Robbar

রবীন্দ্রনাথের হাতের ছাপ ও বনফুল

Published by: Robbar Digital
  • Posted:September 14, 2024 8:46 pm
  • Updated:September 14, 2024 8:46 pm  

কড়চা। চারপাশে কী হচ্ছে। কোথায় যাবেন, কী দেখবেন। সংস্কৃতির হাঁড়ির খবর, ভেতরবাড়ির খবর এখন এক ঠিকানায়: ক্ক!

রবীন্দ্রনাথের হাতের ছাপ

১৯৩৯ সাল। মার্চ মাসের শেষদিক। রবীন্দ্রনাথ তখন ‘শ্যামলী’ নামের বাড়িতে থাকতেন। একদিন দুপুর দুটো নাগাদ প্রখর রৌদ্রতাপ উপেক্ষা করে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অমিতা সেন (খুকু) এবং সন্তোষকুমার ভঞ্জ চৌধুরী রওনা হলেন শ্যামলী বাড়ির পথে। উদ্দেশ্য: গুরুদেবের হাতের ছাপ সংগ্রহ। সঙ্গে ছাপ নেওয়ার যাবতীয় সরঞ্জাম যথা একটি কাচের ফলক, রবারের রোলার, ছাপাখানার কালো কালি, কাগজ, তোয়ালে, সাবান। চারিদিকে লু বইছে, জনশূন্য পথ। কিন্তু এসবের কোনও ছাপ তাঁদের অন্তরে-বাহিরে এক্কেবারেই নেই। তাঁরা পথ হেঁটে চলেছেন বিপুল উৎসাহে, কবিগুরুর হাতের ছাপ সংগ্রহের উত্তেজনায়! শ্যামলীর দক্ষিণের প্রবেশপথ খসখসের পর্দায় ঢাকা। পর্দার পাশে ভিতরে একটা টেবিল আর তার ধারের চেয়ারে বসে রবীন্দ্রনাথ তখন লিখছেন। অতি সন্তর্পণে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেও রবীন্দ্রনাথের গোচরে এলেন দু’জনে। ভিতর থেকে গুরুদেব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে?’ খসখসের পর্দা সামান্য ফাঁক করে বাইরে থেকেই অমিতার জবাব, ‘আমি অমিতা আর সন্তোষ ভঞ্জদা– আমরা একটা দরবার নিয়ে আপনার কাছে এসেছি।’ গুরুদেব:  ‘এমন সময় কী দরবার তোদের? ভিতরে এসে বোস।’ তাঁরা ভিতরে ঢুকে প্রণাম করলেন রবীন্দ্রনাথকে। সন্তোষকুমার এবার বললেন, ‘আমরা পামিস্ট্রি চর্চা করছি, আমাদের ইচ্ছা হয়েছে আপনার হাতের ছাপ নিয়ে সেটি আমরা দেখবো।’ গুরুদেব, ‘ভালো কথা, ভবিষ্যৎ জানার আগ্রহ কার না আছে। যদি ভবিষ্যৎ বলতে পারো, খুশি হব। একজন জার্মান ফ্রেনোলজিস্ট আমার মাথার নানা দিক থেকে মাপজোখ নিয়ে ভবিষ্যৎ বলেছিল– আমার নাকি আর একটা বিয়ে হবে। বলেই গুরুদেব হো হো করে হেসে বললেন, ‘তোমরা দেখো তো সেটা সত্যি কিনা!’ এবার হাসি কী আর কোনও বাঁধ মানে, বাকি দু’জনেও হেসে উঠলেন রবীন্দ্রনাথের এহেন রসিকতা রসবর্ষণে। শুরু হল ছাপ নেওয়ার শেষ প্রস্তুতি। কাচের ফলকে রোলার দিয়ে সমান করে কালো কালি লাগিয়ে রবীন্দ্রনাথের হাতে যেই না সে কালি দেবার মাহেন্দ্রক্ষণ প্রস্তুত, তখনই গুরুদেব বলে উঠলেন, ‘আমার অঙ্গে কালিমা লেপন করছিস তোরা, দুঃসাহস তো কম নয়। আর কেউ এমন করতে সাহস করত না।’ দু’জনেই এবার কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে ধুয়ে মুছে দেব, একটুও কালি থাকবে না।’ দুই হাতেরই ছাপ নেওয়া হল কাগজে। তাঁদের স্বপ্ন এবার ঘোর বাস্তব। ছাপ নেওয়ার পর সযত্নে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের হাত। ছাপ নেওয়া কাগজে সইও করে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই হল রবীন্দ্রনাথের হাতের ছাপ নেওয়ার ইতিহাস। ১২ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা ৬টায় হুগলির উত্তরপাড়ায় ‘জীবনস্মৃতি’র প্রদর্শকক্ষে প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন অণিমা সাহা সরদার। মন্ত্রপাঠ, নিবন্ধপাঠ এবং কবিতাপাঠে জীবনস্মৃতির সাথীরা।

…………………………………………………………………………….ক্ক……………………………………………………………………..

বন্ধু, আত্মা, ঈশ্বর

ঈশ্বরের সঙ্গে মোলাকাত করতে চেয়ে বারবার এক পরিচিতের মুখ দেখেছিলেন রুমি। কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন ঈশ্বর মানে হয়তো কোনও প্রকাণ্ড অচেনার সামনে দাঁড়ানো। ভেবেছিলেন তার সামনে দাঁড়িয়ে হিমশিম খাবেন, কোনও বৃহৎ কোনও রহস্য উন্মোচিত হবে, কিন্তু শেষমেশ প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধুর মুখোমুখি বসে রইলেন কবি। সেই বন্ধুর সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক কী? কেন এই বন্ধুত্ব এত প্রবলভাবে ঈশ্বরবিশ্বাসী করে তুলছে তাঁকে? কেন ঈশ্বরকে তিনি নিজের আত্মায় টের পাচ্ছেন? বহু বছর পর আরেক কবি লিখেছিলেন, তিনি ঈশ্বরের গায়ের গন্ধ পান। আমির খসরু মনে করতেন হয়তো হাতটা আরেকটু বাড়ালেই রক্ত-মাংসে ঈশ্বরকে ছুঁয়ে দেখতে পারবেন। এতই যদি কাছে হতে, তবে নাগাল কেন পাইনে? ঈশ্বরে বিশ্বাস আর ঈশ্বরে বসবাস কেমনভাবে আলাদা হয়? ২০২৪ হীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারক বক্তৃতার বিষয় ‘মেরা ইয়ার হি খুদা হ্যায়: বন্ধু, আত্মা, ঈশ্বর: এক না আলাদা?’ বক্তা অধ্যাপক অরিন্দম চক্রবর্তী। সভামুখ্য নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তী। ২০ সেপ্টেম্বর, বিকেল ৪টেয় বুদ্ধদেব বসু সভাঘরে আয়োজিত এই বক্তৃতার আয়োজক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ফাউন্ডেশন।

…………………………………………………………………………….ক্ক……………………………………………………………………..

বনফুলের কাছে

বাংলার বাইরে জন্ম, বাংলার বাইরেই শুরু সাহিত্যজীবনের। তবুও বাংলা সাহিত্য বনফুলকে বাদ দিয়ে তার ইতিহাস লিখতে পারে না। একদিকে চিকিৎসক, আরেকদিকে লেখক, তুমুল পাঠকও, সঙ্গে খাদ্যপ্রেম কিংবা বাগান করার নেশা, সব মিলিয়ে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় নিজেই এক বহুবর্ণিল চরিত্র। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বা মধুসূদন দত্তকে নিয়ে লেখা তাঁর নাটকও নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে মাইলফলক। ১৯ জুলাই, ১৯২৪-এর জাতক বনফুলের ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেই বিচিত্র মানুষটিকেই ফিরে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে সূত্রধর। ১৯ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বসছে সে আসর। স্থান ২৪, অশ্বিনী দত্ত রোডে শরৎচন্দ্রের বাসভবন। অনুষ্ঠানে বনফুলের নানা দিক নিয়ে আলোচনায় থাকছেন শ্রাবণী পাল, প্রিয়ব্রত ঘোষাল এবং শিলাদিত্য সেন। সেদিনই প্রকাশিত হতে চলেছে দু’টি বই– বনফুলের নিজের লেখা ‘মানুষ মধুসূদন’, এবং অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সম্পাদনায় ‘দাদামশাই ও বনফুল: সখ্য সম্পর্কে’। উপরন্তু, বনফুলের নাট্য পাঠে থাকবেন শুভঙ্কর রায়।

…………………………………………………………………………….ক্ক……………………………………………………………………..

শর‌ৎ-প্রাতে
বাংলা কথাসাহিত্যের বিস্তৃত ভুবনে তাঁর অবস্থান ধ্রুবতারার মতো। অভিজাতের বেড়া ডিঙিয়ে তাঁর লেখায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সাধারণের চাওয়া-পাওয়া, আশা-আশঙ্কার অনুভূতি, তাদের অন্তরের দোলাচল। সংসারে যারা লাঞ্ছিত, যারা বঞ্চিত তাদের ভাষ্য হয়ে ঝরে পড়েছে তাঁর লেখনী। আর সেই অকৃত্রিম প্রয়াসেই তিনি বাংলা কথাসাহিত্যের অদ্বিতীয় ‘কথাশিল্পী’- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। পাঠকপ্রিয় সেই বরেণ্য কথাসাহিত্যিকের জন্মবার্ষিকী ১৫ সেপ্টেম্বর। সেই উপলক্ষে ১৬ সেপ্টেম্বর, সন্ধে ৬.৩০টায় শরৎস্মৃতি সদনে আয়োজিত হতে চলেছে ‘শরৎ জন্মজয়ন্তী উৎসব’-এর ১৪৩১ বঙ্গাব্দের পুরস্কার অর্পণ অনুষ্ঠান। আয়োজনে শর‌ৎ সমিতি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামকুমার মুখোপাধ্যায়, স্বাগত ভাষণ পাঠে শ্যামলকুমার বসু। আলোচনায় শ্রাবণী পাল। এ বছর শরৎ পুরস্কার পেতে চলেছেন সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র, শরৎচর্চা ও গবেষণা পুরস্কার পাচ্ছেন মীনাক্ষী সিংহ। পাশাপাশি শরৎ অনুবাদ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে তেনুসুবম কুঞ্জেশোর সিংহের হাতে।

…………………………………………………………………………….ক্ক……………………………………………………………………..

ভালোবাসার জন্ম ও মৃত্যু

এক ছোট্ট জনপদে অনেক রকমের ভালোবাসার গল্প জন্ম নেয়। শহুরে খামখেয়ালিপনায় যে প্রেম যে ভালোবাসা হারিয়ে যায়, সেই ভালোবাসার স্বপ্নের নিকেতন হয়ে ওঠে ছোট ছোট জনপদ, ভালোবাসার আশ্বাস যেখানে আজও বেঁচে থাকে। কিন্তু না, এ আসলেই অলীক কল্পনা। ভালোবাসা যখন দুটি ছেলে বা দুটি মেয়ের মধ্যে জারিত হয়, তখনও ছোট ছোট জনপদগুলিই মৃত্যুনগরী হয়ে ওঠে। সমকামী মানুষের প্রেম একটি ছোট জনপদে– এটাই শিল্পী দেবাশিস পালের প্রদর্শনীর বিষয়। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে দেবাশিস পালের একক প্রদর্শনী, ইমামি আর্ট গ্যালারিতে। চলবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত।

…………………………………………………………………………….ক্ক……………………………………………………………………..

নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু

৭ সেপ্টেম্বর কলকাতা ‘কলামণ্ডলম’ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হল ‘যামিনী কৃষ্ণ মূর্তি নৃত্য উৎসব’। অনুষ্ঠানের আয়োজক নান্দনিক মানুষ ফাউন্ডেশন। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ঋতুরাজ প্রামাণিক। নৃত্য কিংবদন্তী পদ্মবিভূষণ যামিনী কৃষ্ণ মূর্তির স্মরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন সংস্থার তরফে জীবনকৃতি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় নৃত্যগুরু ডঃ থাঙ্কমণি কুট্টিকে। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা কলামণ্ডলমের সভাপতি সোমনাথ কুট্টি ও নৃত্যশিল্পী, অভিনেত্রী মালবিকা সেন। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুণী শিল্পীরা এসেছিলেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

 

সহায়তা: শুভদীপ রায়, রণিতা চট্টোপাধ্যায়, সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়, সম্বিত বসু, তিতাস রায় বর্মন