কড়চা। চারপাশে কী হচ্ছে। কোথায় যাবেন, কী দেখবেন। সংস্কৃতির হাঁড়ির খবর, ভেতরবাড়ির খবর এখন এক ঠিকানায়: ক্ক!
……………………………………………ক্ক………………………………………..
অসংখ্য নক্ষত্রের রাত
‘গভীর হাওয়ার রাত ছিলো কাল— অসংখ্য নক্ষত্রের রাত;
সারা রাত বিস্তীর্ণ হাওয়া আমার মশারিতে খেলেছে;’
‘হাওয়ার রাত’কবিতায় আশ্চর্য এ উচ্চারণ করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। সেই হাওয়ার রাত অনুভূত হয়েছিল আধো ঘুমের আবহেই। সেই কবিকে নিয়েই এবার ‘ঘুমের হাওয়া’-র আয়োজন। জীবনানন্দ দাশের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের সূত্রেই এ আয়োজন করেছে মান্দাস, ১০ আগস্ট, সন্ধ্যা ছ’টায় প্রতিক্ষণের বই-চা ঘরে। জীবনানন্দ রচিত গানের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করবেন শুদ্ধব্রত দেব। সুর ও কণ্ঠে, সহেলী। পাশাপাশি আলোচনা হবে কবিকে নিয়েও। ‘অপরানুভূতির বাসনা: জীবনানন্দের কবিতা বিষয়ক কয়েকটি এলোমেলো কথা’ শিরোনামে কথা বলবেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল কাফি।
……………………………………………ক্ক………………………………………..
জলের কাছে, প্রাণের কাছে
প্রবাদ বলে, জল বিনে চাতক মৈল রে। কিন্তু মানুষের জন্যও যদি কখনও বরাদ্দ হয় তেমনই নিয়তি? গলা অবধি শুকিয়ে যাওয়া তেষ্টায় যদি তাকেও জলের খোঁজে ফিরতে হয় কেবল? জলসংকট যখন ভয় ধরাচ্ছে বিশ্বজুড়েই, সেই সময়ই সেই ক্ষত সারানোর লক্ষ্যে তৎপর ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও’ আন্দোলন। বর্তমান সময়ে প্রকৃতি-বাস্ততন্ত্র বজায় রাখার কাজটি যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজনীয় তাকে পুনরুদ্ধার করাও। বৃহত্তর বাস্তুতান্ত্রিক জোট তথা ‘ecological alliance’ গড়ে তোলা আজ জরুরি। নদীকে অক্ষ ধরে এই জোট গড়ে তোলার পক্ষেই সওয়াল নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন-এর। সে কথা মনে রেখেই, ৮৪৯/১, কালিকাপুর রোডের পঞ্চানন ভবনে ১০ এবং ১১ আগস্ট আয়োজিত হচ্ছে কলকাতা নদী কনভেনশন ২০২৪। উপস্থিত থাকছেন হিমালয়ের বিভিন্ন রাজ্য-সহ ছত্তিশগড়, তামিলনাড়ু, বিহার, ঝাড়খণ্ডের বিশেষজ্ঞরা, দেশের বিভিন্ন ছোট-বড় নদী পাড়ের মানুষ যাঁরা প্রকৃতি-বাস্ততন্ত্র রক্ষার দাবিতে সোচ্চার।
……………………………………………ক্ক………………………………………..
রসো, এই কাব্যের পাশে
জনতার সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু নির্জনতার সঙ্গে? কখন টের পাওয়া যায় নির্জনতা? যখন হঠাৎ কোনও রাস্তা একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। কিংবা, দেখতে ফাঁকা লাগে। সুরেন ব্যানার্জি রোডে এমন এক নির্জনতার সঙ্গে দেখা হয়েছিল উৎপলকুমার বসুর। সে কবিতায়, শেষমেশ জানা যায়, না, কোনও নির্জনতা নয়, নির্জনতা বললে ভুল হবে, তা ফুটপাথের কেনা শান্ত, নতুন চিরুনি– যার দাঁতে স্ত্রীলোকের দীর্ঘ চুল লেগে রয়েছে। চিরুনিটি হয়তো বা ব্যবহার করেছিল সেই স্ত্রীলোকটি। কিন্তু শেষমেশ হয়তো বা বেছে নিয়েছিল অন্য আরেকটি। এটি নয়। এই চিরুনি এখনও নির্জন হয়ে আছে। তবুও সে ওই একটি দীর্ঘ চুল চেপে ধরে আছে দাঁতে। বাংলা কবিতার খণ্ডবৈচিত্রের দিনে, হাজির ছিলেন উৎপলকুমার বসু, কিছুকালমাত্র আগেও। ঢোলা সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবিতে কফি হাউসে যে কথা ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি, আর ঝুলন্ত ফ্যানে তা বহু ভাগ হয়ে পড়েই চলেছে– নানা জনের কথায়, সেই উৎপলকুমার বসুকে আবছা হলেও আবারও আমরা দেখতে পাই বহু সময়। ‘ভাষালিপি’ ও ‘কবিয়াল’-এর উদ্যোগে ১৭ আগস্ট মেঘমল্লার-এ রয়েছে উৎপলকুমার বসু স্মৃতি পুরস্কার ও স্মারক বক্তৃতা। এ বছর কবির নামাঙ্কিত পুরস্কার পাচ্ছেন বন্ধুসুন্দর পাল, তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘তোমাকে সন্দেহ করি’ (মাস্তুল প্রকাশনী)। উৎপলকুমার বসু স্মারক বক্তৃতা দেবেন আব্দুল কাফি। গদ্যপাঠে তথাগত, কবিতাপাঠে তপন রায়, সুদীপ বসু, শাশ্বতী সান্যাল এবং বন্ধুসুন্দর পাল। উৎপলকুমার বসুর কবিতাপাঠ করবেন অয়ন চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানের সূচনা হবে দীপান্বিতা সরকারের গান দিয়ে। অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধে ৬টায়।
শ্রাবণে যুগলবন্দি
সেতার ও ছবি। সুর ও রং। মিলে যাচ্ছে এই শ্রাবণে। যুগলবন্দিতে। ১৪ আগস্ট, বিড়লা অ্যাকাডেমিতে ঘটবে এই অভিনব মেলবন্ধন। উপলক্ষ কেবল অঝোর বৃষ্টিধারা! সেতারে থাকবেন দীপাঞ্জন গুহ, চিত্রকলায় শুভাশিস সাহা। দীপাঞ্জন গুহ পণ্ডিত কুশল দাসের শিষ্য। দেশবিদেশের বহু অনুষ্ঠানে দীপাঞ্জনের সেতারবাদনে মুগ্ধ হয়েছেন শ্রোতারা। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে একাধিকবার বাজিয়েছেন দেশের বিভিন্ন মঞ্চে। আমেরিকায় তাঁকে ‘দি মাস্টার অফ ক্রিয়েটিং মুডস থ্রু মেলোডিজ’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল। শুভাশিস সাহা কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ এবং শান্তিনিকেতনের কলাভবন থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়েছে বহু সময়। এই শ্রাবণে রঙের সুরে ভিজবেন কি না, হে পাঠক, আপনিই ভেবে দেখুন।
……………………………………………ক্ক………………………………………..
আমার রবীন্দ্রনাথ
স্রষ্টা স্মরণীয় হন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে। শিল্পসাধনায় মৌলিকত্ব তাঁকে চিরস্থায়ী জায়গা করে দেয় সাধারণের মনে। উত্তরপ্রজন্মের চর্চায় চিরজীবী হয়ে থাকে সেই স্রষ্টার স্বকীয়তা। বাংলা ও বাঙালির জীবনচেতনায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থান ঠিক তেমনই। তাঁর সৃষ্টির ভুবনকে আশ্রয় করেই আমাদের নিত্যদিনের যাপন। রবি-প্রতিভার আলোতেই আমরা খুঁজে নিই নিজেদের অস্তিত্ব। একইসঙ্গে চিন্তা ও চেতনাকে। সেই সৃজনশীলতাকে বহুরূপে, বিচিত্রধারায় আত্মস্থ করে সমৃদ্ধ করি নিজেদের যাত্রাপথ। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। কবিসত্তা তাঁর বৈচিত্রময় প্রকাশের এক বিশিষ্ট দিকচিহ্ন। সেই কাব্যতীর্থে সাধারণের অবাধ নিমন্ত্রণ। কবির সেই মানসলোক পাঠকের মনে ধরা দেয় ভিন্ন আঙ্গিকে। কীভাবে আসেন রবিকবি? সেই উদ্ভাসকেই ছবি ও ভাস্কর্যে ধরার চেষ্টা করেছে ‘পেট্রিচোর’ (Petrichor), শ্রদ্ধায়-স্মরণে, ২২ শ্রাবণের আবহে। প্রদর্শনীটির শিরোনাম ‘আমার রবীন্দ্রনাথ’। একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের নর্থ গ্যালারিতে ৬ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। চলবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত। উপস্থিত থাকবেন তারক গড়াই, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় ও সুশোভন অধিকারী।
……………………………………………ক্ক………………………………………..
সঙ্গে থাকল কে কে
প্রেম-হারানো সর্বস্বান্ত দিনে, বন্ধু হারানোর মেঘলা বিষাদে, কিংবা অন্য কোনও বিপর্যয়, যা একা সামলানোর ক্ষমতা নেই, বন্ধু হয়ে পাশে থাকেন কেকে। সুরেলা পথে হাত ধরে পৌঁছে দেন অচিনপুরে। তাঁর কণ্ঠে, ‘তু হি মেরি সব হ্যায়’ নতুন করে প্রেমের ভাষা শিখিয়েছিল গোটা একটা প্রজন্মকে। তাঁর গাওয়া, ‘দিন কিঁউ ইয়ে মেরা’ খুঁজে দিয়েছিল আবেগের ভাষা। তারপর কত গান। কত ‘বিতহে লমহে’র গোধূলি নেমেছে সুরের বারান্দায়। প্রেমিকার চোখের ‘আজবসি আদায়ে’ তাঁর গান ছুঁয়েই তো চিনেছে কত প্রেমিক। খুঁজে ফেরা আশিয়ানার কত জোনাকি আলো ছড়িয়েছে তাঁরই গানের পথে পথে। আর কে কে, ক্রমে পেরিয়ে গিয়েছেন প্রজন্মের পরিধি। কে কে আর নেই। বছর দুই পেরিয়েও এ সত্যি মেনে নিতে ইচ্ছা করে না। ফিরে যেতে ইচ্ছা করে তাঁর কনসার্টে, এই কলকাতার বুকে দাঁড়িয়েই তো শেষবারের জন্য গেয়েছিলেন ‘হাম রহে না রহে কাল’। তাঁর স্মৃতি বুকে নিয়েই কনসার্টের আয়োজন করেছে অ্যালাইভ ইন্ডিয়া মিউজিক ফাউন্ডেশন। ২৫ আগস্ট, সায়েন্স সিটি মেইন অডিটোরিয়ামে বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠান শুরু। গান গাইবেন জুবিন গর্গ, অমিত যাদব, সুপ্রতীক ঘোষ-সহ আরও অনেকে। প্রথমবারের জন্য কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বই-এর শিল্পীরা একমঞ্চে অনুষ্ঠান করবেন। সঙ্গে থাকবেন সেইসব যন্ত্রশিল্পী যারা কে কে-এর শেষ অনুষ্ঠানে সঙ্গ দিয়েছিলেন। গানে গানে সংগীতশিল্পীকে খুঁজে পাওয়া, তাঁর গানে পুরনো দিনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ মিলবে ‘কলকাতা সিঙ্গস ফর কেকে’- অনুষ্ঠানে।
……………………………..ক্ক…………………………
স্বাধীনতার ইতিহাস
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মাজু একট স্মরণীয় নাম। তাঁরই নামাঙ্কিত পাবলিক লাইব্রেরি জনমানসে ইতিহাস চর্চার ধারাকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এই প্রদর্শনীতে থাকবে অতি দুষ্প্রাপ্য ঐতিহাসিক গ্রন্থ ও পত্র-পত্রিকা সমূহ। সাধারণ মানুষের মনে তুলে ধরা হবে স্বাধীনতা আন্দোলনের বর্ণময় চিত্র। বিস্মৃতপ্রায় হাওড়া জেলার স্বাধীনতা আন্দোলনের অধ্যায়কে তুলে ধরতে এই প্রয়াস। ১৫ আগস্ট, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টেয় প্রদর্শনীর উদ্বোধন। চলবে ২২ আগস্ট পর্যন্ত।
……………………………….ক্ক…………………………
বৃক্ষরূপেণ
কবিগুরুর লেখায়, গানে বারবার ফিরেছে প্রকৃতির প্রসঙ্গ। তাঁর পরিবেশ ভাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে বৃক্ষরোপণ। কবির কাছে বৃক্ষ বন্দনার অর্থ ছিল প্রাণের উপাসনা। তাই ২৫ বৈশাখ, নিজের জন্মদিনে শান্তিনিকতনে বৃক্ষরোপণ উৎসবের সূচনা করেন রবীন্দ্রনাথ। জীবদ্দশায় প্রতিবছর নিজ দায়িত্ব তা পালন করতেন কবিগুরু। মৃত্যুর পর তাঁর প্রয়াণ দিবসে বৃক্ষরোপণ উদযাপন করে শান্তিনিকেতন। যেন প্রকৃতির শত-সহস্র জন্মের মধ্যে রবীন্দ্রনাথকে, রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নকে পুনর্স্থাপন করতে চাওয়া। বলতে চাওয়া, মৃত্যু আদতে শেষ নয়, জন্মের অমোঘ গন্তব্য। শান্তিনিকেতনের মতো প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ উৎসবের আয়োজন করে ‘ডাকঘর’। রবীন্দ্র-উপাসক শিল্পী মনোজ মুরলী নায়ারের দীক্ষায় লালিত এই সংস্থা, গুরুদেব প্রবর্তিত বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করে। বৃক্ষরোপণ তারই অন্যতম। বিগত ১২ বছর ধরে কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে, বৃক্ষ আরাধনার আয়োজন করে আসছে ‘ডাকঘর’। নিছক বৃক্ষ রোপণ নয়, তার সঙ্গে জুড়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান এই উৎসবকে অন্য মাত্রা দেয়। এবারের বৃক্ষরোপণ উৎসব অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘রনজিত ঝর্ণা কনসাই ইকো ফাউন্ডেশন’-এর সহযোগিতায়। ১৫ আগস্ট, বিকেল ৪টে পুরুলিয়ার ‘বনপুলক’-এ।
সহায়তা: রণিতা চট্টোপাধ্যায়, শুভদীপ রায়, সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়, সম্বিত বসু, তিতাস রায় বর্মন