৩৮ কাটার ওই জমি লিজে নিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। ‘মহাজাতি সদন’ নাম দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এমনকী, উদ্বোধনী ভাষণটিও ছিল তাঁরই। ৮৫তম প্রতিষ্ঠাদিবসে ফিরে দেখা সেই ইতিহাস।
লিজের জমি। দিতে হয়েছিল মোটে এক টাকা। সেই জমির উপর ১৯৫৮ সালে গড়ে ওঠেছিল যে সদন, তা পরবর্তী কালে বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে আমর্ম জড়িয়ে যাবে। মহাত্মা গান্ধী মেট্রো স্টেশনের লাগোয়া, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও হ্যারিসন রোডের মাঝ বরাবর, ৩৮ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠা এই সদনের জন্মলগ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন বাঙালির দুই চিরকালীন আলোকবর্তিকা– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আজ সেই মহাজাতি সদনের ৮৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস।
৩৮ কাটার ওই জমি লিজে নিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। ‘মহাজাতি সদন’ নাম দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এমনকী, উদ্বোধনী ভাষণটিও ছিল তাঁরই।
মহাজাতি সদনের সম্পর্কে আরও খানিক তথ্যতালাশের আগে, একবার শান্তিনিকেতন ঘুরে আসা যাক। অবশ্যই রবীন্দ্রনাথকে সঙ্গে নিয়ে। সে বছর রবীন্দ্রনাথের ৭৫তম বছর। রবীন্দ্রনাথ নতুন একটি কুটিরে প্রবেশ করেছেন সেদিন। নাম: শ্যামলী। রবীন্দ্রনাথ সেই ছোট কুটিরখানা পেয়ে বেজায় আনন্দিত। কুটিরটির স্থাপত্যে আহ্লাদিত রবীন্দ্রনাথ স্থাপত্যশিল্পীকে নিয়ে তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন: ‘হে সুরেন্দ্র, গুণী তুমি,/ তোমারে আদেশ দিল, ধ্যানে তব, মোর মাতৃভূমি– অপরূপ রূপ দিতে শ্যাম স্নিগ্ধ তাঁর মমতারে/ অপূর্ব্ব নৈপুণ্যবলে।’
কে এই সুরেন্দ্র? সুরেন্দ্রনাথ কর। কলাভবনের শিল্পশিক্ষক। তাঁর পরিচয় দিলাম, একটাই কারণে। কলকাতার বুকে এই মহাজাতি সদনের স্থাপত্যর নকশাটি ছিল তাঁরই।
শেষ করি একটা বইয়ের গপ্প দিয়ে। ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৮ সালে সতীন সেন স্মৃতি সমিতি ভারতের ঐতিহ্য ও স্মৃতিরক্ষা করার জন্য প্রতিকৃতি সংগ্রহ শুরু করেছিল। সেই অতলান্ত কাজ নিজের কাঁধে নিয়েছিল মহাজাতি সদনের অছি পরিষদ। মূল সংগ্রহের পরও, প্রতি ৩০ জানুয়ারি, মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুদিনে একটি করে তৈলচিত্র নিয়ম করে সদনের অন্দরে যোগ হত। ১৯৬৬ সাল পর্যন্তই মহাজাতি সদনের অন্দরে রাখা ছিল ২০০টি তৈলচিত্র! প্রতিটিই ভারতীয় শহিদ ও দেশপ্রেমিকদের। কিন্তু শুধু তৈলচিত্রয় কি সংরক্ষণ সম্ভব? জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব ঐক্যর ধারণা? মহাজাতি সদনের অছি পরিষদের সচিব অমিয়কণ্ঠ নিয়োগী এ কারণেই একটি বইয়ের পরিকল্পনা করেন ও প্রকাশ করেন। বইটির নাম ‘মৃত্যুঞ্জয়’। প্রথম ছবি ও সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল রাজা রামমোহন রায়ের। শেষ ছবি ও সংক্ষিপ্ত জীবনী বিপ্লবী ভূজঙ্গভূষণ ধরের।
এই বইয়ের সঙ্গে জুড়ে ছিলেন আরও তিনজন। নাট্যকার মন্মথ রায়, শিশুসাহিত্যিক অখিল নিয়োগী– যিনি খ্যাত ছিলেন তাঁর ‘স্বপনবুড়ো’ ছদ্মনামে, এবং শিল্পী পূর্ণচন্দ্র চক্রবর্তী, যিনি এই বইটির রূপায়ণে জড়িয়ে।
মহাপ্রাণ ব্যক্তিদের স্মৃতি সংরক্ষণে এই বইটি বোধহয় অনেকেরই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গিয়েছে।