যখন প্রথম প্রথম রাইটার্স বিল্ডিং গড়ন গঠন নিয়ে হাজিরা দিয়েছে, সেই সময় এদেশে আসা ইংরেজ জুনিয়র সারভেন্টরা থাকার জন্য পেল ভবনের কিছু ঘর। বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা হল তাদের। তবে ভবনের নির্মাণ এগিয়ে গেল আপন ছন্দে। দেখতে দেখতে প্রচুর পরিবর্তন এল টমাস লিয়নের পরিকল্পনা মাফিক। করিন্থিয়ান অর্ডারের থাম এবং ব্যারক ছন্দের আদলে স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত হল নানা ধরনের মূর্তি। এই প্রত্যেকটি মূর্তির সঙ্গে মিশে রইল ইংরেজের ভাবমূর্তি এদেশের জনগণের কাছে উজ্জ্বল করে দেখানোর ইঙ্গিত। শীর্ষের প্রধান মূর্তি হিসেবে রইল ‘মিনার্ভা’।
‘সুবে বাঙ্গালা’র নবাব সিরাজ অস্তমিত। মুর্শিদাবাদ হারিয়েছে বঙ্গ রাজধানীর তাজ। পরিবর্তে ইংরেজ বদান্যতায় এই শহর কলকাতা পেল রাজধানী শহরের তকমা। ওদিকে দিনকে দিন জাহাজে চড়ে দলে দলে জুনিয়র সারভেন্টদের আগমন লেগেই রয়েছে। ইংরেজ শাসনের জমানা শুরু ভারতের বুকে। আর কলকাতা সেই জমানার রাজধানী। না, পৃথিবীর আর কোনও ইংরেজ উপনিবেশ এমন ভাবে রাজধানী শহর উপহার পায়নি ফিরিঙ্গি বণিকদের কাছ থেকে। স্বভাবতই প্রশাসনের কাজে আসে, এমন একটা ভবন নির্মাণের কথাও ভাবতে শুরু করে ইংরেজ। এমন ভাবনা থেকেই ১৭৭৬ সালে একটি ভবন গড়ে উঠতে থাকে অবলুপ্ত এক গির্জার জমিতে। এই ভবনের পোশাকি নাম ‘রাইটার্স বিল্ডিং’।
যখন প্রথম প্রথম এই ভবন গড়ন গঠন নিয়ে হাজিরা দিয়েছে সেই সময় এদেশে আসা ইংরেজ জুনিয়র সারভেন্টরা থাকার জন্য পেল ভবনের কিছু ঘর। বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা হল তাদের। তবে ভবনের নির্মাণ এগিয়ে গেল আপন ছন্দে। দেখতে দেখতে প্রচুর পরিবর্তন এল টমাস লিয়নের পরিকল্পনা মাফিক। করিন্থিয়ান অর্ডারের থাম এবং ব্যারক ছন্দের আদলে স্থাপত্যের সঙ্গে যুক্ত হল নানা ধরনের মূর্তি। এই প্রত্যেকটি মূর্তির সঙ্গে মিশে রইল ইংরেজের ভাবমূর্তি এদেশের জনগণের কাছে উজ্জ্বল করে দেখানোর ইঙ্গিত। শীর্ষের প্রধান মূর্তি হিসেবে রইল ‘মিনার্ভা’।
‘মিনার্ভা’ মানেই সেই রোমান দেবীর অতিকথা– যেখানে বর্ণিত হয়েছে দেবীর অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে তাঁর জ্ঞানের গরিমা। শুধু কি তাই? মিনার্ভা একদিকে যেমন বাণিজ্যের দেবী, অন্যদিকে তিনিই আবার পূজিত হয়ে আসছেন সংগীত, কাব্য, ঔষধি, তাঁত বস্ত্র এবং কারিগরির দেবী হিসেবে। ইনি সুবিচারের প্রতি লক্ষ রাখেন নিজের মতো করেই। এমন একজন দেবী মূর্তি বসানোর কথা যখন ভাবল ইংরেজ তখন তাদের ভাবনায় রইল এই ভারত তাদের বাণিজ্য শিল্প কারিগরি পরিচালনার উর্বর জমি। আবার এই ভারতের বুকেই তাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে নিজেদের কৃষ্টি এবং সংস্কৃতিকে। এক কথায় ‘উইসডম’ যেমন মিনার্ভার পরিচায়ক গুণ, একই ভাবে এদেশের সবাইকে বুঝিয়ে দিতে হবে রোমের জ্ঞান গরিমার দেবীর আশীর্বাদ নিয়েই এদেশের মাটিতে পা রেখেছে ইংরেজ। জ্ঞান গরিমার আলোয় অন্ধকার থেকে এদেশের মানুষকে মুক্ত করতে এসেছে ইংরেজ। সঙ্গে ইংরেজই দেবে এ দেশের মানুষকে সুবিচার, দেবে বাণিজ্যের সুফল। এদেশকে গড়ে তুলবে সুজলা-সুফলা করে আর এদশের অর্থনীতির ভিত তারাই মজবুত করে গড়ে তুলবে। এই অঙ্গীকারেই রাইটার্সের শীর্ষে বসে আরও মূর্তি ইংরেজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে।
তারপর দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীনতা লড়াইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাইটার্সের অলিন্দ যুদ্ধের কাহিনিও। যুগ বদল হয়েছে, বদল হয়েছে নানা জমানারও। তবু আজও ইংরেজ ভাবনার জীর্ণ স্মৃতি নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিংয়ের শীর্ষে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেরামিক্সের তৈরি মিনার্ভা।
ভাবমূর্তি-র অন্যান্য পর্ব
পর্ব ১। শাসককে দেবতা বানানোর অভিপ্রায়েই কলকাতায় পথে-প্রান্তরে ইংরেজরা বসিয়েছিল মূর্তি
পর্ব ২। হেস্টিংসের মূর্তি আসলে অত্যাচারীরই নতুন ভাবমূর্তি
পর্ব ৩। বঙ্গভঙ্গের ছায়া মুছতে অঙ্গমূর্তির পরিকল্পনা করেছিলেন লর্ড কার্জন
পর্ব ৪। ত্রিবেণী টোলের পণ্ডিত উজ্জ্বল করলেন হেস্টিংসের ভাবমূর্তি