আমার সঙ্গে রাজার আলাপ ’৬৭ সালে। আমাদের একটা নাটকের গ্রুপ ছিল: ঋত্বিক গোষ্ঠী। একটি পত্রিকাও করতাম: ফুল ফুটুক। এই দলের মধ্যে চমৎকার কবিতা লেখার হাত ছিল রাজার। প্রচুর কবিতা লিখত। হাতেকলমে আমি যখন সিনেমা করতে শুরু করলাম, তখন সনৎ দাশগুপ্ত, রাজা– এরা সব আমার সহকারী হিসেবে চলে যেত শুটিংয়ে। আমি তখন প্রামাণ্যচিত্র, নিউজ রিল, বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি করতাম। রাজার এভাবেই সিনেমার জগতে প্রবেশ। পরিচালক হওয়ার স্বপ্নটা ছড়িয়ে পড়ল আমাদের ভেতর।
রাজা চলে গেল– রাজা মিত্র। আমার সঙ্গে রাজার আলাপ ’৬৭ সালে। সে এক অন্য সময়, অন্য উত্তাল কলকাতা। আমাদের একটা নাটকের গ্রুপ ছিল। নাম ‘ঋত্বিক গোষ্ঠী’। নাটক, গান শুধু নয়, আমাদের একটা পত্রিকাও বেরত। পত্রিকার নাম, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে ধার করা– ‘ফুল ফুটুক’। ওই দলের মধ্যে সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে প্রচুর আড্ডা হত। শিল্পের জন্য প্রভূত পাগলামি ছিল আমাদের। তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ফিল্ম করার। মজা করে রাজা আমাকে ডাকত ‘গোদার’ বলে।
এই দলের মধ্যে চমৎকার কবিতা লেখার হাত ছিল রাজার। প্রচুর কবিতা লিখত। রাজার আসল নাম ‘শোভন মিত্র’, কবিতা লিখত এই নামেই। পরে ‘রাজা’ নামেই পরিচিত হল। হাতেকলমে যখন সিনেমা করতে শুরু করলাম, তখন সনৎ দাশগুপ্ত, রাজা– এরা সব আমার সহকারী হিসেবে চলে যেত শুটিংয়ে। আমি তখন প্রামাণ্যচিত্র, নিউজ রিল, বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি করতাম। এইভাবে ওরাও ঢুকে পড়ল সিনেমায়। রাজার এভাবেই সিনেমার জগতে প্রবেশ। পরিচালক হওয়ার স্বপ্নটা ছড়িয়ে পড়ল আমাদের ভেতর।
রাজা এরপর কিছু তথ্যচিত্র করেছিল। তারপর চমৎকার একটি ফিচার ছবি। বুদ্ধদেব বসুর ‘একটি জীবন’ গল্পকে আশ্রয় করে। সেই ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দুর্দান্ত সেই অভিনয়। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমার সঙ্গে যে রাজা শুরু করেছিল, তার এখন নাম ছড়িয়ে পড়ছে পূর্ণাঙ্গ ছবির পরিচালক হিসেবে বলে শুধু নয়, রাজা জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিল এই ছবির জন্য। শুধু জাতীয় পুরস্কার নয়, মানুষের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছিল রাজা।
ধীরে ধীরে কবিতা নয়, ওর প্রধান পরিচয় হয়ে উঠল পরিচালক রাজা মিত্র। অনেক তথ্যচিত্র করেছে। রাজা কবি ছিল বলেই, অত নিবিড়ভাবে বুদ্ধদেব বসুকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিল। তাতেও ছিল কবিতার মন, কবির মন, কবির দৃষ্টিকোণ।
রাজা চলে গেল মারণরোগে। ওর চলে যাওয়া শুধু পরিচালক নয়, একজন কবিরও বিদায়। আমাদের দুটো ডিরেক্টরস গিল্ডের একটির সভাপতিত্ব করত রাজা। একটু পরে ওর শেষকৃত্যের জন্য রওনা দেব, ভাবতেই বিষণ্ণ লাগছে। আমাদের ছয়ের দশকের ঋত্বিক গোষ্ঠীর অনেকেই চলে গিয়েছে। পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, সনৎ দাশগুপ্ত, এখন রাজা, এ ছাড়া আরও অনেকে। স্মৃতি যদিও জীবন্ত, পুনরাবিষ্কার করা যায়।
আমাদের সেই পত্রিকা, যার নাম ছিল ‘ফুল ফুটুক’, এখন দেখছি, ক্রমশ সেই ফুলগুলি ঝরে পড়ছে।
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved