এই সিনেমার গভীরে গিয়ে দেখা যায়, এটি শুধুমাত্র একটি সম্পর্কের গাথা নয়, বরং এটি আসলে একজন পুরুষের নিজস্ব যৌনতা এবং পরিচয়কে আবিষ্কারের গল্প। রায়মল, যে কখনওই তার যৌনতা পরীক্ষা করেনি, রতনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে এবং তার জীবনে সেই পরিবর্তন আনে। তবে তার সমাজের চাপ এবং পরিবারের প্রত্যাশা তাকে দ্বিধান্বিত করে– একদিকে প্রেম এবং অন্যদিকে সমাজের ভয়াবহ ধারা। তার একপ্রকার ‘ভয়’ তাকে আদর্শ জীবন বেছে নিতে বাধ্য করে।
২০২৪ সালের ‘Dialogues- Calcutta International LGBTQ Film and Video Festival (১৮তম সংস্করণ)’-এ প্রদর্শিত ‘কাতলা কারি’, রোহিত প্রজাপতির একটি স্পর্শকাতর, মননশীল সিনেমা, যা আমাদের সামনে নিয়ে এল এক অপ্রত্যাশিত প্রেমের গল্প। দুই পুরুষ, রায়মল এবং রতন, সম্পর্কের বিবর্তন প্রমাণ করে যে প্রেম, পরিচয় এবং আত্ম অনুসন্ধান শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তবেরই কঠিন এবং অতি সুন্দর কাজ।
এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র দু’টি– রায়মল এবং রতন, যাদের সম্পর্কের অঙ্গনে পেশাগত সীমানা ছাড়িয়ে, মানসিক এবং শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। সিনেমাটি শুরু হয় এক শীতল মুহূর্তে– রায়মল, একজন মৎসজীবী, নদীতে ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রতনকে। এই ছোট্ট ঘটনা থেকেই তাদের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। রতন এমন এক ব্যক্তি, যাকে তার বাড়িতে তার পরিচয় সম্পর্কে কখনওই স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এদিকে রায়মলের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে এক অদ্ভুত নিরাপত্তা এবং গ্রহণযোগ্যতা খুঁজে পায়। একে অপরের প্রতি সহানুভূতি এবং সাহায্যের মধ্য দিয়ে তারা একে অপরের জীবন গড়ে তোলে– রায়মল রতনকে জীবন, রান্না, এবং দায়িত্ব নিতে শেখায়। এখানেই ‘কাতলা কারি’-র পরিচয়টি আসে– এটা শুধুমাত্র একটি রেসিপি নয়, বরং তাদের সম্পর্কের ভাষা, যা তাদের একে অপরকে বোঝার একটি মাধ্যম।
কিন্তু সিনেমার গভীরে গিয়ে দেখা যায়, এটি শুধুমাত্র একটি সম্পর্কের গাথা নয়, বরং এটি আসলে একজন পুরুষের নিজস্ব যৌনতা এবং পরিচয়কে আবিষ্কারের গল্প। রায়মল, যে কখনওই তার যৌনতা পরীক্ষা করেনি, রতনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে এবং তার জীবনে সেই পরিবর্তন আনে। তবে তার সমাজের চাপ এবং পরিবারের প্রত্যাশা তাকে দ্বিধান্বিত করে– একদিকে প্রেম এবং অন্যদিকে সমাজের ভয়াবহ ধারা। তার একপ্রকার ‘ভয়’ তাকে আদর্শ জীবন বেছে নিতে বাধ্য করে। রায়মল যখন কুমতিকে বিয়ে করে, তখন তার মধ্যে এক বিপরীত দুনিয়ার সৃষ্টি হয়, যেখানে সে একদিকে নিজের চাহিদা আর অন্যদিকে পরিবারের আশা পূরণের মধ্যে হোঁচট খায়। এই সংঘর্ষের মধ্যে কুমতির চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ সে রায়মলকে তার সত্যিকার পরিচয় গ্রহণ করতে শেখায় এবং তাকে নিজের জীবন তার নিজের নিয়মে বাঁচতে অনুপ্রাণিত করে।
‘কাতলা কারি’ সিনেমার নির্মাণে যা অসাধারণ, তা হল এর অনুভূতিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং চরিত্রের গভীরতা। সিনেমাটির চলচ্চিত্রগ্রহণ, বিশেষ করে আলো-ছায়ার ব্যবহার, অনেক কিছু বলে দেয়। একদম অন্ধকারে রায়মলের মুখের ওপর শুধুমাত্র ল্যাপটপের আলো ঝলমল করা সিকোয়েন্সটি এই খুঁজে পাওয়া জানালা, নতুন সত্যের আলোকে প্রতিফলিত করে। এমনকী সিনেমার সংগীতও নাটকীয় মুহূর্তে আবেগের গভীরতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।
তবে একটি বিষয় এখানে উল্লেখযোগ্য– ‘কাতলা কারি’-তে সমাজের রক্ষণশীল মানদণ্ডের প্রতি সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতা নিয়ে আরও গভীর আলোচনা করা যেত, বিশেষ করে ভারতের আঞ্চলিক এবং গোষ্ঠীগত পরিবেশের মধ্যে। সিনেমাটি যেমন অদ্বিতীয় প্রেমের গল্প উপস্থাপন করেছে, তেমনি সমাজের লালিত বাধাগুলোর দিকেও আমাদের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, যা সমাজ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং আমাদের আত্মপরিচয় নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করে।
……………………………………………..
আরও পড়ুন প্রিয়দর্শিনী চিত্রাঙ্গদা-র লেখা: আত্ম-অন্বেষণের জন্য বয়স কোনও সীমা নয়
……………………………………………..
এছাড়া, সিনেমার প্লটের কিছু অংশ আরও বিকাশিত হতে পারত। রায়মল এবং রতনের সম্পর্কের বিবর্তন, বিশেষ করে রতনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন, মাঝে মাঝে সোজাসুজি না হলেও প্রভাবিত করে। তাছাড়া, কুমতির চরিত্রের আরও গভীর প্রতিফলন হতে পারত, যা রায়মলের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত।
সিনেমাটি শুধুই এক ধরনের ‘প্রতিরোধ’-এর গল্প নয়, বরং একটি আত্ম প্রকাশের গল্প। এটি আমাদের শেখায় যে, আমরা নিজেদের উপযুক্ত ও কাঙ্ক্ষিত প্রেম এবং সত্তা আবিষ্কার করার জন্য সময় নিতে পারি এবং আমাদের জীবনের সত্য তুলে ধরতে আমাদের কখনওই দেরি হয় না। বরং অসময়ে আসা প্রেমের জন্য অপেক্ষাও সুন্দর হয়ে ওঠে।
……………………………………………
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
……………………………………………
কে যেন খবর দেয় বাস্তুহারা মেয়েদের জন্য বিশেষ কোটা রয়েছে নার্সিং-এর ট্রেনিংয়ে। মনটা নেচে ওঠে, নিশ্চিন্ত আশ্রয় মিলবে, দু’বেলার খাবার পাওয়া যাবে, স্বপ্নের মতো ঠেকে। শুধু সিনেমা নয়, সত্যিকারের নার্স, দেশভাগের ফলশ্রুতি যিনি, অঞ্জলি আচার্য– তাঁর পেশাগত লড়াইয়ের কথাও জানুন।
বিনা বেতনের গৃহস্থালির কাজে সময় ব্যয় করে ২৮৮ মিনিট, পুরুষরা সেখানে ব্যয় করে ৮৮ মিনিট! অন্বিতার রান্না করে রেখে যাওয়া ভাত তাঁর স্বামী খেতে পেরেছে কি না জানি না, তবে আমাদের রক্ত চুষে দিব্যি ফুলে ফেঁপে বাড়ছে পুঁজি আর পিতৃতন্ত্র।