তে গভর্নর হিসাবে আয়ার কূট নামে অ্যাল্ডারক্রন-এর বাহিনীর এক ক্যাপটেনের নাম ঘোষণা করে দেন ওয়াটসন। সেই নিয়ে আরেক প্রস্থ ঝামেলা শুরু হয়। ওয়াটসন ক্লাইভের উপর গুলি চালানোর হুমকিও দেন। শেষপর্যন্ত আপস বন্দোবস্ত হিসেবে ওয়াটসন ফোর্ট উইলিয়ামের দখল নিয়ে সেটা কোম্পানির পক্ষে ক্লাইভকে হস্তান্তর করেন। পরে এক বন্ধুকে চিঠিতে জানান যে, পুরো অভিযান জুড়ে ওয়াটসন ও তাঁর লোকেদের করা নিরন্তর অপমানে এক সময় অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য তাঁর অনুশোচনা হয়েছিল।
আমরা দেখেছি যে, আগে থেকেই কলকাতা-কেন্দ্রিক ব্যবসায় ক্লাইভের বড় লগ্নি ছিল। নবাব দ্বারা শহর দখলের পর সেই ব্যবসাও বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। তাই কলকাতার পুনর্দখলে নিজের ভূমিকার স্বীকৃতি হিসাবে সেই ক্ষতি খানিক পুষিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন কোম্পানির পরিচালকদের সামনে। কোম্পানির সভায় প্রস্তাব আলোচিত হলেও পরিচালকরা এ বিষয়ে নিজেদের দায় এড়াতে ভারতে ক্লাইভের সামনে নিজের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার হাজার রাস্তার কথা বলে হাত তুলে দেন। তবে সব কষ্ট-দুঃখ অপমানের দাম অর্থের বিনিময়ে পুষিয়ে নিয়ে ছিলেন ক্লাইভ কয়েক মাস পরেই।
পলাশি পরবর্তী সময় লুঠ, ঘুষ উপহারের বন্যায় ভেসে এল ক্লাইভের অর্থনৈতিক জীবনের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। হীরে-জহরতের সেই রোশনাইয়ের সঙ্গে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত পত্তনের স্বীকৃতি নিয়ে ক্লাইভ দেশে ফিরতে চাইলেও এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থতির জন্য সেই তারিখ ক্রমে পিছিয়ে যায়। এদিকে পার্লামেন্টের সদস্য হিসাবে নিজেকে দেখার যে ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সে বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হল না। ওদিকে খবর আসতে লাগল যে, তাঁর লড়াইয়ের সঙ্গীরা দেশে ফিরে ক্লাইভের ন্যায্য কৃতিত্বে ভাগ বসাচ্ছেন। ওদিকে ছেলের সাফল্যের ঢেউয়ে চড়ে রিচার্ড ক্লাইভও নিজের ভবিষ্যৎ গোছানোর হাস্যকর চেষ্টার ফলে ক্লাইভের বিড়ম্বনা বেড়ে চলল।
যথাসম্ভব কাজ গুছিয়ে ১৭৬০ সালে ক্লাইভ দ্বিতীয় বার দেশে ফিরলেন। রাজা দ্বিতীয় জর্জ স্বয়ং তাকে স্বাগত জানালেন জাতীয় বীরের সম্মান দিয়ে। দেশের যুদ্ধসচিব ও অন্যতম শক্তিশালী পার্লামেন্টেরিয়ান উইলিয়াম পিট দরাজ কণ্ঠে ক্লাইভের বন্দনা গাইলেন। এদিকে নানা শারীরিক সমস্যায় তখন জর্জরিত ক্লাইভ। ওদিকে তাঁর আর্থিক লেনদেন নিয়েও কোম্পানিতে ক্লাইভের বিপক্ষ কর্তারা শুরু করেছেন তদন্ত। এত প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে ক্লাইভ তাঁর লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থেকে ঝাপিয়ে পড়লেন নির্বাচনী যুদ্ধে। শ্রুবারি (Shrewsbury) আসন জিতে প্রবেশ করলেন পার্লামেন্টে।
কিন্তু এই সেলিব্রিটি স্টাটাসে সত্ত্বেও বনেদি ব্রিটিশ সমাজে তাকে ভূঁইফোড় বড়লোক হিসেবেই দেখা হত। অসংখ্য শত্রুর পাশাপাশি ক্লাইভ তার প্রবাদপ্রতিম ঔদ্ধত্যে কোম্পানির চেয়ারম্যানকে ‘ব্যাঙের ছাতা’ হিসাবে সম্বোধন করেও নিজের সমস্যা বাড়িয়েছিলেন। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর ভারতে মীরকাশিমের বিদ্রোহ-জনিত পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাকে আবার ভারতে আসতে হয় ১৭৬৪ সালে। এবার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিয়ে মূলত কোম্পানির শাসন পরিচালনায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে সহজ করার চেষ্টা করেন ক্লাইভ। কোম্পানির সুবিধাভোগী কর্মচারীদের প্রবল বাধা উপেক্ষা করেই প্রশাসনিক রদবদল কার্যকর করেন তিনি। ফলে শত্রুর সংখ্যা আরও বাড়ে। ওদিকে ক্লাইভের ব্যক্তিগত লেনদেনও সন্দেহের ঊর্ধ্বে না-থাকায় তাঁকেও পড়তে হয় প্রশ্নের মুখে। বিশেষ করে তার আর্থিক নীতির ফলে দুর্ভিক্ষে এদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু নিয়ে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়।
১৭৬৭ সালের জানুয়ারিতে ক্লাইভ শেষবারের মত ভারত থেকে ফেরার জাহাজ ধরেন। কিন্তু তার পরই তাঁকে ঘিরে ধরে কোম্পানির চরম আর্থিক বেনিয়ম ও লুণ্ঠনের অত্যন্ত গুরুতর সব অভিযোগ। পার্লামেন্ট বাধ্য হয় কোম্পানির ম্যাসকট হিসাবে ক্লাইভের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করতে। ঠিক আধুনিক যুগের কর্পোরেট কর্তাদের মত ক্লাইভও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষাকে সর্বোত্তম গুরুত্ব দেওয়ার যুক্তি দেন। কোম্পানির কর্মচারী হিসাবে স্থানীয় ভারতীয়দের স্বার্থ দেখা, তাঁর অগ্রাধিকার ছিল না। তাঁর বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট তেমন কোনও পদক্ষেপ না করলেও মানুষের মনে ক্লাইভের ভাবমূর্তিতে স্থায়ী দাগ লেগে যায়। পার্লামেন্টের কার্যাবলির এক পর্যায়ে ক্লাইভকে বলতে শোনা যায়– ‘আমার সমস্ত সম্পদের বিনিময়েও আমার মান-সম্মানটা রক্ষা করুন!’
সামাজিক মর্যাদা কিংবা মানসিক শান্তি – কোনওটাই আর ক্লাইভের ভাগ্যে জোটেনি। ক্লাইভ-সহ পুরো পরিবারের কাছেই সময়টা ছিল চরম সম্মানহানিকর। নিজের শেষ রাজনৈতিক অর্জন হিসেবে ছেলে এডওয়ার্ডকে পার্লামেন্টের নির্বাচন বৈতরণী পার করিয়ে দিন দিন নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন ক্লাইভ। বাড়তে থাকল নেশার দ্রব্য গ্রহণের পরিমাণ। তার ওপর যোগ হল নানা রকমেরে শারীরিক উপসর্গ। এমন অবস্থাতেও আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশ বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসাবে সরকার তাঁর সাহায্য চায়। কিন্তু ততদিনে ক্লাইভের মিলিটারি জিনিয়াসের সঙ্গে তাঁর জীবনীশক্তিও শেষ। একবার সরকারি আবেদনের দিকে চোখ বুলিয়েই তাঁর দৃষ্টি চলে যায় জানালা বাইরে।
এভাবেই ক্যালেন্ডারের পাতায় আসে ১৭৭৪ সালের নভেম্বর মাস। ২১ তারিখ রাত থেকেই ক্লাইভের শরীরে অস্বস্তি বাড়তে থাকে। পরের দিন দুপুরেই তাঁর মৃত্যু হয়। খুব তাড়াহুড়ো করে শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ায় তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর গুজবও রটেছিল।
তবে মৃত্যুতেই রবার্ট ক্লাইভদের শেষ হয় না। সময়ের প্রয়োজন তাঁদের আবার খুঁজে বের করে। মৃত্যুর আগে চরম সমালোচিত মানুষটি আবার নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এলেন বিশ শতকের গোড়ায়। ভারতে প্রবল জাতীয় আন্দোলনের চাপে ক্লাইভের মধ্যে এক ব্রিটিশ নায়ককে পুনরাবিষ্কার করলেন লর্ড কার্জন। ভারত ও ব্রিটেনে ক্লাইভের মূর্তি বসানোর উদ্যোগে উৎসাহ দিলেন কার্জন। কিন্তু ভারতে এমন উদ্যোগ জাতীয়তাবাদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলবে মনে করে বড়লাট লর্ড মিন্টো সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। তবে এই উদ্যোগেই লন্ডনে প্রথম সর্বজনীন জায়গায় ক্লাইভের মূর্তি উন্মোচিত হয় ১৯১২ সালে, অর্থাৎ, তাঁর মৃত্যুর ১৩৮ বছর পর! জনচেতনার উল্টো স্রোতে আবার সেই মূর্তি সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে কয়েক বছর ধরে। তাই মৃত্যুর ২৫০ বছর পরেও রবার্ট ক্লাইভকে চাইলেও ভোলা যাচ্ছে না।
……………………………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………………..