আজীবন শরশয্যায় আমি, সব তৃষ্ণা, দহন, যন্ত্রণা, মরুভূমি ভুলেছি আমি হুইস্কির অপূর্ব অবদানে। যেদিন শেষ সূর্য ডুবে যাবে আমার জীবনে, যেদিন দৃষ্টি ক্রমশ হয়ে আসবে ঝাপসা, বোধ আচ্ছন্ন, স্মৃতি ক্ষীয়মান, শরীর ক্রমশ যেন জীর্ণ ঝরা পাতা– সেই ধূসরিমায় হে প্রিয় আমার, পুরুষ কিংবা নারী, যেই হও তুমি, আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে, আমার শুকনো কণ্ঠে, ঢেলে দিও হার্দ হুইস্কি। আজ, বিশ্ব হুইস্কি দিবসের বিশেষ নিবন্ধ।
ভীষ্ম শুয়ে আছেন শরশয্যায়। তাঁর গলা শুকিয়ে কাঠ। তৃষ্ণা তাঁর বক্ষ জুড়ে। মৃত্যুর আগে শেষবার আর্দ্র হতে চাইছে তাঁর কণ্ঠ। অর্জুন তীরবিদ্ধ করলেন পৃথিবীর বুক। উৎসারিত হল অমৃতবারি। প্রশমিত হল ভীষ্মের তিয়াস।
আমার কোনও অর্জুন নেই। কবে কোন ফেলে আসা তাড়িত যৌবন থেকে আজ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত আমি। তেষ্টায় ফেটে যায় বুক। তবু চাই না আমি সেই অর্জুন যে শুধু ধুরন্ধর তীরন্দাজিতে মাটির বুক থেকে টেনে তুলতে পারে জলের তুবড়ি। আজীবন শরশয্যায় আমি, সব তৃষ্ণা, দহন, যন্ত্রণা, মরুভূমি ভুলেছি আমি হুইস্কির অপূর্ব অবদানে। যেদিন শেষ সূর্য ডুবে যাবে আমার জীবনে, যেদিন দৃষ্টি ক্রমশ হয়ে আসবে ঝাপসা, বোধ আচ্ছন্ন, স্মৃতি ক্ষীয়মান, শরীর ক্রমশ যেন জীর্ণ ঝরা পাতা– সেই ধূসরিমায় হে প্রিয় আমার, পুরুষ কিংবা নারী, যেই হও তুমি, আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে, আমার শুকনো কণ্ঠে, ঢেলে দিও হার্দ হুইস্কি।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
হুইস্কি আমার ক্ষতবিক্ষত কত ইচ্ছের গায়ে লেগে আছে আজও। হুইস্কি আমার কত মিলনের ললিত লাবণ্য। কত আদরের, আশ্লেষের, আলিঙ্গনের শরীরে জড়িয়ে থাকা, ফণাতোলা সাপ! হুইস্কি কি নয় আমার সব সব কোনও রকমে উতরে-যাওয়া লেখার তাপন? হুইস্কি কি নয় আমার আজীবন সব ব্যর্থ লেখার কারার আশ্রয়? পিছন ফিরে তাকালে যতদূর চোখ যায় আমার, হুইস্কি ছাড়া কি পেতাম আমার স্ত্রীদের? ওরা তো নতুন বোতলে পুরনো হুইস্কিই!
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আর কোনও স্বপ্ন আমার নেই। জীবনের কাছে আর কোনও চাহিদা। বেঁচে থাকা এবং মৃত্যুর কাছে আর কোনও যাচনা। পৃথিবী ছাড়ার আগে কণ্ঠে নিতে চাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তারল্য বুক ভরে, রক্তের অন্তিম প্রবাহে, স্বাদ-গ্রহণের শেষ প্রহরে– রাম নয়, জিন নয়, ভদকা নয়, নয় জার্মানির প্রবাদপ্রতিম বিয়ার, ইংল্যান্ডের অবিকল্প এল্। এমনকী, ভারতের আদিম পূণ্যতামাখা চিরন্তন গঙ্গাজল নয়! আমার কণ্ঠে দিও অন্তত দু’-ফোঁটা হুইস্কি। হুইস্কি আমার আজীবন সংলাপের সাক্ষী। হুইস্কি আমার ক্ষতবিক্ষত কত ইচ্ছের গায়ে লেগে আছে আজও। হুইস্কি আমার কত মিলনের ললিত লাবণ্য। কত আদরের, আশ্লেষের, আলিঙ্গনের শরীরে জড়িয়ে থাকা, ফণাতোলা সাপ! হুইস্কি কি নয় আমার সব কোনও রকমে উতরে-যাওয়া লেখার তাপন? হুইস্কি কি নয় আমার আজীবন সব ব্যর্থ লেখার কান্নার আশ্রয়? পিছন ফিরে তাকালে যতদূর চোখ যায় আমার, হুইস্কি ছাড়া কি পেতাম আমার স্ত্রীদের? ওরা তো নতুন বোতলে পুরনো হুইস্কিই! আর আমার বন্ধুনিরা? তারা সবাই তো মুগ্ধ করেছে, তোলপাড় করেছে আমাকে, হুইস্কি-দ্রবতায়। নাভি থেকে শুষে নিয়েছি আদিমতম হুইস্কি– বুঝেছি, হুইস্কির সেরা আধার নারীর নাভি! আর স্তনাগ্রে আগ্রহী হুইস্কিবিন্দু? স্বয়ং ঈর্ষিত ইন্দ্র তাকিয়ে থেকেছে আমার দিকে, যখন আমার ওষ্ঠ স্পর্শ করেছে সেই হ্লাদিত হুইস্কি।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
আরও পড়ুন: রং থেকে পালিয়ে!
…………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
পৃথিবীতে আর কতদিন আছি জানি না। পৃথিবীর কাছে আমার সব থেকে বড় পাওয়া– হুইস্কি, হুইস্কি, হুইস্কি। পৃথিবী ছাড়া আর এই মহাবিশ্বে কোথাও এক বিন্দু হুইস্কি আছে বলে আজও জানায়নি বিজ্ঞান। কী বিফল ও ব্যর্থ এই মহাবিশ্ব, হুইস্কি ছাড়া। যদি মৃত্যুর পরেও মন থাকে। তাহলে থাকবেই আমার মনকেমন। হুইস্কির স্বাদ ও গন্ধ মেশানো গভীর দীর্ঘ দ্রব একটি চুমুর জন্য– পৃথিবী ছাড়া কোথাও পাওয়া যাবে না, আমি নিশ্চিত!
একটি স্বীকারোক্তি: আমি যে মেয়েদের জন্যে আজীবন ছিন্নভিন্ন হয়েছি, তাড়িত পাগলামিতে নিঃস্ব হয়েছি, এবং যাদের মুগ্ধতায় সমর্পিত হয়েছি, তারা সবাই আমার পানপাত্রী! আহা!