কী করে যেন একটা অ্যাক্সিডেন্স। তারপর বিছানায়। বেরনো যাচ্ছে না। কিন্তু জানাতেও ইচ্ছে করছে। কাকে? একটি ছাতিমগাছকে। সেই কবে, কোন ছোটবেলায় সে গন্ধে মনে হয়েছিল, এটাই উত্তর কলকাতা। পরে, সে ভুল ভাঙে। ভুল কতরকম ভাবেই না ভাঙে। তবু দু’একটা ভুল অক্ষত থাকে, ভাঙে না। ভোকাট্টা-র তৃতীয় চিঠির লেখক রাজর্ষি ধারা।
প্ৰিয় ছাতিম,
জানো, অ্যাক্সিডেন্টের আঘাত পায়ে নিয়ে আপাতত আমি খাটে শুয়ে শুয়ে গাছ দেখি। একটা আম, একটা বট আর দূরে ঝোপঝাড়ের মধ্যে দুটো কলাগাছ। তবে আমার বাড়ির আশপাশে তুমি নেই, আছো একটু দূরে, যেখান থেকে তোমার গন্ধ,স্পর্শ কোনওটাই আমি পাই না। তোমায় কিছু গল্প অনেককাল থেকে বলব ভেবেছিলাম, আজ যখন আমরা মুখোমুখি নেই, তখন চিঠি মারফত বলাই ভালো মনে করছি।
এই পুজোর আগে আগে যখন বাবার হাত ধরে উত্তর কলকাতার রাস্তায় হাঁটতাম, তখন তোমার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়, তবে আমি জানতাম না এটা তুমি। আমার মনে হত উত্তর কলকাতার একটা নিজস্ব গন্ধ আছে, এটা হয়তো সেটাই। তখন আমার কত বয়স হবে? হার্ডলি ক্লাস টু বা থ্রি।
আমি গঙ্গার এপারের লোক, কিছু বছর পর যখন হাওড়াতেও একই গন্ধ পেতে শুরু করলাম, বুঝলাম এটা উত্তর কলকাতার একচ্ছত্র সম্পত্তি নয়। তখন চিনলাম, বুঝলাম তুমি আসলে কে।
আমি যে কলেজটায় পড়ি, তার দরজা দিয়ে ঢুকেই পোর্টিকোর পাশে একটা তুমি আছো। ১৭০ বছরের প্রকাণ্ড সাদা বাড়িটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুমিও বেড়ে চলেছ। এখন আমি কলেজ যেতে না পারলেও, জানি, তুমি গন্ধে ভরিয়ে রেখেছ গোটা ক্যাম্পাসটা।
আমি জানি না আমার প্রেম ছাতিম তোমার সঙ্গে ছিল না কি তোমার গন্ধের সঙ্গে ছিল, বা হয়তো ছিল এই গোটা সময়টার সঙ্গেই। বছরের এই দু’-তিন মাস তোমাকে নিয়ে থাকতে খুব ভালো লাগে জানো তো। এক বান্ধবী জীবন থেকে চলে যাওয়ার আগে বিদায়ী উপহার হিসাবে হাতে ধরিয়ে গেছিল একগোছা ছাতিম পাতা। সেই বান্ধবী থাকেনি, কিন্তু ঘটনাচক্রে তুমি থেকে গেছ। বিশ্বাসের সঙ্গে অন্ধত্বর যোগ সবথেকে বেশি, তাও আমি বিশ্বাস করি, সবাই ছেড়ে গেলেও, আমার সব মনখারাপের ওপর হাত বুলিয়ে দেওয়ার জন্য তুমি ছিলে, আছো, থেকে যাবে।
পারলে আমার জানলার পাশে একদিন জন্মিয়ো, তবে জন্মালেও তোমার বড় হতে অনেক সময় লাগবে জানি। সে যাই হোক, খুব তাড়াতাড়ি তোমার ছায়ায় দাঁড়িয়ে তোমার গন্ধ মাখতে চাই।
ইতি,
ক্লাস টু-এর সেই ক্যাবলা ছেলে, যে এখনও ঠিক একইরকম ক্যাবলা আছে
প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশের সময় সম্পাদকের বক্তব্য ছিল কিঞ্চিৎ দ্বিধাজড়িত। একটি পৃথক গ্রন্থ হিসাবেই সংখ্যাটিকে ভাবছিলেন তাঁরা। সম্পাদকের নিবেদনে সেই সংশয় স্পষ্ট– ‘আগামীবারে এই বই আরও বিরাট আকারে বাহির করিবার ইচ্ছা রহিল।... তবে এর সাফল্যের সবটাই নির্ভর করিতেছে চিত্র-প্রিয়দের সহানুভূতির উপর।...’
বাঙালি, একালের বাঙালি, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আশ্চর্যরকম ভাবে কচ্ছপ হয়ে ওঠে। তাকে বলি কচ্ছপের রাজনীতি। খোলার ভেতরে ঢুকে পড়ে, নিজেকে বাঁচানো। খাবো-দাবো রোজগার করব। মাঝে মাঝে টিভিতে কিংবা সমাজমাধ্যমে উত্তেজনার প্রশমন করব। কিছুতেই কিন্তু পথে নেমে নিঃস্বার্থভাবে নৈতিকতার রাজনীতিতে যোগ দেব না।