রাস্তায় বেড়াতে বেরিয়েছিলেন বুদ্ধদেব বসু, রানু আর সমর সেন। সেকালের সদ্য-রচা রাসবিহারী অ্যাভেনিউতে দুটো গাছের ফাঁকে রানুই সেদিন দেখেছিলেন ‘টু লেট’ লেখা বিজ্ঞপ্তি লটকে আছে। বাকিটা ইতিহাস। দুশো দুইয়ের পহেলা ঝাঁকিই বসু পরিবারকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তার একটা যদি হয় বড় ঘর দু’টির ছাদ থেকে ঝোলানো দু’-খানি মরাল শুভ্র সিলিং ফ্যান, তবে অন্যটি নিশ্চিতভাবেই এ বাড়ির বাথরুম– ‘পুবে দক্ষিণে জানালা বসানো এনামেল উজ্জ্বল’– বুদ্ধদেবের বাথরুম-বিলাসের কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। ‘হঠাৎ-আলোর ঝলকানি’ বইয়ে সে-অনুভূতির ছ’-পৃষ্ঠা জোড়া ভাষানুবাদ খোদাই করা আছে। ‘কবিতাভবন’-এর অন্দরমহলের কথা যখন উঠল তখন বাহিরমহলে রাসবিহারী অ্যাভেনিউয়ের দু’-চার কথা না বললে পারিপার্শ্বিকটা বোঝা যাবে না।
অমরত্ব তাচ্ছিল্য করার মতো সপ্রতিভতা নয়, বরং কবিতার জন্য একটা জীবন বইয়ে দেওয়া। কবিতার ছন্দ-স্পন্দ-অনুরণনে আটপৌরে জীবন, ঘর-গেরস্থালি। আয়-ব্যয় মেলে না সংসারে, তবু নাছোড়। জীবন অবশ্য হিসেব মিলিয়ে দিয়েছে। হাতের ওপর হাত রেখেছেন সুন্দরীতমা, যাঁকে শুধু উজ্জ্বল বললে ইতিহাসের অপলাপ হবে। তাঁকে নিয়ে অরুণকুমার সরকার ‘দূরের আকাশ’ কবিতা-বইয়ে লিখেছেন:
সিন্দুক নেই; স্বর্ণ আনিনি,
এনেছি ভিক্ষালব্ধ ধান্য।
ও-দুটি চোখের তাৎক্ষণিকের
পাব কি পরশ যৎসামান্য?
কবিতা, গদ্য, জীবনের দাবি, সহযাত্রীদের কামারাদারি মিলিয়ে যে-জীবন, তাতে নারীর অগাধ আত্মত্যাগ আছে। যে-জীবন বইতে পারত সম্পূর্ণ নিজস্ব শর্তে, তাতে গ্রহণ লাগল তো বটেই। কিন্তু কবিতাপাগল মানুষটি যে ধ্বংস নয়, গড়ায় বিশ্বাসী তা বুঝতে ‘প্রতিভা’ লাগে।
কবিতাভবনের সংসারে অবিশ্যি প্রতিভা নয়, তিনি আদি অকৃত্রিম রানু। সোম নয়, বসু। বুদ্ধদেবের সঙ্গে তাঁকে আলাদা করা যায় না। তাঁদের ভালোবাসার আখর বুদ্ধদেবের ‘আমার যৌবন’ ধরে রেখেছে কবিতার চিত্রকল্পেই– কবি সেদিনের জায়মান প্রেম সম্পর্কে লিখছেন:
…যেন আমার মনের মধ্যে এক হাওয়া উঠলো– সুখের, কিন্তু সম্পূর্ণ সুখেরও নয়– কত জোরালো সেই বাতাস তা কষ্টকরভাবে ধরা পড়লো সেদিন, যেদিন সকালে উঠে আমি প্রথম কথা ভাবলাম, ‘এতক্ষণে রানু স্টিমারে!’ আলোর দিকে তাকিয়ে দিনটাকে শূন্য মনে হলো।
বিয়ের পর তিন বছরে চারবার ঠাঁইনাড়া হয়েছিলেন নতুন দম্পতি। দ্বিতীয় ঠিকানাটি ছিল ভবানীপুরে, জগু বাজারের কাছে। রিপন কলেজে বুদ্ধদেবের সহকর্মী সুশীলকুমার মিত্রের বাড়ি। সে-বাড়ি তুলনায় ভালো। পায়ে-হাঁটা পথে ময়দান, প্রায়ই বাজার-ফেরতা প্রেমেন্দ্র মিত্র খানিকটা সাহচর্য দিয়ে যান। এ-বাড়িতেই ১৯৩৫-এর অক্টোবরে, কলকাতার রমণীয় আবহাওয়ায়, একই দিনে ভূমিষ্ঠ হয় দম্পতির প্রথম সন্তান এবং ‘কবিতা’ পত্রিকা। পত্রিকার ভাবনাটা মাথায় এসেছিল ‘পরিচয়’-এর বৈঠকে অন্নদাশঙ্করের হাতে ইংরেজি ‘পোয়েট্রি’ পত্রিকা দেখে। কবিতা-সর্বস্ব একখানি পত্রিকা বের করার তীব্র বাসনা তাঁকে তাড়িয়ে ফিরেছে এরপর। চার বছর পরে প্রকাশিত হল ‘কবিতা’। সঙ্গী প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুখ্য উৎসাহদাতা বিষ্ণু দে আর সমর সেন। পাঁচ টাকা করে চাঁদা দিয়েছিলেন কবিদের মধ্যে জনা দুই-তিন। বুদ্ধদেবের দিল্লীপ্রবাসী বন্ধু পঙ্কজকুমার দাশগুপ্ত দু’-কিস্তিতে দিলেন দশ টাকা, রানুর চেনা এক ভদ্রমহিলা দিলেন আরও দশ টাকা। অনিলকৃষ্ণ ভট্টাচার্য কিউবিস্ট ছাঁদে এঁকে দিলেন মলাটের ললাট। আর পূর্বাশা প্রেসে বিনামূল্যে ছেপে দিলেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য-সত্যপ্রসন্ন দত্ত। এভাবেই হলুদ মলাটে চল্লিশ পাতার বিজ্ঞাপনবর্জিত ‘কবিতা’ প্রকাশিত হল আশ্বিনের দিনে। সদ্যোজাত কন্যা ও পত্রিকাটিকে নিয়ে দিব্য চলছিল সংসার। কিন্তু ১৯৩৭-এ ফের মাথাচাড়া দিল বাসস্থানের সংকট। এই দম্পতি ঠিক মাথাগোঁজায় বিশ্বাসী ছিলেন না, তা লেখাই বাহুল্য। সুতরাং, ‘ব্যাধ যেমন পাখির সন্ধানে, নাগর যেমন অলিন্দবর্তিনী রমণীর প্রতি’, তেমনই তাঁরা রাস্তায় পদাতিক, সতর্ক-দৃষ্টিপাতে, যাতে সামান্য অমনোযোগে ফসকে না-যায় ‘টু লেট’ লেখা কোনও নোটিশ। এভাবেই একদিন চোখে পড়ে গেল ঈপ্সিত ‘আশ্রয়ের সংকেত’, ‘আশার পতাকা’।
বলতে চাইছি ২০২-এর কথা। টু-ও-টু, রাসবিহারী অ্যাভেনিউ। বাঙালির একমেবাদ্বিতীয়ম ‘কবিতাভবন’। সে-বাড়ি বদল করে নাকতলার গ্রামীণ মফস্সলে তাঁরা চলে গিয়েছিলেন বছর ষাটেক আগেই। আজ নাকতলা শহর হয়ে গেছে কিন্তু বাঙালি সে-বাড়ির ঠিকানা মনে রাখেনি। এখন গড়িয়াহাট সংলগ্ন রাস্তায় টি-শার্ট, নাইটি, চটিজুতো, সস্তার ব্যাগের দোকানে চুরি হয়ে যাওয়া ফুটপাথ আর আশপাশের দোকানের নাম লেখা বোর্ডের জেল্লায় মুখ লুকিয়ে থাকে ‘কবিতাভবন’-এর বাড়িটি। যার ছিল মস্ত বড় দু’-খানি ঘর, দক্ষিণে ঢাকা বারান্দা, রাস্তার দিকে লম্বা সরু ঝোলানো বারান্দা, রান্নাঘরে ‘ধুম্রশাসন’ চুল্লি।
রাস্তায় বেড়াতে বেরিয়েছিলেন বুদ্ধদেব, রানু আর সমর সেন। সেকালের সদ্য-রচা রাসবিহারী অ্যাভেনিউতে দুটো গাছের ফাঁকে রানুই সেদিন দেখেছিলেন ‘টু লেট’ লেখা বিজ্ঞপ্তি লটকে আছে। বাকিটা ইতিহাস। দুশো দুইয়ের পহেলা ঝাঁকিই বসু পরিবারকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তার একটা যদি হয় বড় ঘর দু’টির ছাদ থেকে ঝোলানো দু’-খানি মরাল শুভ্র সিলিং ফ্যান, তবে অন্যটি নিশ্চিতভাবেই এ বাড়ির বাথরুম– ‘পুবে দক্ষিণে জানালা বসানো এনামেল উজ্জ্বল’– বুদ্ধদেবের বাথরুম-বিলাসের কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। ‘হঠাৎ-আলোর ঝলকানি’ বইয়ে সে-অনুভূতির ছ’-পৃষ্ঠা জোড়া ভাষানুবাদ খোদাই করা আছে। ‘কবিতাভবন’-এর অন্দরমহলের কথা যখন উঠল, তখন বাহিরমহলে রাসবিহারী অ্যাভেনিউয়ের দু’-চার কথা না বললে পারিপার্শ্বিকটা বোঝা যাবে না। বুদ্ধদেবের ভাষায় সে রাস্তায় ‘মানুষের চেষ্টার সঙ্গে প্রকৃতির একটা সুন্দর সামঞ্জস্য ঘটেছে। পুবে-পশ্চিমে চলে গেছে উদারবক্ষ রাসবিহারী অ্যাভিন্যু, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রৌদ্রে অবারিত– সারাক্ষণ আমাদের চোখের সামনে– তার ধূসর বর্ণ বৃষ্টির জলে উজ্জ্বল, জ্যোৎস্নায় ইস্পাতের মতো নীলাভ, স্তব্ধ রাতে আধো-অন্ধকারে স্বপ্নিল। সত্যি যেন অ্যাভিন্যু– বীথিকা…’।
আর কারা ছিলেন তাঁদের প্রতিবেশী? হাঁটা পথে পাঁচ মিনিটে থাকতেন রবীন্দ্রনাথে নিবেদিত-প্রাণ পুলিনবিহারী সেন। তার কাছেই নরেন্দ্র দেব-রাধারানী দেবী, তাঁদের ‘ভালোবাসা’ বাড়ির সন্তান নবনীতা কয়েক বছর পর বুদ্ধদেবের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের প্রথম বছরের প্রথম ছাত্রী হবেন। রাস্তার ঠিক উলটো দিকে থাকতেন সুরসাগর হিমাংশু দত্ত, তখন তাঁর চাঁদ-চামেলি পর্যায়ের গান আলোড়ন ফেলে দিয়েছে বাঙলির হৃদয়ে। দুশো দুইয়ের পাশের বাড়িতে শান্তিনিকেতনের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রভাতচন্দ্র গুপ্তের কাছে কখনও আসেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার, সেসময় তিনি সংগীতভবনের অধ্যক্ষ। আর বাড়ির তিনতলায় সপরিবার থাকতেন ‘কুসুমের মাস’-এর কবি অজিত দত্ত, বুদ্ধদেবের আবাল্য সুহৃদ টুনু।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
‘কবিতাভবন’-এর অতিথি তালিকায় ফের বদল এল যাদবপুরের তু. সা. বিভাগের দৌলতে। ততদিনে মুখেমুখে বুদ্ধদেবও বু.ব.। এবার এলেন নবনীতা, অমিয় দেব, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, তরুণ মিত্র, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সূত্রে সেসময়ের লেখক-কবিরা। আর নিজের জীবন নিয়ে নিরীক্ষায় তুখোড়, প্রতিভাবান জ্যোতির্ময় দত্ত। পরবর্তীকালে বসুবাড়ির জামাতা, কিন্তু বুদ্ধদেবের কাছে বয়স্য-তুল্য। অঢেল আড্ডার সঙ্গে সঙ্গে চলেছে কবিতাভবন প্রকাশনীর কাজও। বেরিয়েছে ‘এক পয়সায় একটি’ সিরিজ়, ছোটগল্প গ্রন্থমালা, বৈশাখী বার্ষিকী। কখনও চলেছে নাটকের মহড়াও।
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস যদি সত্যি কথা বলে, তাহলে দুশো দুইয়ের জন্য একটা আলাদা পরিচ্ছেদ লিখতে হবে অন্তত তিনটে কারণে– ‘কবিতা’ পত্রিকা, যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অভিনবত্ব, আর অফুরন্ত আড্ডার জন্য। বাঙালি সম্ভবত তখনও সন্ধেবেলা কারও বাড়ি গেলে আগে থেকে ফোন করে সময় চাইত না। অতিথি শব্দের প্রতি খানিক শ্রদ্ধা ছিল আমাদের। কবিতাভবনের দরজা ছিল হাট করে খোলা। সে একেবারে চাঁদের হাট। কবি, কবি যশঃপ্রার্থী, গদ্য লেখক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, চিত্রকর, সর্বোপরি তাঁর ছাত্ররা। কেউ তখনই যথেষ্ট খ্যাতিমান, কারও সামনে খোলা পাতার মতো পড়ে আছে অমিত ভবিষ্যৎ। আর সাদা পাজামা-পাঞ্জাবিতে বুদ্ধদেব। যিনি নানান কলমে কবিতার খাতায় কবিতা, গল্পের খাতায় গল্প লিখে চলেছেন। অনুবাদ করছেন বোদলেয়ার, রিলকে, কালিদাস। যুক্তি ঝলসে উঠছে প্রবন্ধে, বুঝিয়ে দিচ্ছেন কে রবীন্দ্রনাথ, কী তাঁর উত্তরাধিকার।
‘কবিতা’ পত্রিকার আত্মীয়রা ছিলেন জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী। পরের দফায় সমর সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তৃতীয় দফায় নরেশ গুহ, অরুণকুমার সরকার। ‘কবিতাভবন’-এ এঁদের সকলেরই কম বেশি যাতায়াত ছিল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্যরাও গিয়েছেন সেখানে। মাঝে মাঝেই দুশো দুইয়ের দরজা আলো করে এসে দাঁড়িয়েছেন দিলীপকুমার রায়। আর সহজ বাংলায় যাঁদের ‘পঞ্চাশের কবি’ বলা হয় তাঁরা তো অধিকাংশই দুশো দুই গুলজার করে রাখতেন। এমনকী, যুদ্ধের সময় বিদেশ থেকে আসা কোনও সৈনিক, যাদের কামানের খাদ্য ভিন্ন অন্য কিছু ভাবা হয়নি কোনও দিন, যাদের শিল্পক্ষুধা হয়তো কিছু কম নয়, সেইরকম কিছু সামরিক পুরুষেরও আনাগোনা ছিল ‘কবিতাভবন’-এ।
দেশভাগের পর দুশো দুইয়ের নিয়মিত আড্ডাধারী ছিলেন চার যুবক– নরেশ গুহ, অরুণ সরকার, অশোক মিত্র আর নিরুপম চট্টোপাধ্যায়। এই চার বুদ্ধদেব-অনুরাগী পরিবারেরই লোক হয়ে গিয়েছিলেন। এমনকী, নিরুপম চট্টোপাধ্যায়ের বিয়েও হয়েছিল দুশো দুই থেকে। বরপক্ষ বুদ্ধদেব আর রানু। নিরুপমের স্ত্রী রুবিকে সোনার গয়না দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলেন রানুই।
‘কবিতাভবন’-এর অতিথি তালিকায় ফের বদল এল যাদবপুরের তু. সা. বিভাগের দৌলতে। ততদিনে মুখেমুখে বুদ্ধদেবও বু.ব.। এবার এলেন নবনীতা, অমিয় দেব, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, তরুণ মিত্র, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সূত্রে সেসময়ের লেখক-কবিরা। আর নিজের জীবন নিয়ে নিরীক্ষায় তুখোড়, প্রতিভাবান জ্যোতির্ময় দত্ত। পরবর্তীকালে বসুবাড়ির জামাতা, কিন্তু বুদ্ধদেবের কাছে বয়স্য-তুল্য। অঢেল আড্ডার সঙ্গে সঙ্গে চলেছে কবিতাভবন প্রকাশনীর কাজও। বেরিয়েছে ‘এক পয়সায় একটি’ সিরিজ়, ছোটগল্প গ্রন্থমালা, বৈশাখী বার্ষিকী। কখনও চলেছে নাটকের মহড়াও।
এই অনন্ত আড্ডার পরিবেশে বুদ্ধদেব নন, গেরস্থালির সবটাই মাতৃস্নেহে সামলেছেন রানু। যখন প্রকাশিত হচ্ছে ‘কঙ্কাবতী’, ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘পদাতিক’, ‘অভিজ্ঞান বসন্ত’ কিংবা ‘এক পয়সায় একটি’ সিরিজ়ে ‘বনলতা সেন’– সেইসময় একজন নতুন কথাসাহিত্যিকের জন্ম হয় ‘কবিতাভবন’-এ। তিনি প্রতিভা বসু। সুধীন্দ্রনাথের ‘পরিচয়’ একসময় ফেরত পাঠিয়েছিল প্রতিভা বসুর লেখা ‘মাধবীর জন্য’ গল্পটি। কিন্তু কালক্রমে তিনি হয়ে উঠবেন বাঙালি পাঠকের প্রিয় ঔপন্যাসিক-গল্পকার। শুরুতে প্রতিভায় গ্রহণের যে-কথা তুলেছিলাম, সেই রাহুগ্রাস থেকে বেরিয়ে এসে রানু হয়ে ফের হয়ে উঠলেন সুষমাময়ী চন্দ্রমার মতো। বুদ্ধদেব বুঝেছিলেন রানুর লড়াই। সেই অভিজ্ঞান মুদ্রিত আছে ‘আমাদের কবিতাভবন’ রচনায়।
তাই বলে কী কবিতাভবন দুনিয়াদারি থেকে দূরে? কলকাতার বুকে গ্রাম্যতা-বর্জিত শিল্পগ্রাম? ইউটোপিয়ার চূড়ান্ত? মনে হয় না। নিজের হাতে তৈরি বিভাগে ব্রাত্য করা হয়েছে তাঁকে, খবরের কাগজের কুৎসায় তাঁকে নীল হতে দেখেছে এই শহর। তবু ‘কবিতাভবন’ বাঙালির আবেগের নাম, কবিতাপাগলের দিনলিপি, এক দম্পতির পাণ্ডুলিপি আয়োজন।