
ছিল কাগজ, হয়ে গেল বিড়াল। বা বাঘ। বা টিয়া। এ হল হাতের জাদু, তবে হেঁয়ালি নয়, অরিগামি। গাণিতিক শিল্পকলা। যে-শিল্পকলায় প্রাণ পায় একফালি কাগজ নানা নকশায়, জ্যামিতিক ভাঁজে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অরিগামি নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন বিপ্রদাস চ্যাটার্জি। হন্যে হয়ে বই খুঁজেছেন, অরিগামি শিখিয়েছেন, বই লিখেছেনও। অরিগামি শিল্প ও তাঁর জীবন নিয়ে রোববার.ইন-এর মুখোমুখি সেই বিপ্রদাস চ্যাটার্জি। কথালাপে সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়। ফোটোগ্রাফি ব্রতীন কুণ্ডুর।
এই ভারতে বসে, পশ্চিমবঙ্গেই, দীর্ঘদিন অরিগামি চর্চা করছেন। যা শিল্পমহলে এখনও তেমন গুরুত্ব পায়নি, শুরুটা একটু যদি বলেন।
আমার বন্ধু সমীর রায়ের একটা কবিতা দিয়ে শুরু করি কথা বলা। ১৯৮৮-এ যখন প্রথম প্রদর্শনী করি, তখন সেই এগজিবিশন দেখে ও ছড়াটা লিখেছিল। ছড়াটা হচ্ছে, ‘না কেটে, না ছিঁড়ে, না জুড়ে কাগজ।/ শুধু ভাঁজ দিয়ে লাগিয়ে মগজ। হাতি-ঘোড়া থেকে ঘর-বাড়ি-গাড়ি/ কত কিছু করি আমি!/ এ কথা বলেছে য়োশিযা আকিরা।/ কী মাথা নিয়ে যে আসে জাপানিরা,/ কাগজের ভাঁজে প্রাণ দিতে জানে/ অরিগামি, অরিগামি!’ অরিগামির প্রাণপুরুষ হচ্ছেন জাপানের আকিরা য়োশিযাওয়া। অরিগামিকে জনসমক্ষে এনেছিলেন কিন্তু তিনিই। একটা কাগজকে ভাঁজ দিয়ে কত যে লক্ষ লক্ষ জিনিস তৈরি করা যায়, সেটা তাঁর জন্যই আমরা প্রথম জানতে পারি। অরিগামি নিছক আর্ট নয়, এটা একটা গাণিতিক শিল্পকলা। ছোটবেলায় আমরা সবাই নৌকা কিংবা এরোপ্লেন বানিয়েছি। কিন্তু এর ভাঁজে ভাঁজে যে জ্যামিতি লুকিয়ে আছে, তা আমরা ভাবিনি। অরিগামি সেটাই আমাদের ভাবতে শেখায়।

জ্যামিতিই কেন?
আমরা যে-জ্যামিতি শিখি, তা হল পরিমাপের হিসেবনিকেশ। কাগজও একটা সমতল ক্ষেত্র। একটা কাগজ যখন আমরা ভাঁজ করি, সেই ভাঁজে সরলরেখাই পাই আমরা। ফলে যখন আমরা প্লেন সারফেস পাচ্ছি, সেটা জ্যামিতি না হয়ে যায় না!
জাপান থেকেই এই অরিগামি তাহলে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল?
প্রথম দিকে চিনের বিভিন্ন প্যাকেজিং-এ অরিগামির ব্যবহার প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহারস্বরূপ দেওয়ার প্রচলনও ছিল। কিন্তু অরিগামিকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার কৃতিত্ব আকিরা য়োশিযাওয়ার।

শতবর্ষের কাছাকাছি এসে পড়েছে এই অরিগামি শিল্প?
হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে। আকিরার জন্ম ১৯১১-তে। ১৩ বছর বয়সে টোকিওতে একজন ঢালাই মিস্ত্রী হিসেবে শুরু করেছিলেন কাজ। এদিকে ছোট থেকেই অরিগামির প্রতি টান। কুড়ি বছর পেরতে না পেরতে ওই কাগজ ভাঁজের টান ফিরে এল আকিরার। সাধারণ মিস্ত্রি থেকে আকিরার প্রমোশন হয় টেকনিকাল ড্রাফটসম্যানের পদে। সেখানে জুনিয়ারদের আকিরা জ্যামিতির নানা দিক বোঝাতে গিয়ে ব্যবহার করেন অরিগামির। কিন্তু এই কাজে বেশিদিন টিকে থাকলেন না আকিরা। ১৯৩৭ সালে ছেড়ে দিলেন ফ্যাক্টরির কাজ। এই সময়টা কাটছিল প্রবল দারিদ্রে, অনাহারে। বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ‘সুকুদানি’ বিক্রি করতেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অসুস্থ আহত সৈন্যদের মনোবল ফেরাতে অরিগামি মডেল তৈরি করতেন আকিরা। পরে অরিগামির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল সিম্বল তৈরি করেন তিনি। নানা সময়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ১৮টা বই। যে টোকিও শহরে, ১৩ বছরের আকিরা মিস্ত্রির কাজ করে শুরু করেছিলেন জীবন, সেই শহরেই তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল অরিগামি সেন্টার’ তৈরি করলেন ১৯৫৪ সালে।
![MOVIE] Folding Fun at the International Origami Center | LIVE JAPAN travel guide](https://rimage.gnst.jp/livejapan.com/public/article/detail/a/00/00/a0000891/img/en/a0000891_parts_58c5e442f1834.jpg?20181206105110&q=80&rw=686&rh=490)
মানে ৭০ বছর পেরল এই সেন্টারেরও। আচ্ছা, এখন তো ইউটিউবেও দেখা যায় অনেকেই অরিগামি করছেন।
করছেন, কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই তা ব্যাকরণসম্মত নয়। অরিগামির নিজস্ব একটা ব্যাকরণ আছে। তা রপ্ত না করতে পারলে ব্যাপারটা বোঝা কঠিন। অরিগামির নানা ভাগ, মাউন্ট ফোল্ড, ভ্যালি ফোল্ড, বিভিন্ন টার্ম, ফ্রগ বেস, বার্ড বেস– যাদের এ সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই, তাদের পক্ষে রপ্ত করা কঠিন। সেসব যাতে বোধগম্য হয়, সেকথা ভেবেই কিন্তু আকিরা তৈরি করেছিলেন অরিগামির ইন্টারন্যাশনাল সিম্বল।

আকিরা য়োশিযাওয়া সেটাকে বিশ্বব্যাপী করে তুললেন কীভাবে?
সে প্রসঙ্গে যাব। তার আগে একটা মজার গল্প বলি। পিটার অ্যাঞ্জেল নামের এক আমেরিকান, তিনিও অরিগামির চর্চা করেন, তাঁর প্রচণ্ড আগ্রহ– তিনি আকিরার সঙ্গে দেখা করবেন। অরিগামি সম্পর্কে আরও বিশদে জানবেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি জাপানি আদবকায়দা, এমনকী, জাপানি ভাষাও শেখেন। এবং জাপানে গিয়ে আকিরার ক্লাসেও যোগ দেন।
বলেন কী! ভাষা, আদবকায়দা– সব আকিরার কাছ থেকে অরিগামি শিখবেন বলে!
এক্কেবারে! তো ক্লাসরুমে শেখানো হচ্ছিল কীভাবে অরিগামির মাধ্যমে একটা অক্টোপাস তৈরি করতে হয়। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে অক্টোপাস বানাতে বলেন আকিরা। সেই মতো পিটার অ্যাঞ্জেলও একটা অক্টোপাস বানান। তিনি যেহেতু নিজেও অরিগামি-বিশেষজ্ঞ, ফলে অক্টোপাস তৈরিতে বাড়তি মুনশিয়ানা দেখান। আশা করেছিলেন, তাঁর বানানো মডেল ভরপুর প্রশংসা আদায় করবে আকিরার। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে হল ঠিক উল্টো! আকিরা পিটারের বানানো মডেল দেখলেন এবং ডাস্টবিনে ফেলে দেন! চমকে যান পিটার অ্যাঞ্জেল, খুব অপমানিতও হন। জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কী হল!’ আকিরা তাঁকে বলেন, ‘আমি যেমন তোমায় শিখিয়েছি, তেমন করো। আই নেভার লার্ন ফ্রম টিচার, মাই টিচার ইজ নেচার।’ আসলে গোলমালটা হল, অক্টোপাসের পা একটা বয়সের পরে বাড়তে থাকে। আকিরা ছোট বয়সের অক্টোপাস শিখিয়েছিলেন, কিন্তু সেই বয়সের অক্টোপাসে অনেকগুলো পা জুড়ে দিয়েছিলেন পিটার অ্যাঞ্জেল। ফলে এই বিপত্তি! আসলে অবজেক্টের গঠন তো বটেই, তার সময়ানুসারে বদলে যাওয়া সম্পর্কেও ধারণা থাকাটা অরিগামির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। লিলিয়ান ওপেনহাইমার, আরেক অরিগ্যামিস্ট, জাপানে বেড়াতে গিয়ে সন্ধান পান আকিরার। তিনি আকিরাকে আমেরিকায় নিয়ে আসেন। তার পরপরই আকিরা এবং অরিগামি– শিল্পী ও শিল্প– দুই-ই খ্যাতিলাভ করে।
আপনার অরিগামি চর্চা কীভাবে শুরু হল?
আমার অরিগামি চর্চা শুরু সেই ১৯৭৮-এ। আমরা পূর্ববঙ্গের মানুষ, বগুড়া থেকে পূর্বপুরুষরা এখানে চলে আসেন। তখন আমার দেড় বছর বয়স। হাওড়ার চ্যাটার্জি হাট বাসস্ট্যান্ডের কাছে ছিল আমাদের বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই আমার অভিভাবকরা আমায় এই হাতের কাজ শেখায় খুব উৎসাহ দিতেন, বিশেষ করে বাবা। আমার বাবা অনিলকুমার চট্টোপাধ্যায়, টুকটাক নানা কাজ জানতেন। তিনিই ছোটবেলায় আমায় কাগজের রথ গড়ে দিয়েছিলেন। বলতে পারেন, সেখান থেকেই শিল্পকলার প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি। তবে কারও কাছে যে তালিম পেয়েছি, তা নয়। শুধু অরিগামি নয়, একটা সময় আমি ম্যাজিকও দেখাতাম! ১৯৭৮ সালে ‘বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন’-এ শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অরিগামির ওপর একটা ডিসপ্লে করেছিলেন। সেটা আমাকে আকৃষ্ট করে।
কী করলেন তারপর? সেসময় বইপত্তর কি ছিল কিছু?
আমি তো তখন অরিগামি শেখার জন্য উঠেপড়ে লেগেছি! পাগলের মতো কলেজ স্ট্রিট চষে ফেলছি অরিগামির বই খুঁজতে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও পাচ্ছি না। এমন সময় একদিন, লাইটহাউসে এক ইংরেজি সিনেমা দেখতে গিয়েছি। সে সিনেমা হলের উল্টোদিকে ছিল একটা বইয়ের দোকান। কী মনে হল, যাই, একবার জিজ্ঞেস করি: ‘অরিগামির ওপর কোনও বই আছে?’। করলামও। ভদ্রলোক উত্তর দিলেন ‘আছে’। সে যে কী আনন্দ, বলে বোঝাতে পারব না! ৮ টাকা করে দুটো বই, রবার্ট হারবিনের লেখা। দুটোই কিনলাম। সেই পড়ে জানতে পারলাম, এ দেশে চর্চা হোক বা না হোক, বিদেশে অরিগামির ভালোই চর্চা রয়েছে। এমনকী, একটা সংগঠন রয়েছে ‘ফ্রেন্ডস ফর অরিগামি সেন্টার অফ আমেরিকা’ নামে। সেখানে অরিগামির বই পাওয়া যায়।

তারপর আরও কিনলেন?
কিনলাম, তবে বছরখানেক পর। ’৮০ সালের মাঝামাঝি আমি তখন টিনপ্লেট কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডে চাকরি করি। সেখানে কাজ করার সময়ই সেই অরিগামি সংগঠনে এয়ারমেল করে বুকলিস্ট চাইলাম। পেলামও। আমার তখন আত্মহারা অবস্থা! কিন্তু বইয়ের দাম প্রচুর! প্রায় ৩,০০০ টাকা। সেসময়ের নিরিখে অনেকটাই। তবু পাঠালাম। কিন্তু পরে সংস্থার তরফে এয়ারমেল করে জানাল, আরও দশ ডলার দিতে হবে! আমার তো মাথায় হাত! তখন সৌম্যেন পাল, আমার অসমবয়সি বন্ধু– ও একজনের বাড়ি নিয়ে গেল। সেই ভদ্রলোকের ছেলের নাম ড. দিলীপকুমার সোম, থাকতেন আমেরিকায়। তাঁর সৌজন্যে পেলাম সেই বই দুটো। তিনি বাড়তি ১০ ডলার দিয়ে সেই বই কিনে আমাকে পাঠালেন। তিনমাস পর জাহাজে এল সেই বই। এদিকে রাত জেগে তখন চলছে আমার অরিগামি চর্চা। কোথায় ভালো কাগজ পাওয়া যায়, কীভাবে কাগজের ভাঁজগুলো আরও নিখুঁত করা যায়। কাগজ যদি ভিজিয়ে করি, তাহলে সেটা ত্রিমাত্রিক হয়ে উঠবে কি না, এমন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা তখন করতাম। পাশাপাশি চলত বইপড়া।
ছোটদের শেখানোর চেষ্টা করেননি?
করেছি– আপ্রাণ চেষ্টা করেছি! এখানে অবনী সংঘের মাঠে ছোটদের শেখানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তেমন আগ্রহ দেখিনি। ২০-২৫ জনকে বিনাপয়সায় শেখানোর চেষ্টা করেছি। ক’দিন হয়তো এসেছে, শেখানোর চেষ্টা করেছে। হঠাৎ দেখি, তাদের বাড়ির লোক এসে বলছে, ধুর! কী শেখাচ্ছেন মশাই! বাড়ি নোংরা করছে! এসব শুনে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ছেড়ে দিয়েছি। শেষে নিজেই নিজের কাজে ডুবে থাকলাম। ভেবে দেখলাম, একটা বই লেখা দরকার। বই লেখার কথা যখন ভাবছি তখনও কিন্তু কম্পিউটারের সঙ্গে পরিচয় হয়নি। অফিসে সবে সবে তখন কম্পিউটার আসছে। নিজেও শিখলাম।
সেটা আপনাকে কতটা সাহায্য করল?
খানিকটা। তার আগে ’৮৮-তে আমি একটা ছোট করে অরিগামির ওপর এগজিবিশন করলাম। তার পর আরও শেখার জন্য এদিক-ওদিক ঘুরছি। সৌম্যেনও নানা ভাবে আমায় সাহায্য করে চলেছিল। এমন সময়ই সংবাদপত্রে খোঁজ পেলাম ইন্দো-জাপান ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের তরফে অরিগামি শেখানো হচ্ছে। খুঁজে খুঁজে গিয়েছি বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে তাদের অফিসে। কিন্তু ক’দিন শেখার পর বুঝলাম, নতুন কিছু শেখা হচ্ছে না! তাছাড়া যে-পদ্ধতিতে সেখানে শেখানো হচ্ছিল, তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে শিক্ষার্থীরা। সেসব দেখেই বই লেখার চিন্তাভাবনা শুরু করি। যাই হোক, পরবর্তী সময়ে সেই ইন্দো-জাপানেই আবার যোগ দিয়েছিলাম, তবে শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষক হিসেবে। যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তিনি সরে চলে যাওয়ার পর আমি টানা পাঁচ বছর ওই ইনস্টিটিউটে অরিগামি শিখিয়েছি শিক্ষার্থীদের।

যে বইয়ের কথা বলছিলেন, তা কি প্রকাশিত হয়েছিল তখন?
না, লেখা হয়েছিল। ছাপানো হয়নি। আমার অনেক আগেই নারায়ণ স্যানাল একটা বই লিখিছিলেন– ‘অরিগামি’ নামে। আমি চেষ্টা করছিলাম ব্যাকরণসম্মত ভাবে একটা বই লিখতে। যা দেখে ছোট ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই বিষয়টা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়।
এখন সেই আগ্রহ দেখতে পান?
একদমই নয়। শেখার ব্যাপারে এখানে তেমন আগ্রহ নেই। অভিভাবকদের মধ্যে তো একদমই আগ্রহ দেখি না। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, এখানে সৃষ্টিশীল মানসিকতার অভাব প্রচণ্ড পরিমাণে। এখানে শেখার চেয়েও প্রতিযোগিতায় জেতার উৎসাহ বেশি। কীভাবে এই অরিগামি শিল্পকে, ক্র্যাফ্টকে কাজে লাগানো যায়, সেই ভাবনার কোনও বিকাশ চোখে পড়ে না।
আচ্ছা, অরিগামি ফেলে দেওয়া কাগজ দিয়েও করা যায়?
হ্যাঁ, যায় তো! আমি নিজে করেছি।

শিল্পের একটা কাজ তো প্রতিবাদ। তা সামাজিক, রাজনৈতিক নানা স্থিতাবস্থাকে আঘাত করে। আপনি আপনার অরিগামি দিয়ে সেই আঘাত কি করেছেন?
আমি হয়তো অরিগামি দিয়ে প্রতিবাদ করতে পারিনি। সেটা রাজনৈতিকভাবে না, ব্যক্তিগত পরিসরেও নয়। সেই সময় কিংবা সুযোগ কোনওটাই পাইনি। কিন্তু আমার এক ছাত্রী, শুনেছি সে মিছিলে, রাজনৈতিক বইয়ের স্টলে তার অরিগামি রেখেছিল। আমি চাইব, অরিগামিও মিছিলে নামুক। শিল্প হিসেবে সাধারণের পাশে দাঁড়াক।
শিল্পকলা বললে, এখনও দুম করে কেউ ‘অরিগামি’র কথা ভাবে না, আপনার আফসোস হয় না?
হয় তো। শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দোষ দেব না। আমরাও একটা পর্যায়ে আটকেই পড়েছি। আকিরা য়োশিযাওয়ারা এই শিল্পকে যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, সেই পর্যায়ে আমরা পৌঁছতে পারিনি। আমরা জ্যামিতিক সূত্র ধরে মডেলটুকু নির্মাণ করতে পারছি, তা আয়ত্ত করতে পারছি। কিন্তু নতুন কোনও অঙ্ক তৈরি করতে পারছি না, যেটা অরিগামির আরেকটা দিক উন্মোচিত করবে। এটাই আমাদের সীমাবদ্ধতা। তবে বিশ্বাস আছে, কাগজ আর দশ আঙুলের বন্ধুত্বে নতুন কিছু হবেই।
…………………………………..
ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: রোববার ডিজিটাল
…………………………………..
A Unit of: Sangbad Pratidin Digital Private Limited. All rights reserved